* ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও সড়কে নিয়ম ভাঙার মহোৎসব
* ছয় দফা দাবি নিয়ে রাস্তায় নামেন কারিগরি শিক্ষার্থীরা
* যানজটের অন্যতম যমদূত অটোরিকশা
* যানজটে ভোগান্তি ফ্লাইওভারেও
যানজটে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে নগরবাসী। প্রতিদিনই নতুন মাত্রায় সৃষ্টি হওয়া যানজটে মানুষ শুধু ভোগান্তির শিকার হচ্ছে না, ক্ষতিগ্রস্তও হচ্ছে নানাভাবে। একটি কাজ নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যথাসময়ে সেই কাজ সম্পন্ন করতে যানজটের কারণে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তার উপর রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার সাতরাস্তা মোড় অবরোধ করেছেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া ইতালির ভিসাসহ জরুরি ভিত্তিতে পাসপোর্ট ফেরতের দাবিতে গুলশানের বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ পার্কে গণ-অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন আবেদনকারীরা। এতে গতকাল সোমবার রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। একইসঙ্গে সড়কের পাশাপাশি যানজট ছড়িয়ে পড়ে অলিগলিতেও। ফলে তীব্র গরমের মধ্যেই রাজধানীর কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, শাহবাগ, গুলিস্তান, পল্টন, মগবাজার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাড্ডা এলাকাসহ রাজধানীর কিছু জায়গায় বৃষ্টি হয়। যানজট-গরম-বৃষ্টি মিলিয়ে চরম ভোগান্ততে পড়েছেন নগরবাসী।
জানা গেছে, গতকাল সোমবার সকাল থেকেই রাজধানীর বেশিরভাগ সড়কে যানজট দেখা যায়। এদিন থেমে থেমে চলতে দেখা যায় গাড়ি। তীব্র গরমের সঙ্গে যানজটে ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রীদের। রাজধানী ঢাকার যানজট সমস্যা কোনো সরকারই সমাধান করতে পারেনি। রাজধানীতে যানজটের আরেক কারণ ব্যাটারিচালিত রিকশা। এসব বাহনের কারণেও সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন। ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকগুলোর মনে মৃত্যুর ভয়ও নেই। তারা রাস্তার মাঝে থেমে যায়, উল্টোদিক থেকে এসে অচলাবস্থা তৈরি করে। মিরপুর-১১ নম্বর থেকে কালশি রোডে ৩ হাজারের বেশি ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করে। এসবের চালকরা ১১ নম্বর সড়কের মাঝে অবস্থান করে। এ ছাড়া বিভিন্ন রাস্তার মোড় দখল করে রাখে। কোনো নিয়মের তোয়াক্কা করে না। একই চিত্র অন্যান্য এলাকাতেও। এসব চালকের অনেকেই জানান, তাদের রিকশার মালিকরা আবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অনুসারী। তাই রাস্তা ম্যানেজে তাদের কোনো সমস্যা হয় না।
ছয় দফা দাবি নিয়ে রাস্তায় নামেন কারিগরি শিক্ষার্থীরা: গতকাল সোমবার দুপুর ১২টার পর ছয় দফা দাবি নিয়ে রাস্তায় নামেন কারিগরি শিক্ষার্থীরা। সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। এতে ফার্মগেট থেকে কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত প্রায় পুরো রাস্তা যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, মগবাজার, ইস্কাটন, হাতিরঝিলের আশপাশের সড়কগুলোতেও যানজট রয়েছে। এদিকে যানজট রয়েছে আসাদগেট, সায়েন্স ল্যাবে এবং ধানমন্ডির দিকেও। এছাড়া ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতেও যানজট দেখা গেছে।
যানজট নিয়ে যা বলছেন যাত্রীরা: ব্যবসার কাজে তেজগাঁও হয়ে মগবাজারের দিকে যাচ্ছিলেন তানভীর হাসান নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, সাত রাস্তার দিকে রাস্তা বন্ধ। রিকশা নিয়ে মগবাজারে ঢুকছিলাম। পরে সড়ক বন্ধ দেখে নেমে হাঁটা শুরু করি। একই কথা জানিয়েছেন মোখলেছুর রহমান নামে আরেক যাত্রী। তিনি বলেন, যানজট সবসয় থাকে। এখন আবার হঠাৎ করে গরম বেড়ে গেছে। ঘর থেকে বের হলেই পড়তে হয় নানা ঝামেলায়। এ আন্দোলন বিক্ষোভ শেষ হবে কখন! একটি বাসের যাত্রী আরেফিন বলেন, সদরঘাট থেকে গাড়িতে উঠেছি, এক ঘণ্টায় মনে হয় তিন কিলোমিটার আসছি। প্রতিটি মোড়ে সিগন্যাল। এর মধ্যে গরমে ঘামতে ঘামতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। বনশ্রী যাবো, পৌঁছাতে কতক্ষণ লাগবে জানি না। বাসের চালক-যাত্রীদের মতো রাইড শেয়ারিংয়ের মোটারসাইকেলের চালক-যাত্রীদেরও গরম যানজটে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। একজন পথচারীর সঙ্গেও কথা হয় এদিন। পথচারী বলেন, লোকাল বাসে ওঠা যাচ্ছে না। বাইরেও অনেক রোদ। বিভিন্ন মোড়ে ট্রাফিক নেই, যা তা অবস্থা। বের হয়ে খুবই কষ্ট হচ্ছে। মিরপুরের বাসিন্দা নাঈম বলেন, শেখ হাসিনার আমলে তার দোসররা পরিবহনের বিভিন্ন কোম্পানি খুলে যা ইচ্ছা তাই করেছে। মালিক-চালক-শ্রমিক সমিতিগুলো সড়কের বারোটা বাজিয়েছে। পুরো সিস্টেমটাকে নষ্ট করে ফেলেছে। একই সঙ্গে ট্রাফিক বিভাগও নিজেদের নষ্ট করতে শেষ করে ফেলেছে। লোকে ট্রাফিক সদস্যদের দেখলে গালাগাল করে। বাসা থেকে রাস্তায় নামলেই ভোগান্তি শুরু হয়। দেশের ট্রাফিক সদস্যরা কোনো সিস্টেম জানে না। মিরপুর নিউমার্কেটের সামনে থাকা স্ট্যান্ডটিকে বাস-লেগুনা বা অন্যান্য যানবাহন উপেক্ষা করা শুরু করলো। যেখানে স্ট্যান্ড সেখানে না থেকে মুক্তবাংলা শপিং কমপ্লেক্সের সামনে যাত্রী ওঠা-নামা করা শুরু করলো, সেদিন থেকে যানজট শুরু হতে লাগলো। রাইদা পরিবহনের চালক বলেন, রামপুরা ব্রিজ থেকে বাড্ডা লিংক রোড যেতে আধাঘণ্টার বেশি সময় লাগে। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির কারণে এখন যানজট আরও বেড়ে গেছে।
যানজটে ভোগান্তি ফ্লাইওভারেও: অনেকে যানজট থেকে বাঁচার জন্য টাকা খরচ করে ফ্লাইওভার ব্যবহার করতে গিয়েও পড়ছে ভোগান্তিতে। কারণ বর্তমানে ফ্লাইওভারেও দেখা দিচ্ছে যানজট। শুধু দিনে নয়, যানজট চলছে গভীর রাত পর্যন্ত। কোনো কোনো সময় দিনের চাইতে রাতের যানজট আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করে। সব মিলিয়ে নাকাল অবস্থা নগরবাসীর। তবে ট্রাফিক পুলিশ বলছে, শিক্ষার্থী ও অন্যান্যদের দাবি দাওয়া আদায়ে রাজপথজুড়ে আন্দোলনের কারণে যানজট বাড়ছে। এছাড়াও রাস্তায় প্রচুরসংখ্যক যানবাহন নামায় এই যানজট।
যানজটের অন্যতম কারণ ভাদ্র মাস: বৃষ্টির প্রবণতা কমে যাওয়ায় ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে সারা দেশের তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে রাজধানী ঢাকাতেও। সেই সঙ্গে রয়েছে শহরটির তীব্র যানজট। গতকাল সোমবার সকালে আকাশে মেঘের দেখা মিললেও কমেনি ভ্যাপসা গরম অনুভূতি। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীতে বাড়তে থাকে গাড়ির চাপ। নগরীর বিভিন্ন জায়গায় সৃষ্টি হয় যানজট। তীব্র গরমের সঙ্গে যানজটে ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রীদের। রাজধানীর পল্টনে কথা হয় এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তিনি বলেন, সদরঘাট থেকে গাড়িতে উঠেছি, এক ঘণ্টায় মনে হয় তিন কিলোমিটার আসছি। প্রতিটি মোড়ে সিগন্যাল। এর মধ্যে গরমে ঘামতে ঘামতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। বনশ্রী যাবো, পৌঁছাতে কতক্ষণ লাগবে জানি না। রাজধানীর রামপুরা ব্রিজ থেকে এক বাস চালক বলেন, রামপুরা ব্রিজ থেকে বাড্ডা লিংক রোড যেতে আধাঘণ্টার বেশি সময় লাগে। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির কারণে এখন যানযট আরও বেড়ে গেছে। এর মধ্যে অসহনীয় গরম।
সড়কে নিয়ম ভাঙার মহোৎসব: রাজধানীর মেরুল বাড্ডা ইউলুপ এলাকায় তীব্র যানজট। প্রায় ৪০ মিনিট স্থির দাঁড়িয়ে থাকার পর গাড়ি চলা শুরু হলো। দুই মিনিট গাড়ি চলার পরে ফাঁকা রাস্তা। মানে সেখানে কোনো যানজট নয়, পাবলিক বাস সার্ভিসের সঙ্গে ব্যাটারিচলিত রিকশার মধ্যে বিবাদ লেগেছিল। মাঝ রাস্তা দিয়েই চলছে ব্যাটারিচলিত রিকশা! আবার পাবলিক বাসগুলোও যেখানে-সেখানে থামাচ্ছে। তবে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের এসময় বিশেষ কোনো ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি। বাইকার, রিকশাচালক যে যেভাবে পারছে সেভাবে যানজট সৃষ্টি করছে। কড়া হতে পারছেন না সড়কে দায়িত্ব পালনকারী ট্রাফিক সদস্যরা। উল্টো তারা বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ। একইচিত্র আসাদগেট, মহাখালী, শাহবাগ, গুলিস্তান, প্রগতি সরণিসহ অধিকাংশ এলাকায়। তবে কোথাও একবার যানজট লেগে গেলে তা ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও কমছে না। প্রগতি সরণির নতুনবাজার থেকে কুড়িল বিশ্বরোড যেতেই প্রতিদিন দেড় ঘণ্টা পার হয়ে যায়। অথচ এটি সর্বোচ্চ ১০ মিনিটের পথ। এ অবস্থায় ঢাকার সড়কে চলাচলকারীদের রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠছে। তিন থেকে চারদিন কিছু অল্পবয়সী ছেলে মোটরসাইকেলে যাওয়ার সময় তাকে খুব বাজেভাবে বকাবকি করে। এতে তার মন খারাপ হলেও দায়িত্বে অবহেলা করছেন না। মূলত শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর সবচেয়ে বেশি তোপের মুখে পড়েন পুলিশ সদস্যরা। টানা ছয়দিন সড়কে ছিল না ট্রাফিক পুলিশ, এসময় রাজধানীর প্রতিটি সড়কে দিন-রাত পুরোদমে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করেন শিক্ষার্থীরা। পরে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা ফিরলেও সড়কে ফেরেনি শৃঙ্খলা। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত অব্দি যানজটে নাকাল হতে হচ্ছে নগরবাসীর। তবে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা বলছেন, প্রতিদিন যারা সড়ক ব্যবহার করছেন তারাই নিয়ম ভঙ্গ করছেন। এক শ্রেণির মানুষ প্রতিনিয়ত আমাদের উদ্দেশে বুলিং করছে। যত্রতত্র পার্কিং, সড়কের পাশে হকার, উল্টোপথে গাড়ি চালানো ও সিগন্যাল অমান্য করে আগে যেতে চাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে নিয়ম ভঙ্গ করছেন মানুষ। শিক্ষার্থীরা যে ছয়দিন সড়কে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করেছিল তখন ভয়ে কেউ নিয়ম ভাঙতো না। সেই ভয়টা কেন যেন মানুষের মনে কাজ করছে না! এজন্য সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সড়কে যানজট লেগে থাকছে।
যানজটের অন্যতম যমদূত অটোরিকশা: ঢাকা শহরে রাস্তার চেয়ে যানবাহনের সংখ্যা বেশি। এরপর যদি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলে আসে ঢাকার সড়কে তখন যানজটে পড়তে হয় নগরবাসীকে। রামপুরা বাজারে সড়কের কাটা স্থানে একজন ট্রাফিক পুলিশের সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। ট্রাফিক পুলিশের সিগন্যাল অমান্য করেই চলছে যানবাহন। তিন রাস্তার লেন যেন পুরোটাই রিকশার দখলে। এর মধ্যে শহরে চলাচলরত পাবলিক বাস সার্ভিসগুলো যেখানে-সেখানে থামিয়ে যাত্রী ওঠাচ্ছে আবার নামাচ্ছে। রামপুরা বাজারের পরে আবুল হোটেল মোড়ে দুজন ট্রাফিক পুলিশ সদস্য দেখা যায়। তারা সড়কে দাঁড়িয়ে যানজট নিরসনের কাজ করছিলেন। বাড্ডা লিংরোড থেকে আবুল হোটেল, এখানে গাড়ির রাস্তা ২০ মিনিট। কিন্তু যানজটে ও রিকশার কারণে সময় লাগে প্রায় দুই ঘণ্টা। একই চিত্র দেখা যায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও পল্টন মোড়ে। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা যানজট নিরসনে হিমশিম খাচ্ছেন। রাস্তার এক পাশে অনেকটা জায়গাজুড়ে প্রাইভেটকার পার্কিং, এরপর যাত্রী নেয়ার জন্য ফাঁকা রিকশা দাঁড়িয়ে আছে। ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা তাদের সরিয়ে দিলেও তারা যাচ্ছে না। কেউ যেন তোয়াক্কাই করছে না ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের। রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা কারওয়ান বাজারে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন অটোরিকশাচালক জামাল মিয়া। তিনি বলেন, আসাদগেট থেকে যাত্রী নিয়ে কারওয়ান বাজার এসেছি ১২০ টাকায়। এখন যাত্রীও পাচ্ছি পাশাপাশি পুলিশও আটকাচ্ছে না। আগে মূল সড়কে উঠতে দিতো না পুলিশ। তবে শিক্ষার্থীরা যখন ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন শুরু করে তখন থেকেই মূল সড়কে আমরা উঠতে পারি। তবে আলতাফ হোসেন নামে এক প্রাইভেটকারচালক বলেন, প্রায় এক মাস ধরে ঢাকা শহরে গাড়ি চালিয়ে কোনো শান্তি পাচ্ছি না। সব রাস্তায় দেদারছে চলছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। এখন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকরা মাঝ দিয়ে চলাচল করছে। হর্ন দিলেও সরে না। এতে গাড়ির চাপ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।
ফুটপাতে চলছে বাইক-সাইকেল: শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে উঠে যাওয়ার পর পুলিশ যখন দায়িত্ব পালন শুরু করে তখন থেকেই মোটরসাইকেল আরোহীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। অধিকাংশ বাইকার যত্রতত্র মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন এবং সিগন্যাল অমান্য করছেন। পুলিশ দেখেও যেন না দেখার ভান করছেন অনেকটা। এছাড়া অতিরিক্ত যানজটে কিছু বাইকার ফুটপাত দিয়েও মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন। পথচারীরা প্রতিবাদ করলেও একরোখা বাইকাররা কারও তোয়াক্কা করছে না। খাবার ডেলিভারিম্যানরা নিয়মিতই ফুটপাতে সাইকেল তুলে দিচ্ছেন। তারাও কারও বাধা মানেন না। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পল্টন এলাকায় দায়িত্বরত এক ট্রাফিক পুলিশ সদস্য বলেন, রোদ-বৃষ্টির মধ্যে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা সড়কে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তাদের বসার মতো কোনো স্থান নেই। সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এবং ২টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। তাদের ওয়াশরুমে যাওয়ার মতোও স্থান নেই। তারপরও যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন রাস্তার যানজট নিরসনে। একটানা দায়িত্ব পালনে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে। ট্রাফিক-মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) ইয়াসিনা ফেরদৌস বলেন, মূল সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করার কথা নয়। তবে এসব রিকশা মূল সড়কে চলাচল ও পার্কিং করে অন্য যানবাহনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। একজন যাত্রীরও দায়িত্ব রয়েছে। সচেতনতা বৃদ্ধিতে সবার এগিয়ে আসা উচিত। একইসুরে কথা বলেছেন ট্রাফিক-গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, একটা সময় গুলশান-বনানী এলাকায় নির্ধারিত পোশাকে নির্দিষ্ট সংখ্যক রিকশা চলাচল করতো। এই রিকশাগুলোর অনুমোদন দিতো সিটি করপোরেশন। কিন্তু ৫ তারিখের পর অন্য জায়গা থেকে অটোরিকশা ঢাকায় চলে আসছে। তারা জানে না কোনো সড়কে কীভাবে চলাচল করতে হবে। ফলে তাদের সঙ্গে প্রায়ই আমাদের কনফ্লিক্ট হয়।
* ছয় দফা দাবি নিয়ে রাস্তায় নামেন কারিগরি শিক্ষার্থীরা
* যানজটের অন্যতম যমদূত অটোরিকশা
* যানজটে ভোগান্তি ফ্লাইওভারেও
যানজটে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে নগরবাসী। প্রতিদিনই নতুন মাত্রায় সৃষ্টি হওয়া যানজটে মানুষ শুধু ভোগান্তির শিকার হচ্ছে না, ক্ষতিগ্রস্তও হচ্ছে নানাভাবে। একটি কাজ নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যথাসময়ে সেই কাজ সম্পন্ন করতে যানজটের কারণে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তার উপর রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার সাতরাস্তা মোড় অবরোধ করেছেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া ইতালির ভিসাসহ জরুরি ভিত্তিতে পাসপোর্ট ফেরতের দাবিতে গুলশানের বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ পার্কে গণ-অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন আবেদনকারীরা। এতে গতকাল সোমবার রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। একইসঙ্গে সড়কের পাশাপাশি যানজট ছড়িয়ে পড়ে অলিগলিতেও। ফলে তীব্র গরমের মধ্যেই রাজধানীর কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, শাহবাগ, গুলিস্তান, পল্টন, মগবাজার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাড্ডা এলাকাসহ রাজধানীর কিছু জায়গায় বৃষ্টি হয়। যানজট-গরম-বৃষ্টি মিলিয়ে চরম ভোগান্ততে পড়েছেন নগরবাসী।
জানা গেছে, গতকাল সোমবার সকাল থেকেই রাজধানীর বেশিরভাগ সড়কে যানজট দেখা যায়। এদিন থেমে থেমে চলতে দেখা যায় গাড়ি। তীব্র গরমের সঙ্গে যানজটে ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রীদের। রাজধানী ঢাকার যানজট সমস্যা কোনো সরকারই সমাধান করতে পারেনি। রাজধানীতে যানজটের আরেক কারণ ব্যাটারিচালিত রিকশা। এসব বাহনের কারণেও সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন। ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকগুলোর মনে মৃত্যুর ভয়ও নেই। তারা রাস্তার মাঝে থেমে যায়, উল্টোদিক থেকে এসে অচলাবস্থা তৈরি করে। মিরপুর-১১ নম্বর থেকে কালশি রোডে ৩ হাজারের বেশি ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করে। এসবের চালকরা ১১ নম্বর সড়কের মাঝে অবস্থান করে। এ ছাড়া বিভিন্ন রাস্তার মোড় দখল করে রাখে। কোনো নিয়মের তোয়াক্কা করে না। একই চিত্র অন্যান্য এলাকাতেও। এসব চালকের অনেকেই জানান, তাদের রিকশার মালিকরা আবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অনুসারী। তাই রাস্তা ম্যানেজে তাদের কোনো সমস্যা হয় না।
ছয় দফা দাবি নিয়ে রাস্তায় নামেন কারিগরি শিক্ষার্থীরা: গতকাল সোমবার দুপুর ১২টার পর ছয় দফা দাবি নিয়ে রাস্তায় নামেন কারিগরি শিক্ষার্থীরা। সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। এতে ফার্মগেট থেকে কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত প্রায় পুরো রাস্তা যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, মগবাজার, ইস্কাটন, হাতিরঝিলের আশপাশের সড়কগুলোতেও যানজট রয়েছে। এদিকে যানজট রয়েছে আসাদগেট, সায়েন্স ল্যাবে এবং ধানমন্ডির দিকেও। এছাড়া ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতেও যানজট দেখা গেছে।
যানজট নিয়ে যা বলছেন যাত্রীরা: ব্যবসার কাজে তেজগাঁও হয়ে মগবাজারের দিকে যাচ্ছিলেন তানভীর হাসান নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, সাত রাস্তার দিকে রাস্তা বন্ধ। রিকশা নিয়ে মগবাজারে ঢুকছিলাম। পরে সড়ক বন্ধ দেখে নেমে হাঁটা শুরু করি। একই কথা জানিয়েছেন মোখলেছুর রহমান নামে আরেক যাত্রী। তিনি বলেন, যানজট সবসয় থাকে। এখন আবার হঠাৎ করে গরম বেড়ে গেছে। ঘর থেকে বের হলেই পড়তে হয় নানা ঝামেলায়। এ আন্দোলন বিক্ষোভ শেষ হবে কখন! একটি বাসের যাত্রী আরেফিন বলেন, সদরঘাট থেকে গাড়িতে উঠেছি, এক ঘণ্টায় মনে হয় তিন কিলোমিটার আসছি। প্রতিটি মোড়ে সিগন্যাল। এর মধ্যে গরমে ঘামতে ঘামতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। বনশ্রী যাবো, পৌঁছাতে কতক্ষণ লাগবে জানি না। বাসের চালক-যাত্রীদের মতো রাইড শেয়ারিংয়ের মোটারসাইকেলের চালক-যাত্রীদেরও গরম যানজটে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। একজন পথচারীর সঙ্গেও কথা হয় এদিন। পথচারী বলেন, লোকাল বাসে ওঠা যাচ্ছে না। বাইরেও অনেক রোদ। বিভিন্ন মোড়ে ট্রাফিক নেই, যা তা অবস্থা। বের হয়ে খুবই কষ্ট হচ্ছে। মিরপুরের বাসিন্দা নাঈম বলেন, শেখ হাসিনার আমলে তার দোসররা পরিবহনের বিভিন্ন কোম্পানি খুলে যা ইচ্ছা তাই করেছে। মালিক-চালক-শ্রমিক সমিতিগুলো সড়কের বারোটা বাজিয়েছে। পুরো সিস্টেমটাকে নষ্ট করে ফেলেছে। একই সঙ্গে ট্রাফিক বিভাগও নিজেদের নষ্ট করতে শেষ করে ফেলেছে। লোকে ট্রাফিক সদস্যদের দেখলে গালাগাল করে। বাসা থেকে রাস্তায় নামলেই ভোগান্তি শুরু হয়। দেশের ট্রাফিক সদস্যরা কোনো সিস্টেম জানে না। মিরপুর নিউমার্কেটের সামনে থাকা স্ট্যান্ডটিকে বাস-লেগুনা বা অন্যান্য যানবাহন উপেক্ষা করা শুরু করলো। যেখানে স্ট্যান্ড সেখানে না থেকে মুক্তবাংলা শপিং কমপ্লেক্সের সামনে যাত্রী ওঠা-নামা করা শুরু করলো, সেদিন থেকে যানজট শুরু হতে লাগলো। রাইদা পরিবহনের চালক বলেন, রামপুরা ব্রিজ থেকে বাড্ডা লিংক রোড যেতে আধাঘণ্টার বেশি সময় লাগে। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির কারণে এখন যানজট আরও বেড়ে গেছে।
যানজটে ভোগান্তি ফ্লাইওভারেও: অনেকে যানজট থেকে বাঁচার জন্য টাকা খরচ করে ফ্লাইওভার ব্যবহার করতে গিয়েও পড়ছে ভোগান্তিতে। কারণ বর্তমানে ফ্লাইওভারেও দেখা দিচ্ছে যানজট। শুধু দিনে নয়, যানজট চলছে গভীর রাত পর্যন্ত। কোনো কোনো সময় দিনের চাইতে রাতের যানজট আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করে। সব মিলিয়ে নাকাল অবস্থা নগরবাসীর। তবে ট্রাফিক পুলিশ বলছে, শিক্ষার্থী ও অন্যান্যদের দাবি দাওয়া আদায়ে রাজপথজুড়ে আন্দোলনের কারণে যানজট বাড়ছে। এছাড়াও রাস্তায় প্রচুরসংখ্যক যানবাহন নামায় এই যানজট।
যানজটের অন্যতম কারণ ভাদ্র মাস: বৃষ্টির প্রবণতা কমে যাওয়ায় ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে সারা দেশের তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে রাজধানী ঢাকাতেও। সেই সঙ্গে রয়েছে শহরটির তীব্র যানজট। গতকাল সোমবার সকালে আকাশে মেঘের দেখা মিললেও কমেনি ভ্যাপসা গরম অনুভূতি। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীতে বাড়তে থাকে গাড়ির চাপ। নগরীর বিভিন্ন জায়গায় সৃষ্টি হয় যানজট। তীব্র গরমের সঙ্গে যানজটে ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রীদের। রাজধানীর পল্টনে কথা হয় এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তিনি বলেন, সদরঘাট থেকে গাড়িতে উঠেছি, এক ঘণ্টায় মনে হয় তিন কিলোমিটার আসছি। প্রতিটি মোড়ে সিগন্যাল। এর মধ্যে গরমে ঘামতে ঘামতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। বনশ্রী যাবো, পৌঁছাতে কতক্ষণ লাগবে জানি না। রাজধানীর রামপুরা ব্রিজ থেকে এক বাস চালক বলেন, রামপুরা ব্রিজ থেকে বাড্ডা লিংক রোড যেতে আধাঘণ্টার বেশি সময় লাগে। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির কারণে এখন যানযট আরও বেড়ে গেছে। এর মধ্যে অসহনীয় গরম।
সড়কে নিয়ম ভাঙার মহোৎসব: রাজধানীর মেরুল বাড্ডা ইউলুপ এলাকায় তীব্র যানজট। প্রায় ৪০ মিনিট স্থির দাঁড়িয়ে থাকার পর গাড়ি চলা শুরু হলো। দুই মিনিট গাড়ি চলার পরে ফাঁকা রাস্তা। মানে সেখানে কোনো যানজট নয়, পাবলিক বাস সার্ভিসের সঙ্গে ব্যাটারিচলিত রিকশার মধ্যে বিবাদ লেগেছিল। মাঝ রাস্তা দিয়েই চলছে ব্যাটারিচলিত রিকশা! আবার পাবলিক বাসগুলোও যেখানে-সেখানে থামাচ্ছে। তবে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের এসময় বিশেষ কোনো ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি। বাইকার, রিকশাচালক যে যেভাবে পারছে সেভাবে যানজট সৃষ্টি করছে। কড়া হতে পারছেন না সড়কে দায়িত্ব পালনকারী ট্রাফিক সদস্যরা। উল্টো তারা বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ। একইচিত্র আসাদগেট, মহাখালী, শাহবাগ, গুলিস্তান, প্রগতি সরণিসহ অধিকাংশ এলাকায়। তবে কোথাও একবার যানজট লেগে গেলে তা ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও কমছে না। প্রগতি সরণির নতুনবাজার থেকে কুড়িল বিশ্বরোড যেতেই প্রতিদিন দেড় ঘণ্টা পার হয়ে যায়। অথচ এটি সর্বোচ্চ ১০ মিনিটের পথ। এ অবস্থায় ঢাকার সড়কে চলাচলকারীদের রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠছে। তিন থেকে চারদিন কিছু অল্পবয়সী ছেলে মোটরসাইকেলে যাওয়ার সময় তাকে খুব বাজেভাবে বকাবকি করে। এতে তার মন খারাপ হলেও দায়িত্বে অবহেলা করছেন না। মূলত শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর সবচেয়ে বেশি তোপের মুখে পড়েন পুলিশ সদস্যরা। টানা ছয়দিন সড়কে ছিল না ট্রাফিক পুলিশ, এসময় রাজধানীর প্রতিটি সড়কে দিন-রাত পুরোদমে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করেন শিক্ষার্থীরা। পরে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা ফিরলেও সড়কে ফেরেনি শৃঙ্খলা। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত অব্দি যানজটে নাকাল হতে হচ্ছে নগরবাসীর। তবে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা বলছেন, প্রতিদিন যারা সড়ক ব্যবহার করছেন তারাই নিয়ম ভঙ্গ করছেন। এক শ্রেণির মানুষ প্রতিনিয়ত আমাদের উদ্দেশে বুলিং করছে। যত্রতত্র পার্কিং, সড়কের পাশে হকার, উল্টোপথে গাড়ি চালানো ও সিগন্যাল অমান্য করে আগে যেতে চাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে নিয়ম ভঙ্গ করছেন মানুষ। শিক্ষার্থীরা যে ছয়দিন সড়কে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করেছিল তখন ভয়ে কেউ নিয়ম ভাঙতো না। সেই ভয়টা কেন যেন মানুষের মনে কাজ করছে না! এজন্য সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সড়কে যানজট লেগে থাকছে।
যানজটের অন্যতম যমদূত অটোরিকশা: ঢাকা শহরে রাস্তার চেয়ে যানবাহনের সংখ্যা বেশি। এরপর যদি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলে আসে ঢাকার সড়কে তখন যানজটে পড়তে হয় নগরবাসীকে। রামপুরা বাজারে সড়কের কাটা স্থানে একজন ট্রাফিক পুলিশের সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। ট্রাফিক পুলিশের সিগন্যাল অমান্য করেই চলছে যানবাহন। তিন রাস্তার লেন যেন পুরোটাই রিকশার দখলে। এর মধ্যে শহরে চলাচলরত পাবলিক বাস সার্ভিসগুলো যেখানে-সেখানে থামিয়ে যাত্রী ওঠাচ্ছে আবার নামাচ্ছে। রামপুরা বাজারের পরে আবুল হোটেল মোড়ে দুজন ট্রাফিক পুলিশ সদস্য দেখা যায়। তারা সড়কে দাঁড়িয়ে যানজট নিরসনের কাজ করছিলেন। বাড্ডা লিংরোড থেকে আবুল হোটেল, এখানে গাড়ির রাস্তা ২০ মিনিট। কিন্তু যানজটে ও রিকশার কারণে সময় লাগে প্রায় দুই ঘণ্টা। একই চিত্র দেখা যায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও পল্টন মোড়ে। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা যানজট নিরসনে হিমশিম খাচ্ছেন। রাস্তার এক পাশে অনেকটা জায়গাজুড়ে প্রাইভেটকার পার্কিং, এরপর যাত্রী নেয়ার জন্য ফাঁকা রিকশা দাঁড়িয়ে আছে। ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা তাদের সরিয়ে দিলেও তারা যাচ্ছে না। কেউ যেন তোয়াক্কাই করছে না ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের। রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা কারওয়ান বাজারে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন অটোরিকশাচালক জামাল মিয়া। তিনি বলেন, আসাদগেট থেকে যাত্রী নিয়ে কারওয়ান বাজার এসেছি ১২০ টাকায়। এখন যাত্রীও পাচ্ছি পাশাপাশি পুলিশও আটকাচ্ছে না। আগে মূল সড়কে উঠতে দিতো না পুলিশ। তবে শিক্ষার্থীরা যখন ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন শুরু করে তখন থেকেই মূল সড়কে আমরা উঠতে পারি। তবে আলতাফ হোসেন নামে এক প্রাইভেটকারচালক বলেন, প্রায় এক মাস ধরে ঢাকা শহরে গাড়ি চালিয়ে কোনো শান্তি পাচ্ছি না। সব রাস্তায় দেদারছে চলছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। এখন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকরা মাঝ দিয়ে চলাচল করছে। হর্ন দিলেও সরে না। এতে গাড়ির চাপ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।
ফুটপাতে চলছে বাইক-সাইকেল: শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে উঠে যাওয়ার পর পুলিশ যখন দায়িত্ব পালন শুরু করে তখন থেকেই মোটরসাইকেল আরোহীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। অধিকাংশ বাইকার যত্রতত্র মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন এবং সিগন্যাল অমান্য করছেন। পুলিশ দেখেও যেন না দেখার ভান করছেন অনেকটা। এছাড়া অতিরিক্ত যানজটে কিছু বাইকার ফুটপাত দিয়েও মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন। পথচারীরা প্রতিবাদ করলেও একরোখা বাইকাররা কারও তোয়াক্কা করছে না। খাবার ডেলিভারিম্যানরা নিয়মিতই ফুটপাতে সাইকেল তুলে দিচ্ছেন। তারাও কারও বাধা মানেন না। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পল্টন এলাকায় দায়িত্বরত এক ট্রাফিক পুলিশ সদস্য বলেন, রোদ-বৃষ্টির মধ্যে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা সড়কে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তাদের বসার মতো কোনো স্থান নেই। সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এবং ২টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। তাদের ওয়াশরুমে যাওয়ার মতোও স্থান নেই। তারপরও যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন রাস্তার যানজট নিরসনে। একটানা দায়িত্ব পালনে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে। ট্রাফিক-মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) ইয়াসিনা ফেরদৌস বলেন, মূল সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করার কথা নয়। তবে এসব রিকশা মূল সড়কে চলাচল ও পার্কিং করে অন্য যানবাহনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। একজন যাত্রীরও দায়িত্ব রয়েছে। সচেতনতা বৃদ্ধিতে সবার এগিয়ে আসা উচিত। একইসুরে কথা বলেছেন ট্রাফিক-গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, একটা সময় গুলশান-বনানী এলাকায় নির্ধারিত পোশাকে নির্দিষ্ট সংখ্যক রিকশা চলাচল করতো। এই রিকশাগুলোর অনুমোদন দিতো সিটি করপোরেশন। কিন্তু ৫ তারিখের পর অন্য জায়গা থেকে অটোরিকশা ঢাকায় চলে আসছে। তারা জানে না কোনো সড়কে কীভাবে চলাচল করতে হবে। ফলে তাদের সঙ্গে প্রায়ই আমাদের কনফ্লিক্ট হয়।