সরকারি বিধি বহির্ভূতভাবে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের দায়ে দুদকের জালে আটকা পড়েছে আশকোনাস্থ হজ অফিসের অফিস সহকারী কাম টাইপিস্ট সূহিল মোহাম্মদ ফেরদৌস। দুর্নীতি দমন বিভাগে তার দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত চলছে। এ নিয়ে খোদ ধর্ম মন্ত্রণালয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ধর্ম মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির ১৬৭ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে হজ অফিসের এই চাঞ্চল্যকর দুর্নীতির তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ধর্ম মন্ত্রণালয় সূহিলের দুর্নীতির খতিয়ান প্রমাণিত হওয়ায় গত ২২ মে তাকে হজ অফিস থেকে সাময়িক প্রত্যাহার করে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করে। আবারও তিনি হজ অফিসে বহালতবিয়তে রয়েছেন সূহিল মোহাম্মদ ফেরদৌস। তার বিরুদ্ধে আবারও নতুন করে তদন্ত শুরু করেছে একাধিক সংস্থা।
জানা গেছে, জীবিকা নির্বাহের তাকিদে প্রায় ২২ বছর আগে ঢাকায় আসেন সূহিল মোহাম্মদ ফেরদৌস। কোন এক হজ অফিসারের সাথে তার পরিচয় হয়। তার সুপারিশে সূহিল হজ অফিসে চাকুরী করার সুযোগ পায়। আর এতেই ঘুরে যায় সূহিলের ভাগ্যের চাকা। টাকা কামানোর নেশা পেয়ে বসেছিল সূহিল। অদৃশ্য যাদুর কাঠির ছোয়ায় এক সময় বদলে যায় সূহিলের জীবন। সেই থেকে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রায় ১৪০০ হজ এজেন্টের মালিক প্রতিনিধিগণ হতে অবৈধ উপায়ে উপার্জন করে নগদ সম্পদে বিপুল টাকার মালিক বনে গেছেন। বিগত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে চাকরি জীবনে ঢাকার উত্তরখানে কাঁচ কুড়া এলাকায় তিনি ৬০ লাখ টাকা দিয়ে পাঁচ কাঠা জমি ক্রয় করেন। তিনি ঢাকার রামপুরায় বনশ্রীতে জমি ক্রয় করে ঘর নির্মাণ করে রেখেছেন। শাহজালাল ইসলামি ব্যাংক আসকোনা শাখায় তার স্ত্রীর নামে একটি একাউন্ট রয়েছে। সেখান থেকে প্রায় প্রতিমাসে লাখ টাকা লভ্যাংশ বাবদ টাকা উত্তোলন করে আসছেন। ইসলামি ব্যাংক হজ ক্যাম্প শাখায় তার স্ত্রীর নামে আরেকটি একাউন্ট রয়েছে। ইসলামি ব্যাংক হজ ক্যাম্প শাখায় তার নিজ নামে একটি একাউন্ট রয়েছে। উত্তরা ৬নং সেক্টরে তার একটি ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন। তার দুই মেয়ে ব্যয়বহুল রাজউক কলেজে পড়াশোনা করছেন। এসব কোটি টাকার অর্থ হজ এজেন্সির সাথে রিপ্লেসমেন্ট বাণিজ্য, হজ লাইসেন্স এর দালালি, হজ এজেন্সির বারকোড সরবরাহ ব্যর্থ হজ যাত্রীদের মোয়াল্লেম ফি ফেরত স্টিকার লাখ টাকায় অবৈধভাবে বিক্রয়, এজেন্সির বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের তদবির বাণিজ্য এবং ভিসার জন্য ডিও জারির কাজে এজেন্সি হতে এসব অর্থ হাতিয়ে নিয়ে থাকেন বলে অনেকেরই অভিযোগ।
অপর একটি সূত্র জানায়, হজ অফিসকে দুর্নীতিমুক্ত করণের লক্ষ্যে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. আনিছুর রহমানের নির্দেশে সিনিয়র সহকারী সচিব আরিফ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ এক লিখিত নির্দেশনায় হজ অফিসের পরিচালক সাইফুল ইসলামকে সূহিল মোহাম্মদ ফেরদৌসের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতিরেকে তার এবং তার স্ত্রী নাজমা বেগমের সম্পত্তি অর্জনের কারণে সরকারি কর্মচারি আচরণবিধি এবং সরকারি কর্মচারি (শৃংখলা ও আপীল) বিধি ১৯৮৫ মোতাবেক বিভাগীয় মামলা রুজু করার অনুরোধ জানান। তদন্ত কমিটি অভিযুক্ত সূহিল ও তার স্ত্রীর ব্যাংক একাউন্টে প্রায় পৌনে তিন কোটি টাকা জমা রাখার সন্ধান পেয়েছে।
হজ অফিসের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অভিযুক্ত সূহিলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করতে হলে বিধি অনুযায়ী তাকে তাৎক্ষণিক সাময়িক বরখাস্ত করার কথা এবং তদন্ত কমিটি গঠন করার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু সাবেক পরিচালক হজ সাইফুল ইসলাম ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে সূহিলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজুর দিকে অগ্রসর না হয়ে তাকে বাঁচানোর জন্য কালক্ষেপণ করে।
সূহিল মোহাম্মদ ফেরদৌসের মোবাইলে বার বার ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তার অফিসের নম্বরে ফোন করলে ফোন রিসিভ করে বলেন স্যার অফিসে নেই।