
যারা এটা বোঝেন- তারা যা মনে করার করেন, আমাকে পাগল মনেও করতে পারেন; কিন্তু আমি যেটা বলেছি, দেশটা সামনে বিপর্যয়ের দিকেই যেতে পারে, বলেন তিনি
দেশের মানুষকে বিভক্ত করে সংঘাতময় পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে মন্তব্য করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, যেকোনো সময় স্থিতিশীলতা ভেঙে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হতে পারে।
তিনি বলেছেন, আমরা অনেক দিন ধরে লক্ষ্য করছি, সারা দেশের মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হচ্ছে। একটি ভাগকে বলা হচ্ছে দেশপ্রিয়, আরেকটি ভাগকে বলা হচ্ছে দেশপ্রেমিক নয় বা দেশদ্রোহী।
এটাকে এভাবে বিভাজিত করছে যে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় যারা বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হয়েছে- তারা দেশ প্রেমিক। এদের সংখ্যা কম নয়, অর্ধেকের কাছাকাছি হতে পারে। বাকি যারা নির্যাতিত হননি- তারা দেশপ্রেমিক নন; আর যারা পুরস্কৃত হয়েছেন- তারা দেশদ্রোহী। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বনানীতে জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছিলেন জি এম কাদের।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরের পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, দেশপ্রেমিকদের ফ্রিহ্যান্ড লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, যেকোনো ধরনের মিথ্যা মামলা, ব্যক্তিগতভাবে তাদের গালাগালি করা, অ্যাসল্ট করা, বাড়ি-ঘরে আক্রমণ করা, লুটতরাজ করা। তাদের সহায় সম্পত্তি দখল করা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করা, মিল-ফ্যাক্টরিতে আগুন দেওয়া, তাদের পার্টি অফিসে আগুন দেওয়া, তাদের কোনো রকম কাজ করতে না দেওয়া।
উপদেষ্টাদের মধ্যে অনেককে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি, তাদের অনেকে সৎ- দেশের জন্য কাজ করছেন। কিন্তু একটি অদৃশ্য শক্তি তাদের কাজের মধ্যে থাকছে। মনে হচ্ছে- তারা একরকম কাজ করছে, হচ্ছে আরেক রকম।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, পুলিশ, প্রশাসন ও জুডিশিয়ারি- তারা যেসকল কাজ করছে তা মনে হচ্ছে বাধ্য হয়ে করছে। কাজেই দেশকে শুধু দুভাগে ভাগ করা হয়নি; এক ভাগকে আরেক ভাগের উপর লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। সংঘাতপূর্ণ আবহাওয়া সৃষ্টি করা হয়েছে। সংঘাতময় আবহাওয়ায় অর্ধেক লোক একপাশে, আরেকভাগ অপর পাশে।
এই বিভাজন আপনি যদি ধরে রাখতে চান, আপনি ধরে রাখেন। এটা ২-৪ দিন, ১০ দিন, একবছর। এটাতে দেশে কখনোই স্থিতিময় পরিবেশ আসবে না। যেকোনো সময় স্থিতিশীলতা ভেঙে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হতে পারে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এমন একটা দেশ, যার সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে। আমাদের সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যা অনেক বেশি, যেখানে সামাজিক ও রাজনৈতিক নিরাপত্তা যদি না থাকে; তাহলে বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে- যেকোনো সময়। একটা মানবিক বিপর্যয়ের সময় আমরা দেখতে পারছি, দুর্ভাগ্য এটা আমরা কেউ চাইনি।
জি এম কাদের বলেন, প্রতিহিংসা আমাদের শেষ করতে হবে, অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে শেষ করবেন, আর বাকি অর্ধেক নিয়ে দেশ চালাবেন- এটা কি সম্ভব হবে? যারা এই দিবাস্বপ্ন দেখছেন, তাদেরকে আমি বলব- সামনের দিকে তাকিয়ে দেখুন কোথায় কী হয়।
আমাদের রাজনীতি করতে দিতে হবে, আমাদের সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করে দিন, আমাদের সমস্ত বিষয়াবলি প্রেসে আসতে দিন।
তিনি বলেন, মামলা করতে চান করেন, সঠিক লোককে ধরেন; কিন্তু শাস্তি দেওয়ার নামে প্রায়োরিটি এখানে দেওয়াতে দেশ বিভাজিত হচ্ছে, দেশে প্রতিহিংসা বাড়ানো হচ্ছে এবং হয়রানির মাধ্যমে একটি অংশকে যে ঘৃণা দিচ্ছেন, প্রতিশোধ নিচ্ছেন- তাদের মধ্যেও সেই প্রতিহিংসা সৃষ্টি হচ্ছে। তাদের মধ্যেও জিঘাংসা প্রতিশোধ জাগছে।
আগামী নির্বাচনে লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি হবে বলে মনে হচ্ছে না মন্তব্য করে জি এম কাদের বলেন, আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে গেছি, কালকে বক্তব্য শুনে মনে হলো আপনারা রিফর্ম করতে পারছেন না। রিফর্ম করতে গেলে এটা পার্লামেন্টে করতে হবে এবং পার্লামেন্টে সব দলের সহযোগিতা ছাড়া এটা পাস করানো সম্ভব হবে না।
রিফর্ম প্রোপোজাল পার্লামেন্টে দিতে হবে, এখন আপনারা নির্বাচনের দিকে যাচ্ছেন? জনগণের কাছ থেকে জনগণ যে ম্যান্ডেট দিয়েছিল- এটা যেকোনো কারণেই হোক- এটা ব্যর্থতার দিকে যাচ্ছে বলে আমার মনে হচ্ছে। নির্বাচনের কথা যেখানে, সেখানেও প্রশ্ন আসছে; নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে কি না। সেখানে প্রশ্ন আছে, এখন পর্যন্ত লেভেল প্লেইং ফিল্ড পাব বলে মনে করতে পারছি না।
তিনি বলেন, আমাদের গ্রাস রুট পর্যন্ত মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। এখনও দুজন আমাদের পার্টির লোক জেলে আছে। মিথ্যা মামলা, এটা সবাই জানে।
যারা মামলা দিচ্ছে তারাও জানে, আর যারা জামিন দিচ্ছে না- তারাও জানে। আমাদের সমাবেশ করতে দেওয়া হয় না। আমাদের বাধা দেওয়া হয়।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান কাদের বলেন, সংবাদপত্রে আমাদের উপর রেস্ট্রিকশন আছে; শেখ হাসিনার আমলে অনেক সংবাদপত্র স্বাধীনভাবে লিখেছে, এখন সেই সংবাদমাধ্যম স্বাধীনভাবে লিখতে পারছে না। আমরা এই আন্দোলনে ছিলাম।
প্রতিদিন আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি। আজকে দেশের মানুষ যে বৈষম্যের কথা বলে, আমি চার-পাঁচ বছর আগে থেকে এই বৈষম্যের কথা বলে আসছি।
তিনি বলেন, চব্বিশের আন্দোলনের পরে ছাত্র-জনতা কী চেয়েছিল? শেখ হাসিনার পতন এবং একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন। তার মাধ্যমে সরকার গঠন, যার মাধ্যমে একটি শাসন ব্যবস্থা; যেখানে এক ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত না করে- যাতে দানব তৈরি করা না হয়, সেই রকম একটি শাসন ব্যবস্থা। এটাই ছিল তাদের চাওয়া।
ছাত্রদের মধ্যে অনেকেই বলেছেন শুনেছি, ‘আমরা যুদ্ধ করেছি, এটা মুসলমান দেশ, আমরা ইসলাম কায়েম করব’। আমি বলতে চাই বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই মুসলমান। সেখানে ধর্মের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা-ভালোবাসা আছে। আমরা সাধারণ মানুষের সাথে মিশি, তারা কিন্তু ধর্মের ব্যাপারে অত্যন্ত সহানুভূতিশীল। ধর্মকর্ম পালনে তারা অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল, আন্তরিক; কিন্তু একেবারে ধর্মীয় কাঠামোর মধ্যে জীবন চালানো ইসলামি রুট হিসেবে চালানোর জন্য অনেকেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না।
জি এম কাদের বলেন, সেখানে আপনার কাজ হলো- নির্বাচন হবে, আপনি একটা এজেন্ডা দিবেন; নির্বাচনে মেনিফেস্টো হিসেবে যদি আপনাদের জনগণ ভোট দেয়- সংবিধান চেইঞ্জ করবেন।
আন্দোলন করে, করতে চাইলেও আগে থেকে জনগণকে জানাতে হবে যে আমরা ইসলামী শাসন ব্যবস্থার জন্য আন্দোলন করছি। তাদেরকে অন্ধকারে রেখে এটা করা সমীচীন নয়।
তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রায়োরিটি ছিল- অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন; একটি শাসন ব্যবস্থা, যেখানে কোনো একনায়কতন্ত্র থাকবে না। এটাই ছিল প্রায়োরিটি এবং বর্তমান সরকার এই প্রায়োরিটিটা মেনে নিয়েছিলেন এবং ডিক্লেয়ার দিয়েছিলেন- এভাবে কর্মসূচি শুরু করেছিলেন।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, এটাতে (রাষ্ট্রের) যেকোনো বড় ধরনের সংস্কারে জন্য দরকার জাতীয় ঐক্য। জাতিকে বিভাজিত করে আপনি কোনো বড় কাজ করতে পারবেন না। তারা এটাকেও একটা টার্গেট দিয়েছিল। কিন্তু আমরা দেখলাম তাদের টার্গেট এবং বাস্তব ফিল্ডের অবস্থা একটু ভিন্ন।
তারা বলছেন, কিন্তু প্রায়োরিটি দিচ্ছেন ছাত্র-জনতা যারা নিহত হয়েছেন, তাদের বিচার এবং শাস্তি, প্রতিশোধ। আমি বলেছিলাম আপনারা বিচার করুন- ন্যায়বিচার, বিচারের নামে প্রহসন করবেন না। তাহলে কোনো লাভ হবে না।
তিনি বলেন, মার্ডার কেস পলিটিক্যাল বা যাই হোক- এগুলোর কোনো মেয়াদ থাকে না। তাড়াহুড়ার কিছু নাই। আজকে আপনি ক্ষমতায় আছেন মার্ডার কেসে ঢুকিয়ে রাখবেন- পাঁচ বছর পর, ১০ বছর পর, ১৫ বছর পর পরে হলেও এগুলো আসবেই এবং মামলা ফেইস করতে হবে।
আপনারা যারা এই ঘটনার কথা বলছেন, এরপরে মার্ডার, আগের মার্ডার- এগুলোর বিচার হবেই। এগুলো নিয়ে তাড়াহুড়া করার কিছু নেই, দরকার নাই।
জিএম কাদের বলেন, এই হত্যাকাণ্ডকে ব্যবহার করে, এই শহীদদের আত্মত্যাগকে সামনে রেখে যেটা করা হচ্ছে- মিথ্যা মামলা দিয়ে লাখ লাখ মানুষকে, জেনে-শুনে মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ মানুষকে এবং তারপরে এটা নিয়ে দুর্নীতি হচ্ছে। এটা নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতিশোধ, ব্যক্তিগত প্রতিশোধ, সামাজিক, রাজনৈতিক- যেকোনো প্রতিশোধের জন্য এই মামলাগুলোকে ব্যবহার করা হচ্ছে।
শহীদের আত্মত্যাগ- তারা যেটির উপর ভিত্তি করে করেছে, সেটার উপর গুরুত্ব দেওয়া। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি যেকোনোভাবে জাতীয় ঐক্যকে বিঘ্নিত করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা দাবি করছি- আমরা নির্বাচন চাই। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনে পরিবেশ ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না। দেশে যে হিংসার পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে, যে হানাহানির পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে; সেই পরিবেশ সামনের দিকে দেশকে একটা বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
যারা এটা বোঝেন- তারা যা মনে করার করেন, আমাকে পাগল মনেও করতে পারেন; কিন্তু আমি যেটা বলেছি, দেশটা সামনে সেদিকেই যেতে পারে।
দেশের মানুষকে বিভক্ত করে সংঘাতময় পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে মন্তব্য করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, যেকোনো সময় স্থিতিশীলতা ভেঙে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হতে পারে।
তিনি বলেছেন, আমরা অনেক দিন ধরে লক্ষ্য করছি, সারা দেশের মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হচ্ছে। একটি ভাগকে বলা হচ্ছে দেশপ্রিয়, আরেকটি ভাগকে বলা হচ্ছে দেশপ্রেমিক নয় বা দেশদ্রোহী।
এটাকে এভাবে বিভাজিত করছে যে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় যারা বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হয়েছে- তারা দেশ প্রেমিক। এদের সংখ্যা কম নয়, অর্ধেকের কাছাকাছি হতে পারে। বাকি যারা নির্যাতিত হননি- তারা দেশপ্রেমিক নন; আর যারা পুরস্কৃত হয়েছেন- তারা দেশদ্রোহী। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বনানীতে জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছিলেন জি এম কাদের।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরের পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, দেশপ্রেমিকদের ফ্রিহ্যান্ড লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, যেকোনো ধরনের মিথ্যা মামলা, ব্যক্তিগতভাবে তাদের গালাগালি করা, অ্যাসল্ট করা, বাড়ি-ঘরে আক্রমণ করা, লুটতরাজ করা। তাদের সহায় সম্পত্তি দখল করা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করা, মিল-ফ্যাক্টরিতে আগুন দেওয়া, তাদের পার্টি অফিসে আগুন দেওয়া, তাদের কোনো রকম কাজ করতে না দেওয়া।
উপদেষ্টাদের মধ্যে অনেককে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি, তাদের অনেকে সৎ- দেশের জন্য কাজ করছেন। কিন্তু একটি অদৃশ্য শক্তি তাদের কাজের মধ্যে থাকছে। মনে হচ্ছে- তারা একরকম কাজ করছে, হচ্ছে আরেক রকম।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, পুলিশ, প্রশাসন ও জুডিশিয়ারি- তারা যেসকল কাজ করছে তা মনে হচ্ছে বাধ্য হয়ে করছে। কাজেই দেশকে শুধু দুভাগে ভাগ করা হয়নি; এক ভাগকে আরেক ভাগের উপর লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। সংঘাতপূর্ণ আবহাওয়া সৃষ্টি করা হয়েছে। সংঘাতময় আবহাওয়ায় অর্ধেক লোক একপাশে, আরেকভাগ অপর পাশে।
এই বিভাজন আপনি যদি ধরে রাখতে চান, আপনি ধরে রাখেন। এটা ২-৪ দিন, ১০ দিন, একবছর। এটাতে দেশে কখনোই স্থিতিময় পরিবেশ আসবে না। যেকোনো সময় স্থিতিশীলতা ভেঙে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হতে পারে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এমন একটা দেশ, যার সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে। আমাদের সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যা অনেক বেশি, যেখানে সামাজিক ও রাজনৈতিক নিরাপত্তা যদি না থাকে; তাহলে বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে- যেকোনো সময়। একটা মানবিক বিপর্যয়ের সময় আমরা দেখতে পারছি, দুর্ভাগ্য এটা আমরা কেউ চাইনি।
জি এম কাদের বলেন, প্রতিহিংসা আমাদের শেষ করতে হবে, অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে শেষ করবেন, আর বাকি অর্ধেক নিয়ে দেশ চালাবেন- এটা কি সম্ভব হবে? যারা এই দিবাস্বপ্ন দেখছেন, তাদেরকে আমি বলব- সামনের দিকে তাকিয়ে দেখুন কোথায় কী হয়।
আমাদের রাজনীতি করতে দিতে হবে, আমাদের সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করে দিন, আমাদের সমস্ত বিষয়াবলি প্রেসে আসতে দিন।
তিনি বলেন, মামলা করতে চান করেন, সঠিক লোককে ধরেন; কিন্তু শাস্তি দেওয়ার নামে প্রায়োরিটি এখানে দেওয়াতে দেশ বিভাজিত হচ্ছে, দেশে প্রতিহিংসা বাড়ানো হচ্ছে এবং হয়রানির মাধ্যমে একটি অংশকে যে ঘৃণা দিচ্ছেন, প্রতিশোধ নিচ্ছেন- তাদের মধ্যেও সেই প্রতিহিংসা সৃষ্টি হচ্ছে। তাদের মধ্যেও জিঘাংসা প্রতিশোধ জাগছে।
আগামী নির্বাচনে লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি হবে বলে মনে হচ্ছে না মন্তব্য করে জি এম কাদের বলেন, আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে গেছি, কালকে বক্তব্য শুনে মনে হলো আপনারা রিফর্ম করতে পারছেন না। রিফর্ম করতে গেলে এটা পার্লামেন্টে করতে হবে এবং পার্লামেন্টে সব দলের সহযোগিতা ছাড়া এটা পাস করানো সম্ভব হবে না।
রিফর্ম প্রোপোজাল পার্লামেন্টে দিতে হবে, এখন আপনারা নির্বাচনের দিকে যাচ্ছেন? জনগণের কাছ থেকে জনগণ যে ম্যান্ডেট দিয়েছিল- এটা যেকোনো কারণেই হোক- এটা ব্যর্থতার দিকে যাচ্ছে বলে আমার মনে হচ্ছে। নির্বাচনের কথা যেখানে, সেখানেও প্রশ্ন আসছে; নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে কি না। সেখানে প্রশ্ন আছে, এখন পর্যন্ত লেভেল প্লেইং ফিল্ড পাব বলে মনে করতে পারছি না।
তিনি বলেন, আমাদের গ্রাস রুট পর্যন্ত মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। এখনও দুজন আমাদের পার্টির লোক জেলে আছে। মিথ্যা মামলা, এটা সবাই জানে।
যারা মামলা দিচ্ছে তারাও জানে, আর যারা জামিন দিচ্ছে না- তারাও জানে। আমাদের সমাবেশ করতে দেওয়া হয় না। আমাদের বাধা দেওয়া হয়।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান কাদের বলেন, সংবাদপত্রে আমাদের উপর রেস্ট্রিকশন আছে; শেখ হাসিনার আমলে অনেক সংবাদপত্র স্বাধীনভাবে লিখেছে, এখন সেই সংবাদমাধ্যম স্বাধীনভাবে লিখতে পারছে না। আমরা এই আন্দোলনে ছিলাম।
প্রতিদিন আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি। আজকে দেশের মানুষ যে বৈষম্যের কথা বলে, আমি চার-পাঁচ বছর আগে থেকে এই বৈষম্যের কথা বলে আসছি।
তিনি বলেন, চব্বিশের আন্দোলনের পরে ছাত্র-জনতা কী চেয়েছিল? শেখ হাসিনার পতন এবং একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন। তার মাধ্যমে সরকার গঠন, যার মাধ্যমে একটি শাসন ব্যবস্থা; যেখানে এক ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত না করে- যাতে দানব তৈরি করা না হয়, সেই রকম একটি শাসন ব্যবস্থা। এটাই ছিল তাদের চাওয়া।
ছাত্রদের মধ্যে অনেকেই বলেছেন শুনেছি, ‘আমরা যুদ্ধ করেছি, এটা মুসলমান দেশ, আমরা ইসলাম কায়েম করব’। আমি বলতে চাই বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই মুসলমান। সেখানে ধর্মের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা-ভালোবাসা আছে। আমরা সাধারণ মানুষের সাথে মিশি, তারা কিন্তু ধর্মের ব্যাপারে অত্যন্ত সহানুভূতিশীল। ধর্মকর্ম পালনে তারা অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল, আন্তরিক; কিন্তু একেবারে ধর্মীয় কাঠামোর মধ্যে জীবন চালানো ইসলামি রুট হিসেবে চালানোর জন্য অনেকেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না।
জি এম কাদের বলেন, সেখানে আপনার কাজ হলো- নির্বাচন হবে, আপনি একটা এজেন্ডা দিবেন; নির্বাচনে মেনিফেস্টো হিসেবে যদি আপনাদের জনগণ ভোট দেয়- সংবিধান চেইঞ্জ করবেন।
আন্দোলন করে, করতে চাইলেও আগে থেকে জনগণকে জানাতে হবে যে আমরা ইসলামী শাসন ব্যবস্থার জন্য আন্দোলন করছি। তাদেরকে অন্ধকারে রেখে এটা করা সমীচীন নয়।
তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রায়োরিটি ছিল- অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন; একটি শাসন ব্যবস্থা, যেখানে কোনো একনায়কতন্ত্র থাকবে না। এটাই ছিল প্রায়োরিটি এবং বর্তমান সরকার এই প্রায়োরিটিটা মেনে নিয়েছিলেন এবং ডিক্লেয়ার দিয়েছিলেন- এভাবে কর্মসূচি শুরু করেছিলেন।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, এটাতে (রাষ্ট্রের) যেকোনো বড় ধরনের সংস্কারে জন্য দরকার জাতীয় ঐক্য। জাতিকে বিভাজিত করে আপনি কোনো বড় কাজ করতে পারবেন না। তারা এটাকেও একটা টার্গেট দিয়েছিল। কিন্তু আমরা দেখলাম তাদের টার্গেট এবং বাস্তব ফিল্ডের অবস্থা একটু ভিন্ন।
তারা বলছেন, কিন্তু প্রায়োরিটি দিচ্ছেন ছাত্র-জনতা যারা নিহত হয়েছেন, তাদের বিচার এবং শাস্তি, প্রতিশোধ। আমি বলেছিলাম আপনারা বিচার করুন- ন্যায়বিচার, বিচারের নামে প্রহসন করবেন না। তাহলে কোনো লাভ হবে না।
তিনি বলেন, মার্ডার কেস পলিটিক্যাল বা যাই হোক- এগুলোর কোনো মেয়াদ থাকে না। তাড়াহুড়ার কিছু নাই। আজকে আপনি ক্ষমতায় আছেন মার্ডার কেসে ঢুকিয়ে রাখবেন- পাঁচ বছর পর, ১০ বছর পর, ১৫ বছর পর পরে হলেও এগুলো আসবেই এবং মামলা ফেইস করতে হবে।
আপনারা যারা এই ঘটনার কথা বলছেন, এরপরে মার্ডার, আগের মার্ডার- এগুলোর বিচার হবেই। এগুলো নিয়ে তাড়াহুড়া করার কিছু নেই, দরকার নাই।
জিএম কাদের বলেন, এই হত্যাকাণ্ডকে ব্যবহার করে, এই শহীদদের আত্মত্যাগকে সামনে রেখে যেটা করা হচ্ছে- মিথ্যা মামলা দিয়ে লাখ লাখ মানুষকে, জেনে-শুনে মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ মানুষকে এবং তারপরে এটা নিয়ে দুর্নীতি হচ্ছে। এটা নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতিশোধ, ব্যক্তিগত প্রতিশোধ, সামাজিক, রাজনৈতিক- যেকোনো প্রতিশোধের জন্য এই মামলাগুলোকে ব্যবহার করা হচ্ছে।
শহীদের আত্মত্যাগ- তারা যেটির উপর ভিত্তি করে করেছে, সেটার উপর গুরুত্ব দেওয়া। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি যেকোনোভাবে জাতীয় ঐক্যকে বিঘ্নিত করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা দাবি করছি- আমরা নির্বাচন চাই। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনে পরিবেশ ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না। দেশে যে হিংসার পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে, যে হানাহানির পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে; সেই পরিবেশ সামনের দিকে দেশকে একটা বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
যারা এটা বোঝেন- তারা যা মনে করার করেন, আমাকে পাগল মনেও করতে পারেন; কিন্তু আমি যেটা বলেছি, দেশটা সামনে সেদিকেই যেতে পারে।