* একের পর এক নজিরবিহীন আদেশে সই
* করেছেন বহু অভিযোগ হুমকি
মার্কিন মসনদে বসেই নির্বাহী আদেশের ঝড় বইয়ে দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার পর ওভাল অফিসে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহী আদেশে সই করেন তিনি। আর এতে তার পুনরাগমনে এক রাতেই তোলপাড় পড়ে গেছে বিশ্বজুড়ে। স্থানীয় সময় গত সোমবার দুপুর ১২টায় (বাংলাদেশ সময় রাতে) ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল রোটুন্ডায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথগ্রহণ করেন ট্রাম্প। এরপর ওভাল অফিসে ফিরে শুরুতেই বাতিল করেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আমলের ৭৮টি নির্বাহী আদেশ। এর মধ্যে আছে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে দখলদার ইসরাইলিদের ওপর দেয়া নিষেধাজ্ঞা। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের ঘোষণাসহ একাধিক আদেশে সই করেন নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। একই সঙ্গে প্রতিবেশি মেক্সিকো, পানামাসহ নানা দেশের বিরুদ্ধে করেছেন অভিযোগ দিয়েছেন হুমকি।
অভিষেক অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, নির্বাচনে জয় লাভের একটি বড় কারণ ছিল সামরিক বাহিনীর সঙ্গে তার সম্পর্ক। তিনি বলেন, আমাকে বলতে-ই হবে, আমরা সত্যিই সামরিক বাহিনীর সহায়তায় জিতেছি। ডোনাল্ড ট্রাম্প আরও বলেন, পিট হেগসেথের নেতৃত্বে দেশ আবারও বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক বাহিনী পাবে যুক্তরাষ্ট্র। হেগসেথ দেশটির পরবর্তী প্রতিরক্ষামন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। ট্রাম্প বলেন, আমরা একটি মজবুত আয়রন ডোম গড়ে তুলবো। আমাদের একমাত্র লক্ষ্য আমেরিকার শত্রুদের পরাজিত করা। আমরা পরাজিত হবো না, অপমানিত হবো না। আমরা শুধু জিতবো, জিতবো এবং জিতবো। ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্টভাবেই বলেন যে, তার প্রশাসন সামরিক বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে, তবে তা ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়বে না আমাদের। পরে ওভাল অফিসে বসে এই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট বলেন, আমাদের দেশের অনেক ভালো অর্থনৈতিক ভবিষৎ রয়েছে। এ সময় সাংবাদিকরা সার্বজনীন শুল্কের বিষয়ে প্রশ্ন করলে ট্রাম্প বলেন, অন্য জাতীগুলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, তারা শুধু আসছে এবং সম্পদ চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই ট্রাম্প একের পর এক নির্বাহী আদেশে সই করেন। সেই সাথে কিছু ঘোষণাও দিয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে জরুরি অবস্থা জারি, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল, বাইডেন আমলের নির্বাহী আদেশ বাতিল, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার আদেশে সই, ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গায় জড়িত ১,৬০০ জনকে সাধারণ ক্ষমা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার নির্বাহী আদেশে সই, মেক্সিকো উপসাগরের নাম বদলানো ও পানামা খাল দখলের ঘোষণা, যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা সাময়িক বন্ধ ঘোষণা, হাজারের বেশি কর্মকর্তাকে বহিষ্কারের হুমকি, ইসরাইলকে বাইডেনের আটকে দেয়া বোমা প্রদান, যুক্তরাষ্ট্রে লিঙ্গ হিসেবে শুধু নারী-পুরুষকে স্বীকৃতি, শান্তি স্থাপন ও সব যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি।
শপথ অনুষ্ঠানে ট্রাম্প আরো বলেন, আমি শপথ করছি যে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব সততার সঙ্গে পালন করবো এবং আমার সর্বোচ্চ সামর্থ্য অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান সংরক্ষণ, সুরক্ষা এবং রক্ষা করবো। মার্কিন প্রেসিডেন্টের শপথ বাক্য দেশটির সংবিধানের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদের প্রথম ধারায় নির্ধারিত। তবে ভাইস প্রেসিডেন্টসহ অন্যান্য ফেডারেল কর্মকর্তার শপথ সংবিধানে উল্লেখ নেই। এগুলো কংগ্রেসের প্রণীত আইনের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়। ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রযুক্তি জগতের বেশ কয়েকজন শীর্ষ ব্যক্তিত্ব; যেমন- ইলন মাস্ক, জেফ বেজোস এবং মার্ক জাকারবার্গ। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। যদিও ২০২০ সালে বাইডেনের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে ছিলেন না ট্রাম্প। অতিথিদের মধ্যে আরও ছিলেন বিল ক্লিনটন, জর্জ ডব্লিউ বুশ, বারাক ওবামাসহ জীবিত সব সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট।