নাশকতাকারীরা চিহ্নিত না হওয়া পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চলবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রংপুর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা বাংলাদেশের মানুষ বিস্মিত হয়েছি, হতবাক হয়েছি। আমরা কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়েছিলাম যে, বাঙালি এই কাজ (ধ্বংসযজ্ঞ) কীভাবে করতে পারে! পরবর্তীতে মনে হয়েছে যে, এই বাঙালিইতো সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালিকে হত্যা করেছে। এই বাঙালিরাই আমাদের অনেক নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। এই ঘটনাটাই আমাদের সবকিছু মনে করিয়ে দেয়। তবে নাশকতাকারী যেই হোক না কেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত নাশকতাকারীরা চিহ্নিত হবে না, ততক্ষণ আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান অব্যাহত থাকবে। একটি গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে তাণ্ডব চালিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে দেয়নি। আমাদের সজাগ থাকতে হবে। আমরা বীরের জাতি। একাত্তরে অস্ত্র ছাড়াই ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। সভার শুরুতে সহিংসতায় রংপুরে ক্ষয়ক্ষতি ও সার্বিক পরিস্থিতি মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে তুলে ধরেন জেলা প্রশাসক মোবাশ্বের হাসান। এতে রংপুরে মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পৌনে ১১ কোটি টাকা দেখানো হয়। এ ছাড়া নাশকতায় জড়িত থাকার অভিযোগে এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ১৮২ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে জানানো হয়। দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল রংপুরের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা ফেল করায় তারা এসব করতে সাহস পেয়েছে এবং করেছে। ঘুরে দাঁড়ালেই আর এসব করতে পারত না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমার কষ্ট হয়, আপনাদের পার্টি অফিস যখন ভাঙচুর করল, তখন আপনারা নাই। অথচ পার্টি অফিস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ভিডিওতে দেখা গেল মাত্র কয়েকজন এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে, আওয়ামী লীগকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। কেননা আমরা বীরের জাতি, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে খালি হাতে আমরা শুধু জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছি। মন্ত্রী আরও বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে পুঁজি করে একটি গোষ্ঠী নাশকতা করছে। তবে এ নাশকতার সঙ্গে জড়িত কেউই রেহাই পাবে না। তাদের খুঁজে বের করা হবে এবং আইনের আওতায় বিচার করা হবে। যারা অর্থায়ন করেছে, তাদের চিহ্নিত করা হবে। বিচারের ব্যবস্থা করা হবে। মতবিনিময় সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য নাছিমা জামান ববি, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান। এসময় উপস্থিত ছিলেন পুলিশের আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, রংপুর বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার হাবিবুর রহমান, রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি মো. আবদুল বাতেন, আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, সংসদ সদস্য জাকির হোসেন, আসাদুজ্জামান বাবলুসহ অনেকে। এর আগে রংপুরে ক্ষতিগ্রস্ত তাজহাট থানা, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবন, উপ-পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয় পরিদর্শন করেন মন্ত্রী। বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনের সময় ট্রেজারার মজিব উদ্দিন আহমদ, প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, শিক্ষক সমিতির সভাপতি বিজন মোহন চাকি, সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মণ্ডল আসাদ, বহিরাঙ্গন পরিচালক সাব্বীর আহমেদ চৌধুরী, হল প্রভোস্ট, সহকারী প্রক্টর ও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, রংপুর জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময়ের আগে গত ১৬ জুলাই থেকে পরবর্তী কয়েকদিন রংপুরে যে সহিংসতা ঘটে তার একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়।