
ঢাকার বাইরের ঘটনা
খুলনায় সংঘর্ষে পুলিশ সদস্য নিহত: খুলনায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে সুমন নামে এক পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। তিনি পুলিশ লাইন্সে কর্মরত ছিলেন। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খুলনার জিরো পয়েন্ট, গল্লামারী মোড় এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের এ সংঘর্ষ হয়।
রাত পৌনে ৯টার দিকে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সংঘর্ষে আমাদের ২০-২৫ জন গুরুতর আহত হয়েছেন এবং পুলিশ লাইন্সের কনস্টেবল মো. সুমন নিহত হয়েছেন। মোজাম্মেল হক বলেন, পুলিশ সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। অথচ আমার এক ভাইকে পিটিয়ে মেরে ফেললো।
হবিগঞ্জে সংঘর্ষে একজন নিহত : হবিগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে গণমিছিলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক। এদের মধ্যে অনেকেই গুলিবিদ্ধ বলে জানা গেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে শিক্ষার্থীরা গণমিছিল বের করলে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম মোস্তাক মিয়া (২৮)। তিনি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) অস্থায়ী কর্মচারী ও সিলেটের টুকেরবাজার এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মোমিন উদ্দিন চৌধুরী বলেন, নিহত ব্যক্তির পরিবারকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তারা আসছেন। তিনি আরও বলেন, নিহত ব্যক্তির ডান দিকের পিঠে এবং ডান হাতে গুলির আঘাত রয়েছে। তবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শামছুল হক বলেন, নিহতের বিষয়টি আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। ইটপাটকেলে আমাদের বেশ কয়েকজন পুলিশ আহত হয়েছেন। তাদের প্রকৃত সংখ্যা আমরা এখনো পাইনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাদ জুমা হবিগঞ্জ শহরের কোর্ট মসজিদ চত্বর ও খোয়াই নদীর তীরে নূরুল হেরা জামে মসজিদের সামনে গণমিছিল কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এসময় সাইফুর রহমান টাউন হলের সামনে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। দুপুর আড়াইটার দিকে নূরুল হেরা জামে মসজিদের সামনে থেকে মিছিল বের হলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে কোর্ট মসজিদের সামনে অবস্থান নেয়া আন্দোলনকারীরা এসে তাদের ধাওয়া দেন। তখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। পরে আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগ কার্যালয় ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সংসদ সদস্য (এমপি) অ্যাডভোকেট আবু জাহিরের বাসার সামনে থাকা কয়েকটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও এমপির বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পরে শহরে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা।
বিকেল সোয়া ৪টার দিকে পুলিশ এসে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে চেষ্টা করে। এসময় রাবার বুলেট ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করা হয়। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বেধে যায়। সংঘর্ষ চলাকালে তিনকোণা পুকুরপাড় এলাকায় মোস্তাক মিয়া গুলিবিদ্ধ হন। তাকে সদর আধুনিক হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
চট্টগ্রামে শিক্ষার্থীদের মিছিল থেকে ছাত্রলীগকে ধাওয়া: চট্টগ্রামে অন্তত ১০ কিলোমিটার সড়কে সাড়ে ৩ ঘণ্টা ধরে মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা নগরের ওয়াসা মোড়ে একটি পুলিশ বক্স ভাঙচুর ও সাঁজোয়া যানে ঢিল ছুড়েন। একই এলাকায় ছাত্রলীগের একটি পক্ষ অবস্থান নিয়েছিল। পরে শিক্ষার্থীদের ধাওয়ায় তারা বাগমনিরাম গলির দিকে আশ্রয় নেন। সবশেষ বিকেল ৫টার দিকে শিক্ষার্থীদের মিছিলটি বহদ্দারহাট মোড়ে অবস্থান নেয়। শিক্ষার্থীদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি দুপুর ২টার দিকে নগরের কোতোয়ালি থানার ঐতিহাসিক আন্দরকিল্লা জামে মসজিদের ফটক থেকে শুরু হয়। কর্মসূচি উপলক্ষে শিক্ষার্থীরা আগে মসজিদে এসে জুমার নামাজ আদায় করে। নামাজে খতিব নির্যাতন-নিপীড়নকারীদের ওপর বদদোয়া করলে শিক্ষার্থীরা উচ্চস্বরে আমিন বলেন। নামাজ শেষেই শিক্ষার্থীরা বের হন। প্রথমে শিক্ষার্থীদের পুলিশ বাধা দেয়ার চেষ্টা করে। তবে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিয়ে মিছিল শুরু করে দেন। প্রথমে মিছিলটি কোতোয়ালি হয়ে নিউমার্কেট মোড়ে অবস্থান নেয়। সেখানে শিক্ষার্থীদের স্লোগানে আশেপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা প্রকম্পিত হয়। এরপর মিছিলটি টাইগারপাস এলাকা দিয়ে ওয়াসা মোড়ে পৌঁছে। সেখান পুলিশ থাকায় উত্তেজনা শুরু হয়। তবে শেষপর্যন্ত সংঘর্ষ হয়নি। পরে পুলিশের সাঁজোয়া যানে ঢিল ছুড়ে শিক্ষার্থীরা। ধাওয়ায় এটি কিছুটা দূরে সরে গেলে শিক্ষার্থীরা ওয়াসা মোড়ে পুলিশ বক্স ভাঙচুর করে। ওইসময় পাশে ছাত্রলীগ অবস্থান করছিল। শিক্ষার্থীরা ধাওয়া দিলে তারা পার্শ্ববর্তী বাগমনিরাম গলির ভেতরে পালিয়ে যান।
সিলেটে শিক্ষার্থী-পুলিশ সংঘর্ষ, টিয়ারশেল-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ: সিলেটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সিলেট নগরীর আখালিয়া এলাকার বিজিবি ক্যাম্প এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এসময় শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে পুলিশকে ফাঁকা গুলি, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়তে দেখা গেছে। ইটপাটকেল ছুড়ছেন ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
বৃষ্টি উপেক্ষা করে মিছিল-স্লোগানে উত্তাল বগুড়া: বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা পদযাত্রা, গণমিছিল ও সমাবেশ করছেন। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর বৃষ্টির মধ্যে শহরের রাস্তায় রাস্তায় শিক্ষার্থীদের ঢল নামে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেন অভিভাবকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। গতকাল শুক্রবার বেলা দুইটা থেকে শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলে-স্লোগানে কার্যত উত্তাল বগুড়া শহর। শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে আছেন। তবে কোথাও বাধা দেয়ার ঘটনা ঘটেনি। শিক্ষার্থীরা সাতমাথায় অবস্থান নেয়া সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, বেলা দুইটার দিকে শহরের স্টেশন সড়কের বায়তুর রহমান জামে মসজিদ থেকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কিছু মুসল্লি গণমিছিল বের করেন। মিছিলটি সাতমাথায় এসে অবস্থান নেয়। অন্যদিকে জলেশ্বরীতলা শহীদ আবদুল জব্বার সড়ক থেকে শিক্ষার্থীদের আরেকটি মিছিল কালিবাড়ী মোড় হয়ে সাতমাথায় এসে অবস্থান নেয়। শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশ জুমার নামাজের পরপরই শহরের করনেশন ইনস্টিটিউশনের সামনে অবস্থান নেয়। সাতমাথা থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বড়গোলা হয়ে করনেশন ইনস্টিটিউশনের সামনে গেলে দুটি অংশ একত্র হয়ে আবার সাতমাথায় ফিরে আসে। শিক্ষার্থীদের মিছিল-স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে সাতমাথা এলাকা। বেলা তিনটার দিকে জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল বাছেদের নেতৃত্বে বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবী ও পেশাজীবীরা মিছিল নিয়ে সাতমাথায় এসে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। বিকেল সাড়ে চারটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সাতমাথা শিক্ষার্থীদের মিছিলে মুখর ছিল। এ সময় ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘শিক্ষার্থীদের বুকে গুলি কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘দিনে নাটক, রাতে আটক’ প্রভৃতি স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলের ফাঁকে ফাঁকে সমাবেশে কয়েকজন শিক্ষার্থী বক্তব্য দেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষার্থীদের গুলি করে, হত্যা করে, গণগ্রেফতার করে কোনো আন্দোলন দমানো যায়নি। রক্তে ভেজা বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের খুনিদের ঠাঁই হবে না। বায়ান্ন, উনসত্তর, একাত্তর ও নব্বইয়ে বুকের রক্ত ঢেলে বিজয়ী হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এবারও শিক্ষার্থীদের রক্ত বৃথা যাবে না। শিক্ষার্থী হত্যাকারী হায়েনাদের শাস্তিসহ ৯ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরে যাবেন না।
লক্ষ্মীপুরে শিক্ষার্থীদের গণমিছিলে ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলা: লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণমিছিলে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের হামলায় আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান এবং এতে প্রায় ১০ জন আহত হয়েছেন। শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সেনাবাহিনী টহল দিচ্ছে। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পরপরই শহরের চকবাজার জামে মসজিদ এলাকায় থেকে তমিজ মার্কেট এলাকায় থমথমে অবস্থা সৃষ্টি হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণমিছিল হওয়ার কথা ছিল বাদ জুমা। কিন্তু সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সালাহ্ উদ্দিন টিপু তার লোকবল এবং যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে নামাজের পরপর চকবাজার মসজিদ এলাকায় অবস্থান নেন। তারা নামাজের পর ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে মুখরিত করে তোলেন মসজিদ এলাকা। এতে আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি করেন সাধারণ মুসল্লিরা। এর কিছুক্ষণ পর টিপু তার অনুসারীদের নিয়ে নিজের বাসভবন তমিজ মার্কেট পিংকু প্লাজার সামনে অবস্থান নেন। কোটাবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা গণমিছিল নিয়ে আদর্শ সামাদ স্কুল এলাকা থেকে শহরের চকবাজার এলাকায় প্রবেশ করে। এসময় শিক্ষার্থীরা ক্ষোভে বিভিন্ন স্লোগান দেন। একপর্যায়ে তারা টিপুর বাসভবনের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। তখন টিপুর বাসা থেকে যুবলীগ-ছাত্রলীগের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী লাঠিসোঁটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের গণমিছিলে হামলা চালিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেন। এসময় এক শিক্ষার্থীকে লাঠি দিয়ে বেদম প্রহার করেন হামলাকারীরা। একই সময় জিহাদুল ইসলাম রবি নামে এক ছাত্রলীগ কর্মীর নাক ফেটে যায়। এতে অন্তত ৭-৯ জন আহত হয়েছেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) হাসান মোস্তফা স্বপন গণমাধ্যমকে বলেন, লক্ষ্মীপুরে সম্পূর্ণ আমাদের নিয়ন্ত্রণে সবাই। লক্ষ্মীপুরকে সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রণে রেখেছি। কেন চুলকানি দিয়ে ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) এবি ছিদ্দিক গণমাধ্যমকে বলেন, লক্ষ্মীপুর শান্ত ছিল। সম্পূর্ণ আমাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। চেয়ারম্যানের উস্কানিতেই ঘটনাটি ঘটেছে। উনি নেতাকর্মীদের নিয়ে এখানে অবস্থান না নিলে ইট মারার পরিস্থিতি হতো না। আমাদের উপস্থিতিতে তারা এখানে অবস্থান নেবে কেন?
যশোরে বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীদের মিছিল: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়নে যশোরে বিক্ষোভ মিছিল বের করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বৃষ্টি মাথায় এ বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন অভিভাবকেরাও। গতকাল শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে যশোর শহরতলীর পালবাড়ি মোড়ে জড়ো হন যশোর বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। এরপর সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল করে পুলিশ লাইন, গরীব শাহ্ সড়ক হয়ে শহরের মধ্যে প্রবেশ করে আন্দোলনকারী কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে জুমার নামাজ শেষে শহরের মণিহার চত্বর থেকে ছাত্র জনতার ব্যানারে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত নেতৃত্বে মিছিল হয়েছে। এ মিছিল থেকে শান্তিপূর্ণ ছাত্র আন্দোলনে নির্মম হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে দেশব্যাপী বিএনপি নেতাকর্মীর নামে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার এবং আটক নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি জানানো হয়। এদিকে বেলা সাড়ে ৩টা থেকে যশোরে মূষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। তবে এ বৃষ্টিতেও বন্ধ হয়নি শিক্ষার্থীদের রাজপথের আন্দোলন। বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে ‘এ্যাকশন এ্যাকশন, ডাইরেক্ট এ্যাকশন, আমার ভাইয়ের রক্ত, বিথা যেতে দেব না, লেগেছেরে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে, রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে শহরের মধ্যে প্রবেশ করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলটি। এদিকে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শুক্রবার সকাল থেকে যশোরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশের টহল ও কড়া নজরদারি চোখে পড়ে। এমনকি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলকে ঘিরে নিরাপত্তা দিতে পুলিশ একাধিক টিমকে গাড়িযোগে টহল দিতে দেখা গেছে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক শিক্ষার্থীদের অবরোধ: কোটা বিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, নির্যাতন ও হত্যার প্রতিবাদসহ ৯ দফা দাবি বাস্তবায়নে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক অবরোধ করে গণমিছিল কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার জুমআ’র নামাজের পর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে টাঙ্গাইল পৌর শহরের সাবালিয়া থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সমানে এসে সমাবেশ করে। পরে তারা বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের শহর বাইপাস নগর জালফৈ এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। এসময় শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ‘ভুয়া ভুয়া’ সেøাগান দেয়। এতে পুলিশ নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নেয়। পরে শিক্ষার্থীরা ঘণ্টাব্যাপী মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। ফলে মহাসড়কের উভয় পাশে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, ভোগান্তিতে পড়ে চালক ও যাত্রীরা। বিকেল ৪টার দিকে শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি শেষ করে মহাসড়ক ছেড়ে চলে যান। পরে উভয় পাশে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।
খুলনায় সংঘর্ষে পুলিশ সদস্য নিহত: খুলনায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে সুমন নামে এক পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। তিনি পুলিশ লাইন্সে কর্মরত ছিলেন। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খুলনার জিরো পয়েন্ট, গল্লামারী মোড় এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের এ সংঘর্ষ হয়।
রাত পৌনে ৯টার দিকে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সংঘর্ষে আমাদের ২০-২৫ জন গুরুতর আহত হয়েছেন এবং পুলিশ লাইন্সের কনস্টেবল মো. সুমন নিহত হয়েছেন। মোজাম্মেল হক বলেন, পুলিশ সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। অথচ আমার এক ভাইকে পিটিয়ে মেরে ফেললো।
হবিগঞ্জে সংঘর্ষে একজন নিহত : হবিগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে গণমিছিলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক। এদের মধ্যে অনেকেই গুলিবিদ্ধ বলে জানা গেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে শিক্ষার্থীরা গণমিছিল বের করলে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম মোস্তাক মিয়া (২৮)। তিনি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) অস্থায়ী কর্মচারী ও সিলেটের টুকেরবাজার এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মোমিন উদ্দিন চৌধুরী বলেন, নিহত ব্যক্তির পরিবারকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তারা আসছেন। তিনি আরও বলেন, নিহত ব্যক্তির ডান দিকের পিঠে এবং ডান হাতে গুলির আঘাত রয়েছে। তবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শামছুল হক বলেন, নিহতের বিষয়টি আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। ইটপাটকেলে আমাদের বেশ কয়েকজন পুলিশ আহত হয়েছেন। তাদের প্রকৃত সংখ্যা আমরা এখনো পাইনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাদ জুমা হবিগঞ্জ শহরের কোর্ট মসজিদ চত্বর ও খোয়াই নদীর তীরে নূরুল হেরা জামে মসজিদের সামনে গণমিছিল কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এসময় সাইফুর রহমান টাউন হলের সামনে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। দুপুর আড়াইটার দিকে নূরুল হেরা জামে মসজিদের সামনে থেকে মিছিল বের হলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে কোর্ট মসজিদের সামনে অবস্থান নেয়া আন্দোলনকারীরা এসে তাদের ধাওয়া দেন। তখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। পরে আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগ কার্যালয় ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সংসদ সদস্য (এমপি) অ্যাডভোকেট আবু জাহিরের বাসার সামনে থাকা কয়েকটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও এমপির বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পরে শহরে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা।
বিকেল সোয়া ৪টার দিকে পুলিশ এসে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে চেষ্টা করে। এসময় রাবার বুলেট ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করা হয়। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বেধে যায়। সংঘর্ষ চলাকালে তিনকোণা পুকুরপাড় এলাকায় মোস্তাক মিয়া গুলিবিদ্ধ হন। তাকে সদর আধুনিক হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
চট্টগ্রামে শিক্ষার্থীদের মিছিল থেকে ছাত্রলীগকে ধাওয়া: চট্টগ্রামে অন্তত ১০ কিলোমিটার সড়কে সাড়ে ৩ ঘণ্টা ধরে মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা নগরের ওয়াসা মোড়ে একটি পুলিশ বক্স ভাঙচুর ও সাঁজোয়া যানে ঢিল ছুড়েন। একই এলাকায় ছাত্রলীগের একটি পক্ষ অবস্থান নিয়েছিল। পরে শিক্ষার্থীদের ধাওয়ায় তারা বাগমনিরাম গলির দিকে আশ্রয় নেন। সবশেষ বিকেল ৫টার দিকে শিক্ষার্থীদের মিছিলটি বহদ্দারহাট মোড়ে অবস্থান নেয়। শিক্ষার্থীদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি দুপুর ২টার দিকে নগরের কোতোয়ালি থানার ঐতিহাসিক আন্দরকিল্লা জামে মসজিদের ফটক থেকে শুরু হয়। কর্মসূচি উপলক্ষে শিক্ষার্থীরা আগে মসজিদে এসে জুমার নামাজ আদায় করে। নামাজে খতিব নির্যাতন-নিপীড়নকারীদের ওপর বদদোয়া করলে শিক্ষার্থীরা উচ্চস্বরে আমিন বলেন। নামাজ শেষেই শিক্ষার্থীরা বের হন। প্রথমে শিক্ষার্থীদের পুলিশ বাধা দেয়ার চেষ্টা করে। তবে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিয়ে মিছিল শুরু করে দেন। প্রথমে মিছিলটি কোতোয়ালি হয়ে নিউমার্কেট মোড়ে অবস্থান নেয়। সেখানে শিক্ষার্থীদের স্লোগানে আশেপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা প্রকম্পিত হয়। এরপর মিছিলটি টাইগারপাস এলাকা দিয়ে ওয়াসা মোড়ে পৌঁছে। সেখান পুলিশ থাকায় উত্তেজনা শুরু হয়। তবে শেষপর্যন্ত সংঘর্ষ হয়নি। পরে পুলিশের সাঁজোয়া যানে ঢিল ছুড়ে শিক্ষার্থীরা। ধাওয়ায় এটি কিছুটা দূরে সরে গেলে শিক্ষার্থীরা ওয়াসা মোড়ে পুলিশ বক্স ভাঙচুর করে। ওইসময় পাশে ছাত্রলীগ অবস্থান করছিল। শিক্ষার্থীরা ধাওয়া দিলে তারা পার্শ্ববর্তী বাগমনিরাম গলির ভেতরে পালিয়ে যান।
সিলেটে শিক্ষার্থী-পুলিশ সংঘর্ষ, টিয়ারশেল-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ: সিলেটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সিলেট নগরীর আখালিয়া এলাকার বিজিবি ক্যাম্প এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এসময় শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে পুলিশকে ফাঁকা গুলি, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়তে দেখা গেছে। ইটপাটকেল ছুড়ছেন ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
বৃষ্টি উপেক্ষা করে মিছিল-স্লোগানে উত্তাল বগুড়া: বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা পদযাত্রা, গণমিছিল ও সমাবেশ করছেন। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর বৃষ্টির মধ্যে শহরের রাস্তায় রাস্তায় শিক্ষার্থীদের ঢল নামে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেন অভিভাবকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। গতকাল শুক্রবার বেলা দুইটা থেকে শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলে-স্লোগানে কার্যত উত্তাল বগুড়া শহর। শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে আছেন। তবে কোথাও বাধা দেয়ার ঘটনা ঘটেনি। শিক্ষার্থীরা সাতমাথায় অবস্থান নেয়া সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, বেলা দুইটার দিকে শহরের স্টেশন সড়কের বায়তুর রহমান জামে মসজিদ থেকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কিছু মুসল্লি গণমিছিল বের করেন। মিছিলটি সাতমাথায় এসে অবস্থান নেয়। অন্যদিকে জলেশ্বরীতলা শহীদ আবদুল জব্বার সড়ক থেকে শিক্ষার্থীদের আরেকটি মিছিল কালিবাড়ী মোড় হয়ে সাতমাথায় এসে অবস্থান নেয়। শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশ জুমার নামাজের পরপরই শহরের করনেশন ইনস্টিটিউশনের সামনে অবস্থান নেয়। সাতমাথা থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বড়গোলা হয়ে করনেশন ইনস্টিটিউশনের সামনে গেলে দুটি অংশ একত্র হয়ে আবার সাতমাথায় ফিরে আসে। শিক্ষার্থীদের মিছিল-স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে সাতমাথা এলাকা। বেলা তিনটার দিকে জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল বাছেদের নেতৃত্বে বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবী ও পেশাজীবীরা মিছিল নিয়ে সাতমাথায় এসে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। বিকেল সাড়ে চারটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সাতমাথা শিক্ষার্থীদের মিছিলে মুখর ছিল। এ সময় ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘শিক্ষার্থীদের বুকে গুলি কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘দিনে নাটক, রাতে আটক’ প্রভৃতি স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলের ফাঁকে ফাঁকে সমাবেশে কয়েকজন শিক্ষার্থী বক্তব্য দেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষার্থীদের গুলি করে, হত্যা করে, গণগ্রেফতার করে কোনো আন্দোলন দমানো যায়নি। রক্তে ভেজা বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের খুনিদের ঠাঁই হবে না। বায়ান্ন, উনসত্তর, একাত্তর ও নব্বইয়ে বুকের রক্ত ঢেলে বিজয়ী হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এবারও শিক্ষার্থীদের রক্ত বৃথা যাবে না। শিক্ষার্থী হত্যাকারী হায়েনাদের শাস্তিসহ ৯ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরে যাবেন না।
লক্ষ্মীপুরে শিক্ষার্থীদের গণমিছিলে ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলা: লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণমিছিলে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের হামলায় আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান এবং এতে প্রায় ১০ জন আহত হয়েছেন। শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সেনাবাহিনী টহল দিচ্ছে। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পরপরই শহরের চকবাজার জামে মসজিদ এলাকায় থেকে তমিজ মার্কেট এলাকায় থমথমে অবস্থা সৃষ্টি হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণমিছিল হওয়ার কথা ছিল বাদ জুমা। কিন্তু সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সালাহ্ উদ্দিন টিপু তার লোকবল এবং যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে নামাজের পরপর চকবাজার মসজিদ এলাকায় অবস্থান নেন। তারা নামাজের পর ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে মুখরিত করে তোলেন মসজিদ এলাকা। এতে আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি করেন সাধারণ মুসল্লিরা। এর কিছুক্ষণ পর টিপু তার অনুসারীদের নিয়ে নিজের বাসভবন তমিজ মার্কেট পিংকু প্লাজার সামনে অবস্থান নেন। কোটাবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা গণমিছিল নিয়ে আদর্শ সামাদ স্কুল এলাকা থেকে শহরের চকবাজার এলাকায় প্রবেশ করে। এসময় শিক্ষার্থীরা ক্ষোভে বিভিন্ন স্লোগান দেন। একপর্যায়ে তারা টিপুর বাসভবনের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। তখন টিপুর বাসা থেকে যুবলীগ-ছাত্রলীগের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী লাঠিসোঁটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের গণমিছিলে হামলা চালিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেন। এসময় এক শিক্ষার্থীকে লাঠি দিয়ে বেদম প্রহার করেন হামলাকারীরা। একই সময় জিহাদুল ইসলাম রবি নামে এক ছাত্রলীগ কর্মীর নাক ফেটে যায়। এতে অন্তত ৭-৯ জন আহত হয়েছেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) হাসান মোস্তফা স্বপন গণমাধ্যমকে বলেন, লক্ষ্মীপুরে সম্পূর্ণ আমাদের নিয়ন্ত্রণে সবাই। লক্ষ্মীপুরকে সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রণে রেখেছি। কেন চুলকানি দিয়ে ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) এবি ছিদ্দিক গণমাধ্যমকে বলেন, লক্ষ্মীপুর শান্ত ছিল। সম্পূর্ণ আমাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। চেয়ারম্যানের উস্কানিতেই ঘটনাটি ঘটেছে। উনি নেতাকর্মীদের নিয়ে এখানে অবস্থান না নিলে ইট মারার পরিস্থিতি হতো না। আমাদের উপস্থিতিতে তারা এখানে অবস্থান নেবে কেন?
যশোরে বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীদের মিছিল: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়নে যশোরে বিক্ষোভ মিছিল বের করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বৃষ্টি মাথায় এ বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন অভিভাবকেরাও। গতকাল শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে যশোর শহরতলীর পালবাড়ি মোড়ে জড়ো হন যশোর বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। এরপর সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল করে পুলিশ লাইন, গরীব শাহ্ সড়ক হয়ে শহরের মধ্যে প্রবেশ করে আন্দোলনকারী কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে জুমার নামাজ শেষে শহরের মণিহার চত্বর থেকে ছাত্র জনতার ব্যানারে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত নেতৃত্বে মিছিল হয়েছে। এ মিছিল থেকে শান্তিপূর্ণ ছাত্র আন্দোলনে নির্মম হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে দেশব্যাপী বিএনপি নেতাকর্মীর নামে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার এবং আটক নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি জানানো হয়। এদিকে বেলা সাড়ে ৩টা থেকে যশোরে মূষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। তবে এ বৃষ্টিতেও বন্ধ হয়নি শিক্ষার্থীদের রাজপথের আন্দোলন। বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে ‘এ্যাকশন এ্যাকশন, ডাইরেক্ট এ্যাকশন, আমার ভাইয়ের রক্ত, বিথা যেতে দেব না, লেগেছেরে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে, রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে শহরের মধ্যে প্রবেশ করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলটি। এদিকে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শুক্রবার সকাল থেকে যশোরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশের টহল ও কড়া নজরদারি চোখে পড়ে। এমনকি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলকে ঘিরে নিরাপত্তা দিতে পুলিশ একাধিক টিমকে গাড়িযোগে টহল দিতে দেখা গেছে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক শিক্ষার্থীদের অবরোধ: কোটা বিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, নির্যাতন ও হত্যার প্রতিবাদসহ ৯ দফা দাবি বাস্তবায়নে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক অবরোধ করে গণমিছিল কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার জুমআ’র নামাজের পর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে টাঙ্গাইল পৌর শহরের সাবালিয়া থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সমানে এসে সমাবেশ করে। পরে তারা বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের শহর বাইপাস নগর জালফৈ এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। এসময় শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ‘ভুয়া ভুয়া’ সেøাগান দেয়। এতে পুলিশ নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নেয়। পরে শিক্ষার্থীরা ঘণ্টাব্যাপী মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। ফলে মহাসড়কের উভয় পাশে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, ভোগান্তিতে পড়ে চালক ও যাত্রীরা। বিকেল ৪টার দিকে শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি শেষ করে মহাসড়ক ছেড়ে চলে যান। পরে উভয় পাশে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।