সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এতে শুধু কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নয়, অবসরপ্রাপ্ত পেনশনভোগীরাও এই সুবিধা পাবেন। পিয়ন থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব পর্যন্ত সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এই মহার্ঘ ভাতার আওতায় আসবেন। তবে এর পরিমাণে কিছু ভিন্নতা থাকতে পারে, যেখানে কর্মকর্তাদের জন্য ভাতা কিছুটা কম এবং কর্মচারীদের জন্য কিছুটা বেশি হতে পারে।
গতকাল রোববার সচিবালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মূল বেতনের সঙ্গে অতিরিক্ত অর্থ পাবেন। মূলত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জীবনযাপনে সৃষ্ট চাপ মোকাবিলার জন্য এই ভাতা দেয়া হচ্ছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এ কমিটি গঠন করে অফিস আদেশ জারি করেছে। প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিবকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের কমিটিতে রাখা হয়েছে-জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, অর্থ সচিব, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ এবং আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের প্রবিধি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে।
সরকারি কাজে নিয়োজিত জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫-এর আওতাভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা সংস্থানের বিষয়টি পর্যালোচনা করে সুপারিশ করার জন্য এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, মহার্ঘ ভাতার প্রযোজ্যতা ও প্রাপ্যতার বিষয় পর্যালোচনা করবে এবং প্রয়োজনীয় সুপারিশ দাখিল করবে কমিটি। প্রয়োজনে এক বা একাধিক কর্মকর্তাকে আত্তীকরণ করতে পারবে।
সাধারণত পাঁচ বছর অন্তর একটি নতুন বেতন স্কেল ঘোষণা করার কথা। সর্বশেষ ২০১৫ সালের জুলাইয়ে অষ্টম বেতন স্কেল কার্যকর হয়। সে সময় নতুন স্কেলের সুপারিশ না করলেও মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিয়ে বার্ষিক বৃদ্ধির (ইনক্রিমেন্ট) প্রস্তাব ছিল বেতন কমিশনের। ২০২৩ সালের জুলাইয়ের আগ পর্যন্ত প্রতিবছর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট পান। এদিকে বাড়তি মূল্যস্ফীতিতে বেতন বাড়াতে নতুন পে স্কেল ঘোষণাসহ বেশ কিছু দাবি জানিয়ে আসছিলেন সরকারি চাকরিজীবীরা।
এমন পরিস্থিতিতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা দেয়ার পরিকল্পনা করেছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। পরে তা কার্যকর না হলেও মূল বেতনের ৫ শতাংশ বাড়তি প্রণোদনা দেয়া হয়। এতে দশম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের বেতন বাড়ে ৪১২ থেকে ৮০০ টাকা। কিন্তু মূল্যস্ফীতির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ন্যূনতম এক হাজার টাকা ও পেনশনভোগীদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৫০০ টাকা করা হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রায় আড়াই বছর ধরে দেশে ৯ শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। এ প্রেক্ষাপটে ২০২৩ সালের জুলাইয়ে বিশেষ প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়, যা এ অর্থবছরেও চলমান। তবে প্রায় ৯ বছর নতুন পে স্কেল না হওয়ায় বাড়তি মূল্যস্ফীতিতে জীবনযাপনে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মকর্তা-কর্মচারী। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করাও যৌক্তিক হবে না। এ অবস্থায় গঠিত কমিটি মহার্ঘ ভাতার পরিমাণ নির্ধারণের পাশাপাশি বাড়তি ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট বলবৎ থাকবে কিনা, তা চূড়ান্ত করবে।
সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত নভেম্বরে সারাদেশে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে নভেম্বরে সারাদেশে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
সাধারণত মহার্ঘ ভাতা বিশেষ পরিস্থিতিতে দেয়া হয়। তাই এ ভাতা মূল বেতনের সঙ্গে যুক্ত হয় না। ফলে তাদের বাড়ি ভাড়াসহ অন্য কোনো ভাতার হেরফের হয় না।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদফতর, দফতর, করপোরেশন ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ কর্মচারী কর্মরত। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে তাদের বেতন-ভাতা বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮১ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। বাজেটে মহার্ঘ ভাতায় কোনো বরাদ্দ নেই। তবে কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এ হার চূড়ান্ত করে পরিচালন বাজেটের অন্য খাতের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।
এ উপলক্ষে গঠিত কমিটি আগামী সপ্তাহে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে। দুই থেকে তিনটি বৈঠকে এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমান।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রবের দাম বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে জীবনযাপনে কুলিয়ে ওঠার জন্য যে বিশেষ ভাতা দেওয়া হয়, তাকে মহার্ঘ ভাতা বলা হয়। এতে মূল বেতনের নির্দিষ্ট শতকরা অংশ বেতনের সঙ্গে অতিরিক্ত দেয়া হয়। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেয়া হলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়বে।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমান বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা আছেন, তাদের জন্য একটি সুখবর দিতে চাই। যেহেতু পে কমিশন করা একটি দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার, অন্তর্বর্তী সময়ে একটি মহার্ঘ ভাতা কমিটি গঠন করা হয়েছে, যেখানে আমিও আছি। আমরা সামনের সপ্তাহে প্রথম সভা করব।
সর্বোচ্চ ধাপ ও সর্বনিম্ন ধাপ এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ধাপ কীভাবে ঠিক করা হবে, তার কৌশল বের করা হবে বলে জানিয়ে সচিব বলেন, এবার যাতে এই মহার্ঘ ভাতার সুবিধা পেনশনভোগীরাও পান, সে ব্যাপারে সরকার একমত।
সচিব বলেন, তাদের চেষ্টা থাকবে সম্ভাব্য সংক্ষিপ্ত সময়ে সরকারকে সুপারিশ করার। সুপারিশ দিলে বাস্তবায়ন করবে সরকার।
সাংবাদিকেরা এ বিষয়ে আরও স্পষ্ট হওয়ার জন্য জানতে চান, সরকার কি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে? জবাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব বলেন, অবশ্যই। মহার্ঘ ভাতা দেয়া হবে বলেই তো কমিটি করা হয়েছে।
কত শতাংশ দেয়া হবে, সেটি এই কমিটি সুপারিশ করবে বলে জানান মোখলেস উর রহমান। তবে এই কমিটির সুপারিশ কতটুকু রাখা হবে, সেটি সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এ ক্ষেত্রে কিছুদিন আগে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা দেয়ার সুপারিশের কথা উল্লেখ করেন তিনি।
সচিব বলেন, কর্মকর্তাদের মূল বেতন ও কর্মচারীদের মূল বেতন এক নয়। এই মহার্ঘ ভাতায় হয়তো এমন হতে পারে যে কর্মচারীদের একটু বেশি থাকতে পারে।
কমিটির প্রধান হিসেবে আছেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া।
মহার্ঘ ভাতা পর্যালোচনা ও সুপারিশ প্রদানের জন্য প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মুখ্য সচিবকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে মোখলেস উর রহমান বলেন, কমিটিতে আমি আছি, অর্থ সচিব ও লেজিসলেটিভ বিভাগের সচিব আছেন।
মহার্ঘ ভাতা কি সরকার দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এমন প্রশ্নে জনপ্রশাসন সচিব বলেন, অবশ্যই। মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হবে বলেই তো কমিটি গঠন করেছে। কত শতাংশ দেয়া হবে-সে বিষয়ে তিনি বলেন, সেটা এই কমিটি সুপারিশ করবে। একটা আপার লিমিট এবং একটা লোয়ার লিমিট দেয়া হবে, অবশ্যই দেয়া হবে।
মোখলেস উর রহমান বলেন, আপনার জানেন অফিসারের স্কেল এবং স্টাফের স্কেল সমান না। এ মহার্ঘ ভাতায় হয়তো এমন হতে পারে যে স্টাফদের একটু বেশি হতে পারে। এটা একটা বিষয় থাকতে পারে।
সিনিয়র সচিব বলেন, আগে কখনো এটা ছিল কি না, এবার আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি পেনশনাররাও যেন বেনিফিট পায়। কারণ পেনশনাররা এমনি যখন যান চিকিৎসা, এটা-সেটা, টাকা-পয়সা, ভাড়া, পেনশনারদের বেশি দরকার। একটা লোক চাকরিতে থাকলে পার্ট-টাইম অনেক কিছু করতে পারে। কিন্তু পেনশনাররা এমনি অসুস্থ, বয়স্ক। তাদের মেডিসিন কস্ট (চিকিৎসা খরচ) প্রতি মাসে অনেক বেশি লাগে। একেবারে পিওন থেকে হায়েস্ট লেভেল কেবিনেট সেক্রেটারি পর্যন্ত সবাই পাবে। তবে এটার সø্যাব দুইটা হতে পারে-অফিসারদের জন্য একটু কম যেন ব্যালান্সিং হয়।
এই কমিটি কত দিন কাজ করবে-জানতে চাইলে সিনিয়র সচিব বলেন, আমরা যদি সামনের সপ্তাহে বসি তাহলে দুইটা-তিনটার বেশি মিটিং লাগবে না।
জ্যেষ্ঠ সচিব জানান, বঞ্চনা নিরসন কমিটির সুপারিশ পেয়েছে প্রধান উপদেষ্টা। সুপারিশ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত দিবেন তিনি। তবে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
এদিকে, মহার্ঘ ভাতা দেয়ার পরিকল্পনা করায় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ। পরিষদের সভাপতি মো. বাদিউল কবির ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকারের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই।
গতকাল রোববার সচিবালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মূল বেতনের সঙ্গে অতিরিক্ত অর্থ পাবেন। মূলত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জীবনযাপনে সৃষ্ট চাপ মোকাবিলার জন্য এই ভাতা দেয়া হচ্ছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এ কমিটি গঠন করে অফিস আদেশ জারি করেছে। প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিবকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের কমিটিতে রাখা হয়েছে-জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, অর্থ সচিব, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ এবং আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের প্রবিধি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে।
সরকারি কাজে নিয়োজিত জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫-এর আওতাভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা সংস্থানের বিষয়টি পর্যালোচনা করে সুপারিশ করার জন্য এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, মহার্ঘ ভাতার প্রযোজ্যতা ও প্রাপ্যতার বিষয় পর্যালোচনা করবে এবং প্রয়োজনীয় সুপারিশ দাখিল করবে কমিটি। প্রয়োজনে এক বা একাধিক কর্মকর্তাকে আত্তীকরণ করতে পারবে।
সাধারণত পাঁচ বছর অন্তর একটি নতুন বেতন স্কেল ঘোষণা করার কথা। সর্বশেষ ২০১৫ সালের জুলাইয়ে অষ্টম বেতন স্কেল কার্যকর হয়। সে সময় নতুন স্কেলের সুপারিশ না করলেও মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিয়ে বার্ষিক বৃদ্ধির (ইনক্রিমেন্ট) প্রস্তাব ছিল বেতন কমিশনের। ২০২৩ সালের জুলাইয়ের আগ পর্যন্ত প্রতিবছর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট পান। এদিকে বাড়তি মূল্যস্ফীতিতে বেতন বাড়াতে নতুন পে স্কেল ঘোষণাসহ বেশ কিছু দাবি জানিয়ে আসছিলেন সরকারি চাকরিজীবীরা।
এমন পরিস্থিতিতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা দেয়ার পরিকল্পনা করেছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। পরে তা কার্যকর না হলেও মূল বেতনের ৫ শতাংশ বাড়তি প্রণোদনা দেয়া হয়। এতে দশম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের বেতন বাড়ে ৪১২ থেকে ৮০০ টাকা। কিন্তু মূল্যস্ফীতির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ন্যূনতম এক হাজার টাকা ও পেনশনভোগীদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৫০০ টাকা করা হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রায় আড়াই বছর ধরে দেশে ৯ শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। এ প্রেক্ষাপটে ২০২৩ সালের জুলাইয়ে বিশেষ প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়, যা এ অর্থবছরেও চলমান। তবে প্রায় ৯ বছর নতুন পে স্কেল না হওয়ায় বাড়তি মূল্যস্ফীতিতে জীবনযাপনে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মকর্তা-কর্মচারী। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করাও যৌক্তিক হবে না। এ অবস্থায় গঠিত কমিটি মহার্ঘ ভাতার পরিমাণ নির্ধারণের পাশাপাশি বাড়তি ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট বলবৎ থাকবে কিনা, তা চূড়ান্ত করবে।
সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত নভেম্বরে সারাদেশে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে নভেম্বরে সারাদেশে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
সাধারণত মহার্ঘ ভাতা বিশেষ পরিস্থিতিতে দেয়া হয়। তাই এ ভাতা মূল বেতনের সঙ্গে যুক্ত হয় না। ফলে তাদের বাড়ি ভাড়াসহ অন্য কোনো ভাতার হেরফের হয় না।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদফতর, দফতর, করপোরেশন ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ কর্মচারী কর্মরত। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে তাদের বেতন-ভাতা বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮১ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। বাজেটে মহার্ঘ ভাতায় কোনো বরাদ্দ নেই। তবে কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এ হার চূড়ান্ত করে পরিচালন বাজেটের অন্য খাতের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।
এ উপলক্ষে গঠিত কমিটি আগামী সপ্তাহে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে। দুই থেকে তিনটি বৈঠকে এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমান।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রবের দাম বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে জীবনযাপনে কুলিয়ে ওঠার জন্য যে বিশেষ ভাতা দেওয়া হয়, তাকে মহার্ঘ ভাতা বলা হয়। এতে মূল বেতনের নির্দিষ্ট শতকরা অংশ বেতনের সঙ্গে অতিরিক্ত দেয়া হয়। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেয়া হলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়বে।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমান বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা আছেন, তাদের জন্য একটি সুখবর দিতে চাই। যেহেতু পে কমিশন করা একটি দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার, অন্তর্বর্তী সময়ে একটি মহার্ঘ ভাতা কমিটি গঠন করা হয়েছে, যেখানে আমিও আছি। আমরা সামনের সপ্তাহে প্রথম সভা করব।
সর্বোচ্চ ধাপ ও সর্বনিম্ন ধাপ এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ধাপ কীভাবে ঠিক করা হবে, তার কৌশল বের করা হবে বলে জানিয়ে সচিব বলেন, এবার যাতে এই মহার্ঘ ভাতার সুবিধা পেনশনভোগীরাও পান, সে ব্যাপারে সরকার একমত।
সচিব বলেন, তাদের চেষ্টা থাকবে সম্ভাব্য সংক্ষিপ্ত সময়ে সরকারকে সুপারিশ করার। সুপারিশ দিলে বাস্তবায়ন করবে সরকার।
সাংবাদিকেরা এ বিষয়ে আরও স্পষ্ট হওয়ার জন্য জানতে চান, সরকার কি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে? জবাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব বলেন, অবশ্যই। মহার্ঘ ভাতা দেয়া হবে বলেই তো কমিটি করা হয়েছে।
কত শতাংশ দেয়া হবে, সেটি এই কমিটি সুপারিশ করবে বলে জানান মোখলেস উর রহমান। তবে এই কমিটির সুপারিশ কতটুকু রাখা হবে, সেটি সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এ ক্ষেত্রে কিছুদিন আগে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা দেয়ার সুপারিশের কথা উল্লেখ করেন তিনি।
সচিব বলেন, কর্মকর্তাদের মূল বেতন ও কর্মচারীদের মূল বেতন এক নয়। এই মহার্ঘ ভাতায় হয়তো এমন হতে পারে যে কর্মচারীদের একটু বেশি থাকতে পারে।
কমিটির প্রধান হিসেবে আছেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া।
মহার্ঘ ভাতা পর্যালোচনা ও সুপারিশ প্রদানের জন্য প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মুখ্য সচিবকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে মোখলেস উর রহমান বলেন, কমিটিতে আমি আছি, অর্থ সচিব ও লেজিসলেটিভ বিভাগের সচিব আছেন।
মহার্ঘ ভাতা কি সরকার দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এমন প্রশ্নে জনপ্রশাসন সচিব বলেন, অবশ্যই। মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হবে বলেই তো কমিটি গঠন করেছে। কত শতাংশ দেয়া হবে-সে বিষয়ে তিনি বলেন, সেটা এই কমিটি সুপারিশ করবে। একটা আপার লিমিট এবং একটা লোয়ার লিমিট দেয়া হবে, অবশ্যই দেয়া হবে।
মোখলেস উর রহমান বলেন, আপনার জানেন অফিসারের স্কেল এবং স্টাফের স্কেল সমান না। এ মহার্ঘ ভাতায় হয়তো এমন হতে পারে যে স্টাফদের একটু বেশি হতে পারে। এটা একটা বিষয় থাকতে পারে।
সিনিয়র সচিব বলেন, আগে কখনো এটা ছিল কি না, এবার আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি পেনশনাররাও যেন বেনিফিট পায়। কারণ পেনশনাররা এমনি যখন যান চিকিৎসা, এটা-সেটা, টাকা-পয়সা, ভাড়া, পেনশনারদের বেশি দরকার। একটা লোক চাকরিতে থাকলে পার্ট-টাইম অনেক কিছু করতে পারে। কিন্তু পেনশনাররা এমনি অসুস্থ, বয়স্ক। তাদের মেডিসিন কস্ট (চিকিৎসা খরচ) প্রতি মাসে অনেক বেশি লাগে। একেবারে পিওন থেকে হায়েস্ট লেভেল কেবিনেট সেক্রেটারি পর্যন্ত সবাই পাবে। তবে এটার সø্যাব দুইটা হতে পারে-অফিসারদের জন্য একটু কম যেন ব্যালান্সিং হয়।
এই কমিটি কত দিন কাজ করবে-জানতে চাইলে সিনিয়র সচিব বলেন, আমরা যদি সামনের সপ্তাহে বসি তাহলে দুইটা-তিনটার বেশি মিটিং লাগবে না।
জ্যেষ্ঠ সচিব জানান, বঞ্চনা নিরসন কমিটির সুপারিশ পেয়েছে প্রধান উপদেষ্টা। সুপারিশ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত দিবেন তিনি। তবে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
এদিকে, মহার্ঘ ভাতা দেয়ার পরিকল্পনা করায় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ। পরিষদের সভাপতি মো. বাদিউল কবির ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকারের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই।