
* ১৯৯৯-৯৮ অর্থবছরে দেশের মোট আমদানি-রফতানি পণ্যের ১২ শতাংশ রেলের মাধ্যমে পরিবহন হতো, এখন সেই হার মাত্র ৩ শতাংশ
* পণ্য পরিবহন করে এক ট্রেনে যে পরিমাণ আয় হয়, দুটি যাত্রীবাহী ট্রেন চালিয়েও তা হয় না
একসময় লাভজনক থাকলেও গত দেড় দশকে দেশের রেল খাতে গুনতে হয়েছে বিপুল পরিমাণ লোকসান। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সূত্র অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে রেলে বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকা এবং লোকসান হয়েছে ২১ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ রেলকে প্রতিবছর গড়ে লোকসান গুনতে হয়েছে দেড় হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে বর্তমানে রেলের আয়ের চেয়ে ব্যয় আড়াই গুণেরও বেশি। এজন্য অপিরিকল্পিত প্রকল্প গ্রহণকে চিহ্নিত করে রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুল বাকী বলেন, পরিকল্পনার মধ্যে ঘাটতি ছিল। প্রপার ফিজিবলিটি স্টাডি না করেই প্রজেক্টগুলো নেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে প্রকল্পগুলোর ব্যয় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই পর্যায়েও কোনো অ্যাসেসমেন্ট হয়নি। এ কারণেই বিগত সময়ে লোকসান হয়েছে এবং অন্য কারো পকেট ভারি হয়েছে। এছাড়াও প্রকল্প শেষ হয়ে যাওয়ার পরও প্রকল্পে উল্লিখিত সংখ্যক ট্রেন পরিচালনা করতে না পারা, বিনা টিকিটে ভ্রমণ, অধিকাংশ ট্রেনের কম বগি নিয়ে চলাচল আর রেলের ভেতরের সিন্ডিকেটের দৌরাত্মে বেড়েছে রেলের লোকসান। এদিকে, রেলের দুর্নীতি অনুসন্ধানে মাঠে রয়েছে দুদক, অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান রেলসচিব। তিনি আরও জানান, বর্তমানে বিপুল অর্থ ব্যয়ে চলমান রয়েছে আরও ২৯টি বৃহৎ প্রকল্প। এসকল প্রকল্পের যৌক্তিকতা যাচাই করাসহ আর্থিক ও অন্যান্য দিকও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এদিকে রেলসূত্রে জানা যায়, ২৪ বছর ধরে বাংলাদেশে রেলওয়ের অপারেটিং রেশিও বেড়েই চলছে, ফলে বাড়ছে লোকসান। বর্তমানে ১ টাকা আয় করতে খরচ করতে হচ্ছে ২ টাকা ৫৮ পয়সা। রেলের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে রেলের সবচেয়ে ভালো অপারেটিং রেশিও ছিল ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে, ৯৫ দশমিক ৯ শতাংশ। অর্থাৎ ওই অর্থবছরে প্রতি ১ টাকা আয় করতে রেলের ব্যয় হয়েছিল ৯৫ দশমিক ৯ পয়সা। এরপর থেকে রেলের অপারেটিং রেশিও কেবল বেড়েই চলেছে। রেলওয়ের গত ১৫ বছরে কী পরিমাণ ব্যয় হয়েছে, তার একটি তালিকা পাওয়া গেছে। সেটি বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই সময়ে রেলের অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকা। ২০০৯ সালের জুন থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ৮৯টি প্রকল্পে খরচ হয়েছে ২১ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। চলমান আছে ১ লাখ ৪১ হাজার ৪৭২ কোটি টাকার ৩২টি প্রকল্প। এসব প্রকল্পে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৬৬ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা। সমাপ্ত ও চলমান প্রকল্প মিলিয়ে গত ১৫ বছরে রেলওয়ের উন্নয়নে ব্যয় হয়েছে মোট ৮৭ হাজার ৯৩১ কোটি টাকা। রেলওয়ের তথ্য বলছে, ২০০৮-০৯ অর্থবছর সংস্থাটির অপারেটিং রেশিও ছিল ১৫৮ দশমিক ৯২ শতাংশ। অর্থাৎ ওই অর্থবছরে ১ টাকা আয়ের বিপরীতে ব্যয় হয়েছে ১ টাকা ৫৯ পয়সা। অপারেটিং রেশিও নিয়ে সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরের তথ্য প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। এতে দেখা যায়, ওই অর্থবছরে অপারেটিং রেশিও বেড়ে ২৫৮ শতাংশ হয়েছে। অর্থাৎ এ সময়ে ১ টাকা আয় করতে ব্যয় হয়েছে ২ টাকা ৫৮ পয়সা। ওই সময় সব মিলিয়ে রেলের লোকসান হয়েছে ১ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা। এদিকে, আগের তুলনায় অনেক কমেছে রেলে পণ্য পরিবহন। সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, ১৯৯৯-৯৮ অর্থবছরে দেশের মোট আমদানি-রপ্তানি পণ্যের ১২ শতাংশ রেলের মাধ্যমে পরিবহন হতো, এখন সেই হার মাত্র ৩ শতাংশ। পণ্য পরিবহন করে এক ট্রেনে যে পরিমাণ আয় হয়, দুটি যাত্রীবাহী ট্রেন চালিয়েও তা হয় না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেলকে যদি দুর্নীতিমুক্ত করা যায়, অপরিকল্পিত ব্যয় বন্ধ করা যায়, তাহলে লোকসান অনেকাংশে কমে আসবে। এ ছাড়া বিনা টিকিটে ভ্রমণ শূন্যের কোঠায় নামাতে হবে। শতভাগ কোচ নিয়ে ট্রেন পরিচালনা করতে হবে, জনপ্রিয় রুটে ট্রেনের সংখ্যা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি পণ্য পরিবহনে মনোযোগী হতে হবে। তাহলে রেলকে আবার লাভজনক করা সম্ভব হবে।
* পণ্য পরিবহন করে এক ট্রেনে যে পরিমাণ আয় হয়, দুটি যাত্রীবাহী ট্রেন চালিয়েও তা হয় না
একসময় লাভজনক থাকলেও গত দেড় দশকে দেশের রেল খাতে গুনতে হয়েছে বিপুল পরিমাণ লোকসান। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সূত্র অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে রেলে বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকা এবং লোকসান হয়েছে ২১ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ রেলকে প্রতিবছর গড়ে লোকসান গুনতে হয়েছে দেড় হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে বর্তমানে রেলের আয়ের চেয়ে ব্যয় আড়াই গুণেরও বেশি। এজন্য অপিরিকল্পিত প্রকল্প গ্রহণকে চিহ্নিত করে রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুল বাকী বলেন, পরিকল্পনার মধ্যে ঘাটতি ছিল। প্রপার ফিজিবলিটি স্টাডি না করেই প্রজেক্টগুলো নেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে প্রকল্পগুলোর ব্যয় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই পর্যায়েও কোনো অ্যাসেসমেন্ট হয়নি। এ কারণেই বিগত সময়ে লোকসান হয়েছে এবং অন্য কারো পকেট ভারি হয়েছে। এছাড়াও প্রকল্প শেষ হয়ে যাওয়ার পরও প্রকল্পে উল্লিখিত সংখ্যক ট্রেন পরিচালনা করতে না পারা, বিনা টিকিটে ভ্রমণ, অধিকাংশ ট্রেনের কম বগি নিয়ে চলাচল আর রেলের ভেতরের সিন্ডিকেটের দৌরাত্মে বেড়েছে রেলের লোকসান। এদিকে, রেলের দুর্নীতি অনুসন্ধানে মাঠে রয়েছে দুদক, অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান রেলসচিব। তিনি আরও জানান, বর্তমানে বিপুল অর্থ ব্যয়ে চলমান রয়েছে আরও ২৯টি বৃহৎ প্রকল্প। এসকল প্রকল্পের যৌক্তিকতা যাচাই করাসহ আর্থিক ও অন্যান্য দিকও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এদিকে রেলসূত্রে জানা যায়, ২৪ বছর ধরে বাংলাদেশে রেলওয়ের অপারেটিং রেশিও বেড়েই চলছে, ফলে বাড়ছে লোকসান। বর্তমানে ১ টাকা আয় করতে খরচ করতে হচ্ছে ২ টাকা ৫৮ পয়সা। রেলের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে রেলের সবচেয়ে ভালো অপারেটিং রেশিও ছিল ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে, ৯৫ দশমিক ৯ শতাংশ। অর্থাৎ ওই অর্থবছরে প্রতি ১ টাকা আয় করতে রেলের ব্যয় হয়েছিল ৯৫ দশমিক ৯ পয়সা। এরপর থেকে রেলের অপারেটিং রেশিও কেবল বেড়েই চলেছে। রেলওয়ের গত ১৫ বছরে কী পরিমাণ ব্যয় হয়েছে, তার একটি তালিকা পাওয়া গেছে। সেটি বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই সময়ে রেলের অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকা। ২০০৯ সালের জুন থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ৮৯টি প্রকল্পে খরচ হয়েছে ২১ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। চলমান আছে ১ লাখ ৪১ হাজার ৪৭২ কোটি টাকার ৩২টি প্রকল্প। এসব প্রকল্পে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৬৬ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা। সমাপ্ত ও চলমান প্রকল্প মিলিয়ে গত ১৫ বছরে রেলওয়ের উন্নয়নে ব্যয় হয়েছে মোট ৮৭ হাজার ৯৩১ কোটি টাকা। রেলওয়ের তথ্য বলছে, ২০০৮-০৯ অর্থবছর সংস্থাটির অপারেটিং রেশিও ছিল ১৫৮ দশমিক ৯২ শতাংশ। অর্থাৎ ওই অর্থবছরে ১ টাকা আয়ের বিপরীতে ব্যয় হয়েছে ১ টাকা ৫৯ পয়সা। অপারেটিং রেশিও নিয়ে সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরের তথ্য প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। এতে দেখা যায়, ওই অর্থবছরে অপারেটিং রেশিও বেড়ে ২৫৮ শতাংশ হয়েছে। অর্থাৎ এ সময়ে ১ টাকা আয় করতে ব্যয় হয়েছে ২ টাকা ৫৮ পয়সা। ওই সময় সব মিলিয়ে রেলের লোকসান হয়েছে ১ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা। এদিকে, আগের তুলনায় অনেক কমেছে রেলে পণ্য পরিবহন। সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, ১৯৯৯-৯৮ অর্থবছরে দেশের মোট আমদানি-রপ্তানি পণ্যের ১২ শতাংশ রেলের মাধ্যমে পরিবহন হতো, এখন সেই হার মাত্র ৩ শতাংশ। পণ্য পরিবহন করে এক ট্রেনে যে পরিমাণ আয় হয়, দুটি যাত্রীবাহী ট্রেন চালিয়েও তা হয় না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেলকে যদি দুর্নীতিমুক্ত করা যায়, অপরিকল্পিত ব্যয় বন্ধ করা যায়, তাহলে লোকসান অনেকাংশে কমে আসবে। এ ছাড়া বিনা টিকিটে ভ্রমণ শূন্যের কোঠায় নামাতে হবে। শতভাগ কোচ নিয়ে ট্রেন পরিচালনা করতে হবে, জনপ্রিয় রুটে ট্রেনের সংখ্যা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি পণ্য পরিবহনে মনোযোগী হতে হবে। তাহলে রেলকে আবার লাভজনক করা সম্ভব হবে।