
হাসপাতালে ভর্তির জন্য সন্তানসম্ভবা সুমাইয়া আক্তারকে নিয়ে আসেন পরিবারের সদস্যরা। গতকাল রোববার বেলা তিনটায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে হাসপাতালে ভর্তির জন্য সন্তানসম্ভবা সুমাইয়া আক্তারকে নিয়ে আসেন পরিবারের সদস্যরা। সন্তানসম্ভবা সুমাইয়া আক্তার (২২) ভর্তি হয়েছিলেন আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। অবস্থা গুরুতর হওয়ার পর সেখানকার চিকিৎসকেরা তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন। গতকাল রোববার বেলা দুইটায় হাসপাতালে এসে তিনি ভর্তি হতে পারেননি।
গতকাল রোববার বেলা তিনটায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে কথা হয় সুমাইয়া আক্তারের স্বামী মো. আরমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ৩ সেপ্টেম্বর প্রসব হওয়ার কথা বলেছিলেন চিকিৎসকেরা। পরে গতকাল রোববার সকালে তার স্ত্রীর প্রসববেদনা ওঠে। আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচার করার পরামর্শ দিয়ে চট্টগ্রামে পাঠান। পেশায় রাজমিস্ত্রি আরমান বলেন, এখানে এসে দেখি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে তালা ঝুলছে। কোনোভাবেই ঢুকতে পারছি না। কোনো চিকিৎসকও নেই। ফলে চিকিৎসা কীভাবে পাব, কোথায় যাব জানি না। এদিকে ব্যথায় কাতরাচ্ছেন সুমাইয়া।
হামলাকারীদের গ্রেফতার-বিচার, নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করাসহ চার দফা দাবিতে সারা দেশে সব ধরনের চিকিৎসাকেন্দ্রে সেবা বন্ধের ঘোষণা দেয় চিকিৎসকেরা। তারা এই কর্মসূচিকে বলছেন ‘কমপ্লিট শাটডাউন’। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের তিন চিকিৎসককে মারধরের ঘটনায় সারাদেশে বিক্ষুদ্ধ চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলাকালে চিকিৎসা সেবা বন্ধ হয়ে যায়। এসময় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও সেবা বন্ধ করে দেন চিকিৎসকেরা। এসময় শত শত রোগী ও তাদের স্বজনরা পড়েন বিপাকে। তবে চিকিৎসকদের ওপর হামলাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের আশ্বাস দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। এ আশ্বাস পেয়ে আজ সোমবার রাত ৮টা পর্যন্ত কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি স্থগিত করেছেন চিকিৎসকরা। গত শনিবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের অবহেলায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস টেকনোলজির (বিইউবিটি) শিক্ষার্থী আহসানুল হক দীপ্তর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের তিন চিকিৎসককে মারধরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দোষীদের শনাক্ত করে গ্রেফতারের আল্টিমেটাম দেন চিকিৎসকরা। একই দিন মধ্যরাতে খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকা থেকে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহতরা ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে আসেন। তখন অন্য আরেক গ্রুপ চাপাতিসহ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ভেতরে ঢুকে যায়। এ সময় হাতেনাতে চারজনকে আটক করে সেনাবাহিনীকে দেয় কর্তৃপক্ষ। পরে অন্য আরেক রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ওয়ানস্টপ ইমার্জেন্সি সেন্টারে ভাঙচুর চালায় রোগীর স্বজনরা। এতে করে নিরাপত্তা শঙ্কায় জরুরি বিভাগের কার্যক্রম বন্ধ করে দেন চিকিৎসকরা। আলটিমেটামের ২৪ ঘণ্টা শেষ হওয়ার আগেই কর্মবিরতিতে যান তারা।
এদিকে, ঢামেক হাসপাতালের (ঢামেক) নিউরো সার্জারি বিভাগের তিন চিকিৎসকের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা হয়। মামলায় বেসরকারি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) শিক্ষকসহ তিন শিক্ষার্থীকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া ৪০-৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। গতকাল রোববার ঢামেক হাসপাতালের অফিস সহায়ক আমির হোসেন (৫৩) বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
অন্যদিকে, গতকাল রোববার দুপুরে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত, দোষীদের গ্রেফতার ও সেনাবাহিনী মোতায়েন না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য সারা দেশের সব হাসপাতালে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করা হয়। হাসপাতালের প্রশাসনিক ব্লকে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের আবাসিক সার্জন আব্দুল আহাদ এ ঘোষণা দেন। পরে বিকেলে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা বিধানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। এরপরও চিকিৎসকরা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে অটল থাকলে বিপাকে পড়েন রোগী ও তাদের স্বজনরা। অনেক গুরুতর রোগীরা হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যেতে থাকেন।
এ পরিস্থিতিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। এ সময় তিনি চিকিৎসকদের শাটডাউন কর্মসূচি উঠিয়ে নেয়ারও আহ্বান জানান।
এদিকে, বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রশাসনিক ব্লকে কর্মবিরতিতে থাকা ডাক্তারদের সঙ্গে সভা ডাকা হয়। ওই সভায় চার দফা দাবি জানান চিকিৎসকরা। তাদের দাবিগুলোকে যৌক্তিক বলে মন্তব্য করেন করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। চিকিৎসকদের দাবিগুলো মেনে নেয়ারও আশ্বাস দেয়ার ইঙ্গিত দেন তিনি। পরে কর্তৃপক্ষের আশ্বাস পেয়ে কর্মবিরতি স্থগিত করেন চিকিৎসকরা।
গতকাল বেলা দুইটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত হাসপাতালে ঘুরে দেখা যায়, জরুরি বিভাগের ফটকে তালা দেয়া হয়েছে। দূরদূরান্ত থেকে রোগীরা এসে ভিড় জমান ফটকের সামনে। এ সময় রোগী ও স্বজনেরা উত্তেজিত হয়ে যান। পরে সেখানে এসে হাজির হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মো. রাসেল আহমেদসহ আরও কয়েকজন। একপর্যায়ে তালা ভেঙে রোগীদের ভেতরে ঢোকান স্বজনেরা। ষাটোর্ধ্ব মো. মোখলেসুর রহমানের পা ফুলে গেছে। ব্যথায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলেন না তিনি। পরে জরুরি বিভাগের সামনে মেঝেতে শুয়ে পড়েন। তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী আঞ্জুমান বেগম। মোখলেসুর রহমান বলেন, তার বাড়ি মিরসরাইয়ে। ফোড়া ওঠার কারণে দুই পায়ে ভর দিয়ে হাঁটতে পারছেন না। প্রচণ্ড ব্যথা। দাঁড়িয়ে থাকতেও কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু হাসপাতালে এসে আটকে গেলেন। ভর্তি হতে পারেননি। দুই ঘণ্টা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে অপেক্ষা করে ১৪ রোগীকে পাওয়া যায়। বিভিন্ন এলাকা থেকে তারা এসেছিলেন।
হাসপাতালে অনেকেই কয়েক ঘন্টা অপেক্ষা করে বাসায় ফিরে গেছেন। আবার কিছু রোগী ও তাদের স্বজনদেরকে জরুরী বিভাগের সামনে যন্ত্রণা আর হতাশায় শুয়ে পড়তেও দেখা গেছে। চিকিৎসা সেবা না পেয়ে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। অ্যাম্বুলেন্সে করে জরুরী চিকিৎসার জন্য আনা রোগীদের নিয়ে কী করবেন, কোথায় যাবেন-বুঝতে পারছেন না তাদের স্বজনরা। সেবা না পেয়ে আহাজারি করতেও দেখা গেছে অনেককে।
রোগী মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাসপাতালে হামলার প্রতিবাদে চার দফা দাবি তুলেছেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসকদের দাবিগুলো হলো : ১। হাসপাতালের মতো একটি জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানে যেসব ব্যক্তি বা কুচক্রী মহল ন্যাক্কারজনক এই হামলার সঙ্গে জড়িত, তাদের সবাইকে চিহ্নিত করে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে এবং দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। ২। নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে অবিলম্বে দেশের সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্য পুলিশের (আর্মড ফোর্স) মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ৩। নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে হাসপাতালে রোগীর ভিজিটর (ভিজিটর কার্ডধারী) ব্যতীত বহিরাগত ব্যক্তি বা মহল কোনোভাবেই হাসপাতালের ভেতর প্রবেশ করতে পারবে না, যা স্বাস্থ্য পুলিশের (আর্মড ফোর্স) মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে। ৪। হাসপাতালে রোগীর সেবাপ্রদানের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অসংগতি বা অবহেলা পরিলক্ষিত হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ প্রদানের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করা যেতে পারে। তবে, কোনোভাবেই আইন নিজেদের হাতে তুলে নেয়া যাবে না।
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জমান বলেন, চিকিৎসকরা কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন। ইন্টার্নসহ সব চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলাম। তবে আলোচনার পর তারা কর্মবিরতির ঘোষণা দেন। সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর চিকিৎসায় অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত শনিবার হট্টগোল হয়। মৃত আহসানুল ইসলাম (২৫) বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী। তার মৃত্যুতে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুলে ঢামেকের এক চিকিৎসককে মারধরের ঘটনা ঘটে। এতে গত শনিবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ঢামেকে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় চিকিৎসকেরা দোষীদের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হবে।
গতকাল রোববার বেলা তিনটায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে কথা হয় সুমাইয়া আক্তারের স্বামী মো. আরমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ৩ সেপ্টেম্বর প্রসব হওয়ার কথা বলেছিলেন চিকিৎসকেরা। পরে গতকাল রোববার সকালে তার স্ত্রীর প্রসববেদনা ওঠে। আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচার করার পরামর্শ দিয়ে চট্টগ্রামে পাঠান। পেশায় রাজমিস্ত্রি আরমান বলেন, এখানে এসে দেখি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে তালা ঝুলছে। কোনোভাবেই ঢুকতে পারছি না। কোনো চিকিৎসকও নেই। ফলে চিকিৎসা কীভাবে পাব, কোথায় যাব জানি না। এদিকে ব্যথায় কাতরাচ্ছেন সুমাইয়া।
হামলাকারীদের গ্রেফতার-বিচার, নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করাসহ চার দফা দাবিতে সারা দেশে সব ধরনের চিকিৎসাকেন্দ্রে সেবা বন্ধের ঘোষণা দেয় চিকিৎসকেরা। তারা এই কর্মসূচিকে বলছেন ‘কমপ্লিট শাটডাউন’। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের তিন চিকিৎসককে মারধরের ঘটনায় সারাদেশে বিক্ষুদ্ধ চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলাকালে চিকিৎসা সেবা বন্ধ হয়ে যায়। এসময় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও সেবা বন্ধ করে দেন চিকিৎসকেরা। এসময় শত শত রোগী ও তাদের স্বজনরা পড়েন বিপাকে। তবে চিকিৎসকদের ওপর হামলাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের আশ্বাস দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। এ আশ্বাস পেয়ে আজ সোমবার রাত ৮টা পর্যন্ত কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি স্থগিত করেছেন চিকিৎসকরা। গত শনিবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের অবহেলায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস টেকনোলজির (বিইউবিটি) শিক্ষার্থী আহসানুল হক দীপ্তর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের তিন চিকিৎসককে মারধরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দোষীদের শনাক্ত করে গ্রেফতারের আল্টিমেটাম দেন চিকিৎসকরা। একই দিন মধ্যরাতে খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকা থেকে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহতরা ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে আসেন। তখন অন্য আরেক গ্রুপ চাপাতিসহ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ভেতরে ঢুকে যায়। এ সময় হাতেনাতে চারজনকে আটক করে সেনাবাহিনীকে দেয় কর্তৃপক্ষ। পরে অন্য আরেক রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ওয়ানস্টপ ইমার্জেন্সি সেন্টারে ভাঙচুর চালায় রোগীর স্বজনরা। এতে করে নিরাপত্তা শঙ্কায় জরুরি বিভাগের কার্যক্রম বন্ধ করে দেন চিকিৎসকরা। আলটিমেটামের ২৪ ঘণ্টা শেষ হওয়ার আগেই কর্মবিরতিতে যান তারা।
এদিকে, ঢামেক হাসপাতালের (ঢামেক) নিউরো সার্জারি বিভাগের তিন চিকিৎসকের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা হয়। মামলায় বেসরকারি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) শিক্ষকসহ তিন শিক্ষার্থীকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া ৪০-৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। গতকাল রোববার ঢামেক হাসপাতালের অফিস সহায়ক আমির হোসেন (৫৩) বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
অন্যদিকে, গতকাল রোববার দুপুরে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত, দোষীদের গ্রেফতার ও সেনাবাহিনী মোতায়েন না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য সারা দেশের সব হাসপাতালে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করা হয়। হাসপাতালের প্রশাসনিক ব্লকে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের আবাসিক সার্জন আব্দুল আহাদ এ ঘোষণা দেন। পরে বিকেলে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা বিধানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। এরপরও চিকিৎসকরা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে অটল থাকলে বিপাকে পড়েন রোগী ও তাদের স্বজনরা। অনেক গুরুতর রোগীরা হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যেতে থাকেন।
এ পরিস্থিতিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। এ সময় তিনি চিকিৎসকদের শাটডাউন কর্মসূচি উঠিয়ে নেয়ারও আহ্বান জানান।
এদিকে, বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রশাসনিক ব্লকে কর্মবিরতিতে থাকা ডাক্তারদের সঙ্গে সভা ডাকা হয়। ওই সভায় চার দফা দাবি জানান চিকিৎসকরা। তাদের দাবিগুলোকে যৌক্তিক বলে মন্তব্য করেন করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। চিকিৎসকদের দাবিগুলো মেনে নেয়ারও আশ্বাস দেয়ার ইঙ্গিত দেন তিনি। পরে কর্তৃপক্ষের আশ্বাস পেয়ে কর্মবিরতি স্থগিত করেন চিকিৎসকরা।
গতকাল বেলা দুইটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত হাসপাতালে ঘুরে দেখা যায়, জরুরি বিভাগের ফটকে তালা দেয়া হয়েছে। দূরদূরান্ত থেকে রোগীরা এসে ভিড় জমান ফটকের সামনে। এ সময় রোগী ও স্বজনেরা উত্তেজিত হয়ে যান। পরে সেখানে এসে হাজির হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মো. রাসেল আহমেদসহ আরও কয়েকজন। একপর্যায়ে তালা ভেঙে রোগীদের ভেতরে ঢোকান স্বজনেরা। ষাটোর্ধ্ব মো. মোখলেসুর রহমানের পা ফুলে গেছে। ব্যথায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলেন না তিনি। পরে জরুরি বিভাগের সামনে মেঝেতে শুয়ে পড়েন। তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী আঞ্জুমান বেগম। মোখলেসুর রহমান বলেন, তার বাড়ি মিরসরাইয়ে। ফোড়া ওঠার কারণে দুই পায়ে ভর দিয়ে হাঁটতে পারছেন না। প্রচণ্ড ব্যথা। দাঁড়িয়ে থাকতেও কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু হাসপাতালে এসে আটকে গেলেন। ভর্তি হতে পারেননি। দুই ঘণ্টা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে অপেক্ষা করে ১৪ রোগীকে পাওয়া যায়। বিভিন্ন এলাকা থেকে তারা এসেছিলেন।
হাসপাতালে অনেকেই কয়েক ঘন্টা অপেক্ষা করে বাসায় ফিরে গেছেন। আবার কিছু রোগী ও তাদের স্বজনদেরকে জরুরী বিভাগের সামনে যন্ত্রণা আর হতাশায় শুয়ে পড়তেও দেখা গেছে। চিকিৎসা সেবা না পেয়ে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। অ্যাম্বুলেন্সে করে জরুরী চিকিৎসার জন্য আনা রোগীদের নিয়ে কী করবেন, কোথায় যাবেন-বুঝতে পারছেন না তাদের স্বজনরা। সেবা না পেয়ে আহাজারি করতেও দেখা গেছে অনেককে।
রোগী মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাসপাতালে হামলার প্রতিবাদে চার দফা দাবি তুলেছেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসকদের দাবিগুলো হলো : ১। হাসপাতালের মতো একটি জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানে যেসব ব্যক্তি বা কুচক্রী মহল ন্যাক্কারজনক এই হামলার সঙ্গে জড়িত, তাদের সবাইকে চিহ্নিত করে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে এবং দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। ২। নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে অবিলম্বে দেশের সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্য পুলিশের (আর্মড ফোর্স) মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ৩। নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে হাসপাতালে রোগীর ভিজিটর (ভিজিটর কার্ডধারী) ব্যতীত বহিরাগত ব্যক্তি বা মহল কোনোভাবেই হাসপাতালের ভেতর প্রবেশ করতে পারবে না, যা স্বাস্থ্য পুলিশের (আর্মড ফোর্স) মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে। ৪। হাসপাতালে রোগীর সেবাপ্রদানের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অসংগতি বা অবহেলা পরিলক্ষিত হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ প্রদানের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করা যেতে পারে। তবে, কোনোভাবেই আইন নিজেদের হাতে তুলে নেয়া যাবে না।
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জমান বলেন, চিকিৎসকরা কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন। ইন্টার্নসহ সব চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলাম। তবে আলোচনার পর তারা কর্মবিরতির ঘোষণা দেন। সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর চিকিৎসায় অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত শনিবার হট্টগোল হয়। মৃত আহসানুল ইসলাম (২৫) বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী। তার মৃত্যুতে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুলে ঢামেকের এক চিকিৎসককে মারধরের ঘটনা ঘটে। এতে গত শনিবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ঢামেকে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় চিকিৎসকেরা দোষীদের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হবে।