
ভালো নেই বাংলাদেশ। দেশের একটা বড় অংশ তলিয়ে যাচ্ছে বন্যার পানিতে। ফেনী, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর ও খাগড়াছড়ি জেলার কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি ও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। এমন অবস্থায় বিএনপি-জামায়াত ও আওয়ামী লীগসহ সকল রাজনৈতিক দলের নেতারা নিজ নিজ অবস্থান এবং দলীয়ভাবে বন্যার্তদের পাশে থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন। শুধু তাই নয়, টানা বৃষ্টিতে ভারতের ডম্বুর ও গজলডোবা বাঁধ খুলে দেয়ায় দেশের ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও মৌলভীবাজারসহ বেশ কিছু অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন। রাজনীতিক দলগুলোর পাশাপাশি সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ বন্যার্তদের পাশে সর্বাত্মক সহযোগিতার হাত বাড়াতে আহ্বান যার যার অবস্থান থেকে আহ্বান জানিয়েছেন। এককথায় বলতে গেলে দেশের রাজনীতিতে নানা মত ও বিভাজন থাকলে ভয়াবহ বন্যাকে কেন্দ্র করে সবাই একইসুরে কথা বলছেন। বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে এ যেন নতুন বাংলাদেশে রাজনীতিতে সুখময় বার্তার জানান দিচ্ছে। এর আগে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তর থেকে এক বার্তায় ফেনীসহ ১২টি জেলায় আকস্মিক বন্যায় বাংলাদেশের সংগ্রামী যুবসমাজ ও যুব সংগঠনগুলোকে সেবার ব্রত নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি বলেন, যে কোনো সংকট ও দুর্যোগে যুবসমাজ সেবার ব্রত নিয়ে ও সম্মিলিত অংশগ্রহণে কাজ করলে দুর্যোগ প্রতিরোধ করা যাবে। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে নিবন্ধিত সকল যুব সংগঠনের সদস্যদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ফেনীসহ ১২টি জেলায় আকস্মিক বন্যায় আপনারা বন্যার্ত মানুষের সেবায় সর্বাত্মকভাবে অংশগ্রহণ করুন। তিনি বলেন, যে কোনো সংকট ও দুর্যোগে বাংলাদেশের সংগ্রামী যুবসমাজ সেবার ব্রত নিয়ে কাজ করতে পারে। এবারের বন্যায় সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণে দুর্যোগ প্রতিরোধে আমরা জয়ী হব আশা করি।
পানিবন্দি মানুষের পাশে দাঁড়াতে জামায়াতের আহবান: পানিবন্দি মানুষের পাশে দাঁড়াতে এবং তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। বৃহস্পতিবার সকালে জামায়াতে ইসলামের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এক বার্তায় এই আহ্বান জানান জামায়াতের আমির। তিনি বলেন, ভারী বৃষ্টি এবং ভারত থেকে তেড়ে আসা পানির ঢলে ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর আর কুমিল্লার অংশবিশেষ পানিতে ভাসছে। লাখো বনি আদম, নিরীহ গবাদি পশু, যাবতীয় সহায়-সম্পদ চরম ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন। জানি না এ পর্যন্ত কতজন মানুষ মারা গেছেন। এ অবস্থায় আসুন, আপনি আমি এবং আমরা বিপন্ন মানবতার পাশে দাঁড়াই। যার যা আছে তাই নিয়েই দাঁড়াই। তিনি বলেন, মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে হৃদয় গলিয়ে দোয়া করি, আল্লাহ যেন এই বৃষ্টি এবং পানিকে গজবের কারণ না বানান। রহমতের ওসিলা হিসেবে পরিবর্তন করে দেন। হে আল্লাহ! আসমানকে আপনি মেহেরবানি করে থামান এবং জমিনকে আমাদের জন্য উপকারী বানিয়ে দিন। আমাদের এ বিপদ থেকে আপনি রক্ষা করুন। আমাদের ওপর রহম করুন, আমাদের ক্ষমা করুন, আমাদের দিকে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। তিনি বলেন, আমার বিপন্ন ভাই-বোনদের কাছে আমি যাচ্ছি, ইনশাআল্লাহ আপনারাও আসুন এবং সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন।
ভয়াবহ বন্যায় গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ জাতীয় পার্টির: দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভয়াবহ বন্যায় কোটি কোটি মানুষের সীমাহীন কষ্টে গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে পানিবন্দি কোটি মানুষের পাশে দাঁড়াতে সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান জিএম কাদের। বিবৃতিতে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, ভয়াবহ বন্যায় কোটি কোটি মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। বন্যার তোড়ে ভেসে গেছে মাঠের সব ফসল, পুকুর ও মৎস্য খামারের শত কোটি টাকার মাছ। ঘরের আসবাবপত্র, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গৃহপালিত পশু-পাখি হারিয়ে সম্বলহীন হয়ে পড়েছে লাখো পরিবার। বিপন্ন কোটি কোটি মানুষ পড়েছে সীমাহীন সংকটে বলে উল্লেখ করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, মানুষের এমন দুঃসময়ে আমরা বসে থাকতে পারি না। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে বিত্তবানদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার, জীবনরক্ষাকারী ওষুধ এবং শিশুখাদ্য নিয়ে আর্ত মানুষের কাছে যেতে অনুরোধ করেন জিএম কাদের। জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, স্থানীয়ভাবে জাতীয় পার্টি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকে বন্যার্তদের জন্য প্রয়োজনীয় ত্রাণ সহায়তা দিতে নির্দেশনা দিয়েছেন। একইসঙ্গে ত্রাণ কার্যক্রমে নিয়োজিত সশস্ত্র বাহিনী এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সার্বিক সহায়তা দিতেও আহ্বান জানান গোলাম মোহাম্মদ কাদের।
বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে নেতাকর্মীদের আহ্বান আ’লীগের: সরকারের আশায় বসে না থেকে বন্যার্ত অহসায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের সভাপতি শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর এ আহ্বান জানান গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিএম সাহাবুদ্দিন আজম। বুধবার রাতে আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও বার্তায় এ আহ্বান জানানো হয়। জিএম সাহাবুদ্দিন আজম বলেন, বাংলাদেশে ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, সেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগসহ সর্বস্তরের নেতা কর্মীদেরকে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট যে সরকার গঠিত হয়েছে। এই সরকার সম্পূর্ণ অদক্ষ এবং অযোগ্য। তারা কি করবে তার জন্য বসে না থেকে আপনারা বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াবেন। মনে রাখবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সবসময় আত্মমানবতার পাশে ছিল। আত্মমানবতার সেবায় থাকবে। সকল ষড়যন্ত্রকে ছিন্ন করে আমরা শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনবো।
অসহায়-দুর্গত মানুষের পাশে ওয়ার্কার্স পার্টির দাঁড়ানের আহবান: বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় চিকিৎসা ত্রাণ ও পুর্ণবাসন কমিটির ভার্চুয়াল এক সভা ২২ আগস্ট সকাল ১০টায় কমিটি আহবায়ক ও পলিটব্যুরোর সদস্য কমরেড আনিসুর রহমান মল্লিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন কমিটির সদস্য কমরেড মাহমুদুল হাসান মানিক, কমরেড আলী আহমেদ এনামুল হক এমরান, কমরেড মোস্তফা আলমগীর রতন প্রমুখ। সভায় নেতৃবৃন্দ কুমিল্লা-ফেনী-নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে লাখ লাখ মানুষের ভয়বাহ বন্যায় আক্রান্ত হওয়াতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বন্যা দুর্গতদের উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যেগ গ্রহণের সরকারের প্রয়োজনীয় মন্ত্রনালয়, দেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনসহ দেশের আপময় জনগনকে এড়িয়ে আসার জন্য আহবান জানান। নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রত্যেকটি জেলায় ত্রাণ তৎপরতা শুরু করা ও দুর্গত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহবান জানান। কেন্দ্রীয়ভাবে ৩০ তোপখানা রোড থেকে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
বন্যাকবলিতদের জন্য ছাত্রশিবিরের হেল্পলাইন: বন্যাকবলিত এলাকায় উদ্ধার কাজ ও জরুরি সেবার জন্য হেল্পলাইন নাম্বার চালু করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কেন্দ্রীয় সংগঠনের তত্ত্বাবধানে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কুমিল্লা সিটি ও জেলাসহ প্রাথমিকভাবে দেশের বন্যাকবলিত ৫টি জেলার উদ্ধারকাজ বিষয়ে যে কোনো সেবা গ্রহণের জন্য ছাত্রশিবিরের হটলাইন নম্বর চালু থাকবে। যে কোনো প্রয়োজনে নিন্মোক্ত নাম্বারসমূহে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হয়।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন-রাসেল আহমেদ : ০১৭৪৯-৪০৯৪৯৪। কুমিল্লা জেলা-জাহিদুল ইসলাম : ০১৬৪৬-৫২২৯৬৬ মহিউদ্দিন রনি : ০১৬০৫-৭১৫৫১৭। লক্ষ্মীপুর জেলা-আব্দুল আউয়াল হামদু : ০১৮৩২-৩৭২০৪৩ রাসেল মাহমুদ : ০১৭৮০-৪১০২২০। নোয়াখালী জেলা-হাবিবুর রহমান আরমান : ০১৮৭৯-২২৩০৪৮ দাউদ ইসলাম : ০১৯৯০-৩৬৯৯২০ সাইফুর রসূল ফুয়াদ : ০১৮৭৫-৪৬৯০৩৪। ফেনী জেলা-ইমাম হোসাইন : ০১৬৪৪-৮৩৯২৯৪ ইমাম হোসেন আরমান : ০১৮১৪-২৮৬৪৮৮ শফিকুল ইসলাম : ০১৮৬৪-৭১৯১৪৭। খাগড়াছড়ি জেলা-মো. মাইনুদ্দিন : ০১৫১৮-৩২৭৪৯৯ আবদুস সাত্তার : ০১৫১৮-৩৯৬৫১২।
বাঁধ খুলে আকস্মিক বন্যায় গণঅধিকারের বিক্ষোভ: ভারত কর্তৃক বাঁধ খুলে দিয়ে বাংলাদেশে আকস্মিক বন্যা সৃষ্টির প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মার্চ টু ইন্ডিয়ান হাইকমিশন কর্মসূচি পালন করেছে গণঅধিকার পরিষদ। বৃহস্পতিবার রাজধানীর শাহজাদপুরে কনফিডেন্স সেন্টারের সামনে থেকে এই কর্মসূচি শুরু হয়। এসময় আন্দোলনকারীদের হাতে ভারতবিরোধী স্লোগান সম্বলিত নানা প্লে-কার্ড দেখা যায়। সেগুলোতে লেখা রয়েছে- রক্ত দিয়া বানাইছি ঘর দিল্লি দেখায় পানির ডর; ভারতীয় আগ্রাসন রুখে দাও; ফেনী-কুমিল্লা ডুবল কেন, ভারত তুই জবাব দে প্রভৃতি। বিক্ষোভে দলটির নেতারা বলেন, ভারত রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় সীমান্তবর্তী নদীগুলোর বাঁধ খুলে দিয়েছে। এতে বাংলাদেশের ২০টি জেলায় ভয়াবহ বন্যা সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় ১ কোটি মানুষ এ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা এখন ভারতীয় হাইকমিশন যাব। সেখানে জানতে চাইব, ভারতের প্রধানমন্ত্রী কেন আগাম না জানিয়ে বাঁধ খুলে দিয়েছে। তারা বলেন, যে বাঁধগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে সেগুলো আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করতে হবে। বক্তারা আরও বলেন, ভারত খুনি হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে অন্যায় করেছে। তাকে ফিরিয়ে না দিলে বাংলাদেশের সঙ্গে সু-সম্পর্ক সম্ভব নয়। ভারত যদি বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে আর কোনো সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে এর পরিণতি ভয়াবহ হবে। আমরা দেখব ভারত কীভাবে আমাদের সহযোগিতা ছাড়া সেভেন সিস্টারে শান্তি বজায় রাখে।
বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহবান ক্রিকেটারদের: সারাদেশের সব শ্রেণিপেশার মানুষের মতোই বেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ক্রিকেটাররা। বন্যার্তদের পাশে থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন হৃদয়, সোহান, শরিফুলরা। বন্যার পানিতে আটকে পড়া এক শিশুর ছবি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে বেশ চর্চা। যদিও অনেকেই দাবি করেছেন ছবিটি এআই প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি করা। কিছু ক্রিকেটার সেই ছবি নিজেদের ফেসবুকেও শেয়ার করেছেন। সাবেক পেসার রুবেল হোসেন দুটি ছবি শেয়ার করেছেন, যার একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে। অন্য ছবিটি হায়দরাবাদের শ্রীশৈলম জলাধারের। যার সঙ্গে এই বন্যার কোনো সম্পর্ক নেই। সেই ছবি শেয়ার করে রুবেল লেখেন, এত পানি কোথা থেকে এলো, কেনই বা গভীর রাতে সব গেট খুলে দিলো। এই অসহায় গরিব দেশ কি এই প্রশ্নের উত্তর কোনদিনই জানবে না? ইমরুল তার পোস্টে লিখেছেন, পদশের এই অন্তিমসময়ে আরেকবার সবাই মিলে কাজ করলে এই দূর্যোগ মোকাবেলা করা সম্ভব। সবাই মিলে যার যার জায়গা থেকে এগিয়ে আসুন। আল্লাহ সবার সহায় হোক।’ এই টপ অর্ডার ব্যাটারের পোস্ট করা দুটি ছবির একটি ২০২২ সালের বলে নিশ্চিত করেছে ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান ‘রিউমর স্ক্যানার’। সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, দুজন সেনাসদস্য দুই শিশুকে কোলে নিয়ে বন্যার পানি ঠেলে এগোচ্ছেন। জাতীয় দলের টপ অর্ডার ব্যাটার তাওহীদ হৃদয় ফেসবুকে লিখেছেন, ‘কী লিখব? কী লেখা উচিৎ? নিজেকে অসহায় মনে হয় যখন সরাসরি দেশের কোনো দুর্যোগে পাশে থাকতে পারি না। বন্ধুদের পাঠিয়েছি, ওরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করবে। তবে আমার কষ্ট লাগছে যতটুকুই করা হবে তা কি যথেষ্ট? তবু করতে হবে, সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। শুধু এখন না, পানি নেমে যাওয়ার পর পর্যন্ত বন্যার্তদের পাশে থাকতে হবে। নৌকা, ওষুধ, বিশুদ্ধ পানি, শুকনা খাবার যে যেভাবে পারেন। ব্যাপার না। আমরা জন্ম থেকেই সংগ্রাম করতে জানি, এবারও করবো। আল্লাহ এ যাত্রায়ও আমাদের রক্ষা করবেন ইনশাহআল্লাহ। দুর্যোগ ঘটে গেছে, এখন পুরো বাংলাদেশ মিলে তা মোকাবিলা করার সময়। বসে থাকার সুযোগ নেই, সবাই নিজের সাধ্যমতো এগিয়ে আসি। সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা লিখেছেন, আল্লাহ আপনি ভয়াবহ বন্যা থেকে সবাইকে হেফাজত করুন। পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে দুর্দান্ত বোলিং করা পেসার শরিফুল ইসলাম প্রথম দিনের খেলা শেষে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘রাব্বানাকশিফ আন্নাল আযা-বা ইন্না-মু’মিনূন। হে আমাদের রব, আমাদের থেকে আযাব দূর করুন; নিশ্চয় আমরা মুমিন হব। [সূরা আদ-দুখানঃ১২] হে আল্লাহ, বন্যা কবলিত মানুষের প্রতি সহায় হোন,আমিন। বন্যাকবলিত একটি শিশুর ছবি পোস্ট করে উইকেটকিপার ব্যাটার নুরুল হাসান সোহান লিখেছেন, এই ছবি দেখার পর নিজেরে সম্পূর্ণ অসহায় লাগতেছে। আল্লাহ দয়া করে তাদের এই পরিস্থিতিতে সাহায্য করুন।
বন্যা নিয়ে যা বলছেন চিত্র তারকারা: ভয়াবহ বন্যার কবলে দেশ। এই অবস্থায় চলচ্চিত্র তারকারাও উদ্বেগ-উদ্বকণ্ঠা প্রকাশ করে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলছেন, আগে দেশ বাঁচাই। বিশেষ করে ভারি বৃষ্টি ও উজানের পানিতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে দেশের ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন জেলা। এই অবস্থায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তারকারাও। তারা বলছেন, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ বাঁচানোর লড়াইতে সামিল হতে দুদিন ধরেই সোচ্চার নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। দেশবাসীকে বন্যার্তদের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে সবশেষ পোস্টে ফারুকী লিখেছেন,মনে করেন আমরা যুদ্ধে আছি। তাহলে কি করতাম? সবাই মিলে ঝাঁপাইয়া পড়তাম। তাহলে চলেন এখনও তাই করি। নৌ-সেনা-বিমান বাহিনীর ভাই-বোনেরা, লেটস স্টেপ আপ। রেসকিউ বোট-কার্গো বিমান যা কিছু আছে তা নিয়ে দ্রুত উদ্ধারের গতি বাড়াই চলেন। কথা বলে যা জানলাম, মানুষের এই মুহূর্তে প্রয়োজন রেসকিউ বোট। লাখো মানুষ উদ্ধার করা একটা হারকুলিয়ান টাস্ক। বাট লেটস ডু ইট। দূর্গত এলাকার কাছে-দুরে যেখানে যত স্পিডবোট- ইন্জিন নৌকা আছে, সেগুলা নিয়া ঝাঁপাইয়া পড়ি চলেন। কিন্তু লাইফ জ্যাকেট না নিয়ে কেউ যাবেন না দয়া করে। বিপদ আমাদের কেবল একতাবদ্ধই করবে। নো ওয়ান ক্যান ব্রেক আস। বন্যাদুর্গত এলাকার বেশকিছু আশ্রয়কেন্দ্রের হটলাইন নম্বর শেয়ার করেছেন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। সেইসাথে সবাইকে সতর্ক করেছেন অভিনেতা। বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে লিখেছেন, আসুন আমরা সবাই বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়াই। নির্মাতা অমিতাভ রেজা লিখেছেন,নির্লজ্জের মতো এখনই সব দাবী নিয়ে না দাঁড়াই, আগে দেশ বাঁচাই, এরকম বন্যা দেখে নাই বাংলাদেশ। অন্যকে দাঁড়াতে না বলে নিজে দাঁড়ান। প্যানিক করবেন না, বর্তমান সরকারকে সাহায্য করেন। সংগীতশিল্পী আসিফ লিখেছেন, বন্যা অ্যালার্ট। উজানের পানি স্বাগতম, পলি মাটি আমাদের। হাতে হাত রেখে ষড়যন্ত্রের বন্যা মোকাবেলা করবো। ইনশাআল্লাহ। এছাড়াও অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি, নির্মাতা, অভিনেতা খিজির হায়াত, নির্মাতা রায়হান রাফী, অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী, চিত্রনায়িকা বুবলী ও অপু বিশ্বাস, চিত্রনায়ক নিরব, নায়িকা তমা মির্জা, অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণ, ইয়াশ রোহানসহ বহ তারকা বন্যার্তদের উদ্ধারে ক্রমাগত পোস্ট দিচ্ছেন, এবং নিজেদের সামর্থ অনুযায়ী সবাইকে পাশে দাঁড়ানোর আহ্বানও জানাচ্ছেন।
পানিবন্দি মানুষের পাশে দাঁড়াতে জামায়াতের আহবান: পানিবন্দি মানুষের পাশে দাঁড়াতে এবং তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। বৃহস্পতিবার সকালে জামায়াতে ইসলামের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এক বার্তায় এই আহ্বান জানান জামায়াতের আমির। তিনি বলেন, ভারী বৃষ্টি এবং ভারত থেকে তেড়ে আসা পানির ঢলে ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর আর কুমিল্লার অংশবিশেষ পানিতে ভাসছে। লাখো বনি আদম, নিরীহ গবাদি পশু, যাবতীয় সহায়-সম্পদ চরম ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন। জানি না এ পর্যন্ত কতজন মানুষ মারা গেছেন। এ অবস্থায় আসুন, আপনি আমি এবং আমরা বিপন্ন মানবতার পাশে দাঁড়াই। যার যা আছে তাই নিয়েই দাঁড়াই। তিনি বলেন, মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে হৃদয় গলিয়ে দোয়া করি, আল্লাহ যেন এই বৃষ্টি এবং পানিকে গজবের কারণ না বানান। রহমতের ওসিলা হিসেবে পরিবর্তন করে দেন। হে আল্লাহ! আসমানকে আপনি মেহেরবানি করে থামান এবং জমিনকে আমাদের জন্য উপকারী বানিয়ে দিন। আমাদের এ বিপদ থেকে আপনি রক্ষা করুন। আমাদের ওপর রহম করুন, আমাদের ক্ষমা করুন, আমাদের দিকে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। তিনি বলেন, আমার বিপন্ন ভাই-বোনদের কাছে আমি যাচ্ছি, ইনশাআল্লাহ আপনারাও আসুন এবং সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন।
ভয়াবহ বন্যায় গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ জাতীয় পার্টির: দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভয়াবহ বন্যায় কোটি কোটি মানুষের সীমাহীন কষ্টে গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে পানিবন্দি কোটি মানুষের পাশে দাঁড়াতে সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান জিএম কাদের। বিবৃতিতে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, ভয়াবহ বন্যায় কোটি কোটি মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। বন্যার তোড়ে ভেসে গেছে মাঠের সব ফসল, পুকুর ও মৎস্য খামারের শত কোটি টাকার মাছ। ঘরের আসবাবপত্র, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গৃহপালিত পশু-পাখি হারিয়ে সম্বলহীন হয়ে পড়েছে লাখো পরিবার। বিপন্ন কোটি কোটি মানুষ পড়েছে সীমাহীন সংকটে বলে উল্লেখ করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, মানুষের এমন দুঃসময়ে আমরা বসে থাকতে পারি না। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে বিত্তবানদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার, জীবনরক্ষাকারী ওষুধ এবং শিশুখাদ্য নিয়ে আর্ত মানুষের কাছে যেতে অনুরোধ করেন জিএম কাদের। জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, স্থানীয়ভাবে জাতীয় পার্টি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকে বন্যার্তদের জন্য প্রয়োজনীয় ত্রাণ সহায়তা দিতে নির্দেশনা দিয়েছেন। একইসঙ্গে ত্রাণ কার্যক্রমে নিয়োজিত সশস্ত্র বাহিনী এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সার্বিক সহায়তা দিতেও আহ্বান জানান গোলাম মোহাম্মদ কাদের।
বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে নেতাকর্মীদের আহ্বান আ’লীগের: সরকারের আশায় বসে না থেকে বন্যার্ত অহসায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের সভাপতি শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর এ আহ্বান জানান গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিএম সাহাবুদ্দিন আজম। বুধবার রাতে আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও বার্তায় এ আহ্বান জানানো হয়। জিএম সাহাবুদ্দিন আজম বলেন, বাংলাদেশে ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, সেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগসহ সর্বস্তরের নেতা কর্মীদেরকে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট যে সরকার গঠিত হয়েছে। এই সরকার সম্পূর্ণ অদক্ষ এবং অযোগ্য। তারা কি করবে তার জন্য বসে না থেকে আপনারা বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াবেন। মনে রাখবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সবসময় আত্মমানবতার পাশে ছিল। আত্মমানবতার সেবায় থাকবে। সকল ষড়যন্ত্রকে ছিন্ন করে আমরা শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনবো।
অসহায়-দুর্গত মানুষের পাশে ওয়ার্কার্স পার্টির দাঁড়ানের আহবান: বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় চিকিৎসা ত্রাণ ও পুর্ণবাসন কমিটির ভার্চুয়াল এক সভা ২২ আগস্ট সকাল ১০টায় কমিটি আহবায়ক ও পলিটব্যুরোর সদস্য কমরেড আনিসুর রহমান মল্লিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন কমিটির সদস্য কমরেড মাহমুদুল হাসান মানিক, কমরেড আলী আহমেদ এনামুল হক এমরান, কমরেড মোস্তফা আলমগীর রতন প্রমুখ। সভায় নেতৃবৃন্দ কুমিল্লা-ফেনী-নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে লাখ লাখ মানুষের ভয়বাহ বন্যায় আক্রান্ত হওয়াতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বন্যা দুর্গতদের উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যেগ গ্রহণের সরকারের প্রয়োজনীয় মন্ত্রনালয়, দেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনসহ দেশের আপময় জনগনকে এড়িয়ে আসার জন্য আহবান জানান। নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রত্যেকটি জেলায় ত্রাণ তৎপরতা শুরু করা ও দুর্গত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহবান জানান। কেন্দ্রীয়ভাবে ৩০ তোপখানা রোড থেকে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
বন্যাকবলিতদের জন্য ছাত্রশিবিরের হেল্পলাইন: বন্যাকবলিত এলাকায় উদ্ধার কাজ ও জরুরি সেবার জন্য হেল্পলাইন নাম্বার চালু করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কেন্দ্রীয় সংগঠনের তত্ত্বাবধানে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কুমিল্লা সিটি ও জেলাসহ প্রাথমিকভাবে দেশের বন্যাকবলিত ৫টি জেলার উদ্ধারকাজ বিষয়ে যে কোনো সেবা গ্রহণের জন্য ছাত্রশিবিরের হটলাইন নম্বর চালু থাকবে। যে কোনো প্রয়োজনে নিন্মোক্ত নাম্বারসমূহে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হয়।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন-রাসেল আহমেদ : ০১৭৪৯-৪০৯৪৯৪। কুমিল্লা জেলা-জাহিদুল ইসলাম : ০১৬৪৬-৫২২৯৬৬ মহিউদ্দিন রনি : ০১৬০৫-৭১৫৫১৭। লক্ষ্মীপুর জেলা-আব্দুল আউয়াল হামদু : ০১৮৩২-৩৭২০৪৩ রাসেল মাহমুদ : ০১৭৮০-৪১০২২০। নোয়াখালী জেলা-হাবিবুর রহমান আরমান : ০১৮৭৯-২২৩০৪৮ দাউদ ইসলাম : ০১৯৯০-৩৬৯৯২০ সাইফুর রসূল ফুয়াদ : ০১৮৭৫-৪৬৯০৩৪। ফেনী জেলা-ইমাম হোসাইন : ০১৬৪৪-৮৩৯২৯৪ ইমাম হোসেন আরমান : ০১৮১৪-২৮৬৪৮৮ শফিকুল ইসলাম : ০১৮৬৪-৭১৯১৪৭। খাগড়াছড়ি জেলা-মো. মাইনুদ্দিন : ০১৫১৮-৩২৭৪৯৯ আবদুস সাত্তার : ০১৫১৮-৩৯৬৫১২।
বাঁধ খুলে আকস্মিক বন্যায় গণঅধিকারের বিক্ষোভ: ভারত কর্তৃক বাঁধ খুলে দিয়ে বাংলাদেশে আকস্মিক বন্যা সৃষ্টির প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মার্চ টু ইন্ডিয়ান হাইকমিশন কর্মসূচি পালন করেছে গণঅধিকার পরিষদ। বৃহস্পতিবার রাজধানীর শাহজাদপুরে কনফিডেন্স সেন্টারের সামনে থেকে এই কর্মসূচি শুরু হয়। এসময় আন্দোলনকারীদের হাতে ভারতবিরোধী স্লোগান সম্বলিত নানা প্লে-কার্ড দেখা যায়। সেগুলোতে লেখা রয়েছে- রক্ত দিয়া বানাইছি ঘর দিল্লি দেখায় পানির ডর; ভারতীয় আগ্রাসন রুখে দাও; ফেনী-কুমিল্লা ডুবল কেন, ভারত তুই জবাব দে প্রভৃতি। বিক্ষোভে দলটির নেতারা বলেন, ভারত রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় সীমান্তবর্তী নদীগুলোর বাঁধ খুলে দিয়েছে। এতে বাংলাদেশের ২০টি জেলায় ভয়াবহ বন্যা সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় ১ কোটি মানুষ এ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা এখন ভারতীয় হাইকমিশন যাব। সেখানে জানতে চাইব, ভারতের প্রধানমন্ত্রী কেন আগাম না জানিয়ে বাঁধ খুলে দিয়েছে। তারা বলেন, যে বাঁধগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে সেগুলো আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করতে হবে। বক্তারা আরও বলেন, ভারত খুনি হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে অন্যায় করেছে। তাকে ফিরিয়ে না দিলে বাংলাদেশের সঙ্গে সু-সম্পর্ক সম্ভব নয়। ভারত যদি বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে আর কোনো সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে এর পরিণতি ভয়াবহ হবে। আমরা দেখব ভারত কীভাবে আমাদের সহযোগিতা ছাড়া সেভেন সিস্টারে শান্তি বজায় রাখে।
বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহবান ক্রিকেটারদের: সারাদেশের সব শ্রেণিপেশার মানুষের মতোই বেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ক্রিকেটাররা। বন্যার্তদের পাশে থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন হৃদয়, সোহান, শরিফুলরা। বন্যার পানিতে আটকে পড়া এক শিশুর ছবি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে বেশ চর্চা। যদিও অনেকেই দাবি করেছেন ছবিটি এআই প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি করা। কিছু ক্রিকেটার সেই ছবি নিজেদের ফেসবুকেও শেয়ার করেছেন। সাবেক পেসার রুবেল হোসেন দুটি ছবি শেয়ার করেছেন, যার একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে। অন্য ছবিটি হায়দরাবাদের শ্রীশৈলম জলাধারের। যার সঙ্গে এই বন্যার কোনো সম্পর্ক নেই। সেই ছবি শেয়ার করে রুবেল লেখেন, এত পানি কোথা থেকে এলো, কেনই বা গভীর রাতে সব গেট খুলে দিলো। এই অসহায় গরিব দেশ কি এই প্রশ্নের উত্তর কোনদিনই জানবে না? ইমরুল তার পোস্টে লিখেছেন, পদশের এই অন্তিমসময়ে আরেকবার সবাই মিলে কাজ করলে এই দূর্যোগ মোকাবেলা করা সম্ভব। সবাই মিলে যার যার জায়গা থেকে এগিয়ে আসুন। আল্লাহ সবার সহায় হোক।’ এই টপ অর্ডার ব্যাটারের পোস্ট করা দুটি ছবির একটি ২০২২ সালের বলে নিশ্চিত করেছে ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান ‘রিউমর স্ক্যানার’। সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, দুজন সেনাসদস্য দুই শিশুকে কোলে নিয়ে বন্যার পানি ঠেলে এগোচ্ছেন। জাতীয় দলের টপ অর্ডার ব্যাটার তাওহীদ হৃদয় ফেসবুকে লিখেছেন, ‘কী লিখব? কী লেখা উচিৎ? নিজেকে অসহায় মনে হয় যখন সরাসরি দেশের কোনো দুর্যোগে পাশে থাকতে পারি না। বন্ধুদের পাঠিয়েছি, ওরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করবে। তবে আমার কষ্ট লাগছে যতটুকুই করা হবে তা কি যথেষ্ট? তবু করতে হবে, সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। শুধু এখন না, পানি নেমে যাওয়ার পর পর্যন্ত বন্যার্তদের পাশে থাকতে হবে। নৌকা, ওষুধ, বিশুদ্ধ পানি, শুকনা খাবার যে যেভাবে পারেন। ব্যাপার না। আমরা জন্ম থেকেই সংগ্রাম করতে জানি, এবারও করবো। আল্লাহ এ যাত্রায়ও আমাদের রক্ষা করবেন ইনশাহআল্লাহ। দুর্যোগ ঘটে গেছে, এখন পুরো বাংলাদেশ মিলে তা মোকাবিলা করার সময়। বসে থাকার সুযোগ নেই, সবাই নিজের সাধ্যমতো এগিয়ে আসি। সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা লিখেছেন, আল্লাহ আপনি ভয়াবহ বন্যা থেকে সবাইকে হেফাজত করুন। পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে দুর্দান্ত বোলিং করা পেসার শরিফুল ইসলাম প্রথম দিনের খেলা শেষে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘রাব্বানাকশিফ আন্নাল আযা-বা ইন্না-মু’মিনূন। হে আমাদের রব, আমাদের থেকে আযাব দূর করুন; নিশ্চয় আমরা মুমিন হব। [সূরা আদ-দুখানঃ১২] হে আল্লাহ, বন্যা কবলিত মানুষের প্রতি সহায় হোন,আমিন। বন্যাকবলিত একটি শিশুর ছবি পোস্ট করে উইকেটকিপার ব্যাটার নুরুল হাসান সোহান লিখেছেন, এই ছবি দেখার পর নিজেরে সম্পূর্ণ অসহায় লাগতেছে। আল্লাহ দয়া করে তাদের এই পরিস্থিতিতে সাহায্য করুন।
বন্যা নিয়ে যা বলছেন চিত্র তারকারা: ভয়াবহ বন্যার কবলে দেশ। এই অবস্থায় চলচ্চিত্র তারকারাও উদ্বেগ-উদ্বকণ্ঠা প্রকাশ করে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলছেন, আগে দেশ বাঁচাই। বিশেষ করে ভারি বৃষ্টি ও উজানের পানিতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে দেশের ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন জেলা। এই অবস্থায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তারকারাও। তারা বলছেন, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ বাঁচানোর লড়াইতে সামিল হতে দুদিন ধরেই সোচ্চার নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। দেশবাসীকে বন্যার্তদের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে সবশেষ পোস্টে ফারুকী লিখেছেন,মনে করেন আমরা যুদ্ধে আছি। তাহলে কি করতাম? সবাই মিলে ঝাঁপাইয়া পড়তাম। তাহলে চলেন এখনও তাই করি। নৌ-সেনা-বিমান বাহিনীর ভাই-বোনেরা, লেটস স্টেপ আপ। রেসকিউ বোট-কার্গো বিমান যা কিছু আছে তা নিয়ে দ্রুত উদ্ধারের গতি বাড়াই চলেন। কথা বলে যা জানলাম, মানুষের এই মুহূর্তে প্রয়োজন রেসকিউ বোট। লাখো মানুষ উদ্ধার করা একটা হারকুলিয়ান টাস্ক। বাট লেটস ডু ইট। দূর্গত এলাকার কাছে-দুরে যেখানে যত স্পিডবোট- ইন্জিন নৌকা আছে, সেগুলা নিয়া ঝাঁপাইয়া পড়ি চলেন। কিন্তু লাইফ জ্যাকেট না নিয়ে কেউ যাবেন না দয়া করে। বিপদ আমাদের কেবল একতাবদ্ধই করবে। নো ওয়ান ক্যান ব্রেক আস। বন্যাদুর্গত এলাকার বেশকিছু আশ্রয়কেন্দ্রের হটলাইন নম্বর শেয়ার করেছেন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। সেইসাথে সবাইকে সতর্ক করেছেন অভিনেতা। বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে লিখেছেন, আসুন আমরা সবাই বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়াই। নির্মাতা অমিতাভ রেজা লিখেছেন,নির্লজ্জের মতো এখনই সব দাবী নিয়ে না দাঁড়াই, আগে দেশ বাঁচাই, এরকম বন্যা দেখে নাই বাংলাদেশ। অন্যকে দাঁড়াতে না বলে নিজে দাঁড়ান। প্যানিক করবেন না, বর্তমান সরকারকে সাহায্য করেন। সংগীতশিল্পী আসিফ লিখেছেন, বন্যা অ্যালার্ট। উজানের পানি স্বাগতম, পলি মাটি আমাদের। হাতে হাত রেখে ষড়যন্ত্রের বন্যা মোকাবেলা করবো। ইনশাআল্লাহ। এছাড়াও অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি, নির্মাতা, অভিনেতা খিজির হায়াত, নির্মাতা রায়হান রাফী, অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী, চিত্রনায়িকা বুবলী ও অপু বিশ্বাস, চিত্রনায়ক নিরব, নায়িকা তমা মির্জা, অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণ, ইয়াশ রোহানসহ বহ তারকা বন্যার্তদের উদ্ধারে ক্রমাগত পোস্ট দিচ্ছেন, এবং নিজেদের সামর্থ অনুযায়ী সবাইকে পাশে দাঁড়ানোর আহ্বানও জানাচ্ছেন।