
ফুটপাত শুধু রাস্তা বা সড়কের সৌন্দর্যই বাড়ায় না। পথচারীদের নিরাপদে হাঁটা ও চলাচলের উপযুক্ত স্থান ফুটপাত। প্রশস্ত ফুটপাতের কারণে যানজট বা দুর্ঘটনাও কমে অনেক। ব্যস্ত নগরীকে যানজটমুক্ত রাখতে স্বল্প দূরত্বে হেঁটে চলারও কোনো বিকল্প নেই। ঢাকার যানজটের কথা আমরা প্রত্যেকেই জানি এবং এই যানজট সৃষ্টির জন্য যেসব কারণ দায়ী তার মধ্যে অন্যতম হলো এই ফুটপাতের হকাররা। ঢাকার ফুটপাত দখলমুক্ত রাখা একটি জটিল প্রক্রিয়া। এটি শুধু পুলিশ এককভাবে পারবে না। কারণ এর সঙ্গে সিটি কর্পোরেশনসহ অনেক প্রতিষ্ঠান জড়িত আছে। দেখা গেছে, ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে একটি প্রতিষ্ঠানের শতভাগ আগ্রহ থাকলেও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের আগ্রহের ঘাটতি রয়েছে। আবার কোনো কোনো স্থানে একবার ফুটপাত দখলমুক্ত করা হলেও পরে সেখানে আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে। এর পেছনে রাজনৈতিক প্রভাবও আছে। ঢাকা শহরের ফুটপাতগুলোতে যেন পা ফেলার জায়গা নেই। রাজধানীর প্রায় সব ফুটপাতই হকারদের দখলে। শহরের সব ফুটপাত ও সড়ক দখল করে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। হকারদের কারণে ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে কর্মব্যস্ত মানুষ, শিক্ষার্থী, নারী ও শিশুরা। পথচারীদের তা ব্যবহার করার সুযোগ ও উপায় নেই। চলতে গেলেই সব সময় বিপাকে পড়তে হয় তাদের। রাজধানী ঢাকায় প্রয়োজনের তুলনায় ৫ ভাগের ১ ভাগ ফুটপাত থাকলেও সেগুলোও বেদখল হয়ে আছে এসব হকারদের কাছে। বাকিটা ভাঙাচোরা। আবার দেখা যায় সড়কে যানজট দেখা দিলে অনেক সময় মোটরসাইকেল চালক ফুটপাতের পথ ব্যবহার করে থাকে, এতে করে নিরাপদ ফুটপাতও অনিরাপদ হয়ে যাচ্ছে এবং কিছু দুর্ঘটনায় প্রাণহানিও ঘটেছে। যেখানে নিরাপদে হাঁটার জন্য ফুটপাত তৈরি করা হয়েছে, সেখানে ট্রাফিক নির্দেশনা না মেনে মোটরসাইকেল চালকরা ফুটপাতকে ভয়ংকর মৃত্যুফাঁদে পরিণত করছে। প্রায়ই দেশের দৈনিক পত্রিকাগুলোতে হকার উচ্ছেদের কথা আলোচনায় আসে। এর ফলসরূপ দেখা যায় ফুটপাত দখলমুক্ত করার জন্য বিভিন্ন সময় সরকারের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হয় এবং ফুটপাত দখলমুক্ত করাও হয়। কিন্তু কিছুদিন পরই অবৈধ শক্তির ছত্রছায়ায় প্রভাবশালীরা সেই ফুটপাত আবার দখল করে নেয়। প্রভাবশালীরা ফুটপাত দখলে এতটাই শক্তিশালী যে তারা সরকারের কোনো আইন না মেনে, দেশের সরকার ও প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ফুটপাত দখল করে রাখছে। যার প্রধান কারণ হলো এসব ফুটপাতের দোকানগুলো থেকে মোটা অংকের চাঁদা আদায় করা হয়ে থাকে। অনেকে নৈতিকতা ও মানবিকতার প্রসঙ্গে টেনে বলে থাকেন, ফুটপাতে যারা ব্যবসা করেন, তারা বাধ্য হয়েই করেন। উচ্ছেদ করলে তাদের না খেয়ে মরতে হয়, কিন্তু এই ভাষ্য ভুল। সরকার অথবা প্রশাসন অথবা জনপ্রতিনিধিরা হকারদের রুজিরুটি রক্ষায় চিন্তিত হতেই পারেন। কিন্তু সেই রুজি নিশ্চিত করার পন্থা ফুটপাত দখল করতে দেয়া নয়। এ জন্য সরকারের এলাকা ভেদে হকারদের কেনাবেচার জন্য নির্ধারিত স্থান নির্বাচন করে স্বল্প ভাড়ায় তা কেনাবেচার জন্য ব্যবহার করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। এতে রাস্তার বিক্রেতারা তখন ব্যবসা করতে পারবে, সরকারও কিছু আয় পাবে। অবৈধ চাঁদাবাজি বন্ধ হবে। পাশাপাশি পুলিশের চাঁদাবাজি রুখতে পুলিশ কর্তৃপক্ষকে ভূমিকা রাখতে হবে।