বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আন্তর্দেশীয় ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে গত জুলাই থেকে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর বারবার চেষ্টা করা হলেও ট্রেন চালাতে রাজি হয়নি ভারত সরকার। বাংলাদেশ রেলওয়ের অনেক চিঠির জবাবও দেয়নি ভারতীয় রেলওয়ে বোর্ড। এমন পরিস্থিতিতে ভারতে তিন দিনের সফরে গেছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রতিনিধিরা। গতকাল সোমবার থেকে আগামী বুধবার পর্যন্ত এই সফরে পাঁচ এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা করবে বাংলাদেশ। সফরে গুরুত্ব পাবে আন্তর্দেশীয় ট্রেন চলাচল প্রসঙ্গ। সেই সঙ্গে আলোচনা হবে ভারতের অর্থায়নে বাংলাদেশে চলমান প্রকল্পের ভবিষ্যত নিয়ে। রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভারতের নয়াদিল্লিতে আন্ত সরকারি রেলওয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকের এজেন্ডাও ভারত নির্ধারণ করেছে। বড় এজেন্ডাগুলো হলো, যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল সম্পর্কিত সমস্যা, মালবাহী ট্রেন চলাচল সম্পর্কিত সমস্যা, রেল সংযোগ, চলমান প্রকল্প এবং কারিগরি কিছু সমস্যা। এসব নিয়ে আলোচনা হবে। এজেন্ডার নথি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বন্ধ থাকা যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল পুনরায় চালু করার পাশাপাশি বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনের জন্য ‘এন্ড টু এন্ড ইমিগ্রেশন’ নিয়ে আলোচনা করা হবে।
দুই দেশের মধ্যে মালবাহী ট্রেনের আদান-প্রদান বাড়ানো, দর্শনা-গেদে হয়ে মালবাহী ট্রেন চলাচলের সময় বাড়ানো, বেনাপোল-পেট্রাপোল এবং রহনপুর-সিংবাদ সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্তের পরিবর্তে সার্বক্ষণিক ট্রেন চলাচলের সুযোগ তৈরি করা এবং বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কনটেইনার ট্রেন সার্ভিস সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান খুঁজতে আলোচনা করা হবে।
এ ছাড়া বাণিজ্যিক পর্যায়ে মালবাহী ট্রেন চলাচল নীতিমালা (এসওপি) চূড়ান্ত করা, কনটেইনার ট্রেনের জন্য যৌক্তিক ভাড়া নির্ধারণ, বেসরকারি খাতে কনটেইনার ট্রেন চালানোর অনুমতি দেয়া, বেনাপোল স্টেশনে কনটেইনার রেললাইন চালু, যশোর বা নেওপাড়া পণ্য হ্যান্ডলিং স্টেশনকে বেনাপোল এলসিএসের বর্ধিত গেটওয়ে হিসেবে ঘোষণা করা এবং কমলাপুর রেলওয়ে আইসিডি থেকে এক্সিম রেল কার্গো যাত্রা শুরু করা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে।
এদিকে আগরতলা-আখাউড়া রেল সংযোগ প্রকল্প এবং এর কার্যক্রম পরিচালনা করতে বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে সম্পদের দখল বুঝিয়ে দেয়া, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর এবং ভারতের নিশ্চিন্তপুর ইয়ার্ডের মধ্যে কনটেইনার ট্রেন চলাচল শুরু, কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেল প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) থেকে দ্রুত চূড়ান্ত অনাপত্তিপত্র (এনওসি) নেয়ার ব্যবস্থা করার বিষয়গুলো বৈঠকের এজেন্ডায় রয়েছে। বাংলাদেশে ভারতীয় রেলের মালবাহী ট্রেনের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে রেলের লুপলাইনের দৈর্ঘ্য ও শেড ভালো করে বিভাগীয় ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রকল্পের অবস্থা, খুলনা-মোংলা নতুন রেললাইন প্রকল্পের কার্যক্রম দ্রুত শুরু করা, রোলিং স্টক, বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ও আইটি সিস্টেমে সহযোগিতা করতে চাচ্ছে ভারত। এসবের সঙ্গে ভারতীয় রেলের বকেয়া পরিমাণ নিয়ে আলোচনা করা হবে।
বাংলাদেশের পক্ষে বৈঠকে নেতৃত্ব দেবেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. জিয়াউল হক। প্রতিনিধিদলে আরো থাকছেন রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (আরএস) আহমেদ মাহবুব চৌধুরী, কমলাপুরের কাস্টম হাউসের (আইসিডি) ওমর মবিন এবং রেলওয়ের পরিচালক ট্রাফিক (পরিবহন) মো. মিজানুর রহমান। সফরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধিও থাকার কথা রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলপথ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের দিক থেকে আন্তর্দেশীয় ট্রেন চলাচলের বিষয়টি অগ্রাধিকার পাবে। অন্য আলোচনাগুলো থাকবে, কিন্তু আমরা চাই দ্রুত ট্রেন চালাতে। সেই সঙ্গে এলওসির (ভারতীয় অর্থায়নে) প্রকল্পগুলোর অবস্থা ভালো নয়। সুযোগ বুঝে এ বিষয়েও আলাপ গুরুত্বসহকারে তোলা হবে।
এদিকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের আন্তর্দেশীয় রেল চলাচলের তিনটি পথেই নিরাপত্তাঝুঁকির কথা বলে এত দিন ধরে যাত্রীবাহী ট্রেন চালাতে সম্মতি দিচ্ছে না ভারত। যদিও পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করছে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আটটি ইন্টারচেঞ্জ থাকলেও সচল রয়েছে পাঁচটি। এর মধ্যে তিনটি পথে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করছে। গত ১৭ জুলাই রাতে মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে পৌঁছায়। ট্রেনটি পরদিন রাতে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে ছেড়ে যায়নি। পরে ট্রেনটি ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে আটকে যায়। আর ঢাকা-নিউ জলপাইগুড়ি রুটে মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনসহ ঢাকা-কলকাতা রুটে মৈত্রী এক্সপ্রেস এবং খুলনা-কলকাতা রুটে বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল করত।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, এটি সরকার পর্যায়ের বৈঠক। আলোচনা কতটা সফল হবে তা এখনই বলা কঠিন। ভারত এজেন্ডা যাই ঠিক করুক আমাদের দিক থেকে নিজেদের স্বার্থ আদায়ের চেষ্টা থাকবে।