* প্রতিবিপ্লব নিয়ে যা বললেন ফখরুল * প্রতিবিপ্লবের চেষ্টা করা হলে আ’লীগের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না : হুঁশিয়ার সারজিস আলমের * শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হলেও প্রতিবিপ্লবের জন্য টাকা ছড়াচ্ছে * প্রশাসন-পুলিশসহ নানা প্রতিষ্ঠানে স্থিতিশীলতা ফিরে আসেনি
ছাত্র-জনতার দেশ কাঁপানো আন্দোলনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের ৪০ দিন পূর্ণ হয়েছে। তবে ছাত্র-জনতার রক্ত স্রোতের মাধ্যমে যে বিজয় অর্জিত হয়েছে, তা যাতে কোনো প্রতিবিপ্লবের কারণে হাত ছাড়া না হয় তার জন্য অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যদের ব্যবহার করার আহ্বান জানিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা। তারা অভিযোগ করেন বর্তমান পরিস্থিতি ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসররা প্রতিবিপ্লবের চেষ্টা করছে। দেশজুড়ে ছড়ানো হচ্ছে মোটা অংকের অর্থ এমন অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ। তাদের আশঙ্কা শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলেও এখনো প্রতিবিপ্লবের জন্য টাকা ছড়ানো হচ্ছে। একইসঙ্গে নানা ইস্যুতে চলছে দাবি আদায়ের আন্দোলন। প্রশাসন-পুলিশসহ নানা প্রতিষ্ঠানে স্থিতিশীলতাও ফিরে আসেনি। এর আগে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। তবে নানা ঘটনায় আন্দোলনের রেশ এখনো পুরোপুরি কাটেনি। প্রশাসন, পুলিশসহ নানা প্রতিষ্ঠানে সংস্কারের মাধ্যমে দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সরকার চেষ্টা অব্যাহত রাখলেও দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো সেভাবে দৃশ্যমান নয়। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশব্যাপী লুট, চাঁদাবাজি ও দখলদারদের দৌরাত্ম্য শুরু হয়। এসব অরাজকতা কিছুটা কমলেও পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক পর্যায়ে আসেনি। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজসহ বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিকে জোর করে পদত্যাগ করানোর ঘটনা এখনো অব্যাহত আছে। নির্যাতন, দখল ও লুটপাটের ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায় বিক্ষুব্ধ। দাবি আদায়ে আনসার বাহিনী সচিবালয় ঘেরাও করে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করলে ছাত্ররা তাদের প্রতিহত করে। তবে বাংলাদেশের ইতিহাসে এত বড় গণঅভ্যুত্থান এবং প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। তবে নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব ও গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক আখতার হোসেন বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্রলীগ-যুবলীগ ক্যাডাররা অবৈধ অস্ত্র উঁচিয়ে প্রকাশ্যে ছাত্র-জনতার ওপর বর্বরভাবে গুলি চালিয়েছে, যা সারা দেশের মানুষ দেখেছে। তাদের গুলিতে আমাদের শত শত শিক্ষার্থী নিহত, হাজার হাজার শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশে যেখানেই শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছে, সেখানেই তারা গুলি চালিয়েছে। ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের অবৈধ অস্ত্র দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য এখন বড় হুমকি। আমরা বর্তমান সরকারকে অবগত করছি যে, ঢাকাসহ সারা দেশে এমন একটি জায়গাও নেই যেখানে ছাত্রলীগ গুলি চালায়নি। দেশের সব স্থানে হিংস্র কায়দায় তারা গুলি চালিয়েছিল। প্রতিটি ঘটনাস্থল থেকে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে ছাত্রলীগ-যুবলীগ ক্যাডারদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার এবং ছাত্র আন্দোলনে প্রদর্শন করা সব অস্ত্র উদ্ধারে আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি। একইসঙ্গে তাদের এমন শাস্তি নিশ্চিতের জোর দাবি জানাচ্ছি, যাতে ভবিষ্যতে এমন কোনো রাজনৈতিক শক্তি ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানোর চিন্তা আর না করতে পারে। স্বৈরাচার হাসিনা পালালেও এখনো তার ক্যাডার বাহিনী প্রতিবিপ্লবের মতো অনেক ঘটনার জন্ম দিতে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।
প্রতিবিপ্লব নিয়ে যা বললেন ফখরুল: ছাত্র-জনতার বিপ্লব ব্যর্থ করতে পরাজিতরা চক্রান্ত করছে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এই ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে জনগণকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। প্রতিবিপ্লবের যে শঙ্কা, সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকারও আহবান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, জনগণের কাছে আমাদের আবেদন, আপনারা কেউ বিভ্রান্ত হবেন না। সকলে ঐক্যবদ্ধ থেকে এই যে মুক্তি হয়েছে, যে গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে, তাকে সুসংহত করার জন্য কাজ করুন। তিনি বলেন, প্রতিবিপ্লবের যে আশঙ্কা তার জন্য অত্যন্ত সজাগ থেকে, রাস্তায় থেকে তাদের চক্রান্ত প্রতিরোধ করার সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন, জনগণের কাছে সেই প্রত্যাশা আমার।
প্রতিবিপ্লব নিয়ে সারজিসের হুঁশিয়ারি: ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর প্রতিবিপ্লবের চেষ্টা করা হলে আওয়ামী লীগের কোনো ‘অস্তিত্ব থাকবে না’ বলে হুঁশিয়ার করেছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। ক্ষমতা হারানো দলটির নেতারা নিজেদের টিকিয়ে রাখতে চাইলে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে না দাঁড়ানোরও পরামর্শ দিয়েছেন ছাত্র আন্দোলনের এই নেতা। সারজিস বলেন, ছাত্র-জনতার বিপ্লবের বিরুদ্ধে প্রতিবিপ্লব করার চেষ্টা যদি করে, আমরা বলে দিচ্ছি, ৫ আগস্ট যা দেখেছেন, এর পরে আপনাদের আর অস্তিত্ব থাকবে না। যদি নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চান, তাহলে ভুলেও ছাত্র-জনতার বিপক্ষে গিয়ে একটি কথা বলার স্পর্ধা দেখাবেন না। তিনি বলেন, যে ফ্যাসিস্ট সরকার ১৬ বছর ধরে এদেশের মানুষকে শোষণ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে বিপ্লব ঘটিয়েছে। যেই জায়গায় কেউ যদি আবার প্রতিবিপ্লবের কথা ভুলেও মুখে নেয়, তার মানে পুরো ছাত্র-জনতার বিপক্ষে একটি ঘোষণা দিচ্ছে।
প্রতিবিপ্লবের জন্য টাকা ছড়ানোর অভিযোগ: ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. নাসিমুল গনি বলেছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলেও এখনো প্রতিবিপ্লবের জন্য টাকা ছড়ানো হচ্ছে। তিনি বলেন, বিগত শেখ হাসিনা সরকার সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা বাহিনীকেও ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। সশস্ত্র বাহিনীসহ সব জায়গায় মেধাহীন নিয়োগ দিয়ে নৈরাজ্য তৈরি করেছে। ৪০ লাখ মামলা রেখে গেছে। এখনো প্রতিবিপ্লবের জন্য টাকা ছড়ানো হচ্ছে। গত শনিবার বেলা ১১টায় রাজধানীর মহাখালীতে রাওয়া কমপ্লেক্সে এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. নাসিমুল গনি বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে দেশ গড়ার নতুন সুযোগ হয়েছে। কাক্সিক্ষত দেশ গড়তে দেশপ্রেমিক, নিবেদিত মানুষ এবং সঠিক তদারকি প্রয়োজন। তিনি বলেন, সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি-বেসরকারি অফিসার, প্রবাসী এবং বিদেশ থেকে সংশ্লিষ্টদের দিয়ে সংস্কার কাজ করা সম্ভব। সশস্ত্র বাহিনীতে বিভিন্ন খাতে দক্ষ অবসরপ্রাপ্ত চার হাজার জনবল আছে। তিনি বলেন, বিগত সরকার সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা বাহিনীও ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। সশস্ত্র বাহিনীসহ সব জায়গায় মেধাহীন নিয়োগ দিয়ে নৈরাজ্য তৈরি করেছে। অনেক সংকট ও ৪০ লাখ মামলা রেখে গেছে। এখনো প্রতিবিপ্লবের জন্য টাকা ছড়ানো হচ্ছে। তবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরী বলেছেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পরে বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতিবিপ্লবের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম দায়িত্ব প্রতিবিপ্লবকে ঠেকানো। কারণ যাদের আপনি ক্ষমতাচ্যুত করছেন, তারা তো আবার ক্ষমতা ফিরে পেতে চাইবে। অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, অনেকে এখন মনে করে, শেখ হাসিনাকে আনতে পারলে তারা আওয়ামী লীগকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম কাজ হচ্ছে, প্রতিবিপ্লবকে প্রতিহত করা। শেখ হাসিনা গত ১৫ বছরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ডিএনএ পরীক্ষা করে করে চাকরি দিয়েছে। ছাত্রলীগ করত কিনা, লিডার হিসেবে দেয়নি, তাদের কাছ থেকে অন্ধ আনুগত্য পাওয়ার জন্য দিয়েছিল। এদের ছাঁটাই করতে হবে। এটাই বিপ্লবের ধর্ম। একইসুরে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস। তিনি বলেন, ২০২৪-এ আমাদের যে অভ্যুত্থান হয়েছে তা ছাত্র-জনতা, রাজনীতিকদের সমন্বয়ে সর্বজনীন অভ্যুত্থান। এর মধ্য দিয়ে মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের কারণে প্রথম এ দেশের কোনো সরকারকে পালিয়ে যেতে হয়েছে। তবে এখন যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হয়েছে তাদের সমালোচনা করতে হবে, তাদের চোখে চোখে রাখতে হবে। যাতে করে কেউ এদেশে আর স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে না পারে।
ছাত্র-জনতার দেশ কাঁপানো আন্দোলনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের ৪০ দিন পূর্ণ হয়েছে। তবে ছাত্র-জনতার রক্ত স্রোতের মাধ্যমে যে বিজয় অর্জিত হয়েছে, তা যাতে কোনো প্রতিবিপ্লবের কারণে হাত ছাড়া না হয় তার জন্য অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যদের ব্যবহার করার আহ্বান জানিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা। তারা অভিযোগ করেন বর্তমান পরিস্থিতি ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসররা প্রতিবিপ্লবের চেষ্টা করছে। দেশজুড়ে ছড়ানো হচ্ছে মোটা অংকের অর্থ এমন অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ। তাদের আশঙ্কা শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলেও এখনো প্রতিবিপ্লবের জন্য টাকা ছড়ানো হচ্ছে। একইসঙ্গে নানা ইস্যুতে চলছে দাবি আদায়ের আন্দোলন। প্রশাসন-পুলিশসহ নানা প্রতিষ্ঠানে স্থিতিশীলতাও ফিরে আসেনি। এর আগে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। তবে নানা ঘটনায় আন্দোলনের রেশ এখনো পুরোপুরি কাটেনি। প্রশাসন, পুলিশসহ নানা প্রতিষ্ঠানে সংস্কারের মাধ্যমে দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সরকার চেষ্টা অব্যাহত রাখলেও দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো সেভাবে দৃশ্যমান নয়। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশব্যাপী লুট, চাঁদাবাজি ও দখলদারদের দৌরাত্ম্য শুরু হয়। এসব অরাজকতা কিছুটা কমলেও পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক পর্যায়ে আসেনি। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজসহ বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিকে জোর করে পদত্যাগ করানোর ঘটনা এখনো অব্যাহত আছে। নির্যাতন, দখল ও লুটপাটের ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায় বিক্ষুব্ধ। দাবি আদায়ে আনসার বাহিনী সচিবালয় ঘেরাও করে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করলে ছাত্ররা তাদের প্রতিহত করে। তবে বাংলাদেশের ইতিহাসে এত বড় গণঅভ্যুত্থান এবং প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। তবে নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব ও গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক আখতার হোসেন বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্রলীগ-যুবলীগ ক্যাডাররা অবৈধ অস্ত্র উঁচিয়ে প্রকাশ্যে ছাত্র-জনতার ওপর বর্বরভাবে গুলি চালিয়েছে, যা সারা দেশের মানুষ দেখেছে। তাদের গুলিতে আমাদের শত শত শিক্ষার্থী নিহত, হাজার হাজার শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশে যেখানেই শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছে, সেখানেই তারা গুলি চালিয়েছে। ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের অবৈধ অস্ত্র দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য এখন বড় হুমকি। আমরা বর্তমান সরকারকে অবগত করছি যে, ঢাকাসহ সারা দেশে এমন একটি জায়গাও নেই যেখানে ছাত্রলীগ গুলি চালায়নি। দেশের সব স্থানে হিংস্র কায়দায় তারা গুলি চালিয়েছিল। প্রতিটি ঘটনাস্থল থেকে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে ছাত্রলীগ-যুবলীগ ক্যাডারদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার এবং ছাত্র আন্দোলনে প্রদর্শন করা সব অস্ত্র উদ্ধারে আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি। একইসঙ্গে তাদের এমন শাস্তি নিশ্চিতের জোর দাবি জানাচ্ছি, যাতে ভবিষ্যতে এমন কোনো রাজনৈতিক শক্তি ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানোর চিন্তা আর না করতে পারে। স্বৈরাচার হাসিনা পালালেও এখনো তার ক্যাডার বাহিনী প্রতিবিপ্লবের মতো অনেক ঘটনার জন্ম দিতে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।
প্রতিবিপ্লব নিয়ে যা বললেন ফখরুল: ছাত্র-জনতার বিপ্লব ব্যর্থ করতে পরাজিতরা চক্রান্ত করছে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এই ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে জনগণকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। প্রতিবিপ্লবের যে শঙ্কা, সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকারও আহবান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, জনগণের কাছে আমাদের আবেদন, আপনারা কেউ বিভ্রান্ত হবেন না। সকলে ঐক্যবদ্ধ থেকে এই যে মুক্তি হয়েছে, যে গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে, তাকে সুসংহত করার জন্য কাজ করুন। তিনি বলেন, প্রতিবিপ্লবের যে আশঙ্কা তার জন্য অত্যন্ত সজাগ থেকে, রাস্তায় থেকে তাদের চক্রান্ত প্রতিরোধ করার সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন, জনগণের কাছে সেই প্রত্যাশা আমার।
প্রতিবিপ্লব নিয়ে সারজিসের হুঁশিয়ারি: ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর প্রতিবিপ্লবের চেষ্টা করা হলে আওয়ামী লীগের কোনো ‘অস্তিত্ব থাকবে না’ বলে হুঁশিয়ার করেছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। ক্ষমতা হারানো দলটির নেতারা নিজেদের টিকিয়ে রাখতে চাইলে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে না দাঁড়ানোরও পরামর্শ দিয়েছেন ছাত্র আন্দোলনের এই নেতা। সারজিস বলেন, ছাত্র-জনতার বিপ্লবের বিরুদ্ধে প্রতিবিপ্লব করার চেষ্টা যদি করে, আমরা বলে দিচ্ছি, ৫ আগস্ট যা দেখেছেন, এর পরে আপনাদের আর অস্তিত্ব থাকবে না। যদি নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চান, তাহলে ভুলেও ছাত্র-জনতার বিপক্ষে গিয়ে একটি কথা বলার স্পর্ধা দেখাবেন না। তিনি বলেন, যে ফ্যাসিস্ট সরকার ১৬ বছর ধরে এদেশের মানুষকে শোষণ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে বিপ্লব ঘটিয়েছে। যেই জায়গায় কেউ যদি আবার প্রতিবিপ্লবের কথা ভুলেও মুখে নেয়, তার মানে পুরো ছাত্র-জনতার বিপক্ষে একটি ঘোষণা দিচ্ছে।
প্রতিবিপ্লবের জন্য টাকা ছড়ানোর অভিযোগ: ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. নাসিমুল গনি বলেছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলেও এখনো প্রতিবিপ্লবের জন্য টাকা ছড়ানো হচ্ছে। তিনি বলেন, বিগত শেখ হাসিনা সরকার সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা বাহিনীকেও ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। সশস্ত্র বাহিনীসহ সব জায়গায় মেধাহীন নিয়োগ দিয়ে নৈরাজ্য তৈরি করেছে। ৪০ লাখ মামলা রেখে গেছে। এখনো প্রতিবিপ্লবের জন্য টাকা ছড়ানো হচ্ছে। গত শনিবার বেলা ১১টায় রাজধানীর মহাখালীতে রাওয়া কমপ্লেক্সে এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. নাসিমুল গনি বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে দেশ গড়ার নতুন সুযোগ হয়েছে। কাক্সিক্ষত দেশ গড়তে দেশপ্রেমিক, নিবেদিত মানুষ এবং সঠিক তদারকি প্রয়োজন। তিনি বলেন, সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি-বেসরকারি অফিসার, প্রবাসী এবং বিদেশ থেকে সংশ্লিষ্টদের দিয়ে সংস্কার কাজ করা সম্ভব। সশস্ত্র বাহিনীতে বিভিন্ন খাতে দক্ষ অবসরপ্রাপ্ত চার হাজার জনবল আছে। তিনি বলেন, বিগত সরকার সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা বাহিনীও ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। সশস্ত্র বাহিনীসহ সব জায়গায় মেধাহীন নিয়োগ দিয়ে নৈরাজ্য তৈরি করেছে। অনেক সংকট ও ৪০ লাখ মামলা রেখে গেছে। এখনো প্রতিবিপ্লবের জন্য টাকা ছড়ানো হচ্ছে। তবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরী বলেছেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পরে বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতিবিপ্লবের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম দায়িত্ব প্রতিবিপ্লবকে ঠেকানো। কারণ যাদের আপনি ক্ষমতাচ্যুত করছেন, তারা তো আবার ক্ষমতা ফিরে পেতে চাইবে। অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, অনেকে এখন মনে করে, শেখ হাসিনাকে আনতে পারলে তারা আওয়ামী লীগকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম কাজ হচ্ছে, প্রতিবিপ্লবকে প্রতিহত করা। শেখ হাসিনা গত ১৫ বছরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ডিএনএ পরীক্ষা করে করে চাকরি দিয়েছে। ছাত্রলীগ করত কিনা, লিডার হিসেবে দেয়নি, তাদের কাছ থেকে অন্ধ আনুগত্য পাওয়ার জন্য দিয়েছিল। এদের ছাঁটাই করতে হবে। এটাই বিপ্লবের ধর্ম। একইসুরে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস। তিনি বলেন, ২০২৪-এ আমাদের যে অভ্যুত্থান হয়েছে তা ছাত্র-জনতা, রাজনীতিকদের সমন্বয়ে সর্বজনীন অভ্যুত্থান। এর মধ্য দিয়ে মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের কারণে প্রথম এ দেশের কোনো সরকারকে পালিয়ে যেতে হয়েছে। তবে এখন যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হয়েছে তাদের সমালোচনা করতে হবে, তাদের চোখে চোখে রাখতে হবে। যাতে করে কেউ এদেশে আর স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে না পারে।