সপ্তাহ জুড়ে বেড়েছে নিত্য পন্যের দাম। সবজি বাজারেও টানা বৃষ্টির কারণে সংকটের কারণে বেড়েছে সবজির দাম। বেশির ভাগ সবজির দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। ব্যবসায়ীরা এ জন্য ছুতো বানিয়েছেন বৃষ্টি ও বন্যাকে। সবজি ব্যবসায়ীরা বলছেন, পানি জমে থাকায় চাষিরা সবজি তুলতে পারছেন না। ক্ষেতেই পচে যাচ্ছে। শাকসবজির সংকটে মানুষ ঝুঁকছেন আমিষে। এরই চাপে চড়ছে ডিম ও মুরগির মাংসের দাম। মাস ব্যবধানে সবজি কেজিতে ২০ থেকে ৩০, মুরগি ২০ এবং ডিম ডজনে বেড়েছে ১৫ টাকা। অপরদিকে সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে।
ক্রেতারা বলছেন, চাঁদাবাজি কমলেও অন্তর্বর্তী সরকার বাজার সিন্ডিকেট এখনও ভাঙতে পারেনি। তারাই নানা ছুতোয় কলকাঠি নাড়ছে। বাড়ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের কষ্ট। সরেজমিন রাজধানীর কারওয়ান বাজার, আগারগাঁও কাঁচাবাজারসহ কয়েকটি বাজারে প্রতিকেজি গোল বেগুন ৮০-৯০ টাকা বিক্রি হতে দেখা যায়। গত সপ্তাহের তুলনায় ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। পটোল, ঢ্যাঁড়শ, চিচিঙ্গা ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ টাকার কাছাকাছি। একইভাবে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে বরবটি, করলা ও লম্বা বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। অবশ্য এক মাস আগে এসব সবজির দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা কম ছিল।
কাঁচামরিচের দাম ওঠানামা করছে। কোথাও ২০০ আবার কোথাও ২৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। দিন চারেক আগেও ছিল ১৬০ টাকা। ৫০-৫৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে স্থিতি পেয়েছে আলুর দাম।
কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা মাহমুদ আলম বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে ক্ষেতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সবজি। বাজারে পর্যাপ্ত না আসায় দাম বেড়েছে। কিছু কিছু জায়গায় আবারও নেতাদের চাঁদা দিতে হচ্ছে। এর প্রভাবও পড়েছে।
সবজি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্ষায় সবজির সরবরাহ কম থাকে। এ সময় বৃষ্টিতে সবজি গাছ মরে যায়। ক্ষেতে পানি জমে যাওয়ায় সবজি তোলা যায় না, পচে ঝরে পড়ে। ডিম ও মুরগি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে সবজির আকাল থাকায় মানুষ ডিম-মুরগির মাংসে ঝুঁকছেন। সাম্প্রতিক বন্যায় পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় বহু খামার তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। চাহিদা ও উৎপাদনের মধ্যে ফারাক তৈরি হয়েছে, যা দামকে উস্কে দিচ্ছে।
পাইকারি বাজারে ফার্মের বাদামি রঙের ডিম ১৬০ টাকা ডজন বিক্রি হলেও মহল্লার দোকানে লাগছে ১৬৫। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ডিম ১৪৫-১৫০ টাকায় নেমেছিল। ব্রয়লার মুরগির দামও কমে হয়েছিল ১৬০ টাকা। তবে গত তিন সপ্তাহে আবারও বেড়ে আগের অবস্থানে গেছে। গতকাল ব্রয়লার মুরগি ১৮০-১৯০ ও সোনালি মুরগি ২৫০ থেকে ২৭০ টাকায় বিক্রি হয়।
পেঁয়াজ রফতানির শর্ত ভারত প্রত্যাহার করলেও, বাজারে তার প্রভাব তেমন পড়েনি। আমদানি পেঁয়াজের কেজি ৯০-১০০ এবং আগের মতোই ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা। গত সপ্তাহের মতো দেশি রসুন ২০০-২১০ এবং আমদানি রসুন ২১০-২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নিয়ন্ত্রণে আসেনি চালের বাজারও। প্রতিকেজি মোটা চাল (স্বর্ণা ও চায়না ইরি) ৫০-৫৫ ও মাঝারি (বিআর-২৮ ও পাইজাম) ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে সরু চাল (মিনিকেট ও নাজিরশাইল) বিক্রি হচ্ছে ৬৪-৭৮ টাকা টাকা কেজি।
টিসিবির তথ্যে, গত এক মাসে ব্রয়লারের দাম কেজিতে ৩ এবং ডিম ডজনে বেড়েছে ৬ শতাংশ। আগারগাঁওয়ের কাঁচাবাজারে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী সাইফুল আলম বলেন, চাঁদাবাজি বন্ধ হওয়ায় সবজির দাম কিছুটা কমেছিল। এখন আবার সবজি, ডিমসহ সব কিছুর দাম বাড়ছে। সরকার শক্ত হাতে বাজার সিন্ডিকেট না ভাঙলে সাধারণ মানুষের কষ্ট রয়েই যাবে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে গত মঙ্গলবার রাত থেকে সারা দেশে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে নিত্যসামগ্রীর বাজারে। বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম, আগের চেয়ে মরিচের দাম কেজিতে সর্বোচ্চ ৪০ টাকা বেড়েছে। বেড়েছে আদার দামও। বিভিন্ন প্রকার সবজি, পেঁয়াজ ও চালের দাম অপরিবর্তিত আছে।
অন্যদিকে আগের সপ্তাহের তুলনায় বাজারে ব্রয়লার মুরগি ও ফার্মের মুরগির ডিমের দাম কমেনি। তবে সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেওড়াপাড়া, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও টাউন হল কাঁচাবাজার ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
সরকার দাম কমাতে কোনো উদ্যোগ নিয়েছে কি না জানি না। কিন্তু এভাবে বাড়তি দামে জিনিসপত্র কিনতে গিয়ে আমাদের কষ্টের শেষ নেই।
কয়েক দিন ধরে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছিল ১৬০ থেকে ২০০ টাকা। গত তিন দিনে মরিচের দাম কেজিতে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এতে প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৪০ টাকায়। পাড়া-মহল্লায় এ দাম আরও বেশি রাখা হচ্ছে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, মূলত ভারত থেকে মরিচের আমদানি কমেছে। আবার বৃষ্টির কারণে দেশীয় মরিচের সরবরাহও কম। এ দুই কারণে মরিচের দাম বেড়েছে।
গত সপ্তাহে আদার কেজি ছিল ২২০-২৪০ টাকা, যা গতকাল ২৪০-২৮০ টাকায় বিক্রি হয়। কেজিতে ২০-৪০ টাকা বেড়েছে। তবে বাজারে নতুন আদা (কাঁচা আদা) আসতে শুরু করেছে, যদিও এ ধরনের আদা বেশি সময় ভালো থাকে না। বাজারভেদে নতুন আদা ১৫০-২০০ টাকা কেজি পাওয়া যায়। এ ছাড়া ধনেপাতার দাম খুচরা পর্যায়ে কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে ৪০০-৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা কমেছে। প্রতি কেজি সোনালি মুরগি গতকাল ২৬০-২৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর হাইব্রিড ধরনের সোনালি মুরগি কেজিতে আরও ২০ টাকা কমে পাওয়া যায়।
অপরদিকে বাজারে ব্রয়লার মুরগি ও ফার্মের মুরগির ডিমের দাম আগের সপ্তাহের তুলনায় কমেনি। এ দাম সরকারের বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে কিছুটা বেশি। গতকাল বাজারভেদে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮৫-১৯০ টাকায় বিক্রি হয়। আর ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন বাদামি ডিম ১৬০-১৬৫ টাকা ও সাদা ডিম ১৫৫-১৬০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা কমেছে। প্রতি কেজি সোনালি মুরগি গতকাল ২৬০-২৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর হাইব্রিড ধরনের সোনালি মুরগি কেজিতে আরও ২০ টাকা কমে পাওয়া যায়।
সম্প্রতি ডিম এবং ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির ‘যৌক্তিক দাম’ নির্ধারণ করে দেয় সরকারি সংস্থা কৃষি বিপণন অধিদফতর। এতে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি সর্বোচ্চ ১৮০ টাকা, সোনালি মুরগি সর্বোচ্চ ২৭০ টাকা ও ডিমের দাম সর্বোচ্চ ১৪২ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
সাধারণ সময়ের চেয়ে চিংড়ি, পাঙাশ ও রুই মাছ কেজিতে ৩০-৫০ টাকা বেশি বিক্রি হচ্ছে। এই দাম গত সপ্তাহেই বেড়েছিল, এরপর সেভাবে কমেনি। আর ইলিশ মাছের দোকানে ভিড় বেশি থাকলেও বিক্রি কম।
সাধারণ সময়ের চেয়ে চিংড়ি, পাঙাশ ও রুই মাছ কেজিতে ৩০-৫০ টাকা বেশি বিক্রি হচ্ছে। এই দাম গত সপ্তাহেই বেড়েছিল, এরপর সেভাবে কমেনি। আর ইলিশ মাছের দোকানে ভিড় বেশি থাকলেও বিক্রি কম।
এদিকে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উদ্যোগে গত বৃহস্পতিবার তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতি মতবিনিময় সভা হয়। সেখানে সমিতির সভাপতি আমানত উল্লাহ বলেন, ২০১২ সালে বার্ড ফ্লু দেখা দিলে ডিমের উৎপাদন হাব গাজীপুর থেকে টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহসহ কয়েকটি জেলায় স্থানান্তর হয়।
এখানে উৎপাদক ছাড়াও মধ্যস্বত্বভোগী কাজ করেন। পাইকাররা এ চক্রের কাছে জিম্মি। এ জন্য বাড়ছে ডিমের দাম। আবার বন্যায় অনেক খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক হানিফ মিয়া বলেন, করপোরেট প্রতিষ্ঠান তাদের পর্যাপ্ত ডিম সরবরাহ করে না। এ কারণে বাজারে অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে।