ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে অতিথি শি জিন পিং, আমন্ত্রণ পেলেন না নরেন্দ্র মোদি
আজ সোমবার ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন। এই শপথ অনুষ্ঠান দেশটির ক্যাপিটল হিলের কংগ্রেস ভবনের একটি অংশে অনুষ্ঠিত হবে। ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে এমনটি করা হচ্ছে বলে শনিবার এ কথা নিজেই জানিয়েছেন ট্রাম্প।
এর আগে ১৯৮৫ সালে ক্যাপিটল ভবনের ভেতরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন রোনাল্ড রিগ্যান। সেবারও তীব্র ঠাণ্ডার কারণে শপথ অনুষ্ঠান ক্যাপিটলের রোটুন্ডায় সরিয়ে নেয়া হয়েছিল। এর মাধ্যমে প্রায় ৪০ বছর খোলা স্থানের পরিবর্তে ক্যাপিটল হিলের ভেতরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠান। শপথ নেয়ার মাধ্যমে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো হোয়াইট হাউসে ফিরে আসবেন। এই অভিষেক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বর্তমান প্রশাসনের মেয়াদ শেষ হবে এবং ট্রাম্প-ভ্যান্স প্রশাসনের সূচনা হবে। ট্রাম্পের দ্বিতীয় শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক উত্তেজনা ও ঐতিহাসিকতার একটি মিশ্রণ রয়েছে। এটি শুধু ক্ষমতা হস্তান্তরের একটি আয়োজন নয়, আমেরিকার ভবিষ্যতের দিকনির্দেশক এক নতুন অধ্যায়ের সূচনাও।
জানা গেছে, দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই দেশব্যাপী অভিবাসন আইন প্রয়োগ জোরদার করার পরিকল্পনা করছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। কালকের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বেশ কয়েকজন বিশ্বনেতাকে, যার মধ্যে আছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংও। কিন্তু চিনপিং নন, অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভাইস প্রেসিডেন্ট হান ঝেংকে পাঠাচ্ছে চীন। এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো চীনের কোনো ঊর্ধ্বতন নেতা সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে শপথ নিতে দেখবেন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানে বিদেশি নেতাদের আমন্ত্রণ জানানোর রেওয়াজ নেই। তবে ট্রাম্প সেই রেওয়াজ ভেঙেছেন।
হিস্ট্রি ডটকমের তথ্য অনুসারে, ১৯৩৩ সালে সংবিধানে ২০তম সংশোধনী আনা হয়। এই সংশোধনী অনুসারে অভিষেকের দিন ২০ জানুয়ারি এবং নতুন কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশন শুরুর জন্য ৩ জানুয়ারি তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এর চার বছর পর ১৯৩৭ সালের ২০ জানুয়ারি প্রথমবার প্রেসিডেন্টের অভিষেক দিবস পালন করা হয়, যা এখনো চলছে। শপথগ্রহণের পর ট্রাম্প তার নতুন প্রশাসনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য তুলে ধরবেন। এরপর তিনি ক্যাপিটল ভবনের প্রেসিডেন্টস রুমে গুরুত্বপূর্ণ নথিতে স্বাক্ষর করবেন এবং কংগ্রেস আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন। দিনের শেষে ক্যাপিটল হিল থেকে হোয়াইট হাউস পর্যন্ত একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। রাতে তিনটি আনুষ্ঠানিক বল অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বক্তব্য দেবেন। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন কংগ্রেসের সদস্য, বিদায়ি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। এ ছাড়া সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ও বারাক ওবামাও থাকবেন। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত আসাদ আলম সিয়াম ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে অতিথি যারা, আমন্ত্রণ পেলেন না নরেন্দ্র মোদি: যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আজ ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণ করবেন। তার এই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং আমন্ত্রণ পেলেও বাদ পড়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ নিয়ে ভারতজুড়ে হইচই শুরু হয়েছে। ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের তালিকায় ওপরের সারিতে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি এবং আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জেভিয়ার মিলেইর নাম রয়েছে। এর মধ্যে মিলেই এক মাস আগেই নিশ্চিত করেছেন, তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের প্রশংসাকারী হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট ভিক্টর অরবানও আমন্ত্রণ পেয়েছেন। তবে অরবানের কার্যালয় থেকে হাঙ্গেরির সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়েছে, তিনি ওই অনুষ্ঠানে থাকতে পারছেন না। এদিকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর বলেছেন, তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। তবে ট্রাম্পকে ‘বন্ধু’ সম্বোধনকারী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পাননি। গত শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল বিষয়টি এড়িয়ে যান। এছাড়াও ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পাননি ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভনডার লেন আমন্ত্রণ পাননি। তার মুখপাত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূত জোভিতা নেলিউপসিয়েন ক্যাপিটলের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনবারের প্রার্থী ও কট্টর ডানপন্থী নেত্রী মেরিন লা পেনকে ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। পেনের শিষ্য জর্দান বারদেলাও আমন্ত্রণ পাননি। তাদের দলের এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সূত্র: পলিটিকো
শপথ গ্রহণের প্রক্রিয়া: মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, নতুন প্রেসিডেন্টের কার্যকাল ২০ জানুয়ারি দুপুরে শুরু হয়। গত কয়েক বছরে ক্যাপিটল হিলের পশ্চিম লনে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হলেও এবারের সেটি হবে ক্যাপিটল রোটুন্ডায়। কারণ, বিরূপ আবহাওয়ার কারণে অনুষ্ঠানটি ইনডোরে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। সাধারণত মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি নতুন প্রেসিডেন্টের শপথবাক্য পাঠ করান। এবার জন রবার্টস দ্বিতীয়বারের মতো ট্রাম্পের শপথবাক্য পাঠ করাবেন। শপথ শেষে নতুন প্রেসিডেন্ট আগামী চার বছরের পরিকল্পনা তুলে ধরবেন। একই দিন ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে জেডি ভ্যান্সও শপথ নেবেন। ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন প্রযুক্তি জগতের বেশ কয়েকজন শীর্ষ ব্যক্তিত্ব; যেমন- ইলন মাস্ক, জেফ বেজোস এবং মার্ক জাকারবার্গ। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। যদিও ২০২০ সালে বাইডেনের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে ছিলেন না ট্রাম্প। অতিথিদের মধ্যে আরও থাকবেন বিল ক্লিনটন, জর্জ ডব্লিউ বুশ, বারাক ওবামাসহ জীবিত সব সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
স্থান পরিবর্তন ও অনুষ্ঠান: অনুষ্ঠানে অতিথির সংখ্যা নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও ইনডোরে স্থানান্তরিত হওয়ার ফলে উপস্থিতির সংখ্যা কমতে পারে। ক্যাপিটল রোটুন্ডায় প্রায় ৬০০ জনের ধারণক্ষমতা রয়েছে। ট্রাম্প তার সমর্থকদের ওয়াশিংটনের ক্যাপিটাল ওয়ান অ্যারেনায় সরাসরি সম্প্রচার দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করবেন ক্যারি আন্ডারউড: অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করবেন ক্যারি আন্ডারউড এবং লি গ্রিনউডের মতো জনপ্রিয় শিল্পীরা। এছাড়া ‘ওয়াই.এম.সি.এ.’ গানে পারফর্ম করবেন ভিলেজ পিপল এবং কান্ট্রি সংগীতশিল্পী লি গ্রিনউডও উপস্থিত থাকবেন। গান গাইবেন কিড রক এবং বিলি রে সাইরাসও। আমেরিকান ডিসকো গ্রুপ ভিলেজ পিপল তাদের জনপ্রিয় গান ‘ওয়াইএমসিএ’ পরিবেশন করবে। ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারকালে এই গান ব্যবহৃত হয়েছিল।
ওয়াশিংটনে হাজারো মানুষের ট্রাম্পবিরোধী র?্যালি: প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ নেয়ার দু’দিন আগে ওয়াশিংটনের রাস্তায় বিক্ষোভ করলো হাজার হাজার মানুষ, যাদের বেশিরভাগই নারী। এ কর্মসূচির নাম দ্যা পিপলস মার্চ, যা আগে উইমেন’স মার্চ হিসেবে পরিচিত ছিল। এটা ২০১৭ সাল থেকে নিয়মিত হয়ে আসছে। কয়েকটি গ্রুপের একটি জোট-এর আয়োজক। তাদের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, তারা ‘ট্রাম্পিজম’ এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। ইতোমধ্যে নিউইয়র্ক ও সিয়াটলেও ট্রাম্প বিরোধী ছোটখাটো প্রতিবাদ হয়েছে বলে জানা গেছে। এসব প্রতিবাদ র?্যালি এমন সময় হলো যখন ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য শপথ গ্রহণ করতে দেশটির রাজধানীতে এসে পৌঁছেছেন। শপথের আগেও বেশ কয়েকটি ইভেন্টে যোগ দেয়ার কথা আছে তার। তবে ওয়াশিংটন ডিসিতে শনিবারের এই পিপল’স মার্চের অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা আগের চেয়ে কম। আয়োজকরা ৫০ হাজার মানুষের অংশগ্রহণ আশা করলেও জমায়েত হয় পাঁচ হাজারের মতো। লিঙ্কন মেমোরিয়ালের দিকে যাত্রা শুরুর আগে প্রতিবাদকারীরা তিনটি পার্কে জমায়েত হয়। যারা এই কর্মসূচির আয়োজন করে, তারা বিভিন্ন ইস্যুভিত্তিক বিষয়ে কাজ করে। এর মধ্যে আছে জলবায়ু পরিবর্তন, অভিবাসন ও নারী অধিকার।