প্রশাসনের শীর্ষ পদে শিগগিরই ব্যাপক পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নিচ্ছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে বিগত সরকারের আমলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সচিব পদে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার ও নতুন সচিব নিয়োগ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিবের চুক্তি বাতিল এবং প্রধানমন্ত্রীর কাযালয়ের সচিবসহ বেশ কয়েকজনকে ওএসডি এবং বরখাস্ত করা হয়েছে। এমনকি সাবেক জননিরাপ্তা বিভাগের সচিবকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। পাশাপাশি দলবাজ ও দুর্নীতিবাজ সচিবদের প্রথমে ওএসডি করে মামলা করা এবং গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হতে পারে। জনপ্রশাস মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সচিব মো.নূরুল আলম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসানসহ বিগত সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া সচিবদের প্রত্যাহার করা হচ্ছে। আর ইতোমধ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত অতিরিক্ত সচিব মো. মাসুদুল হাসান। সচিব পদে পদোন্নতির পর তাকে ওই নিয়োগ দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেনকে যেদিন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে বদলি করা হয়, সেদিনই দুই বছরের চুক্তিতে খাদ্য সচিব নিয়োগ পান অবসরে যাওয়া বিসিএস খাদ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা ইলাহী দাদ খান। তবে তার নামে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলা থাকার বিষযটি জানার পর ওই নিয়োগ বাতিল করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। বিতকির্ত দুই কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়ার ঘটনায় প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নতুন করে ক্ষোভের সৃষ্টি হওয়ার প্রেক্ষিতে এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেজন্য প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া মেধাবী, সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিদের সচিব পদসহ অন্যান্য পদে নিয়োগ দেয়ার সুপারিশসহ প্রস্তাব পাঠাঠে বলা হয়েছে। তাছাড়া চলতি মাসে বিদ্যুৎ সচিবসহ বেশ কয়েকজন সচিব স্বাভাবিকভাবে অবসরে যাচ্ছেন। সূত্র জানায়, বিগত সরকার দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে প্রশাসন সাজিয়েছিল। ওই কারণে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরাতে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকজন সচিবকে ওসডি বা অবসরে পাঠানো হয়েছে। বাতিল হয়েছে ১১ সচিবের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ। ফলে কয়েকটি মন্ত্রণালয় এখন সচিব শূন্য। আবার বেশকিছু মন্ত্রণালয়ে থেকে গেছেন বিগত সময়ের সুবিধাভোগীরাই। শিগগিরই সচিব ও অধিদফতরের প্রধান পদে নতুন পদায়ন হবে। প্রত্যাহার হবেন আরো অনেকেই। সূত্র আরো জানায়, ক্ষমতার পালাবদলের পর ৫১ জেলায় যোগ দিয়ে কাজ শুরু করেছেন নতুন জেলা প্রশাসকরা। আর মাঠ প্রশাসনের মূল চালক জেলা প্রশাসক বা ডিসিরা। যদিও অভিযোগ থাকায় নিয়োগের পরদিনই বাতিল হয় ৮ জেলার নতুন ডিসির নিয়োগ। ফলে এখন ওসব জেলা ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলছে। আবার নতুন ডিসি নিয়োগ নিয়ে উপসচিব পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তার ক্ষোভ ও অভিযোগ আছে। এদিকে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞদর মতে, প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ে পদায়নের ক্ষেত্রে সরকারের বুঝেশুনে সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন। সিদ্ধান্ত নেয়ার পর তা পরিবর্তন করলে খারাপ বার্তা যায়। অন্যদিকে এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান জানান, নতুন ডিসিদের কেউ সক্ষমতা প্রমাণ করতে না পারলে প্রত্যাহার হতে পারেন। শূন্য থাকা ৮ জেলার ডিসি দ্রুতই নিয়োগ হবে। রদবদল হতে পারে এডিসি ও ইউএনও পদেও। প্রশাসনের চেইন অব কমান্ড ফিরিয়ে আনতে কঠোর অবস্থানে সরকার। সে লক্ষ্যে শুরু হয়েছে প্রশাসন সংস্কার কমিশনের কার্যক্রমও।