বেড়েছে চাঁদাবাজি, খুন, চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি
* ব্যাংক ডাকাতির চেষ্টা ও চলন্ত বাসে ডাকাতির ঘটনায় বাড়ছে আতঙ্ক
* নরসিংদীতে চাঁদা না দেয়ায় কারখানা মালিককে হত্যা, গ্রেফতার ৪ জন
* শ্রীপুরে চাঁদা না পেয়ে প্রবাসীর পরিবারের ৯ জনকে কুপিয়ে জখম
* আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর দুর্বল নজরদারিতে নতুন ছক কষছে অপরাধীরা
* চাঁদাবাজদের নতুন তালিকা পুলিশের হাতে, যেকোন সময় বিশেষ অভিযান
রাজধানীসহ সারাদেশে হঠাৎ করেই বেড়েছে চাঁদাবাজি, খুন, চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির মতো ঘটনা। ব্যাংক ডাকাতির চেষ্টা ও চলন্ত বাসে ডাকাতির ঘটনায় সাধারণ মানুষের মাঝে বেড়েছে আতঙ্ক। নগরীতে মোটরসাইকেল ব্যবহার করে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়ে দ্রুতই সটকে পড়ছে অপরাধীরা। গত শুক্রবার গাজীপুরের শ্রীপুরে বাড়ি নির্মাণের সময় প্রবাসীর কাছে দাবিকৃত চাঁদা না পেয়ে তার পরিবারের ৯ জনকে কুপিয়ে জখম করেছে দাগী সন্ত্রাসীরা। এছাড়াও গতকাল শনিবার নরসিংদীতে চাঁদা না দেয়ায় এক পাওয়ারলুম কারখানা মালিককে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে চাঁদাবাজরা। হত্যার পর গুমের উদ্দেশ্যে লাশ ফেলতে গিয়ে জনতার হাতে আটক হয় অভিযুক্ত ৪ জন। পরে পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর দুর্বল নজরদারিতে নতুন ছক কষছে অপরাধীরা এমন মন্তব্য করছেন ভুক্তভোগীরা। এমন পরিস্থিতিতে গোয়েন্দাদের তৈরি করা চাঁদাবাজদের নতুন তালিকা এখন পুলিশের হাতে এসেছে। যেকোন সময় ওই চাঁদাবাজদের তালিকা নিয়ে গ্রেফতারে বিশেষ অভিযান চালাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
জানা গেছে, সারাদেশে হঠাৎ করেই দাগী সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এসব দাগী অপরাধীরা বাড়িঘরে ডাকাতি কিংবা লুটপাটই শুধু নয়, লুটের পর হত্যার ঘটনাও ঘটছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কোন তোয়াক্কাই করছে না এসব দাগী অপরাধীরা। পুলিশ প্রশাসনের জন্য রাজধানীসহ সারাদেশে অপরাধ ঠেকানো রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ ঘটনায় গতকাল শনিবার ভুক্তভোগী প্রবাসীর ছোট ভাই উমর ফারুক বাদী হয়ে ৫ জনকে অভিযুক্ত করে শ্রীপুর মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। সিঙ্গাপুর প্রবাসী রাসেল জানান, দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকার পর দেশে এসে গত ২৬ নভেম্বর বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করলে এলাকার রুবেল, রুমান, মোস্তফা, সুমন ও রমজান তার কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না পেয়ে তারা বাড়ি নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেয়। এ ঘটনায় প্রবাসী রাসেলের পিতা ইমান আলী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গত ১৯ ডিসেম্বর শ্রীপুর মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গত ২০ ডিসেম্বর সকালে অভিযুক্তরা সদলবলে হামলা চালিয়ে প্রবাসী রাসেলসহ তার পরিবারের ৯ সদস্যকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। আহতরা হলেন-রাসেলের বৃদ্ধ পিতা ইমান আলী (৬৫), চাচা হাসেন আলী (৬০), চাচাতো ভাই ফরিদ (২৮), বাদল (৩৫), প্রতিবন্ধী বাবুল মিয়া (৩৮), বড়ো ভাই জুয়েল (৪৫), সাহারা খাতুন (২৬), রহিমা আক্তার (৩০) ও শায়লা আক্তার (৩১)। আহতদের মধ্যে ৪ জনকে মুমূর্ষ অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যরা শ্রীপুর উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।
এ বিষয়ে শ্রীপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করেছি। ঘটনার ভিডিওসহ অন্যান্য আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন।
এদিকে নরসিংদীতে চাঁদা না দেয়ায় এক পাওয়ারলুম কারখানা মালিককে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। হত্যার পর গুমের উদ্দেশ্যে লাশ ফেলতে গিয়ে জনতার হাতে আটক হয় অভিযুক্তরা। পরে তাদের পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। গতকাল শনিবার দুপুরে মরদেহ উদ্ধার করে অভিযুক্তদের পুলিশ হেফাজতে নেয়। নিহত নুর মোহাম্মদ (৪৮) সদর উপজেলার মাধবদী কাঠালিয়া ইউনিয়নের কোলাতপুর গ্রামের আলকাস মিয়ার ছেলে। সে নূর মোহাম্মদ পাওয়ারলুম ও ট্রেক্সটাইল কারখানার মালিক ছিলেন। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- নরসিংদীর মাধবদী কাঠালিয়া গ্রামের রব্বানির ছেলে রবিন (২১), একই গ্রামের এবাদুল্লাহর ছেলে রুবেল (২২)। কাঠালিয়া ইউনিয়নের কোলাতপুর গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে আলামিন (৪২) ও আব্দুল রশিদের ছেলে রকিব হোসেন (২১)।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার মাধবদী কাঠালিয়া ইউনিয়নের কোলাতপুর গ্রামের আলকাস মিয়ার ছেলে নূর মোহাম্মদ নিজের পাওয়ারলুম ও ট্রেক্সটাইল কারখানার পরিচালনা করে আসছিল। এক মাস আগে এলাকার রবিন (১৯), রকিব, আলামিন ও রুবেলসহ বেশ কয়েকজন নুর মোহাম্মদের কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছে। চাঁদা দিতে অস্বীকার করে নূর মোহাম্মদ। সর্বশেষ ৫ লাখ টাকা দাবি করে তারা। নূর মোহাম্মদ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানান। এ নিয়ে তাদের সাথে কারখানা মালিকের দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এরই জেরে গত শুক্রবার রাতে নূর মোহাম্মদকে ফোন করে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে পাশের একটি বন্ধ কারখানায় নিয়ে ফের চাঁদা দাবি করে রুবেল, রকিব, রবিন, আলামিন ও অজ্ঞাতনামা ১ জনসহ ৫ জন। এ সময় তারা নূর মোহাম্মদকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
মাধবদী সদর মডেল থানার অফিসার্স ইনচার্জ মো. নজরুল ইসলাম বলেন, পাওয়ারলুম মালিক নুর মোহাম্মদকে হত্যার অভিযোগে ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে একজন ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবির কথা জানিয়েছে। বাকিরা অন্য কথা বলছে। সবগুলো বিষয় তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এছাড়াও গত শুক্রবার রাতে সাভারে ওয়েলকাম পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি চলন্ত বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আহতদের উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী অনুপ সরকার দীপ বলেন, গত শুক্রবার রাত পৌনে সাতটার দিকে রেডিও কলোনি থেকে তিনজন ডাকাত যাত্রীবাহী লোকাল বাসে উঠে যাত্রীদের সব মালামাল লুট করে। বাসের ড্রাইভারও ডাকাতদের এমএইচ গেটে নামিয়ে দিয়ে পালিয়েছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে হেলপারকে আটক করা হয়েছে। একজন বেশ আহত হয়েছেন।
জাবি মেডিকেল সেন্টারে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. নিংতম ও ডা. মামুন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা একজন রোগীকে মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে আসেন। তিনি গুরুতর আহত ছিলেন। আমরা তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে এনাম হসপিটালে পাঠিয়ে দিই।
এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. হাসান মাহবুব বলেন, শামীম নামে ছুরিকাঘাতে আহত একজনকে আনা হয়েছে। তার বুকসহ বিভিন্ন স্থানে একাধিক ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
তবে গত বৃহস্পতিবার দিনদুপুরে ব্যাংকের মধ্যে ঢুকে ডাকাতির নাটকের ঘটনায় বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের এলাকাবাসীরা। খেলনা পিস্তল নিয়ে শিশু-কিশোররা যে এমন দুর্ধর্ষ কাজ করতে পারে, তা ভেবে হতাশ অনেকে। কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া পাকাপোল এলাকায় রূপালী ব্যাংকের জিনজিরা শাখার সামনে গিয়ে দেখা যায় স্থানীয়রা এমন ঘটনায় হতাশার সাথে সাথে ক্ষোভের কথাও জানান। পুলিশের ভূমিকায় সন্তুষ্টের কথা জানান স্থানীয়রা। তারা বলেন, পুলিশ যথেষ্ট ধৈর্য নিয়ে ডাকাতদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের আত্মসমর্পণ করাতে বাধ্য করে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানান, রাজধানীতে চাঁদাবাজির ঘটনা বেড়েছে। ঢাকা শহরে চাঁদাবাজদের নতুন তালিকা তৈরি হয়েছে। ওই নতুন তালিকা এখন পুলিশের হাতে। দুই-তিন দিনের মধ্যে চাঁদাবাজদের নতুন তালিকা ধরে অভিযান শুরু হবে।