জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এখনো সনাতনী পদ্ধতিতে কর আদায় করে থাকে। টিআইএনধারী সবাই কর দিচ্ছেন না। ফলে আশানুরূপ কর আদায় হচ্ছে না। দেশের জনসংখ্যা ও করদাতার তুলনায় কর আদায় কর্মকর্তাও কম। কর আদায় নেই বিশেষায়িত কোনো প্রতিষ্ঠান। অথচ দেশে ব্যবসার ব্যাপক প্রসার হয়েছে। উপজেলা পর্যায়েও বিজনেস হাব বেড়েছে। বিলাসবহুল গাড়ি, বাড়ি ও ফ্ল্যাটের ক্রেতাও বেড়েছে। দেশের বাইরে টাকা পাচারের অভিযোগও নিয়মিত উঠছে। কিন্তু এদেরকে ধরার সক্ষমতা আয়কর বিভাগের নেই। এমন পরিস্থিতিতে এনবিআর চারটি বিশেষায়িত কর ইউনিট চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে তিনটি ইউনিট আগামী সেপ্টেম্বর থেকে পুরোদমে কাজ শুরু করবে। এজন্য জনবল নিয়োগ চলমান রয়েছে। অফিসও ভাড়া নেয়া হয়েছে। শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি চলছে। এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কোনো কোনো কর অঞ্চলে একজন কর্মকর্তার বিপরীতে ৩০ হাজার রিটার্ন দাখিল হয়। স্বল্প কর্মচারী নিয়ে এত বিপুলসংখ্যাক নথি সামাল দেয়া যায় না। কিন্তু এনবিআর সেবার পরিধি বাড়িয়ে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে চায়। ওই লক্ষ্যে এনবিআর বিশেষায়িত যে চারটি ইউনিট চালু করতে যাচ্ছে সেগুলো হলো ই-ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট ইউনিট, উৎসে কর ব্যবস্থাপনা ইউনিট, কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট (আইটিআই) এবং আন্তর্জাতিক কর ইউনিট। এরমধ্যে আন্তর্জাতিক কর ইউনিটের কাজ শুরু হতে আরো সময় লাগবে। কিন্তু বাকি তিনটি ইউনিট আগামী সেপ্টেম্বর থেকে পুরোদমে কাজ শুরু করবে। রাজধানী ঢাকার কাকরাইলের উৎসে কর ব্যবস্থাপনা ইউনিটের অফিস নেয়া হয়েছে। এই ইউনিটে জনবল থাকবে ৫৫ থেকে ৬০ জন। বর্তমানে বিভিন্ন কর অঞ্চল উৎসে কর আদায় করে থাকে। পর্যায়ক্রমে এ ইউনিট উৎসে কর আদায় করবে। উৎসে কর থেকে আয়কর বিভাগের বৃহৎ একটি অংশ আদায় হয়। যদিও এই ইউনিট উৎসে কর আদায় করবে নাকি সমন্বয় করবে তা এখনো ঠিক হয়নি। সূত্র জানায়, নতুন চালু হতে যাওয়া কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটে জনবল থাকবে ৭২ জন। করদাতার কর ফাঁকি ও আয়কর কর্মকর্তার কারণে হওয়া কর ফাঁকি সবই উদঘাটন করবে কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট। কর ফাঁকি রোধে সামগ্রিক বিষয় নিয়ে কাজ করবে এ ইউনিট। বর্তমানে কর পরিদর্শন পরিদপ্তর কর বিভাগের শৃঙ্খলা নিয়ে কাজ করে। কর বিভাগের দাপ্তরিক নিরীক্ষা করে থাকে। তার মাঝে কর ফাঁকি পেলে সেটাও উদঘাটন করে। আর কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট সরাসরি কর ফাঁকি উদঘাটন করবে। তাদের কাজ হবে গোয়েন্দাভিত্তিক। আয়কর বিভাগ দামি গাড়ি, ফ্ল্যাট ও বাড়ি মালিকদের করের আওতায় আনতে ডাটা ব্যাংক তৈরি করছে। কর ফাঁকি দেয়া ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তাদের তথ্যও ডাটাবেজের আওতায় আনা হচ্ছে। এসব তথ্য নিয়ে কাজ করবে কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট। সূত্র আরো জানায়, করদাতাদের যেন আয়কর অফিসে আসতে না হয়। বাসায় বসে রিটার্ন দাখিল করতে পারেন। প্রাপ্তি স্বীকারপত্রও বাসায় বসে প্রিন্ট করে নিতে পারেন। যেকোনো তথ্য জানতে পারেন। এই ইউনিট সে ব্যবস্থাই নেবে। ই-ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের মাধ্যমে আয়কর ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ডিজিটাল হবে। অটোমেশনের আওতায় চলে আসবে কর ব্যবস্থা। করদাতারা আরামে কর দিতে পারবেন। একটি সিস্টেমে আয়করের সব সেবা দেয়া যাবে। এতে ভোগান্তি বা হয়রানি থাকবে না। ই-ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের ইউনিটের জনবল থাকবে ১৬২ জন। বর্তমানে কর অঞ্চল-১৫ এর অফিসে অস্থায়ী কার্যালয়ে কাজ চলমান। একজন কর কমিশনার এ ইউনিটের প্রধান হবেন। এ ছাড়া একজন অতিরিক্ত কর কমিশনার ও সিস্টেম অ্যানালিস্ট থাকবেন।