চট্টগ্রামে বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটারে গ্রাহক হয়রানি কয়েকগুণ বেড়েছে। ফলে গ্রাহক সুবিধার কথা বলে প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হলেও গ্রাহক হয়রানি বাড়ায় সরকারি ওই প্রকল্প এখন অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়েছে। মিটার যখন-তখন লক হয়ে যাওয়া, ভুতুড়ে বিল, জরুরি ব্যালান্স বিড়ম্বনা, অতিরিক্ত চার্জ কাটা, রিচার্জ সমস্যা, ব্যাটারি সিন্ডিকেটে পড়ে গ্রাহকদের নাভিশ্বাস উঠছে। ভুক্তভোগীদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটারে গ্রাহকরা প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। রিচার্জ করতে ডিজিট চাপতে গিয়ে তিনবার ভুল হলেই মিটার লক হয়ে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে সার্ভার জটিলতার কারণেও মিটারে রিচার্জ করা যায় না।ফলে গ্রাহকদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকতে হচ্ছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে আবাসিক ও বাণিজ্যিক মিলে ১১ লাখ ৫৯ হাজার ১৫৮টি প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে। সূত্র জানায়, পোস্টপেইডের চেয়ে প্রিপেইড মিটারে দ্বিগুণ বিল আসছে। কার্ড ভরলেই ১৩০ টাকা কেটে রাখা হয়। নতুন প্রিপেইড মিটার বসাতে গ্রাহকদের বাধ্য করা হচ্ছে। অথচ প্রিপেইড মিটারে কাগজের বিলের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি বিল পরিশোধ করতে হয়। নেয়া হয় অতিরিক্ত চার্জ। আবার রিচার্জ করার পরই দ্রুত টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে। আর জরুরি ব্যালান্স নিলে পরিশোধ করতে হয় অতিরিক্ত চার্জ। রিচার্জেও নানা ঝামেলা পোহাতে হয়। কারণ সব জায়গায় রিচার্জ কার্ড পাওয়া যায় না। আর ভুলে মিটার ‘লক’ হয়ে গেলে দীর্ঘ সময়ের জন্য বিদ্যুৎহীন থাকতে হয়। মিটার আনলক করতে বিদ্যুৎ অফিসে দিনের পর দিন ধরনা দিতে হয়। তাছাড়া অনেক ক্ষেত্রেই প্রিপেইড মিটারে রিচার্জের সময় আগের ব্যালান্স যোগ হয় না। অথচ নির্দেশনা অনুযায়ী বিতরণ পর্যায়ে গ্রাহককে ডিমান্ড চার্জ, মোট বিলের ৫ শতাংশ বিলম্ব মাশুল (বিলম্বে বিল পরিশোধ) এবং ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) দিতে হয়। সূত্র আরো জানায়, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) অনুমোদন ছাড়া বিদ্যুৎ ব্যবহারের ওপর কোনো ধরনের চার্জ বা অর্থ আরোপ করার ক্ষমতা বিতরণ কোম্পানির নেই। অথচ দেশের ছয় বিতরণ কোম্পানি এমন সব খাতে গ্রাহকের কাছ থেকে অর্থ নিচ্ছে, যাতে বিইআরসির অনুমোদন নেই। সূত্র আরো জানায়, প্রিপেইড মিটার রিচার্জ করতে গিয়েও ভোগান্তিতে পড়ছে গ্রাহকরা। রিচার্জ করতে মিটারে প্রবেশ করাতে হয় ২০ ডিজিট (সংখ্যা)। কিন্তু ডিজিট প্রবেশ করাতে গিয়ে কয়েকবার ভুল হলে মিটার লক হয়ে যাচ্ছে মিটার। ফলে অনেক সময় ধরে গ্রাহককে বিদ্যুৎহীন থাকতে হয়। আর মিটার আনলক করতে গিয়ে পিডিবির কিছু কর্মচারীকে টাকা দিতে হয়। তাছাড়া প্রিপেইড বিলে ‘বিবিধ’ নামে একটি শ্রেণিতে গ্রাহকদের কাছ থেকে ইচ্ছেমতো টাকা আদায় করা হচ্ছে। ফলে বাড়তি চার্জে প্রিপেইড মিটারে গ্রাহকদের আগ্রহ কমছে। এদিকে গ্রাহক ভোগান্তির বিষয়ে পিডিবি চট্টগ্রাম অঞ্চলের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকবর হোসেন প্রিপেইড মিটার নিয়ে গ্রাহকের হয়রানির কথা কিছুটা স্বীকার করেন।