
টানা চার মেয়াদে প্রায় গত ১৬ বছর রাষ্ট্রপরিচালনা করেছে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তবে গত ১৬ বছর দলকে শক্তিশালী করতে পারেনি দলটি। উল্টো নগর-মহানগর, জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা গেছে। যার কারণে বৈষসম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন প্রতিরোধে নেতাকর্মীদের মাঠে নামাতে পারেনি দলটি। যদিও দেশের সবচেয় বড় রাজনৈতিক দল বিএনপিকে ছাড়াই দ্বাদশ নির্বাচনের মাধ্যমে চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এরপর ৮ মাসের মাথায় ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে শেখ হাসিনা। দেশে গণহত্যা চালানোর অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা-মন্ত্রী ও এমপিসহ সকল মেয়র-কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে একের পর এক হত্যা মামলা হচ্ছে। এসব মামলায় ইতিমধ্যে অনেকেই জেলখানায় রয়েছেন। তবে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর নিজেদের শুধরে নিতে বড় ধরনের সংস্কার আনার পরিকল্পনার চিন্তা-ভাবনা করছেন আওয়ামী লীগ। একই দাবি দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের। ক্লীন ইমেজের নেতাকর্মীদের দিয়ে আগামীর আওয়ামী লীগকে ঢেলে সাজানোর দাবি নেতাকর্মীদের।
সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর একেবারেই থমকে গেছে আওয়ামী লীগের রাজনীতি। দলের ইউনিট-কেন্দ্র থেকে শুরু করে থানা-জেলা এবং বিভাগীয় সকল পর্যায়ের রাজনীতি প্রকাশ্যে বন্ধ রয়েছে। তবে আত্মগোপনে থাকা কয়েকজন নেতা গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে নিজ দলের বক্তব্যে তুলে ধরছেন এবং প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবে, তা নিয়ে সুধী সমাজের পাশাপাশি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা শুরু হয়েছে। বলা হচ্ছে, বড় ধরনের রাজনৈতিক সংস্কার ছাড়া দলটির ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন। কারণ গত চার মেয়াদে সাড়ে ১৫ বছর ধরে টানা ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও জাতীয় পর্যায়ের বেশির ভাগ নেতার ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলটির বেশির ভাগ কেন্দ্রীয় নেতা, এমপি ও মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তাদের প্রায় সবার ‘পাবলিক ইমেজ’ খারাপ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে ওই সব নেতার নেতৃত্বে গত সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ কতটা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে, সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে কথা হয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ এর সঙ্গে। তিনি বলেন, রাজনীতিক সংস্কার আওয়ামী লীগকেই করতে হবে। অন্য কেউ বলে দেবে আর তারা সংস্কার করবে তা নয়, টিকে থাকতে হলে তাদেরই সংস্কার করতে হবে। তবে বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, আশা করেছিলাম আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যে কেউ ভুলত্রুটির কথা স্বীকার করে জাতির কাছে দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেটা তারা করল না। যতদিন তারা ক্ষমা না চাইবে, ততদিন তাদের কর্মকাণ্ডের কথা এ দেশের মানুষ মনে রাখবে। তবে এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, পরিস্থিতির মূল্যায়ন আমাদের করতে হবে। আমি নিজে সেটি করি। কিন্তু এটি একটি সম্মিলিত ব্যাপার। সংস্কারের প্রয়োজন আছে বলেও আমি মনে করি। সে জন্য সময় ও পরিবেশ তৈরি হতে হবে।
দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে দুর্নীতি-টাকা পাচারে সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে : গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে প্রায় দেড় মাস যাবত ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের দুর্নীতি এবং টাকা পাচারসংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও বিদেশে পাচার করা সম্পদ ফিরিয়ে আনার বিষয়ে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘে দেয়া ভাষণে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চেয়েছেন। তিনি বলেন, অবৈধ অর্থের প্রবাহ এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে সম্পদের পাচার বন্ধ করা অত্যাবশ্যক। উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে পাচার হয়ে যাওয়া সম্পদ ফেরত আনার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এর আগে দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, গত জুলাই-আগস্ট মাসে দেশে গণ-অভ্যুত্থানে বলপ্রয়োগ ও হতাহতের যে দুঃসহ ঘটনা ঘটানো হয়েছে, তার স্বচ্ছ তদন্ত নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধানকে বাংলাদেশে এসে তদন্ত শুরু করতে আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছি। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অন্তর্বর্তী সরকার গৃহীত সংস্কার কার্যক্রম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। এ সময় ব্লিঙ্কেন প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে আরও জানান, বাংলাদেশের পুনর্গঠনে সহায়তা করতে ওয়াশিংটন একসঙ্গে কাজ করবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে চুরি হয়ে যাওয়া কোটি কোটি টাকা ফেরত আনার ক্ষেত্রে তারা সহায়তা করবেন।
মন্ত্রী-এমপি ও দলীয় নেতাদের দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক : দুর্নীতি দমন কমিশন ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও দলীয় নেতাদের দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করেছে। ছাত্র আন্দোলন রুখতে শেখ হাসিনার সরকারের শাসনের শেষ সময়ে যে গণহত্যা সংঘটিত হয়, তা তদন্ত করার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সহায়তা চেয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংস্থাটির প্রধান কৌঁসুলি করিম খান বৈঠক করেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা আইসিসিতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ বা মামলা দায়ের সম্পর্কে ধারণা নেন। গণহত্যার তদন্ত ছাড়াও বিভিন্ন দেশ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও দলীয় নেতাদের পাচারকৃত অর্থ বাংলাদেশ সরকারকে ফেরত দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। এ অবস্থায় আশঙ্কা করা হচ্ছে, সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও দলীয় নেতাদের কেলেঙ্কারীর সব তথ্য জনসমক্ষে এলে আওয়ামী লীগের মধ্যে সংকট আরও বাড়বে।
প্রসঙ্গত, ১/১১ পরবর্তী পরিস্থিতিতে এখনকার আওয়ামী লীগের মতো প্রায় একই ধরনের সংকটে পড়েছিল বিএনপি। ওই সময় দলের সাংগঠনিক সক্ষমতা ও ভাবমূর্তি বৃদ্ধির জন্য প্রবীণ রাজনীতিক খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে মহাসচিব করা হয়। বিএনপির ভাবমূর্তি ফেরাতে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদ দিয়ে সামনে আনা হয় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে। পরবর্তী সময়ে তাকে মহাসচিব করা হয়। মির্জা ফখরুলই খাদের কিনারায় যাওয়া বিএনপির ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন বলে দেশের রাজনীতিতে আলোচনা আছে। গত ১৫ বছর বিএনপিকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করে এগিয়ে নিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফলে তার স্বচ্ছ ভাবমূর্তির বিষয়টি বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখনো আলোচনার বিষয়। তাই অনেকে বলছেন, দলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মতো বা ইতিবাচক ভাবমূর্তির এই ধরনের নেতা আওয়ামী লীগে দরকার। সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাবমূর্তি দলের ভেতরে-বাইরে প্রশ্নবিদ্ধ। তার উসকানিমূলক বক্তব্য ছাত্র আন্দোলনকে আরও বেগবান করেছে। এ কারণে সবার আগে তাকে পালাতে হয়েছে। আওয়ামী লীগের ভেতরে ও বাইরে দুই জায়গাতেই ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে এখন সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হচ্ছে। পাশাপাশি দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে এমন নেতাদের বিরুদ্ধেও দলের তৃণমূলে ক্ষোভ দানা বাঁধছে। কারণ কোনো অবৈধ আয় না করেও বিশেষ পরিস্থিতিতে এখন তাদের পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। ফলে দলের মধ্যে কী ভুলভ্রান্তি হচ্ছে, তা পর্যালোচনা করে ঘুরে দাঁড়ানোর পথনকশা তৈরি করা দরকার বলে তারা মনে করছেন। তবে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতারা কোনো দুর্নীতির টাকার ভাগ পাননি। দলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তারা নিবেদিতপ্রাণ হিসেবে আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করছেন। অথচ এখন তাদের পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। তিনি বলেন, টানা ক্ষমতায় থেকে দলের অনেক ভুলভ্রান্তি হয়েছে। অনেকে দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন। তাদের বাদ দিয়ে দলকে এগিয়ে নেয়ার রূপরেখা তৈরি এখন সময়ের দাবি। একই দাবি জানিয়েছেন ময়মনসিংহ-রবিশালসহ আরও অনেক জেলার নেতারা। তবে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত কোনো নেতাকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আর দেখতে চান না ক্লীন ইমেজের নেতারা।
সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর একেবারেই থমকে গেছে আওয়ামী লীগের রাজনীতি। দলের ইউনিট-কেন্দ্র থেকে শুরু করে থানা-জেলা এবং বিভাগীয় সকল পর্যায়ের রাজনীতি প্রকাশ্যে বন্ধ রয়েছে। তবে আত্মগোপনে থাকা কয়েকজন নেতা গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে নিজ দলের বক্তব্যে তুলে ধরছেন এবং প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবে, তা নিয়ে সুধী সমাজের পাশাপাশি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা শুরু হয়েছে। বলা হচ্ছে, বড় ধরনের রাজনৈতিক সংস্কার ছাড়া দলটির ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন। কারণ গত চার মেয়াদে সাড়ে ১৫ বছর ধরে টানা ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও জাতীয় পর্যায়ের বেশির ভাগ নেতার ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলটির বেশির ভাগ কেন্দ্রীয় নেতা, এমপি ও মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তাদের প্রায় সবার ‘পাবলিক ইমেজ’ খারাপ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে ওই সব নেতার নেতৃত্বে গত সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ কতটা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে, সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে কথা হয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ এর সঙ্গে। তিনি বলেন, রাজনীতিক সংস্কার আওয়ামী লীগকেই করতে হবে। অন্য কেউ বলে দেবে আর তারা সংস্কার করবে তা নয়, টিকে থাকতে হলে তাদেরই সংস্কার করতে হবে। তবে বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, আশা করেছিলাম আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যে কেউ ভুলত্রুটির কথা স্বীকার করে জাতির কাছে দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেটা তারা করল না। যতদিন তারা ক্ষমা না চাইবে, ততদিন তাদের কর্মকাণ্ডের কথা এ দেশের মানুষ মনে রাখবে। তবে এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, পরিস্থিতির মূল্যায়ন আমাদের করতে হবে। আমি নিজে সেটি করি। কিন্তু এটি একটি সম্মিলিত ব্যাপার। সংস্কারের প্রয়োজন আছে বলেও আমি মনে করি। সে জন্য সময় ও পরিবেশ তৈরি হতে হবে।
দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে দুর্নীতি-টাকা পাচারে সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে : গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে প্রায় দেড় মাস যাবত ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের দুর্নীতি এবং টাকা পাচারসংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও বিদেশে পাচার করা সম্পদ ফিরিয়ে আনার বিষয়ে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘে দেয়া ভাষণে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চেয়েছেন। তিনি বলেন, অবৈধ অর্থের প্রবাহ এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে সম্পদের পাচার বন্ধ করা অত্যাবশ্যক। উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে পাচার হয়ে যাওয়া সম্পদ ফেরত আনার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এর আগে দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, গত জুলাই-আগস্ট মাসে দেশে গণ-অভ্যুত্থানে বলপ্রয়োগ ও হতাহতের যে দুঃসহ ঘটনা ঘটানো হয়েছে, তার স্বচ্ছ তদন্ত নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধানকে বাংলাদেশে এসে তদন্ত শুরু করতে আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছি। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অন্তর্বর্তী সরকার গৃহীত সংস্কার কার্যক্রম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। এ সময় ব্লিঙ্কেন প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে আরও জানান, বাংলাদেশের পুনর্গঠনে সহায়তা করতে ওয়াশিংটন একসঙ্গে কাজ করবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে চুরি হয়ে যাওয়া কোটি কোটি টাকা ফেরত আনার ক্ষেত্রে তারা সহায়তা করবেন।
মন্ত্রী-এমপি ও দলীয় নেতাদের দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক : দুর্নীতি দমন কমিশন ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও দলীয় নেতাদের দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করেছে। ছাত্র আন্দোলন রুখতে শেখ হাসিনার সরকারের শাসনের শেষ সময়ে যে গণহত্যা সংঘটিত হয়, তা তদন্ত করার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সহায়তা চেয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংস্থাটির প্রধান কৌঁসুলি করিম খান বৈঠক করেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা আইসিসিতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ বা মামলা দায়ের সম্পর্কে ধারণা নেন। গণহত্যার তদন্ত ছাড়াও বিভিন্ন দেশ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও দলীয় নেতাদের পাচারকৃত অর্থ বাংলাদেশ সরকারকে ফেরত দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। এ অবস্থায় আশঙ্কা করা হচ্ছে, সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও দলীয় নেতাদের কেলেঙ্কারীর সব তথ্য জনসমক্ষে এলে আওয়ামী লীগের মধ্যে সংকট আরও বাড়বে।
প্রসঙ্গত, ১/১১ পরবর্তী পরিস্থিতিতে এখনকার আওয়ামী লীগের মতো প্রায় একই ধরনের সংকটে পড়েছিল বিএনপি। ওই সময় দলের সাংগঠনিক সক্ষমতা ও ভাবমূর্তি বৃদ্ধির জন্য প্রবীণ রাজনীতিক খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে মহাসচিব করা হয়। বিএনপির ভাবমূর্তি ফেরাতে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদ দিয়ে সামনে আনা হয় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে। পরবর্তী সময়ে তাকে মহাসচিব করা হয়। মির্জা ফখরুলই খাদের কিনারায় যাওয়া বিএনপির ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন বলে দেশের রাজনীতিতে আলোচনা আছে। গত ১৫ বছর বিএনপিকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করে এগিয়ে নিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফলে তার স্বচ্ছ ভাবমূর্তির বিষয়টি বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখনো আলোচনার বিষয়। তাই অনেকে বলছেন, দলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মতো বা ইতিবাচক ভাবমূর্তির এই ধরনের নেতা আওয়ামী লীগে দরকার। সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাবমূর্তি দলের ভেতরে-বাইরে প্রশ্নবিদ্ধ। তার উসকানিমূলক বক্তব্য ছাত্র আন্দোলনকে আরও বেগবান করেছে। এ কারণে সবার আগে তাকে পালাতে হয়েছে। আওয়ামী লীগের ভেতরে ও বাইরে দুই জায়গাতেই ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে এখন সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হচ্ছে। পাশাপাশি দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে এমন নেতাদের বিরুদ্ধেও দলের তৃণমূলে ক্ষোভ দানা বাঁধছে। কারণ কোনো অবৈধ আয় না করেও বিশেষ পরিস্থিতিতে এখন তাদের পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। ফলে দলের মধ্যে কী ভুলভ্রান্তি হচ্ছে, তা পর্যালোচনা করে ঘুরে দাঁড়ানোর পথনকশা তৈরি করা দরকার বলে তারা মনে করছেন। তবে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতারা কোনো দুর্নীতির টাকার ভাগ পাননি। দলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তারা নিবেদিতপ্রাণ হিসেবে আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করছেন। অথচ এখন তাদের পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। তিনি বলেন, টানা ক্ষমতায় থেকে দলের অনেক ভুলভ্রান্তি হয়েছে। অনেকে দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন। তাদের বাদ দিয়ে দলকে এগিয়ে নেয়ার রূপরেখা তৈরি এখন সময়ের দাবি। একই দাবি জানিয়েছেন ময়মনসিংহ-রবিশালসহ আরও অনেক জেলার নেতারা। তবে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত কোনো নেতাকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আর দেখতে চান না ক্লীন ইমেজের নেতারা।