
দুর্নীতিবিরোধী কৌশলপত্র প্রণয়ন, ব্যক্তি স্বার্থে সাংবিধানিক ও আইনগত ক্ষমতার অপব্যবহার ও ঘুষ লেনদেনকে অবৈধ ঘোষণা এবং আইনে কালো টাকা সাদা করার বৈধতা স্থায়ীভাবে বন্ধ করাসহ ৪৭ দফা সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশন। গতকাল বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সুপারিশগুলো তুলে ধরেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশনের প্রধান ও টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। এর আগে, গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে এসব সুপারিশ করেছে এ কমিশন।
দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুদককে আরও গতিশীল করার জন্য আমরা স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা হিসেবে ৪৭টি সুপারিশ প্রস্তাব করেছি। আমরা বিশ্বাস করি, স্বল্পমেয়াদি সুপারিশ বাস্তবায়নে ছয় মাস, মধ্যমেয়াদি সুপারিশ বাস্তবায়নে ১৮ মাস ও দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার বাস্তবায়নে ৪৮ মাস সময় লাগবে। তিনি বলেন, দুদক বর্তমানে একটি বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। তবে এটিকে একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া প্রয়োজন।
দুদককে শক্তিশালী, কার্যকর ও ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে কমিশনারদের পদ বাড়ানো, নিয়োগ, সার্চ কমিটি, আইনের সংস্কার, বেতন বৃদ্ধি ও প্রণোদনার জন্য সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন। দুদকে নিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা ও গভীরতা বিবেচনায় যে ধরনের পেশাগত বৈচিত্র্য থাকা দরকার, সেটি নিশ্চিত করতে একজন নারীসহ পাঁচজন দুদক কমিশনার নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। তাদের মেয়াদ হবে চার বছর।
সংস্কার কমিশন মনে করে, শুধু কমিশনারের সংখ্যা বাড়ালে হবে না। নিয়োগেও বৈচিত্র্য থাকতে হবে। যেসব পেশা দুদকের কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বা যুক্ত সেখান থেকে দুদকের বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিতে হবে। দুদকে শুধু আমলাদের নিয়োগে যে প্রাধান্য দেওয়া হয়, তা থেকে সরে আসতে হবে।
সংস্কার কমিশন চায় দুদক স্বাধীন ও কার্যকর হোক। তবে দুদকের কোনও স্বাধীনতা সীমাহীন নয়। দুদক যে কাজ করবে, তার জবাবদিহি থাকবে। ভালো কাজের যেমন প্রশংসা থাকবে, তেমনি কাজ করতে না পারলে জবাবদিহি করতে হবে।
রাজনীতি ও নির্বাচনসংক্রান্ত অর্থায়নে স্বচ্ছতার জন্য কিছু সুপারিশ করেছে কমিশন। তারা বলেছে, রাজনৈতিক দলের নির্বাচনি আয়-ব্যয় নিয়মিত প্রকাশ করতে হবে। হলফনামার তথ্য প্রকাশ করতে হবে। যদি হলফনামায় পর্যাপ্ত তথ্য না থাকে, তথ্য গোপন করা হয় ও বৈধ আয়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদ থাকে, তবে তার জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
দুদককে শক্তিশালী করতে কয়েকটি আইন সংস্কারের কথা বলেছে কমিশন। এর একটি হলো— দুর্নীতির তথ্য প্রকাশকারীর সুরক্ষা আইন। যে দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ করেন, তার সুরক্ষায় আইন করতে হবে। একটা তথ্য প্রকাশ সুরক্ষা আইন রয়েছে, তবে সেটির কোনও প্রয়োগ ও কার্যকর প্রচার নেই। এ আইন যথেষ্ট নয়। তাই আইনটি সংশোধন করে কার্যকর ও প্রচার করার সুপারিশ করা হয়েছে।
জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত এই সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের কথা বলে আসছে। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দুই ধাপে ১১টি সংস্কার কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গত ৩ অক্টোবর নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন ও সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। গত ৩ অক্টোবর ইফতেখারুজ্জামানের নেতৃত্বে দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের কার্যক্রম শুরু হয়।