দেশে প্রত্যেক নাগরিকের স্বাধীনভাবে চলার অধিকার আছে। কিন্তু কারও জঙ্গি-আইএসের আদর্শে চলার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম। তিনি বলেন, কেউ এই দেশে জঙ্গি তৎপরতা করবে বা আইএসআই বা অন্য কোনো সংগঠনের ভাব-আদর্শে চলবে সেটার কোনো সুযোগ নেই। গতকাল সোমবার দুপুরে দুর্গাপূজা উপলক্ষে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন আইজিপি। কিছু সংগঠন উন্মুক্ত মিছিল করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে বলছে, কালেমা লেখা কালো পতাকা ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্টের (আইএসআইএস)। সেই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে যখন এত বড় ধর্মীয় উৎসব পালন হচ্ছে সেখানে কোনো থ্রেট আছে কিনা? আইজিপিকে প্রশ্ন করা হয়। উত্তরে তিনি বাংলাদেশে জঙ্গি বা আইএসেরে আদর্শে চলার সুযোগ নেই বলে মন্তব্যটি করেন। ময়নুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে আমরা হিজবুত তাহরীর মিডিয়া সমন্বয়কে গ্রেপ্তার করেছি। তথাকথিত পতাকা নিয়ে হঠাৎ করে যারা ঝটিকা মিছিল করেছে তাদের ৩ জনকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। সুতরাং, জঙ্গি তৎপরতা করার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের যে তৎপরতা সেটি অব্যাহত আছে। জেল থেকে জামিনে জঙ্গি সদস্যদের মুক্তির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসব জামিন বিগত সরকারের আমলের। তারা কোনো কারণে তখন বের হতে পারেনি বা বের হয়নি। তবে যারা জামিনে বের হয়েছে তাদের ওপর আমাদের নজরদারি অব্যাহত আছে। কেউ যদি আবারও কোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রম বা জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িত হয় তাদের আর বাইরে আসার সুযোগ নেই। সবাইকে সম্মিলিত উৎসবমুখোর পরিবেশে পরিপূর্ণ নিরাপত্তার সঙ্গে আসন্ন দুর্গাৎসব পালনের আহ্বান জানিয়ে মো. ময়নুল ইসলাম বলেন, দুর্গাপূজা ঘিরে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা-অপতৎপরতার কোনো সুযোগ নেই। পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম বলেন, আমরা দীর্ঘ ৮০০ বছর পুরোনো ঐতিহ্যবাহী ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করলাম। অত্যন্ত উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে আমরা দেখলাম পূণ্যার্থীরা পূজা অর্চনা করছেন। এখানে আসন্ন দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশা করছি সারাদেশে সাড়ে ৩১ হাজারের বেশি পূজা মণ্ডপে অত্যান্ত শান্তি-শৃঙ্খলা সহকারে পরিপূর্ণ নিরাপত্তার সঙ্গে ধর্মীয় উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে উৎসবমুখোর পরিবেশে পূজা উদযাপন হবে। এই পূজার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পুলিশ এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সার্বিক নিরাপত্তা প্রদান করছে। পূজা মণ্ডপে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার তিনটি পর্যায় রয়েছে। এখন প্রাক পূজা ব্যবস্থার আওতায় আমরা প্রতিটি জায়গায় টহল বাড়িয়েছি। গুরুত্বপূর্ণ পূজা মণ্ডপগুলোতে ইতোমধ্যে আনসার-ভিডিপি মোতায়েন হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে সব পূজা মণ্ডপে আনসার-ভিডিপি মোতায়েন হবে। অন্যান্য পুলিশের যে স্ট্রাইকিং ও টহল ফোর্স তাদেরও মোতায়েন করা হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রতিটি জেলায়, প্রতিটি অঞ্চলে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন আছে। তারাও পূজার ডিউটি পালন করবে। এবং সীমান্ত এলাকায় বিজিবি, উপকূলীয় এলাকায় কোস্ট গার্ড, নৌ-অঞ্চলে নৌ পুলিশসহ বিশেষিয়ত যে পুলিশ বাহিনী রয়েছে তারাও দায়িত্ব পালন করছে। আইজিপি আরো বলেন, যেকোনো জায়গায়, যে কোনো পূজা মণ্ডপে যদি কেউ শান্তি-শৃঙ্খলার বিঘ্ন ঘটায়, যদি কেউ অপতৎপরতা চালায়, সেক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের মোবাইল টিমসহ স্ট্রাইকিং ফোর্স কাছাকাছি দূরত্বে থাকবে। প্রতিটি পূজা মণ্ডপে পর্যাপ্ত সংখ্যক শৃঙ্খলা বাহিনী, আনসার বাহিনীর সঙ্গে সেচ্ছাসেবকরা রয়েছে। তারাও ২৪/৭ কাজ করছে। সুতরাং কোথাও কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা, অপতৎপরতার কোনো সুযোগ নেই। তিনি আরো বলেন, আমরা সাইবার মনিটরিং জোরদার করেছি, সাইবার পেট্রোলিং এর ব্যবস্থা রেখেছি। যাতে করে কেউ ইলেক্ট্রনিক বা স্যোসাল মিডিয়ার মাধ্যমে কোনো ধরনের মিথ্যা প্রচারণা, গুজব বা অতিরঞ্জন কিছু ঘটতে না পারে। আমাদের জরুরি ৯৯৯ সেবাও চালু আছে। প্রতিটি জেলায়, উপজেলায় ও পুলিশ হেডকোয়ার্টারে আমরা কন্ট্রোল রুম চালু করেছি। যেখানে যেকেউ তাৎক্ষিকভাবে যেকোনো সংবাদ জানাতে পারবেন। পূজা মণ্ডপের সংখ্যা কমে যাওয়া ও পূজা মণ্ডপে সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পূজা মণ্ডপের সংখ্যা নানা কারণে হ্রাস-বৃদ্ধি হয়। এবার বন্যার কারণে কিছু পূজা মণ্ডপের সংখ্যা হয়তো কম। আমাদের সাড়ে ৩১ হাজারের বেশি মণ্ডপে পূজা উদযাপন করা হবে। ঢাকায় কিন্তু বিগত বছরের তুলনায় ৬টি পূজা মণ্ডপ বেড়েছে। সুতরাং পূজা মণ্ডপ কমা বা বাড়ার সঙ্গে অন্য কিছু জড়িত না। এ ছাড়া আমরা সবাইকে অনুরোধ করেছি প্রতিটি পূজা মণ্ডপে সিসিটিভি ক্যামেরা, আইপি ক্যামেরা থাকলে নজরদারী ভালো হয়। যেসব পূজা মণ্ডপে ঝুঁকি রয়েছে সেগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। কিন্তু অনেক প্রত্যান্ত এলাকায় সামর্থ্যে কারণে সেটি করা যায়নি। সব জায়গায় সম্ভব হয়নি। তবে এটি নিয়ে শঙ্কার কিছু নেই। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর এখনো কাজে যোগদান না করা পুলিশ সদস্যদের চাকরিতে রাখার কোনো সুযোগ নেই বলে জানান আইজিপি। অনেক পুলিশ কর্মকর্তারা এখনও কাজে ফেরেননি। কিছু শীর্ষ কর্মকর্তা দেশের বাইরে পালিয়ে গেছেন, না দেশে আছে সেই তথ্য কেউ জানে না। তাদের ব্যাপারে পুলিশের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, যারা বিভিন্ন মামলায় আসামি হয়েছেন, যাদের সম্পৃক্ততা আমরা পেয়েছি, এরইমধ্যে আমরা সেসব সদস্যদের অনেককেই গ্রেপ্তার করেছি। ১৭ জন পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে সিনিয়র কর্মকর্তারাও রয়েছেন, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও রয়েছেন। যারা মামলার আসামি হয়েছেন, আবার অনেকেই যারা বিভিন্ন কারণে কর্মস্থলে থাকছেন না। আমাদের দ্বিতীয় বিপ্লব যেটাকে আমরা বলছি, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আমাদের যে বিপ্লব সংগঠিত হয়েছে তারপরে যারা আন্দোলনে অতিরিক্ত (দমন নিপিড়ন) করেছে তারা কিন্তু নেই। এ সংখ্যাটা নিতান্তই অল্প। আমরা ইউনিট অনুযায়ী স্টপ করে রেখেছি। এ সংখ্যাটা মাত্র ১৮৭ জন। ২ লাখ ১৪-১৫ হাজার বাহিনীর সদস্য সেখানে ১৮৭ জন তারা বিভিন্ন কারণে গরহাজির (অনুপস্থিত) হতে পারে। তিনি আরও বলেন, যারা গরহাজির (অনুপস্থিত) সদস্য তাদের বিরুদ্ধে এরইমধ্যে ডিপার্টমেন্টাল অ্যাকশন নেওয়া হয়েছে। কেন তারা গড়হাজির সেই কৈফিয়ত চাওয়া হয়েছে? তাদের কর্মস্থলে হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তারা যদি না আসে আমাদের ব্যবস্থা ক্লিয়ার। তাদের আর চাকরিতে রাখার কোনো সুযোগ নেই।