আলু আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করায় চলতি সপ্তাহ থেকে ভারত থেকে আবারও পণ্যটি আমদানির সম্ভাবনা শুরু হয়েছে। এতে একদিনের ব্যবধানে দিনাজপুরের হিলিতে দেশি আলুর দাম কমেছে কেজিতে ৫ টাকা। নিত্যপণ্যটির দাম কমায় খুশি নিম্ন আয়ের মানুষ। আমদানি শুরু হলে আলুর দাম আরো কমতে পারে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। গতকাল রোববার সরেজমিনে হিলি বাজারে দেখা যায়, বাজারে প্রত্যেকটি দোকানেই আলুর ভালো সরবরাহ রয়েছে। সেই সাথে আলুর দাম আগের তুলনায় কমতির দিকে। একদিন আগেও দেশি গুটি জাতের আলু ৫৫ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে তা কমে প্রকারভেদে ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া কাটিনাল জাতের আলু ৫০ থেকে ৫২ টাকা দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে তা কমে বিক্রি হচ্ছে ৪৬ থেকে ৪৮ টাকায়। হিলি বাজারে আলু কিনতে আসা হায়দার আলী বলেন, কয়েকদিন আগেই গুটি আলু বাজার থেকে কিনলাম ৫৫ টাকা কেজি। সেই আলু আজ (গতকাল) ৫০ টাকা কেজি কিনলাম। কেজিপ্রতি ৫ টাকা কমেছে। এভাবে যদি দাম কমতে থাকে তাহলে নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য উপকার হয়। আগে তো আলুর দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে ছিল। আয় রোজগার তেমন না থাকায় বাড়তি দামের কারণে সংসার চালাতে খুব হিমশিম খেতে হচ্ছিল। অপর ক্রেতা ইছাহাক আলী বলেন, আলুর দাম আগের চেয়ে একটু কমছে। আগে কাটিনাল জাতের আলু ৫০ থেকে ৫২ টাকা কেজি ছিল, সেই আলু এখন কমে বিক্রি হচ্ছে। আজকে (গতকাল) কাটিনাল জাতের আলু কিনলাম ৪৭ টাকা কেজি। দামটা যদি আর একটু কমত তাহলে আমাদের মত গরীব মানুষদের জন্য সুবিধা হত। বাড়তি দামের কারণে আমরা চাহিদা মত আলু কিনতে পারতাম না। খাওয়া দাওয়ার খুব সমস্যা হয়ে গিয়েছিল। হিলি বাজারের আলু বিক্রেতা আবদুল মালেক বলেন, চাহিদা মোতাবেক আলুর সরবরাহ না থাকায় কিছুদিন ধরেই আলুর দাম বেশি ছিল। দেশের বাজারে আলুর সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সম্প্রতি সরকার আলু আমদানিতে বিদ্যমান শুল্ক প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এতে হিলিসহ দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে আলু আমদানির প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন আমদানিকারকরা। খুব শিগগির আবারও ভারত থেকে দেশে আলু আমদানি শুরু হতে পারে। তিনি জানান, বর্তমানে যেসব কৃষক বাড়িতে আলু মজুদ করে রেখেছিলেন তারা আলু বাজারে ছাড়তে শুরু করেছেন। সেই সাথে অনেক ব্যবসায়ী স্টোরগুলোতে আলু মজুদ ছিল। অল্প পরিমাণ আলু বাজারে ছাড়লেও এখন তারা আমদানির খবর পেয়ে বাকি আলু বাজারে ছাড়তে শুরু করেছেন। এতে সরবরাহ বাড়ায় বাজারে আলুর দাম কমতে শুরু করেছে। আমদানির খবরেই এই অবস্থা, ভারত থেকে আলু আমদানি শুরু হলে দাম আরো কমবে। হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারক আনোয়ার হোসেন বলেন, সরকার আলু আমদানিতে বিদ্যমান শুল্ক প্রত্যাহার করার পর আমরা ভারতীয় রপ্তানিকারকদের সাথে কথা বলেছি। বর্তমানে ভারতের বাজারে যে আলুর দাম তাতে দেশে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকার মত হবে। দেশের বাজারে আমদানি করা আলু ৪০ টাকার মধ্যে বিক্রি হতে পারে। ইতোমধ্যেই আলু আমদানির জন্য আইপি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। আইপি হাতে পেলেই এলসি খুলে ভারত থেকে আলু আমদানি শুরু হতে পারে। আমার মত অনেক আমদানিকারক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। হিলি স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপসহকারী সংগনিরোধ কর্মকর্তা ইউসুফ আলী বলেন, আলু আমদানির অনুমতি (আইপি) ইস্যুতে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। আমদানিকারকরা যদি অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেন সেই মোতাবেক আইপি ইস্যু করছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। এ ছাড়া অনেকের পূর্বের আইপি রয়েছে কিন্তু তারা তো আলু আমদানি করছেন না। তবে গত বৃহস্পতিবার শুল্ক কমানোর পর আবারও আমদানিকারকরা অনুমতি চেয়ে আবেদন করছেন। ইতোমধ্যে দু-একটি আইপি অনুমোদন হয়েছে। আগামী দু-একদিনের মধ্যে আলু আমদানি শুরু হতে পারে। দেশের বাজারে আলুর সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত ৫ সেপ্টেম্বর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আলু আমদানির ওপর বিদ্যমান ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। এছাড়াও ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করে নিয়েছে সরকার।