* সহস্রাধিক জাল সনদধারী শিক্ষককে শনাক্ত করা হয়েছে
* এর মধ্যে ৭৯৩ জন শিক্ষকের শিক্ষক নিবন্ধন সনদ, ২৯৬ জনের কম্পিউটার শিক্ষার সনদ এবং ৬৭ জনের বিএড, গ্রন্থাগার, সাচিবিকবিদ্যা ও অন্যান্য বিষয়ের সনদ জালের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে
* বাকিদের ব্যাপারে অনুসন্ধান চলছে
* মাউশি ইতিমধ্যে জাল সনদে চাকরি করা ২০২ জন শিক্ষকের তালিকা প্রকাশ করেছে
দেশে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাল সনদধারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সরকার। ইতিমধ্যে সহস্রাধিক জাল সনদধারী শিক্ষককে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭৯৩ জন শিক্ষকের শিক্ষক নিবন্ধন সনদ, ২৯৬ জনের কম্পিউটার শিক্ষার সনদ এবং ৬৭ জনের বিএড, গ্রন্থাগার, সাচিবিকবিদ্যা ও অন্যান্য বিষয়ের সনদ জালের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। বাকিদের ব্যাপারে অনুসন্ধান চলছে। আর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ইতিমধ্যে জাল সনদে চাকরি করা ২০২ জন শিক্ষকের তালিকা প্রকাশ করেছে। দীর্ঘদিন চাকরির সুবাদে ওসব শিক্ষক সরকার থেকে বেতন-বাবদ উত্তোলন করেছেন প্রায় ১৫ কোটি টাকা। ওই অর্থ শিক্ষকদের সরকারি কোষাগারে ফিরিয়ে দিতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জাল সনদে শিক্ষকতা করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ৭টি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তাদের এদের বেতন-ভাতার সরকারি অংশ (এমপিও) বাতিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে তালিকায় থাকা অভিযুক্ত জাল শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। তাছাড়া জাল সনদধারীদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানপ্রধান কর্তৃক ফৌজদারি অপরাধের মামলা দায়ের করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর আগে গত ১৮ মে জাল সনদে দীর্ঘদিন শিক্ষক-কর্মচারী পদে চাকরি করা ৬৭৮ জন শিক্ষককে শনাক্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাদের বেতন-ভাতা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়ে মন্ত্রণালয় থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে (মাউশি) চিঠি দেয়া হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, জাল সনদধারী শিক্ষকরা এতোদিন যে টাকা বেতন-ভাতা হিসেবে গ্রহণ করেছে, তা ফেরত আনার ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু জাল সনদধারী ওসব শিক্ষককে চাকরিচ্যুত ও এমপিও বন্ধের নির্দেশ দেয়ার এক মাস পরও মাউশি ওই শিক্ষকদের বেতন ও উৎসবভাতা বাবদ কয়েক কোটি টাকা ছাড় করেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত মাউশি ২০২ জনের শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিল। সূত্র জানায়, সারাদেশে বর্তমানে প্রায় ৩৪ হাজার এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২০ হাজার ৩১৬টি, কলেজ ২ হাজার ৬৬৪টি, মাদ্রাসা ৯ হাজার ২৯২টি এবং ২ হাজারের মতো কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ওসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার জন্য ২০০৫ সাল থেকে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কর্তৃক ‘শিক্ষক নিবন্ধন সনদ’ বাধ্যতামূলক করা হয়। বতর্মানে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ৪ লাখ শিক্ষক ও ১ লাখ কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন, তারা সরকারি বেতন-ভাতা পান। সূত্র আরো জানায়, শিক্ষা পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের ২৯ জন, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ১০ জন, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১০০ জন এবং খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ১৭ জন শিক্ষকের সনদ জাল। এর বেশির ভাগই এনটিআরসিএ এবং কম্পিউটারের জাল সনদ দিয়ে এমপিও নিয়েছেন। স্কুল-কলেজের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাল সনদে শিক্ষকদের চাকরি করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তৎপরতায় নিয়মিতই শিক্ষকদের জাল সনদ পাওয়ার ঘটনা ঘটছে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার সনদ, এনটিআরসিএর সনদ ও কম্পিউটার সনদ জাল করে শিক্ষকরা দীর্ঘদিন এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে তারা সরকারি অর্থ ভোগ করছেন। মাউশি থেকে জাল সনদধারীদের বিরুদ্ধে মোট সাতটি বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। ইতিমধ্যে শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক যথাযথ প্রক্রিয়ায় কতিপয় ইনডেক্সধারী শিক্ষকের এমপিও সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। আর এমপিওভুক্ত ও এমপিওবিহীন শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক গৃহীত সাতটি বিষয়ের মধ্যে কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তার দফাওয়ারি জবাব ১০ কর্মদিবসের মধ্যে মাউশিতে পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে। এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাত দফা কার্যক্রমে রয়েছে জাল সনদধারী শিক্ষক বা কর্মচারীদের এমপিও বন্ধ ও বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে চাকরিচ্যুত করা, অবৈধভাবে গ্রহণকৃত বেতন-ভাতা সরকারি কোষাগারে ফেরত প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ, যারা অবসরে গেছেন তাদের অবসরের সুবিধাপ্রাপ্তি বাতিল করা, যারা স্বেচ্ছায় অবসর নিয়েছেন তাদের আপত্তির টাকা অধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে আদায় করা, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জাল সনদধারী শিক্ষক বা কর্মচারীদের অবসরের ভাতা বা কল্যাণ ট্রাস্টের ভাতা বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জাল সনদধারীদের তালিকা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো, জাল সনদধারীদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানপ্রধান কর্তৃক ফৌজদারি অপরাধের মামলা দায়ের করা এবং জাল সনদধারীদের নিয়োগ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশনা দেয়া হয়।