
গত সাড়ে ১৫ বছরের অধিক সময় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। এ সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আধিপত্য ও ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল শেখ হাসিনার ছেলে-মেয়ে ও আত্মীয়-স্বজনা। দেশের তৃণমূলের প্রশাসন থেকে শুরু করে প্রশাসনের শীর্ষপর্যায়েও তাদের কথায় উঠ-বস করেছে সবাই। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এখন পর্যন্ত দেশের কোথাও দেখা মিলছে না শেখ পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনদের। এককথায় বলতে গেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর লাপাত্তা আত্মীয়-স্বজনরাও। দলের অন্যান্য এমপি-মন্ত্রী ও নেতারা গণহত্যার অভিযোগে মামলায় গ্রেফতার হলেও শেখ হাসিনাসহ তার আত্মীয়-স্বজনরা কেউ গ্রেফতার হয়নি। লোকমুখে গুঞ্জন রয়েছে বেশির ভাগ স্বজন হাসিনার আগেই দেশ ছেড়েছেন। আবার অনেকে দেশেই গা-ঢাকা দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার উপর নির্বিচারে গুলি চালানোর অভিযোগে এবং গণহত্যা, হত্যাচেষ্টা, বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি ও অন্যান্য অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী-সংসদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের নেতাদের নামে একের পর এক মামলা হচ্ছে। মামলা হচ্ছে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্য-স্বজনদের বিরুদ্ধেও।
ইতোমধ্যে বেশ ক’জন সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও তৃণমূলের নেতাকে গ্রেফতার করা হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন শেখ হাসিনার স্বজনরা। শুধু তাই নয়, শেখ হাসিনার স্বজনরা গত সাড়ে ১৫ বছরে সরকারের মন্ত্রী, এমপি, মেয়র হওয়া ছাড়াও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্যসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে মন্ত্রী ও সমপদমর্যাদায় ছিলেন চারজন। এমপি হয়েছেন অন্তত ১০ জন। দুই সিটিতে মেয়র হয়েছেন তিনজন। সহযোগী সংগঠনের প্রধান হয়েছেন একজন। বৈধ ও অবৈধভাবে সরকারের সব রকমের সুযোগ নিয়েছেন তারা। অথচ এখনও তারা প্রশাসনের নাগালের বাইরে রয়েছেন। গুরুতর অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও শেখ হাসিনার স্বজনদের আইনের আওতায় না আনায় প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন মহলে। বর্তমান সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র বলছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১৫ আগস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা হয় ঢাকার আদালতে। এরপর তার বিরুদ্ধে অন্তত ২২২টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ১৮৮টি মামলায় হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও তার সরকারের সাবেক মন্ত্রী, এমপি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের নেতা, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শকসহ (আইজিপি) বিভিন্ন পেশার লোকজনকে আসামি করা হয়। ইতেমধ্যে কোনো কোনো মামলায় শেখ হাসিনার সরকারের কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও দলের কিছু নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শেখ হাসিনার স্বজনদেরও খুব দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। তার স্বজনরাও কেউ কেউ গোপনে দেশ ছাড়েন। আবার অনেকে আত্মগোপনে রয়েছেন। তবে তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. সাবের আহমেদ চৌধুরী বলেন, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিনিয়তই আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো না কোনো সুবিধাভোগী বা সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও নেতাদের গ্রেফতার করছে। সেখানে শেখ হাসিনার স্বজনদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না সেটি বলা ঠিক হবে না। আসলে তারা কী দেশে আত্মগোপনে আছেন নাকি গোপনে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন সেটি স্পষ্ট নয়। আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি, সেনাবাহিনী থেকে বলা হয়েছে, ক্যান্টনম্যান্টে ছয় শতাধিক লোক আছে। তারা কারা, সেটি কিন্তু স্পষ্ট করেনি সেনাবাহিনী। সেখানেও তো শেখ হাসিনার স্বজনরা থাকতে পারেন। এ ছাড়া কেউ যদি আত্মগোপনে থাকেন, তাদের গ্রেফতার করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। হয়তো তাদের খোঁজ পেতে প্রশাসনের সময় প্রয়োজন হচ্ছে। একইসুরে কথা বলেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, এসব সেনসেটিভ ইস্যুতে আমি কথা বলতে চাচ্ছি না। কারণ এটি সরকারের বিষয়। সরকার কী করবে না করবে সেটি তারা ভালো জানে। এ বিষয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর বলেন, শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়দের অনেকের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না এটা ঠিক না। তিনি বলেন, অপরাধীদের, মামলার আসামিদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশ তৎপর রয়েছে। প্রতিনিয়তই বিভিন্ন মামলার আসামিকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। মামলার আসামিদের গ্রেফতার করার জন্য পুলিশের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে এবং থাকবে। একইকথা বলেছেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস। তিনি বলেন, যাদের নামে ইতোমধ্যে মামলা হয়েছে, তাদের আমরা নজরদারি করছি। যদি কারও কাছে তাদের সম্পর্কে তথ্য থাকে আমাদের দিতে পারেন। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে আমরা তাদের অবশ্যই গ্রেফতার করব।
যে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সর্বমহলে : রাজনৈতিকসহ সব মহলে প্রশ্ন উঠেছে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করেছেন। ওই দিনই তড়িঘড়ি পদত্যাগ করে সামরিক বিমানে দেশ ত্যাগ করেন তিনি ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা। ওই দিন তারা দুজনই গণভবনে ছিলেন। তারা এখন ভারতেই অবস্থান করছেন। শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে দিল্লিতে কর্মরত। সরকারের পতনের সময় তিনি দিল্লিতেই ছিলেন। শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ মন্ত্রী, তিনি লন্ডনে বসবাস করেন। কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের অন্য সদস্য ও স্বজনরা কোথায় এমন প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে সর্বমহলে। তবে শেখ রেহানার ছেলে রেদওয়ান সিদ্দিক সরকার পতনের আগেই দেশ ছেড়েছেন। বঙ্গবন্ধু পরিবারের আরেক সদস্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস সরকার পতনের দুদিন আগে সিঙ্গাপুর চলে যান। শেখ ফজলে নূর তাপসের বড় ভাই শেখ ফজলে শামস পরশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান। তিনি দেশে আছেন নাকি বিদেশে, এ নিয়ে সংগঠনের কারও কাছে তথ্য নেই। যুবলীগের তৃণমূল পর্যায়ের একাধিক নেতা জানিয়েছেন ফজলে শামস পরশও দেশে নেই। আন্দোলন চলাকালে কোনো এক সময় তিনি বিদেশে চলে গেছেন। পরশের স্ত্রী অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যূথি কী দেশে আছেন না তার সঙ্গে বিদেশে গেছেন, সে সম্পর্কিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের অবস্থান নিয়ে রয়েছে ধূম্রজাল। শেখ হাসিনার চাচা শেখ কবির হোসেন দেশেই আছেন বলে তার ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে। শেখ ফজলুল করিমের ছোট ভাই শেখ ফজলুর রহমান মারুফ আগে থেকেই সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য হাসানাত আবদুল্লাহ বরিশাল-১ (গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া) থেকে নির্বাচিত সাবেক এমপি। তার ছোট ছেলে সেরনিয়াবাত আশিক আবদুল্লাহকে নিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন। হাসানাত ভারতে আছেন তার মেয়ে আঞ্জুমানারা কান্তা আবদুল্লাহর কাছে। কান্তা একজন ভারতীয় নাগরিককে বিয়ে করে সেখানেই বসবাস করেন। আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর মেজো ছেলে মঈন আবদুল্লাহ ও তার আরেক ছেলে বরিশাল সিটির সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ এবং আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছোট ভাই সিটির বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত আবুল খায়ের আবদুল্লাহ দেশেই আত্মগোপনে রয়েছেন বলে একাধিক সূত্র দাবি করেছে। সাদিক আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে মানুষের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। তিনি মানুষের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক ছিলেন। দুর্নীতিগ্রস্ত, মাদকাসক্ত সাদিক আবদুল্লাহ টর্চার সেল তৈরি করেছিলেন। বাগেরহাট-১ আসনের সাবেক এমপি শেখ হেলাল সরকার পতনের আগেই দেশ ছেড়ে গেছেন। তবে তার ছেলে বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক এমপি শেখ সারহান নাসের তন্ময় দেশ ছাড়তে পারেননি। তিনি দেশেই আত্মগোপনে আছেন। শেখ হেলালের ভাই খুলনা-২ আসনের সাবেক এমপি শেখ সালাউদ্দীন জুয়েলকে সরকার পতনের পর টুঙ্গিপাড়ায় দেখা গেছে। সর্বশেষ তার অবস্থান নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা। তিনি কী দেশেই আছেন না বিদেশে গেছেন। শেখ হাসিনার আরেক ফুফাতো ভাইয়ের ছেলে ও সাবেক চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী (লিটন চৌধুরী)। গত ৫ আগস্টের পর তারও আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তিনি কোথায় আছেন? তবে তার ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, তিনি আত্মগোপনে আছেন। বঙ্গবন্ধুর আত্মীয়ের মধ্যে ফরিদপুর-৪ আসন থেকে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করে বিজয়ী হওয়া সাবেক এমপি মুজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরীও রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। তিনি কী দেশেই আছেন না বিদেশে গেছেন কেউ বলতে পারছেন না। একাধিক সূত্রে বলছে, তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও জাতীয় পার্টির মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম আছেন ঢাকায়। শেখ সেলিমের স্ত্রী ফাতেমা সেলিম, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, শেখ ফজলে নাইম, শেখ আমিনা সুলতানা সানিয়া কোথায় আছেন কেউ জানেন না।
শেখ হাসিনা প্রসঙ্গে যা বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা : নরওয়ের অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-গবেষক এবং বাংলাদেশের নাগরিক মোবাশ্বের হাসান বলেন, বর্তমানে ক্ষমতাসীন সরকারের বৈধতা রয়েছে, জনসমর্থনও রয়েছে কিন্তু এ সরকার নির্বাচিত কোনো সরকার নয়। নির্বাচিত সরকারের মতো তাদের কোনো কর্তৃত্ব নেই। শেখ হাসিনা যদি চান, তাহলে এই দুর্বলতাকে ব্যবহার করে এক সময় দেশে ফিরে আসতে পারবেন। এটা কেবলই সময়ের অপেক্ষা। যুক্তরাষ্ট্রের থিঙ্কট্যাংক সংস্থা উইলসন সেন্টারের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যানও এমনটা মনে করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন শুধু সম্ভবই নয়, খুবই সম্ভব। কারণ পরিবারতন্ত্র দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর রাজনীতি ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। যুগ যুগ ধরে দক্ষিণ এশিয়ায় এটি চলে আসছে। মাত্র বাংলাদেশে সহসাই এ সংস্কৃতির অবসান ঘটবে এমনটা প্রত্যাশা করা যায় না। তার পরও হয়তো বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা শেষ হয়ে যেতো, যদি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হতো। কিন্তু দেশটির যে রাজনৈতিক বাস্তবতা, তাতে এটি একেবারেই সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগ এখনও বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। সম্প্রতি এ দু’জন বিশ্লেষক টাইম সাময়িকীকে দেয়া এক বক্তব্যে এসব কথা বলেন। তবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষক সংস্থা সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান টাইম ম্যাগাজিনকে বলেন, যে পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা দেশ থেকে বিদায় নিয়েছেন এবং তার চলে যাওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগ যে অবস্থায় রয়েছে, তাতে আগামী এক দশকের মধ্যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ কোনো গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকতে পারে তা একেবারেই ভিত্তিহীন কল্পনা। অবশ্য এ সরকার যদি সার্বিকভাবে ভেঙে পড়ে, তাহলে যে কোনো কিছুই সম্ভব। তবে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ভেঙে পড়ার আশঙ্কা বেশ ভালোভাবেই রয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক শহীদুল হক। টাইম ম্যাগাজিনকে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একটানা ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিল। পনের বছর কিন্তু দীর্ঘ সময়। এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের পুরো আমলাতন্ত্র ও প্রশাসনকে নিজের মতো করে সাজিয়েছে দলটি। বর্তমান সরকার কয়েকজন চিহ্নিত আমলা ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে ঠিকই কিন্তু পুরো প্রশাসনকে ঢেলে সাজানো এ সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। তা ছাড়া প্রশাসন ঢেলে সাজাতে গেলে আমলাতন্ত্রের সঙ্গে দ্বন্দ্ব সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। তাই অন্তর্বর্তী সরকার পারত পক্ষে কোনোভাবেই এ ঝুঁকি নিতে চাইবে না। আর এ প্রশাসন এবং আমলাতন্ত্রই আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনাকে ফের বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনবে। তবে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক সচেতন মহল বিষয়টা বুঝতে পেরে নড়ে চড়ে বসার চেষ্টা করছেন। রাজনৈতিক মহল দাবি তুলেছে হাসিনা সরকারের সুবিধাভোগীদের প্রশাসন থেকে দ্রুত সরিয়ে বঞ্চিত ও সৎ লোকদের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে বসানো হোক। সরকারও প্রশাসনে সংস্কারের জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। তবে তার ফল পেতে কিছুটা সময় লাগবে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।
প্রসঙ্গত, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার উপর নির্বিচারে গুলি চালানোর অভিযোগে এবং গণহত্যা, হত্যাচেষ্টা, বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি ও অন্যান্য অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী-সংসদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের নেতাদের নামে একের পর এক মামলা হচ্ছে। মামলা হচ্ছে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্য-স্বজনদের বিরুদ্ধেও।
ইতোমধ্যে বেশ ক’জন সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও তৃণমূলের নেতাকে গ্রেফতার করা হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন শেখ হাসিনার স্বজনরা। শুধু তাই নয়, শেখ হাসিনার স্বজনরা গত সাড়ে ১৫ বছরে সরকারের মন্ত্রী, এমপি, মেয়র হওয়া ছাড়াও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্যসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে মন্ত্রী ও সমপদমর্যাদায় ছিলেন চারজন। এমপি হয়েছেন অন্তত ১০ জন। দুই সিটিতে মেয়র হয়েছেন তিনজন। সহযোগী সংগঠনের প্রধান হয়েছেন একজন। বৈধ ও অবৈধভাবে সরকারের সব রকমের সুযোগ নিয়েছেন তারা। অথচ এখনও তারা প্রশাসনের নাগালের বাইরে রয়েছেন। গুরুতর অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও শেখ হাসিনার স্বজনদের আইনের আওতায় না আনায় প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন মহলে। বর্তমান সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র বলছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১৫ আগস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা হয় ঢাকার আদালতে। এরপর তার বিরুদ্ধে অন্তত ২২২টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ১৮৮টি মামলায় হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও তার সরকারের সাবেক মন্ত্রী, এমপি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের নেতা, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শকসহ (আইজিপি) বিভিন্ন পেশার লোকজনকে আসামি করা হয়। ইতেমধ্যে কোনো কোনো মামলায় শেখ হাসিনার সরকারের কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও দলের কিছু নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শেখ হাসিনার স্বজনদেরও খুব দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। তার স্বজনরাও কেউ কেউ গোপনে দেশ ছাড়েন। আবার অনেকে আত্মগোপনে রয়েছেন। তবে তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. সাবের আহমেদ চৌধুরী বলেন, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিনিয়তই আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো না কোনো সুবিধাভোগী বা সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও নেতাদের গ্রেফতার করছে। সেখানে শেখ হাসিনার স্বজনদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না সেটি বলা ঠিক হবে না। আসলে তারা কী দেশে আত্মগোপনে আছেন নাকি গোপনে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন সেটি স্পষ্ট নয়। আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি, সেনাবাহিনী থেকে বলা হয়েছে, ক্যান্টনম্যান্টে ছয় শতাধিক লোক আছে। তারা কারা, সেটি কিন্তু স্পষ্ট করেনি সেনাবাহিনী। সেখানেও তো শেখ হাসিনার স্বজনরা থাকতে পারেন। এ ছাড়া কেউ যদি আত্মগোপনে থাকেন, তাদের গ্রেফতার করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। হয়তো তাদের খোঁজ পেতে প্রশাসনের সময় প্রয়োজন হচ্ছে। একইসুরে কথা বলেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, এসব সেনসেটিভ ইস্যুতে আমি কথা বলতে চাচ্ছি না। কারণ এটি সরকারের বিষয়। সরকার কী করবে না করবে সেটি তারা ভালো জানে। এ বিষয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর বলেন, শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়দের অনেকের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না এটা ঠিক না। তিনি বলেন, অপরাধীদের, মামলার আসামিদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশ তৎপর রয়েছে। প্রতিনিয়তই বিভিন্ন মামলার আসামিকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। মামলার আসামিদের গ্রেফতার করার জন্য পুলিশের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে এবং থাকবে। একইকথা বলেছেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস। তিনি বলেন, যাদের নামে ইতোমধ্যে মামলা হয়েছে, তাদের আমরা নজরদারি করছি। যদি কারও কাছে তাদের সম্পর্কে তথ্য থাকে আমাদের দিতে পারেন। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে আমরা তাদের অবশ্যই গ্রেফতার করব।
যে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সর্বমহলে : রাজনৈতিকসহ সব মহলে প্রশ্ন উঠেছে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করেছেন। ওই দিনই তড়িঘড়ি পদত্যাগ করে সামরিক বিমানে দেশ ত্যাগ করেন তিনি ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা। ওই দিন তারা দুজনই গণভবনে ছিলেন। তারা এখন ভারতেই অবস্থান করছেন। শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে দিল্লিতে কর্মরত। সরকারের পতনের সময় তিনি দিল্লিতেই ছিলেন। শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ মন্ত্রী, তিনি লন্ডনে বসবাস করেন। কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের অন্য সদস্য ও স্বজনরা কোথায় এমন প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে সর্বমহলে। তবে শেখ রেহানার ছেলে রেদওয়ান সিদ্দিক সরকার পতনের আগেই দেশ ছেড়েছেন। বঙ্গবন্ধু পরিবারের আরেক সদস্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস সরকার পতনের দুদিন আগে সিঙ্গাপুর চলে যান। শেখ ফজলে নূর তাপসের বড় ভাই শেখ ফজলে শামস পরশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান। তিনি দেশে আছেন নাকি বিদেশে, এ নিয়ে সংগঠনের কারও কাছে তথ্য নেই। যুবলীগের তৃণমূল পর্যায়ের একাধিক নেতা জানিয়েছেন ফজলে শামস পরশও দেশে নেই। আন্দোলন চলাকালে কোনো এক সময় তিনি বিদেশে চলে গেছেন। পরশের স্ত্রী অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যূথি কী দেশে আছেন না তার সঙ্গে বিদেশে গেছেন, সে সম্পর্কিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের অবস্থান নিয়ে রয়েছে ধূম্রজাল। শেখ হাসিনার চাচা শেখ কবির হোসেন দেশেই আছেন বলে তার ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে। শেখ ফজলুল করিমের ছোট ভাই শেখ ফজলুর রহমান মারুফ আগে থেকেই সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য হাসানাত আবদুল্লাহ বরিশাল-১ (গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া) থেকে নির্বাচিত সাবেক এমপি। তার ছোট ছেলে সেরনিয়াবাত আশিক আবদুল্লাহকে নিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন। হাসানাত ভারতে আছেন তার মেয়ে আঞ্জুমানারা কান্তা আবদুল্লাহর কাছে। কান্তা একজন ভারতীয় নাগরিককে বিয়ে করে সেখানেই বসবাস করেন। আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর মেজো ছেলে মঈন আবদুল্লাহ ও তার আরেক ছেলে বরিশাল সিটির সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ এবং আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছোট ভাই সিটির বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত আবুল খায়ের আবদুল্লাহ দেশেই আত্মগোপনে রয়েছেন বলে একাধিক সূত্র দাবি করেছে। সাদিক আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে মানুষের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। তিনি মানুষের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক ছিলেন। দুর্নীতিগ্রস্ত, মাদকাসক্ত সাদিক আবদুল্লাহ টর্চার সেল তৈরি করেছিলেন। বাগেরহাট-১ আসনের সাবেক এমপি শেখ হেলাল সরকার পতনের আগেই দেশ ছেড়ে গেছেন। তবে তার ছেলে বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক এমপি শেখ সারহান নাসের তন্ময় দেশ ছাড়তে পারেননি। তিনি দেশেই আত্মগোপনে আছেন। শেখ হেলালের ভাই খুলনা-২ আসনের সাবেক এমপি শেখ সালাউদ্দীন জুয়েলকে সরকার পতনের পর টুঙ্গিপাড়ায় দেখা গেছে। সর্বশেষ তার অবস্থান নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা। তিনি কী দেশেই আছেন না বিদেশে গেছেন। শেখ হাসিনার আরেক ফুফাতো ভাইয়ের ছেলে ও সাবেক চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী (লিটন চৌধুরী)। গত ৫ আগস্টের পর তারও আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তিনি কোথায় আছেন? তবে তার ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, তিনি আত্মগোপনে আছেন। বঙ্গবন্ধুর আত্মীয়ের মধ্যে ফরিদপুর-৪ আসন থেকে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করে বিজয়ী হওয়া সাবেক এমপি মুজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরীও রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। তিনি কী দেশেই আছেন না বিদেশে গেছেন কেউ বলতে পারছেন না। একাধিক সূত্রে বলছে, তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও জাতীয় পার্টির মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম আছেন ঢাকায়। শেখ সেলিমের স্ত্রী ফাতেমা সেলিম, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, শেখ ফজলে নাইম, শেখ আমিনা সুলতানা সানিয়া কোথায় আছেন কেউ জানেন না।
শেখ হাসিনা প্রসঙ্গে যা বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা : নরওয়ের অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-গবেষক এবং বাংলাদেশের নাগরিক মোবাশ্বের হাসান বলেন, বর্তমানে ক্ষমতাসীন সরকারের বৈধতা রয়েছে, জনসমর্থনও রয়েছে কিন্তু এ সরকার নির্বাচিত কোনো সরকার নয়। নির্বাচিত সরকারের মতো তাদের কোনো কর্তৃত্ব নেই। শেখ হাসিনা যদি চান, তাহলে এই দুর্বলতাকে ব্যবহার করে এক সময় দেশে ফিরে আসতে পারবেন। এটা কেবলই সময়ের অপেক্ষা। যুক্তরাষ্ট্রের থিঙ্কট্যাংক সংস্থা উইলসন সেন্টারের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যানও এমনটা মনে করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন শুধু সম্ভবই নয়, খুবই সম্ভব। কারণ পরিবারতন্ত্র দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর রাজনীতি ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। যুগ যুগ ধরে দক্ষিণ এশিয়ায় এটি চলে আসছে। মাত্র বাংলাদেশে সহসাই এ সংস্কৃতির অবসান ঘটবে এমনটা প্রত্যাশা করা যায় না। তার পরও হয়তো বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা শেষ হয়ে যেতো, যদি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হতো। কিন্তু দেশটির যে রাজনৈতিক বাস্তবতা, তাতে এটি একেবারেই সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগ এখনও বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। সম্প্রতি এ দু’জন বিশ্লেষক টাইম সাময়িকীকে দেয়া এক বক্তব্যে এসব কথা বলেন। তবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষক সংস্থা সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান টাইম ম্যাগাজিনকে বলেন, যে পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা দেশ থেকে বিদায় নিয়েছেন এবং তার চলে যাওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগ যে অবস্থায় রয়েছে, তাতে আগামী এক দশকের মধ্যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ কোনো গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকতে পারে তা একেবারেই ভিত্তিহীন কল্পনা। অবশ্য এ সরকার যদি সার্বিকভাবে ভেঙে পড়ে, তাহলে যে কোনো কিছুই সম্ভব। তবে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ভেঙে পড়ার আশঙ্কা বেশ ভালোভাবেই রয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক শহীদুল হক। টাইম ম্যাগাজিনকে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একটানা ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিল। পনের বছর কিন্তু দীর্ঘ সময়। এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের পুরো আমলাতন্ত্র ও প্রশাসনকে নিজের মতো করে সাজিয়েছে দলটি। বর্তমান সরকার কয়েকজন চিহ্নিত আমলা ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে ঠিকই কিন্তু পুরো প্রশাসনকে ঢেলে সাজানো এ সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। তা ছাড়া প্রশাসন ঢেলে সাজাতে গেলে আমলাতন্ত্রের সঙ্গে দ্বন্দ্ব সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। তাই অন্তর্বর্তী সরকার পারত পক্ষে কোনোভাবেই এ ঝুঁকি নিতে চাইবে না। আর এ প্রশাসন এবং আমলাতন্ত্রই আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনাকে ফের বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনবে। তবে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক সচেতন মহল বিষয়টা বুঝতে পেরে নড়ে চড়ে বসার চেষ্টা করছেন। রাজনৈতিক মহল দাবি তুলেছে হাসিনা সরকারের সুবিধাভোগীদের প্রশাসন থেকে দ্রুত সরিয়ে বঞ্চিত ও সৎ লোকদের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে বসানো হোক। সরকারও প্রশাসনে সংস্কারের জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। তবে তার ফল পেতে কিছুটা সময় লাগবে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।