ভর্তুকি কমাতে সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশসহ সরকারের প্রাধিকারভুক্ত ১০ প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের রেশনের চাল ও গমের মূল্য বাড়ানো হয়েছে। এতে প্রতি কেজি চালের মূল্য ১.৫০ থেকে বাড়িয়ে ১১.২৮ টাকা এবং গম ১.২০ থেকে ৯.২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ৩০ জুন গম ও চালের বিক্রয় মূল্য পুননির্ধারণ সংক্রান্ত চিঠি মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ সুরক্ষা সেবা বিভাগ, খাদ্য, জননিরাপত্তা বিভাগ, প্রতিরক্ষা ও দুর্নীতি দমন কমিশন সচিবকে দেয়া হয়েছে। মূলতআইএমএফ-এর শর্ত পূরণে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ১ জুলাই থেকে আগামী ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এ মূল্য কার্যকর থাকবে। নতুন মূল্য কার্যকরের ফলে সরকারের পৌনে দুইশ কোটি টাকার বেশি ভর্তুকি ব্যয় সাশ্রয় হবে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে খাদ্য ভর্তুকি বাবদ ৭৩৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অর্থ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ৩৩ বছর পর রেশনের চাল ও গমের বিক্রয় মূল্য বাড়ছে। সর্বশেষ ১৯৯১ সালে সরকার এসব পণ্যের দাম নির্ধারণ করেছিল। এর আগে প্রায়ত সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় থাকাকালে ১৯৮২-৮৩ সালে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের জন্য প্রথমবার রেশন সুবিধা চালু করা হয়। পরে বিভিন্ন সময় অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের জনবলকে এ সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। সূত্র জানায়, সরকারের প্রাধিকারভুক্ত ১০টি প্রতিষ্ঠানের রেশনের চাল ও গমের বিক্রয় মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে অর্থ বিভাগ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছ সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়। সেখানে প্রতি কেজি চাল ও গমের তিন ধরনের মূল্য নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়। ওই প্রেক্ষিতে চাল ও গমের ‘অর্থনৈতিক’ মূল্যের ২০ শতাংশ নির্ধারণের যে প্রস্তাব করা হয়, তার অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এখানে ‘অর্থনৈতিক’ মূল্য হচ্ছে সরকারের চাল ও গম আমদানি বা ক্রয় মূল্য, পরিবহণসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক মিলে মোট ব্যয়। প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাব অনুমোদনের পর অর্থ বিভাগ হিসাব করে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য চাল ও গমের অর্থনৈতিক মূল্য বের করেছে। ওই হিসাবে এক মেট্রিক টন চালের মূল্য ৫৬৩৮১.৯৫ টাকা এবং গমের ৪৬১১৯.৪৭৭ টাকা দাঁড়ায়। এ মূল্যের ২০ শতাংশ দেবেন রেশন গ্রহীতারা এবং ৮০ শতাংশ ভর্তুকি হিসাবে দেবে সরকার। সে অনুযায়ী রেশনের এক কেজি চালের অর্থনৈতিক মূল্য দাঁড়ায় ১১.২৮ টাকা এবং গম ৯.২০ টাকা। সূত্র আরো জানায়, প্রায় ৩০ বছর আগে সরকার যে মূল্যে চাল ও গম ক্রয় করতো, সে তুলনায় বর্তমানে অনেক মূল্যে কিনতে হচ্ছে। এতে সরকারের ভর্তুকি অনেক বেড়ে যাচ্ছে। আর ভর্তুকি কমাতে আইএমএফ-এর চাপ আছে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক বাস্তবতার নিরিখেও ভর্তুকি কমিয়ে আনা দরকার। আর সেটি বাস্তবায়ন করতে গেলে যেসব খাতে ভর্তুকি আছে, সেখানে হাত দিতে হচ্ছে। রেশনের চাল ও গমের মূল্য নির্ধারণে আরো একটি পরিবর্তন আনা হয়েছে। সেটি হচ্ছে ১৯৯১ সালে সরকার সর্বশেষ রেশন পণ্যের দাম নির্ধারণকালে বলা ছিল ফিক্সড অর্থাৎ নির্ধারিত মূল্য চালের কেজি ১.৫০ টাকা এবং গম ১.২০ টাকা। এখন থেকে রেশনের চাল ও গমের বিক্রয়মূল্য হবে সংশ্লিষ্ট অর্থবছরের চাল ও গমের নির্ধারিত অর্থনৈতিক মূল্যের ২০ শতাংশ। এজন্য অর্থ বিভাগ থেকে প্রতি অর্থবছরের শুরুতে চাল ও গমের অর্থনৈতিক মূল্য বের করে প্রতিষ্ঠানগুলোকে জানানো হবে। সেক্ষেত্রে প্রতিবছর মূল্য নির্ধারিত না থেকে ওঠানামা করবে। রেশনে বিতরণ করা হয় চাল, গম, চিনি, মসুর ডাল ও সয়াবিন তেল। বর্তমানে সরকারের ১০টি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রেশন সুবিধা পাচ্ছেন। এ প্রতিষ্ঠানগুলো হলো সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ (সেনা, নৌ ও বিমান), স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদপ্তর (এনএসআই), বাংলাদেশ পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা অধিদপ্তর, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), কারা অধিদপ্তর, বেসরকারি প্রতিরক্ষা, অগ্নিনির্বাপণ অধিদপ্তর ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এসব প্রতিষ্ঠানকে ‘বিশেষ জরুরি হিসাবে প্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে প্রাধিকারপ্রাপ্ত ১০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনবল আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা অধিদপ্তরের আওতায়। ২০২৪ সালের জানুয়ারির তথ্যানুযায়ী দেশে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য ৫ লাখ ১৭ হাজারেরও বেশি। সংস্থাভেদে চার সদস্যের একটি পরিবার প্রতিমাসে ৩৫ কেজি চাল ও ৩০ কেজি করে আটা পেয়ে থাকে। এ ছাড়া ৫ কেজি চিনি, ৮ কেজি মসুর ডাল এবং ৮ লিটার সয়াবিন তেল পায়। সরকার দেশের ভেতর থেকে বাজারমূল্যে কিনে কিংবা বিদেশ থেকে আমদানি করে এসব পণ্য রেশন হিসাবে বিতরণ করে। তবে বৈশ্বিক সংকট ও ডলারের উচ্চমূল্যের কারণে বিশ্ববাজারে চাল ও গমের দাম বেড়েছে। যে কারণে এসব খাতে সরকারের ব্যয়ও আগের তুলনায় বেশি হচ্ছে। এসব কারণে গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে বিদেশ থেকে সরকারের চাল ও গম আমদানিতে বাড়তি ব্যয় হবে ১৫৯১ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে বিদেশ থেকে সাড়ে ১০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য আমদানির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৭ লাখ টন গম এবং ৩ লাখ ৫০ হাজার টন চাল। এতে মোট আমদানি ব্যয় হবে ৫৮০৬ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরে ছিল ৪২১৫ কোটি টাকা।