* কক্সবাজারে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯
* ঝড়ের কবলে পড়ে কক্সবাজার উপকূলে ডুবে গেছে ছয়টি ফিশিং ট্রলার
* বঙ্গোপসাগরে ট্রলারডুবিতে ৫ জেলের মরদেহ উদ্ধার, নিখোঁজ ৫
* উপকূলীয় এলাকার সঙ্গে ঢাকার লঞ্চ চলাচল বন্ধের নির্দেশ
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে রাজধানীসহ সারাদেশে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সাথে ঝড়ো হওয়ায় অব্যাহত রয়েছে। তবে মাঝে মাঝে বৃষ্টির গতি বাড়ছে, আবার কমছে। বৃষ্টিতে বাড়ছে বন্যার পানিও। বন্ধ রয়েছে নৌযান চলাচল। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে বন্যাকবলিত অঞ্চলগুলোর মানুষ। রাজধানীতে গতকাল শনিবার ভোর থেকেই থেমে থেমে এবং গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে বেসরকারি চাকরিজীবী কিংবা খেটে খাওয়া মানুষ জীবিকার টানে ঘরের বাইরে বের হয়ে পড়েছেন বিড়ম্বনায়। প্রয়োজনীয় কাজে ঘর থেকে বের হওয়া লোকজন চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। অপরদিকে কক্সবাজারে বৃষ্টি কিছুটা কমায় শহরের জলাবদ্ধ এলাকা থেকে পানি নেমে গেছে। তবে নিম্নাঞ্চলে এখনও পানিবন্দি অবস্থায় আছেন জেলার ছয়টি উপজেলার অন্তত অর্ধশতাধিক গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। এ নিয়ে গত তিন দিনে পাহাড়ধস ও ট্রলারডুবিতে রোহিঙ্গাসহ ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৬ জন স্থানীয় বাসিন্দা। এছাড়াও বঙ্গোপসাগরে ঝড়ের কবলে পড়ে কক্সবাজার উপকূলে ডুবে গেছে ছয়টি ফিশিং ট্রলার। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচ জেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন আরও পাঁচজন।
গতকাল শনিবার রাজধানীর পুরান ঢাকা থেকে শুরু করে যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান, পল্টন, বনানী, মালিবাগ-রামপুরা, বাড্ডা, নতুন বাজার এলাকায় মুষলধারে বৃষ্টিতে হতে দেখা গেছে। পরিমাণে খুব বেশি না হলেও এর প্রভাবে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি মাথায় নিয়েই কাকডাকা ভোর থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, গার্মেন্টস কর্মী ও দিনমজুরসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ বাইরে বের হন। বৃষ্টি থেকে নিজেদের রক্ষা করতে কেউ ছাতা নিয়ে, কেউ প্লাষ্টিক মুড়িয়ে আবার কেউ কেউ কোনো প্রকার ব্যবস্থা না নিয়ে ভিজেই রওনা হন গন্তব্যে। সকালের দিকে রাস্তাঘাটে অপেক্ষাকৃত কম লোকজন থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ফলে রাস্তাঘাটে রিকশা, মোটরসাইকেল, মিনিবাস, বাস, মাইক্রোবাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং অ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের চাপ বাড়ে। বিভিন্ন সড়কে অসংখ্য মানুষকে যানবাহনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। শনিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত রাজধানীর ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, তেজগাঁও, রমনা এবং শাহবাগ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, থেমে থেমে বৃষ্টির প্রভাবে বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় যানজট তৈরি হয়েছে। যানবাহন নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশকে রীতিমতো হিমশিম খেতে দেখা যায়। এদিন সকাল থেকে কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি আবার কখনও ভারি বৃষ্টি হওয়ার ফলে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষকে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে দেখা যায়। রাজধানীর মৌলভীবাজার থেকে ঠেলাগাড়িতে পেঁয়াজের বস্তা নিয়ে ফিরছিলেন শ্রমিক রহিম মিয়া। পলাশীর মোড়ে পৌঁছাতেই ঝুম বৃষ্টি নামে। এ সময় তিনি একটি গাছের নিচে আশ্রয় নিয়ে বৃষ্টি থেকে বাঁচার চেষ্টা করেন। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, প্রতিদিনই কখনও ঘেমে আবার কখনও বৃষ্টিতে তার লুঙ্গি-গেঞ্জি ভিজে যায়। গায়ের পোশাক আবার গায়েই শুকিয়ে যায়। এটা তার গায়ে সয়ে গেছে। গতকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর শাহবাগে এক বৃদ্ধ দম্পতি উত্তরাগামী বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়েছিলেন। এ সময় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে ভিজে ছিলেন তারা। আলাপাকালে লালবাগের বাসিন্দা বৃদ্ধ হাসমত আলী বলেন, উত্তরায় মেয়ের বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে লালবাগের বাসা থেকে যখন বের হন তখন বৃষ্টি ছিল না। রিকশায় শাহবাগ মোড়ে বাস স্টপেজে এসে পৌঁছানোর পর বৃষ্টি নামে। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর কাকভেজা হয়ে তারা বাসে উঠে রওনা হন।
প্রতিদিনের মতো দিনমজুর হিসেবে কাজ খুঁজতে বের হন আনু মিয়া। সকাল সকাল আসেন মোহাম্মদপুর টাউন হল মোড়ে। কিন্তু কাজ জোটেনি। ৬ ঘণ্টা অপেক্ষার পর ফিরতে হয়েছে তাকে। আনু মিয়ার মতো বের হয়েছেন কামরুল মিয়াও। তিনি বলেন, মার্কেটে গেছিলাম সকালে। কিন্তু কেউ ওই রকম লেবার নিতে আসে নাই। বৃষ্টি হইতাছে তো, কাম করা যাইব না, তাই কেউ আহে নাই। সকালে বৃষ্টি দেখেও জীবিকার তাগিদে রিকশা নিয়ে বের হয়েছেন মো. রাসেল। পায়েচালিত রিকশার এই চালক জানান, সড়কে যাত্রীর সংখ্যা কম। একইসঙ্গে পায়েচালিত রিকশায়ও চড়ছেন খুব কম মানুষ। নগরীর আগারগাঁও এলাকায় মো. রাসেল বলেন, সবাই খালি অটোরিকশা খোঁজে। বৃষ্টির মধ্যে অটোরিকশা তাড়াতাড়ি যাইব, গায়ে বৃষ্টি কম লাগব, এই জন্য। অটোরিকশা যে এই বৃষ্টিতে উল্টাইয়া যাইতে পারে, এইডা যাত্রী বোঝে না। সকালে বাইর হইছি। ভাড়া মারছি ১৮০ টাকা। দুপুর তো হইয়া গেছে। আবার যাত্রী না পাওয়ার দাবি করেছেন ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকরাও। দৈনিক ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকা আয় করা রিকশাচালকদের আয় আজ ৫০০ টাকার নিচে নামতে পারে বলে ধারণা করছেন ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকরা। নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ফুটপাতে চায়ের দোকানগুলোতে খদ্দের সংকট। অলস সময় পার করছেন দোকানিরা। শরবত বিক্রির দোকানগুলোতে একাই দাঁড়িয়ে আছেন দোকানি। কোথাওবা দোকান ভিজছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে, দূরে দাঁড়িয়ে দোকানি নিজেকে বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করছেন। বৃষ্টির কারণে নগরীর গুলশান এলাকার ফুটপাতে বসা অনেক চায়ের দোকান আজ খোলাই হয়নি। বন্ধ আছে বিকাশের দোকান। দু-চারটা সিগারেটের দোকান খোলা থাকলেও বিক্রি নেই।
অপরদিকে কক্সবাজারে বৃষ্টি কিছুটা কমায় শহরের জলাবদ্ধ এলাকা থেকে পানি নেমে গেছে। তবে নিম্নাঞ্চলে এখনও পানিবন্দি অবস্থায় আছেন জেলার ছয়টি উপজেলার অন্তত অর্ধশতাধিক গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। গতকাল শনিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত বৃষ্টি কম হওয়ায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। ফলে শহর ছাড়াও উপজেলার সড়ক-উপসড়কে ক্ষতচিহ্ন ভেসে উঠেছে। সকালে শহরের সমিতিপাড়া সমুদ্র পয়েন্ট থেকে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশটি জোয়ারের পানির সঙ্গে ভেসে আসে। এ নিয়ে গত তিন দিনে পাহাড়ধস ও ট্রলারডুবিতে রোহিঙ্গাসহ ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ছয় জন স্থানীয় বাসিন্দা।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুল হান্নান বলেন, গত শুক্রবারের তুলনায় গতকাল শনিবার বৃষ্টি কিছুটা কমেছে। তবে ভারী বৃষ্টি অব্যাহত আছে। গতকাল শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ২১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি অব্যাহত আছে। উপকূলীয় এলাকা, বঙ্গোপসাগর ও সমুদ্র বন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সমুদ্রবন্দরকে এখনও ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
এদিকে বৃষ্টি কমে যাওয়ায় শহরের জলাবদ্ধ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নত হয়েছে। পানি নেমে গেছে পর্যটন জোন কলাতলীর হোটেল মোটেল এলাকার সব সড়ক, সৈকত সংলগ্ন এলাকা, মাকের্ট এলাকা থেকে। এতে দুর্ভোগে পড়েছিলেন অন্তত ২০ হাজার পর্যটক। ইতোমধ্যে দুর্ভোগ কেটে গেছে তাদের। এ ছাড়া সদর, রামু, উখিয়া, চকরিয়াসহ বিভিন্ন উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার পানি নামতে শুরু করেছে। এখনও পানিবন্দি অবস্থায় দুর্ভোগে আছেন অর্ধলক্ষাধিক মানুষ।
উখিয়ার হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী জানিয়েছেন, ভারী বর্ষণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমার ইউনিয়ন। তিন দিন ধরে বৃষ্টির কারণে এই ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। গতকাল শনিবার থেকে পানি কমেছে। তবে মানুষের দুর্ভোগ কিছুটা বেড়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও জানা যায়নি। সম্পূর্ণ পানি নেমে গেলে নিরূপণ করা যাবে। তবে উখিয়ার হলদিয়াপালং ইউনিয়নে আশ্রয়কেন্দ্রে সাড়ে ৩০০ পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল। পানি কমে যাওয়ায় গতকাল শনিবার সকালে তারা বাড়ি ফিরেছেন। এবার ভারী বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্তদের ৪৫ মেট্রিক টন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানার পর ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকারিভাবে আরও অনুদান দেয়া হবে।
এদিকে বঙ্গোপসাগরে ঝড়ের কবলে পড়ে কক্সবাজার উপকূলে ডুবে গেছে ছয়টি ফিশিং ট্রলার। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচ জেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন আরও পাঁচজন। গত শুক্রবার দুপুরে ইনানী পয়েন্টে এবং বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে লাবণী চ্যানেলে ঝড়ো বাতাসের কবলে পড়ে ট্রলারগুলো ডুবে যায়। পরে এসব ট্রলার সৈকতের কলাতলীসহ বিভিন্ন পয়েন্টে ভেসে আসে। এরমধ্যে কক্সবাজার শহরের লাবণী চ্যানেলে ‘এফবি রশিদা’ নামে একটি এবং ইনানী পয়েন্টে ‘এসবি আব্দুস ছামাদ সাহা’সহ পাঁচটি ট্রলার ভেসে ওঠে। এসব ট্রলারে থাকা মাঝিরা কূলে উঠতে পারলেও পাঁচ জেলে ডুবে যান। এরমধ্যে শুক্রবার লাবনী পয়েন্ট থেকে মোহাম্মদ জামাল, (৩৭) ও নুরুল আমিন নামে দুই জেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। গতকাল শনিবার সকালে নাজিরারটেক পয়েন্ট থেকে একজনের মরদেহ উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। তার পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের এক নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আক্তার কামাল। এছাড়া দুপুরে ইনানী মোহাম্মদ শফির বিল এলাকা সৈকত থেকে ‘এসবি আব্দুস ছমাদ সাহা’ ট্রলারের দুই জেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তাদের মধ্যে মোহাম্মদ আব্দুল করিম (৩৫) নামে একজনের পরিচয় পাওয়া গেলেও অপরজনের পরিচয় নিশ্চিত করা যায়নি। তারা দুজনই চট্টগ্রামের বাঁশখালী রায়পুর ইউনিয়নের বাসিন্দা বলে জানা গেছে। মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) তানভির হোসেন বলেন, এখনো কয়েকজন জেলে নিখোঁজ রয়েছেন বলে বোট মালিক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন জানান, সাগর উত্তাল ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে গত শুক্রবার রাত পর্যন্ত ৬৫টি ট্রলারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না। তবে গতকাল শনিবার সকালে সব ট্রলার ফিরে আসার খবর পাওয়া গেলেও কক্সবাজার সদর এলাকার তিনটি মাছ ধরার ট্রলার ৬৪ মাঝি-মাল্লাসহ নিখোঁজ হয়। তাদের উদ্ধারের জন্য তৎপরতা চালানো হচ্ছে।
কক্সবাজার পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আকতার কামাল বলেন, দুদিনের টানা বৃষ্টিতে এই ওয়ার্ডের ১০ হাজার মানুষের ক্ষতি হয়েছে। আরও বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে এই ওয়ার্ডে ৮০ হাজার শ্রমজীবী মানুষ অচল হয়ে যাবে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা যাবে। আপাতত যেখানে সমস্যা রয়েছে সেখানে ত্রাণ পৌঁছাতে উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বঙ্গোপসাগরের সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর এখনো উত্তাল। কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সাগরে অবস্থান করা সব ধরনের মাছ ধরার ট্রলারকে নিরাপদে চলে আসতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গত শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সারাদিন বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় উখিয়া, চকরিয়া, রামু, ঈদগাঁওসহ নিম্নাঞ্চলে জমা পানি নামতে শুরু করে। তবে, পাহাড়ে বৃষ্টিপাত হওয়ায় অনেক নদীতে ঢলের পানি ছিল। এরমধ্যে জলাবদ্ধতার কারণে এখনো পানিবন্দি অর্ধশত গ্রামের মানুষ। পানি কমতে থাকায় রাস্তার ক্ষত ভেসে উঠছে।
ঢাকা থেকে উপকূলীয় এলাকা এবং উপকূলীয় এলাকা থেকে ঢাকায় লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে উপকূলীয় এলাকার মধ্যে ছোট লঞ্চ চলাচলও বন্ধ রয়েছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গতকাল শনিবার বিশেষ নৌ সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এতে বলা হয়, উপকূলীয় অঞ্চলসহ সারা দেশে চলমান বৈরী আবহাওয়া ও অভ্যন্তরীণ নৌপথে ২ নম্বর সংকেত এবং সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়। এছাড়া নদীতে প্রচণ্ড ঢেউ থাকার কারণে এবং যাত্রীদের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে ঢাকা থেকে হাতিয়া ও বেতুয়াগামী এবং বেতুয়া ও হাতিয়া থেকে ঢাকাগামী, ঢাকা থেকে খেপুপাড়া এবং খেপুপাড়া থেকে ঢাকাগামী এই তিনটি উপকূলীয় অঞ্চলে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর থেকে মুন্সীগঞ্জ ও মতলব, বরিশাল নদীবন্দর থেকে বরিশাল উলানিয়া, বরিশাল কালিগঞ্জ, বরিশাল কাচারীখাল, ভোলা নদীবন্দর থেকে ইলিশা-মজু চৌধুরী হাট, আলেকজান্ডার-হাকিম উদ্দিন নৌপথ, মনপুরা-তজুমদ্দিন নৌপথে লঞ্চ ও সি-ট্রাক চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে পটুয়াখালী নদীবন্দর থেকে গলাচিপা-চরমোন্তাজ, গলাচিপা-চরবেষ্টিন, গলাচিপা-লক্ষ্মীরচর, উলানিয়া-চরমোন্তাজ, চিকনীকান্দি-চরমোন্তাজ নৌপথের নৌযান এবং বোয়ালিয়া-কোড়ালিয়া নৌপথের স্পিডবোট বন্ধ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম দফতরের নদীবন্দরের নিয়ন্ত্রণাধীন কুমিরা-গুপ্তছড়া, বাঁশখালী-কুতুবদিয়া, পেকুয়া-কুতুবদিয়া, কক্সবাজার-মহেশখালী, টেকনাফ-সেন্টমার্টিন, নোয়াখালী-হাতিয়া, চট্টগ্রাম-হাতিয়াসহ সংশ্লিষ্ট সব নৌপথের নৌচলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
অপরদিকে আরিচা-পাটুরিয়া-কাজিরহাট নৌপথের সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আশুগঞ্জ-ভৈরববাজারসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নৌপথে বৈরী আবহাওয়ায় চলাচলের অনুপযোগী নৌযানকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখাতে বলা হয়েছে। সার্বিক বিষয়ে সার্বক্ষণিক মনিটর করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ।