* ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ
* সড়কের উভয় পাশে যানজট
* অফিসগামী যাত্রীরা কর্মস্থলে যেতে পারছে না
গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দীর্ঘ ৫৩ ঘণ্টা অবরোধ তুলে নেয়ার এক ঘণ্টা পর গতকাল সোমবার ফের মোগরখাল এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক আবারও অবরোধ করেছেন পোশাকশ্রমিকরা। এতে মহাসড়কে তীব্র যানজট তৈরি হয়। পোশাক শ্রমিকদের অবরোধে অচল হয়ে পড়ে মহাসড়ক। তবে শ্রমিকদের দাবি, বেতনের জন্য ঢাকায় যাওয়া শ্রমিকদের প্রতিনিধি দল ফিরে না আসা পর্যন্ত তাদের অবরোধ অব্যাহত থাকবে। অপরদিকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বকেয়া বেতনের দাবিতে অবন্তী কালার নামে একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। এসময় তারা বিসিক শিল্পাঞ্চলে ঢুকে বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানায় ভাঙচুর করে। ফলে নিরাপত্তার কারণে বিসিক শিল্পাঞ্চলের সব কারখানা দুপুরের আগেই ছুটি দিয়ে দেয়া হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার দুপুরের দিকে গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এরশাদ মিয়া ও সেনাবাহিনীসহ পুলিশের একটি দল শ্রমিকদের সাথে আলোচনা করার জন্য কলম্বিয়া গার্মেন্টস এলাকায় যায়। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা হয়। আলোচনায় শ্রমিকদের একটি প্রতিনিধি দলকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয় তাদের বেতন সংক্রান্ত বিষয়টি সমাধানের জন্য। পরে শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে সরে যাওয়ার জন্য সেনাবাহিনী ও পুলিশের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হলে কিছু শ্রমিক মহাসড়ক ছেড়ে চলে যান। কিছু শ্রমিক মহাসড়ক ছেড়ে যেতে স্বীকৃতি জানান। একপর্যায়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ধাওয়া দিলে ওই শ্রমিকরা মহাসড়ক থেকে চলে যান। পরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দুপুর আড়াইটার দিকে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। তবে সেনাবাহিনীর সদস্যরা চলে যাওয়ার পর বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ফের একই স্থানে অবরোধ করেন। এতে মহাসড়কের উভয় পাশে ফের তীব্র যানজট তৈরি হয়েছে। অচল হয়ে পড়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক।
শ্রমিকদের দাবি, বেতনের জন্য ঢাকায় যাওয়া শ্রমিকদের প্রতিনিধি দল ফিরে না আসা পর্যন্ত তাদের অবরোধ অব্যাহত থাকবে। থানা পুলিশ ও শিল্পাঞ্চল পুলিশ তাদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করলেও শ্রমিকরা মহাসড়ক ছেড়ে যায়নি। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ওই মহাসড়কে চলাচলকারীরা। দীর্ঘসময় গাড়ি আটকে থাকায় হেঁটে গন্তব্যে গেছেন অনেকে।
গতকাল সোমবার সকালে মোগরখাল এলাকায় শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত রোববার পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন এসে তাদের বেতন পরিশোধ করার জন্য সাত দিনের সময় চেয়েছিল। গত এক মাস ধরে বিভিন্ন সময় অনেক তারিখ দিয়েও মালিক এবং প্রশাসন তাদের কথা রাখতে পারেনি। তাই তারা কোনো কথাতেই আর আশ্বস্ত হতে পারছেন না। বকেয়া বেতন পরিশোধ না করা পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার কথাও জানিয়েছেন শ্রমিকরা। পোশাক শ্রমিকরা মহাসড়ক দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচলেও বাধা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রাতে শিল্প পুলিশ ও থানা পুলিশকে ওই এলাকায় অবস্থান করতে দেখা গেছে। এদিকে শ্রমিকরা গত রোববার রাতও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে কাটিয়েছেন। তারা পালাক্রমে অবস্থান নিয়ে দাবি আদায়ের পক্ষে বিক্ষোভ করছেন। সড়কের পূর্ব পাশে একটি অটোরিকশায় মাইক লাগিয়ে শ্রমিকদের অবস্থান করার আহ্বান জানাচ্ছেন তারা।
গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. এরশাদ মিয়া বলেন, শ্রমিকদের পাওনাদি কীভাবে পরিশোধ করা যেতে পারে সে ব্যাপারে স্যারের (সচিব) সঙ্গে আলোচনা করবো। এই আশ্বাসের পর শ্রমিকরা অবরোধ ছেড়ে দেয়। তিনি বলেন, ‘বেতন না পেলে মহাসড়ক ছাড়বো না’ এই দাবিতে শ্রমিকরা সড়কে শক্ত অবস্থান নিলে এক মাসের বেতন আগামী ১৭ নভেম্বর রোববার প্রদান করা হবে বলে মোবাইলে শ্রম সচিব প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। গতকাল সোমবার দুপুর ২টার দিকে এমন আশ্বাসের প্রেক্ষিতে টিএনজেড গ্রুপের আন্দোলনকারী শ্রমিকরা মহাসড়ক থেকে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন। এতে দুই মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো টানা ৫৩ ঘণ্টা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধের অবসান হয়। পরে ঠিক এক ঘণ্টার পর আবারও পোশাক শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) নাজির আহমেদ বলেন, গতকাল সোমবার দুপুর ১টার পর শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে মোবাইল ফোনে বক্তব্য দেন। তার ওই বক্তব্য সেখানকার মাইকে প্রচার করা হয়। এ সময় সেখানে গাজীপুর সদর ইউএনও, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা, শিল্প পুলিশ ও আন্দোলনকারী শ্রমিকরা উপস্থিত ছিলেন। উপপুলিশ কমিশনার বলেন, শ্রম সচিব বলেছেন, সরকার দায়িত্ব নিয়ে আগামী রোববারের মধ্যে ৬ কোটি টাকা অনুদান হিসেবে দেবে। শ্রমিকদের অন্যান্য দাবি ও পাওনা কীভাবে, কবে পরিশোধ করা হবে তা আলোচনার জন্য শ্রমিকদের একটি প্রতিনিধি দলকে ঢাকায় আমন্ত্রণ জানিয়েছে। পর্যায়ক্রমে তাদের পাওনা পরিশোধ করে দেয়া হবে। এ সময় শ্রমিকদের মহাসড়ক ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করেন তিনি। আপনারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিন, আমরা অপেক্ষায় আছি বলেও জানান সচিব। এমন আশ্বাসের প্রেক্ষিতে দুপুর ২টার দিকে শ্রমিকরা আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। এরপর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে পরে আবার কেন মহাসড়ক অবরোধ করলো তা জানার চেষ্টা করছি।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, শ্রমিকদের বকেয়া বেতনের বিষয়টি সরকারিভাবে পরিশোধের আশ্বাস দেয়া হলে তারা অবরোধ তুলে নেন। এর ঘণ্টাখানেক পর শ্রমিকদের অপর একটি অংশ মহাসড়ক ফের অবরোধ করে। শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা চলছে।
অপরদিকে, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বকেয়া বেতনের দাবিতে অবন্তী কালার নামে একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। গতকাল সোমবার সকাল থেকে শুরু করে বিকেল পর্যন্ত সড়কটি অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। গতকাল সোমবার বিকেল ৭টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শ্রমিকরা সড়ক থেকে সরে গেছেন। তবে সড়কের দু’পাশে অবস্থান নিয়েছেন তারা।
এদিকে শ্রমিকদের অবরোধের কারণে পঞ্চবটি-মুন্সিগঞ্জ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মুন্সিগঞ্জ থেকে এ রুট দিয়ে ঢাকায় যাতায়াতকারীরা ভোগান্তিতে পড়েন। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী, বিজিবি, শিল্প ও থানা পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এর আগে বিক্ষোভরত শ্রমিকরা সকালে পাশের বিসিক শিল্পাঞ্চলে ঢুকে বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানায় ভাঙচুর করেন। ফলে নিরাপত্তার কারণে বিসিক শিল্পাঞ্চলের সব কারখানা দুপুরের আগেই ছুটি দিয়ে দেয়া হয়।
শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নরসিংদীর আওয়ামী লীগ নেতা আসলাম সানির মালিকানাধীন ক্রোনী গ্রুপের দু’টি পোশাক কারখানা রয়েছে। গত বছর থেকেই প্রতিষ্ঠানটির শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে প্রায়ই বিক্ষোভ করেন।
অবন্তী কালার পোশাক কারখানার সুইং সেকশনের শ্রমিক জাহানারা বেগম বলেন, গত বছর থেকে এ কারখানার মালিক বেতন নিয়ে গড়িমসি শুরু করেন। আগস্ট মাস থেকে আমাদের বেতন বকেয়া। বেতন না দিয়ে গত মাসে কারখানা লে-অফ ঘোষণা করা হয়। অনেকের কাছে আমরা গেছি, কোনো সমাধান পাই নাই। আজ বাধ্য হয়ে সড়কে নামছি।
বিসিকের আর-ফোর নামে একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক শাহিদা আক্তার বলেন, আমাদের লাঞ্চ হয় দুপুর সাড়ে ১২টায়। কয়েকটি কারখানায় ভাঙচুর করায় ভয়ে বাকি কারখানাগুলো ছুটি দিয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বর থেকেই ক্রোনী গ্রুপের কারখানা দুটিতে বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে অসন্তোষ চলছে। গত এপ্রিলে ক্রোনী গ্রুপের অবন্তী কালার টেক্সের শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। ওই সময় শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ৬০ জন আহত হয়েছিলেন।
বিসিক শিল্প নগরীর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নারায়ণগঞ্জের বিসিক শিল্পাঞ্চলে ৪৩২টি কারখানা রয়েছে। তবে সব কারখানায় কাজ নেই। বিসিকের বাইরের একটি গার্মেন্টসে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে বিসিকের অধিকাংশ কারখানা লাঞ্চের আগেই ছুটি দিয়ে দেয়া হয়।
নারায়ণগঞ্জ শিল্প পুলিশের পরিদর্শক সেলিম বাদশা জানান, ক্রোনী ও অবন্তী কারখানার মালিক শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছে না। দীর্ঘদিন ধরে এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। শ্রমিক নেতাদের নিয়ে বিষয়টি সমাধানের জন্য আলোচনা করছি।
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, সকালে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করলেও বিকেলে সড়ক থেকে সরে গেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আছেন।
* সড়কের উভয় পাশে যানজট
* অফিসগামী যাত্রীরা কর্মস্থলে যেতে পারছে না
গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দীর্ঘ ৫৩ ঘণ্টা অবরোধ তুলে নেয়ার এক ঘণ্টা পর গতকাল সোমবার ফের মোগরখাল এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক আবারও অবরোধ করেছেন পোশাকশ্রমিকরা। এতে মহাসড়কে তীব্র যানজট তৈরি হয়। পোশাক শ্রমিকদের অবরোধে অচল হয়ে পড়ে মহাসড়ক। তবে শ্রমিকদের দাবি, বেতনের জন্য ঢাকায় যাওয়া শ্রমিকদের প্রতিনিধি দল ফিরে না আসা পর্যন্ত তাদের অবরোধ অব্যাহত থাকবে। অপরদিকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বকেয়া বেতনের দাবিতে অবন্তী কালার নামে একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। এসময় তারা বিসিক শিল্পাঞ্চলে ঢুকে বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানায় ভাঙচুর করে। ফলে নিরাপত্তার কারণে বিসিক শিল্পাঞ্চলের সব কারখানা দুপুরের আগেই ছুটি দিয়ে দেয়া হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার দুপুরের দিকে গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এরশাদ মিয়া ও সেনাবাহিনীসহ পুলিশের একটি দল শ্রমিকদের সাথে আলোচনা করার জন্য কলম্বিয়া গার্মেন্টস এলাকায় যায়। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা হয়। আলোচনায় শ্রমিকদের একটি প্রতিনিধি দলকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয় তাদের বেতন সংক্রান্ত বিষয়টি সমাধানের জন্য। পরে শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে সরে যাওয়ার জন্য সেনাবাহিনী ও পুলিশের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হলে কিছু শ্রমিক মহাসড়ক ছেড়ে চলে যান। কিছু শ্রমিক মহাসড়ক ছেড়ে যেতে স্বীকৃতি জানান। একপর্যায়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ধাওয়া দিলে ওই শ্রমিকরা মহাসড়ক থেকে চলে যান। পরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দুপুর আড়াইটার দিকে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। তবে সেনাবাহিনীর সদস্যরা চলে যাওয়ার পর বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ফের একই স্থানে অবরোধ করেন। এতে মহাসড়কের উভয় পাশে ফের তীব্র যানজট তৈরি হয়েছে। অচল হয়ে পড়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক।
শ্রমিকদের দাবি, বেতনের জন্য ঢাকায় যাওয়া শ্রমিকদের প্রতিনিধি দল ফিরে না আসা পর্যন্ত তাদের অবরোধ অব্যাহত থাকবে। থানা পুলিশ ও শিল্পাঞ্চল পুলিশ তাদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করলেও শ্রমিকরা মহাসড়ক ছেড়ে যায়নি। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ওই মহাসড়কে চলাচলকারীরা। দীর্ঘসময় গাড়ি আটকে থাকায় হেঁটে গন্তব্যে গেছেন অনেকে।
গতকাল সোমবার সকালে মোগরখাল এলাকায় শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত রোববার পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন এসে তাদের বেতন পরিশোধ করার জন্য সাত দিনের সময় চেয়েছিল। গত এক মাস ধরে বিভিন্ন সময় অনেক তারিখ দিয়েও মালিক এবং প্রশাসন তাদের কথা রাখতে পারেনি। তাই তারা কোনো কথাতেই আর আশ্বস্ত হতে পারছেন না। বকেয়া বেতন পরিশোধ না করা পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার কথাও জানিয়েছেন শ্রমিকরা। পোশাক শ্রমিকরা মহাসড়ক দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচলেও বাধা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রাতে শিল্প পুলিশ ও থানা পুলিশকে ওই এলাকায় অবস্থান করতে দেখা গেছে। এদিকে শ্রমিকরা গত রোববার রাতও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে কাটিয়েছেন। তারা পালাক্রমে অবস্থান নিয়ে দাবি আদায়ের পক্ষে বিক্ষোভ করছেন। সড়কের পূর্ব পাশে একটি অটোরিকশায় মাইক লাগিয়ে শ্রমিকদের অবস্থান করার আহ্বান জানাচ্ছেন তারা।
গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. এরশাদ মিয়া বলেন, শ্রমিকদের পাওনাদি কীভাবে পরিশোধ করা যেতে পারে সে ব্যাপারে স্যারের (সচিব) সঙ্গে আলোচনা করবো। এই আশ্বাসের পর শ্রমিকরা অবরোধ ছেড়ে দেয়। তিনি বলেন, ‘বেতন না পেলে মহাসড়ক ছাড়বো না’ এই দাবিতে শ্রমিকরা সড়কে শক্ত অবস্থান নিলে এক মাসের বেতন আগামী ১৭ নভেম্বর রোববার প্রদান করা হবে বলে মোবাইলে শ্রম সচিব প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। গতকাল সোমবার দুপুর ২টার দিকে এমন আশ্বাসের প্রেক্ষিতে টিএনজেড গ্রুপের আন্দোলনকারী শ্রমিকরা মহাসড়ক থেকে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন। এতে দুই মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো টানা ৫৩ ঘণ্টা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধের অবসান হয়। পরে ঠিক এক ঘণ্টার পর আবারও পোশাক শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) নাজির আহমেদ বলেন, গতকাল সোমবার দুপুর ১টার পর শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে মোবাইল ফোনে বক্তব্য দেন। তার ওই বক্তব্য সেখানকার মাইকে প্রচার করা হয়। এ সময় সেখানে গাজীপুর সদর ইউএনও, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা, শিল্প পুলিশ ও আন্দোলনকারী শ্রমিকরা উপস্থিত ছিলেন। উপপুলিশ কমিশনার বলেন, শ্রম সচিব বলেছেন, সরকার দায়িত্ব নিয়ে আগামী রোববারের মধ্যে ৬ কোটি টাকা অনুদান হিসেবে দেবে। শ্রমিকদের অন্যান্য দাবি ও পাওনা কীভাবে, কবে পরিশোধ করা হবে তা আলোচনার জন্য শ্রমিকদের একটি প্রতিনিধি দলকে ঢাকায় আমন্ত্রণ জানিয়েছে। পর্যায়ক্রমে তাদের পাওনা পরিশোধ করে দেয়া হবে। এ সময় শ্রমিকদের মহাসড়ক ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করেন তিনি। আপনারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিন, আমরা অপেক্ষায় আছি বলেও জানান সচিব। এমন আশ্বাসের প্রেক্ষিতে দুপুর ২টার দিকে শ্রমিকরা আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। এরপর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে পরে আবার কেন মহাসড়ক অবরোধ করলো তা জানার চেষ্টা করছি।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, শ্রমিকদের বকেয়া বেতনের বিষয়টি সরকারিভাবে পরিশোধের আশ্বাস দেয়া হলে তারা অবরোধ তুলে নেন। এর ঘণ্টাখানেক পর শ্রমিকদের অপর একটি অংশ মহাসড়ক ফের অবরোধ করে। শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা চলছে।
অপরদিকে, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বকেয়া বেতনের দাবিতে অবন্তী কালার নামে একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। গতকাল সোমবার সকাল থেকে শুরু করে বিকেল পর্যন্ত সড়কটি অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। গতকাল সোমবার বিকেল ৭টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শ্রমিকরা সড়ক থেকে সরে গেছেন। তবে সড়কের দু’পাশে অবস্থান নিয়েছেন তারা।
এদিকে শ্রমিকদের অবরোধের কারণে পঞ্চবটি-মুন্সিগঞ্জ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মুন্সিগঞ্জ থেকে এ রুট দিয়ে ঢাকায় যাতায়াতকারীরা ভোগান্তিতে পড়েন। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী, বিজিবি, শিল্প ও থানা পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এর আগে বিক্ষোভরত শ্রমিকরা সকালে পাশের বিসিক শিল্পাঞ্চলে ঢুকে বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানায় ভাঙচুর করেন। ফলে নিরাপত্তার কারণে বিসিক শিল্পাঞ্চলের সব কারখানা দুপুরের আগেই ছুটি দিয়ে দেয়া হয়।
শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নরসিংদীর আওয়ামী লীগ নেতা আসলাম সানির মালিকানাধীন ক্রোনী গ্রুপের দু’টি পোশাক কারখানা রয়েছে। গত বছর থেকেই প্রতিষ্ঠানটির শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে প্রায়ই বিক্ষোভ করেন।
অবন্তী কালার পোশাক কারখানার সুইং সেকশনের শ্রমিক জাহানারা বেগম বলেন, গত বছর থেকে এ কারখানার মালিক বেতন নিয়ে গড়িমসি শুরু করেন। আগস্ট মাস থেকে আমাদের বেতন বকেয়া। বেতন না দিয়ে গত মাসে কারখানা লে-অফ ঘোষণা করা হয়। অনেকের কাছে আমরা গেছি, কোনো সমাধান পাই নাই। আজ বাধ্য হয়ে সড়কে নামছি।
বিসিকের আর-ফোর নামে একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক শাহিদা আক্তার বলেন, আমাদের লাঞ্চ হয় দুপুর সাড়ে ১২টায়। কয়েকটি কারখানায় ভাঙচুর করায় ভয়ে বাকি কারখানাগুলো ছুটি দিয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বর থেকেই ক্রোনী গ্রুপের কারখানা দুটিতে বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে অসন্তোষ চলছে। গত এপ্রিলে ক্রোনী গ্রুপের অবন্তী কালার টেক্সের শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। ওই সময় শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ৬০ জন আহত হয়েছিলেন।
বিসিক শিল্প নগরীর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নারায়ণগঞ্জের বিসিক শিল্পাঞ্চলে ৪৩২টি কারখানা রয়েছে। তবে সব কারখানায় কাজ নেই। বিসিকের বাইরের একটি গার্মেন্টসে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে বিসিকের অধিকাংশ কারখানা লাঞ্চের আগেই ছুটি দিয়ে দেয়া হয়।
নারায়ণগঞ্জ শিল্প পুলিশের পরিদর্শক সেলিম বাদশা জানান, ক্রোনী ও অবন্তী কারখানার মালিক শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছে না। দীর্ঘদিন ধরে এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। শ্রমিক নেতাদের নিয়ে বিষয়টি সমাধানের জন্য আলোচনা করছি।
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, সকালে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করলেও বিকেলে সড়ক থেকে সরে গেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আছেন।