সারাদেশে কারাবিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা

চট্টগ্রাম গাজীপুর ও জামালপুরে নিহত ৬ আহত ২০

আপলোড সময় : ১০-০৮-২০২৪ ১২:০৭:৪১ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১০-০৮-২০২৪ ১২:০৭:৪১ অপরাহ্ন
জনতা ডেস্ক
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বিক্ষোভ করেছেন বন্দীরা। কয়েদিদের দমনে পাল্টা ফাঁকা গুলি ছুড়েছেন কারারক্ষীরা। অপরদিকে জামালপুর জেলা কারাগারে বন্দীদের একটি গ্রুপ বিদ্রোহ করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গুলি করেছে সেনাবাহিনী এবং কারা কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় ৬ বন্দী নিহত হয়েছেন। অপরদিকে গাজীপুর জেলা কারাগারের বন্দীরা বিদ্রোহ করেছে। এদিকে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করে জানান, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে কারাবিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়তে পারে পুরো দেশে। চট্টগ্রাম পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর সদস্যরা কারাগারে ঢুকেছেন। কারাগারে বর্তমানে প্রায় পাঁচ হাজার বন্দী রয়েছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে নগরের লালদীঘির পাড়ে অবস্থিত কারাগারে এই ঘটনা ঘটেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা পৌনে দুইটার দিকে কারাগারের ভেতরে বন্দীরা বিক্ষোভ শুরু করলে, পাগলা ঘণ্টা বাজানো হয়। এরপর তারা গোলাগুলির শব্দ শুনতে পান। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন বলেন, কিছু বন্দী উচ্ছৃঙ্খলতার চেষ্টা করে। চট্টগ্রাম কারাগারের ডেপুটি জেলার মো. ইব্রাহিম বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। কারাগারে সেনাবাহিনী ও বিজিবি পৌঁছেছে। একজন বন্দীও পালাতে পারেনি। এ ঘটনা কেন ঘটেছে সেটি আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখছি। উল্লেখ্য, এর আগে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর উৎসুক জনতা চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। তখন কারারক্ষীরা পাল্টা গুলি ছুড়লে উৎসুক জনতা সরে যায়। এসময় ইমন নামে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
অপরদিকে জামালপুর জেলা কারাগারে বন্দিদের একটি গ্রুপ বিদ্রোহ করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গুলি করেছে সেনাবাহিনী এবং কারা কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় ছয় বন্দী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৪ কারারক্ষী। কয়েদিদের আবার সেলে ঢুকানো হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে জেলার আবু ফাতাহ্ কারাগারের বাইরের ফটকে সংবাদ মাধ্যমকে এসব তথ্য জানান। নিহতরা হলেন আরমান, রায়হান, শ্যামল, ফজলে রাব্বি বাবু, জসিম ও রাহাত। তারা সবাই কারাবন্দী। একদিন আগে গত বৃহস্পতিবার পাঁচজন এবং গতকাল শুক্রবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক বন্দী মারা গেছে বলে জানা গেছে। তাদের মরদেহ জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় তিন কারারক্ষী গুরুতর আহত হয়েছে জানিয়ে জেলার আবু ফাতাহ্ বলেন, একজন মুমূর্ষু অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
আবু ফাতাহ্ আরও বলেন, জামালপুর কারাগারের ভেতরে বন্দীদের মধ্যে দুটি গ্রুপ আছে, এদের এক গ্রুপ বিদ্রোহ করে পালিয়ে যেতে চেষ্টা করে। অপর গ্রুপ তাদেরকে বাঁধা দিলে নিজেদের মধ্যে মারামারি শুরু হয়। বিদ্রোহী গ্রুপের সদস্যরা জেলের ভেতরের একটা গেট ভেঙে ফেলে, বিভিন্ন কক্ষে আগুন ধরিয়ে দিয়ে, কারারক্ষীদের জিম্মি করে পালানোর চেষ্টা করে। তিনি বলেন, এ সময় আমাকেও বিদ্রোহী বন্দীরা জিম্মি করে ফেলার চেষ্টা করে।  গত বৃহস্পতিবার দুপুরে এসব ঘটনা ঘটে, পরে দ্রুত সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। ছয় বন্দির নিহতের ঘটনায় তিনি বলেন, দুই গ্রুপে মারামারি হয়েছে। তারপর নিরাপত্তার জন্য গুলি করা হয়েছে। এরা কিভাবে মারা গেছে, ময়নাতদন্ত এবং সুরতহাল প্রতিবেদনে জানা যাবে। এখন অবস্থা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, রাতে কারারক্ষীসহ আমরা ভেতরে গিয়ে পাঁচটি লাশ উদ্ধার করি, এরপর আরেকজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। বন্দীদের জিম্মি দশায় থাকা অবস্থায় তিন কারারক্ষী আহত হলেও বাকিরা অক্ষত আছেন। জেলার আরও বলেন, ময়নাতদন্ত ছাড়া বন্দীদের মৃত্যুর কারণ এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না এবং ময়নাতদন্ত ছাড়া পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তরও সম্ভব নয়। এই কারাগারে ৬৬৯ জন কারাবন্দী ছিল, তবে কোনো রাজনৈতিক বা জঙ্গী আসামি বন্দি নেই। বিদ্রোহের ঘটনায় কয়েদিদের কেউ পালাতে পারেনি।
এদিকে গাজীপুর জেলা কারাগারের বন্দীরা বিদ্রোহ করেছে। গত বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে তারা কারাগারের ভেতর বিদ্রোহ শুরু করে। এসময় কারারক্ষীদের ছোড়া রাবার বুলেটে ১৩ বন্দী ও ৩ কারারক্ষী আহত হয়েছেন। জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে কারাগারের ভেতরের থাকা বন্দীরা আন্দোলন শুরু করে। পরে বন্দীদের পালিয়ে যাওয়া ঠেকাতে কারারক্ষীরা গুলি করতে থাকে। তবে এ বিষয়ে দায়িত্বশীল কোনো সরকারি কর্মকর্তার কাছ থেকে বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। বর্তমানে সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, জয়দেবপুর-ঢাকা সড়কের পাশেই গাজীপুর জেলা কারাগারের অবস্থান। গত কয়েকদিন দেশের বিভিন্ন কারাগারে বন্দীদের বিক্ষোভের খবর পায় গাজীপুর জেলা কারাগারের বন্দিরা।
এদিকে ছাত্র ও রাজনৈতিক মামলার জামিন পাওয়া আসামিদের গত বৃহস্পতিবার মুক্তি দিলে সেখানে থাকা বন্দীরাও মুক্তির দাবিতে গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে রাবার বুলেট ছোড়া হয়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। তবে ভেতরে এখন সেনাবাহিনী এসেছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে কারাগারের ওই সূত্র জানিয়েছেন।
গাজীপুর জেলা কারাগারের চিকিৎসক ডা. মাকসুদা আক্তার বলেন, প্রথমে সব শান্ত ছিল। তারপর যখন বন্দীরা বিদ্রোহ শুরু করলো, তখন রাবার বুলেট ছুড়লে ৫-৬ জন অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। তবে সিরিয়াস কিছু না, প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর জ্ঞান ফিরে এসেছে। অনেকের শরীরে রাবার বুলেটের আঘাত ছিল, এখন ড্রেসিং করে দিয়েছি। এরপর দেখলাম একজনের পর একজন আসতেছে। কারো চোখে আঘাত, কারো মাথায় আঘাত, কারো পায়ে আঘাত। অনেকেই সেলাই করা লাগছে। হয়ত কাউকে সরকারি হাসপাতালে রেফার্ড করা লাগতে পারে। এ পর্যন্ত ১৩ জন বন্দী ও ৩ জন কারারক্ষীসহ ১৬জন আহত হয়েছেন।
 

সম্পাদকীয় :

সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : সৈয়দ এম. আলতাফ হোসাইন।

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক : সৈয়দ মোঃ আতিকুল হাসান।

নির্বাহী সম্পাদক আশীষ কুমার সেন।

ফোন : ৪৯৩৫৭৭৩০ (বার্তা), ৮৩১৫৬৪৯ (বাণিজ্যিক), ফ্যাক্স; ৮৮-০২-৮৩১৪১৭৪

অফিস :

প্রকাশক কর্তৃক রোমাক্স লিমিটেড, তেজগাঁও শিল্প এলাকা থেকে মুদ্রিত।

সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : খলিল ম্যানশন (৩য়, ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলা), ১৪৯/এ, ডিআইটি এক্সটেনশন এভিনিউ, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত।

ই-মেইল : [email protected], ওয়েবসাইট : www.dainikjanata.net