
বাংলাদেশে গত কয়েকদিনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়ানক অবনতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় গত কয়েকদিনে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ারের সই করা বিবৃতিতে এসব কথা বলেন তিনি। মান্না বলেন, গত ১৮ নভেম্বর ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের ডেঙ্গু আক্রান্ত ছাত্র অভিজিৎ মারা যান। মৃত্যুর জন্য চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগের রেশ ধরে গত কয়েকদিনে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ, ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজে যে নজিরবিহীন নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছিল, তা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে না পারলেও এ পর্যন্ত ৮ হাজার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে। তিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরাও দায়িত্বশীল আচরণ করেননি। যে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে অভিজিত মারা গেলেন, সেই ডেঙ্গুতে সারা দেশে এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা প্রায় ৫০০। এরই মধ্যে হাইকোর্টের আদেশে ব্যাটারিচালিত রিকশা নিষিদ্ধ ও চলাচলে বিধিনিষেধ দেশের প্রায় ৬০ লাখ এবং ঢাকার প্রায় ১৫ লাখ রিকশা চালককে বিক্ষুব্ধ করেছে। বিগত স্বৈরাচার সরকারের মতো ব্যাটারিচালিত রিকশার যন্ত্রাংশ আমদানি এবং বিক্রিরর ওপর বিধিনিষেধ আরোপ না করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে। পতিত স্বৈরাচার এবং তাদের দোসররা এই সুযোগগুলোকে কাজে লাগিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। কিন্তু এর দায় অবশ্যই সরকারের ওপর বর্তায়। ‘এত বিশৃঙ্খলা কেন’, প্রশ্ন রেখে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মান্না বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের কেউ কেউ বলছেন, কোনও কোনও পক্ষ গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন অংশে অরাজকতা সৃষ্টি করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এমনকি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার ভাষণে বলেছেন, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে। তাহলে সরকার কেন ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে বিশেষ সেই পক্ষগুলোর বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না? সরকারকে সতর্ক করে মান্না বলেন, ভুলে গেলে চলবে না যে, পরাজিত শক্তি এখনও শক্তিশালী। তারা দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ উপার্জন করেছে। তারা অর্থপাচার করেছে। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থায় এখনও তাদের দোসররা বহাল তবিয়তে আছে। এদের একটি অংশ তাদের বেআইনি কার্যকলাপের সহযোগী ছিল। ফলে তারা সুযোগ পেলেই পতিত স্বৈরাচারের পক্ষে কাজ করতে পারে। ক্ষমতাচ্যুত গোষ্ঠী কখনোই চায় না অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তার লক্ষ্যে পৌঁছাক। ডাকসুর দুবারের এই সাবেক ভিপি বলেন, দেশ একটি সংকটময় পরিস্থিতিতে রয়েছে। অনিশ্চয়তা সর্বত্র। হাসিনা সরকারের হাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থনীতি এখনও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, দখলদারত্ব বন্ধ করা যায়নি। ফলে দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। চারদিকে সংকট আর বিশৃঙ্খলা। এই পরিস্থিতিতে সরকারকে অত্যন্ত সাবধানে কাজ করতে হবে। সামান্য ভুলও দেশের জন্য বিপর্যয় বয়ে আনতে পারে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে অর্জিত বিজয় যে কোনও মুহূর্তে হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।