
উন্নয়ন আর চমকের ধারাবাহিকতায় টানা চার মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। তবে সরকারে চমক আর সফলতা দেখাতে পারলেও দলের বিশৃঙ্খলা আর নৈরাজ্যে খুনোখুনি সামাল দিতে পারছে না সরকারি দলটি। একইসঙ্গে বিএনপি-জামায়াতসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান এবং অনুপ্রবেশ ঠেকাতে পারেনি। ওইসব বিতর্কিত টাকা ওয়ালারা নানাভাবে যোগদানের পরই নিজ নিজ এলাকায় আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের হয়রানি এবং মামলা দিয়ে কোণঠাসা করতে শুরু করে। এতে দিন দিন নিজ দলে কোণঠাসা হয়ে ক্ষোভ আর অভিমানে রাজনীতি থেকে সরে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের এসব ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মী। সেই সুযোগে মাঠদখলে নিচ্ছেন কথিত টাকাওয়ালা-বির্তকিত ও জনপ্রিয়রা।
সূত্রে জানা গেছে, ৯০ দশকের আগেও গ্রামের জনপ্রিয় শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবীরা আসতেন রাজনীতিতে। পরিচ্ছন্ন, সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিরাই নাম লেখাতেন এখানে। তাদের দৃঢ় নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যেত, সাধারণ মানুষ পেত সমস্যার সমাধান। এখন সময় পাল্টেছে। রাজনীতি চলে গেছে টাকাওয়ালাদের হাতে। টাকার মাপকাঠিতে মনোনীত হচ্ছে নেতৃত্ব, টাকার জোরে পাকাপোক্ত হচ্ছে সিংহাসন। যোগ্যতা, নীতিনৈতিকতা ও আদর্শের স্থলে জায়গা পেয়েছে আনুগত্য। ফলে তৃণমূলের ত্যাগী ও জনপ্রিয় নেতারা রাজনীতির মাঠ থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। সেই সুযোগে মাঠ দখলে নিচ্ছেন কথিত টাকাওয়ালা জনপ্রিয়রা। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের মানুষ এখন দেয়া-নেয়ায় বিশ্বাসী। কিছু পেতে হলে কিছু দিতেই হবে। সাধারণের যেমন টাকার প্রয়োজন, তেমনি যার টাকা আছে তার প্রয়োজন ক্ষমতা। দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাতে গিয়ে আমরা নিজেরাই অনেক কিছুর পরিবর্তন ঘটিয়েছি। সেই সঙ্গে পরিবর্তন হয়েছে আমাদের মূল্যবোধের। টাকাওয়ালারা এখন সমাজব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করছে। সেই প্রভাব পড়েছে রাজনীতিতে। আগে জনপ্রিয়তা ছিল যোগ্যতা ও মূল্যবোধের ওপর, এখন সেটি স্থান করে নিয়েছে টাকার ওপর। ফলে নির্লোভ, ত্যাগী, দেশপ্রেমী ও সৎ মানুষেরা রাজনীতির মাঠ থেকে হারিয়ে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, যাদের কাছে প্রচুর টাকা আছে তারাই এখন জনপ্রিয়। তারা ক্ষমতা দেখাতে পারে। কারণ, তারা অনেক দান-সদকা করে, মসজিদ-মাদ্রাসা বানিয়ে দেয়, সেখানে এয়ারকন্ডিশন লাগিয়ে দেয়, মানুষকে দিয়ে ওমরা করায়। এসব কারণে অর্থবিত্তের মালিকরাই জনপ্রিয়। আগে নেতৃত্বে আসতেন সমাজের সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিরা। সেক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবীদের প্রাধান্য দেয়া হতো। এখন সেই সংস্কৃতির পরিবর্তন হয়েছে। বিপুল অর্থবিত্ত না থাকায় তাদের জনপ্রিয়তাও নেই। এখানে আমাদের মূল্যবোধের পরিবর্তন হয়েছে। বিপুল অর্থবিত্তের মালিক যিনি, তাকেই এখন আমরা সম্মান করি। শুধু রাজনীতি নয়, সবক্ষেত্রে এ মূল্যবোধের পরিবর্তন হয়েছে। পুরো জাতির মূল্যবোধেই পরিবর্তন হয়েছে। যার দাপট আছে, টাকা আছে; যিনি বেশি বেশি দান-খয়রাত করতে পারেন, তিনিই দানবীর; তার জনপ্রিয়তাও বেশি। অন্য কেউ তাদের সামনে দাঁড়াতেই পারেন না। শুধু ব্যবসায়ী বা অর্থবিত্তের মালিক নন, পরিবারতন্ত্রের ধারাবাহিকতায় নেতার সন্তানরাও আসছেন রাজনীতিতে। তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, নেতাদের ছেলে-মেয়ে হিসেবে কাউকে পদ দেওয়া যায় কিন্তু নেতা বানানো যায় না। নেতা হতে হলে তাদেরও (নেতার সন্তান) রাজনৈতিক যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয়। বর্তমান সমাজে যারা জনপ্রিয় তারা কিন্তু টাকাওয়ালা। এটি অস্বীকার করার উপায় নেই। শুধু যে তারাই রাজনীতিতে আসছেন, এটিও সঠিক নয়।
এ বিষয়ে কথা হয় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন এর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা অতীতে দেখেছি ত্যাগী, নির্লোভ, দেশপ্রেমী, তুলনামূলক সৎ ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিরাই নেতৃত্বে আসতেন। সেক্ষেত্রে আস্থা রাখা হতো শিক্ষক, আইনজীবী ও চিকিৎসকদের ওপর। মানুষ তাদের শ্রদ্ধা করতেন। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর এ ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়ে যায়। তারা সেই সময় অর্থবিত্তের প্রভাব আছে এমন ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেয়। তাদের নেতৃত্বে রাজনীতিও ভিন্ন পথে হাঁটতে শুরু করে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের একজন উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখন যারা রাজনীতি করবেন, তাদের প্রচুর টাকা থাকতে হবে। নতুন যারা আসবেন, তাদেরও টাকা লাগবে। নির্বাচন করতেও এখন প্রচুর টাকা লাগে। আগে কর্মীরা স্বেচ্ছায় দলের পক্ষে, প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতেন। এখন টাকা ছাড়া কোনো কথা নেই। দল থেকে প্রার্থীরা কিছু পাননি বা প্রার্থীদের কাছ থেকে কর্মীরাও কিছু খাননি এমন নজির আপনি দেখাতে পারবেন না। নির্বাচন আসলে গ্রাম কিংবা শহরে এমন তৎপরতা চোখে পড়ে। ফলে যাদের টাকা আছে তারাই নির্বাচন করেন। আর নির্বাচনে যে ব্যয় সেটি তুলতে নিয়োগ-বাণিজ্য, বালু বা জলমহাল দখল, ঠিকাদারি বা টেন্ডারবাজি— এমন কোনো হীন কাজ নেই, যা তিনি করেন না। শুধু নির্বাচনের ব্যয় নয়, সুদ-আসলে কয়েক গুণ টাকা হাতিয়ে নেন যাতে পরবর্তী নির্বাচনে ব্যয় করতে পারেন।
তবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, তৃণমূলের জনপ্রিয়রা মূল্যায়িত হচ্ছেন না, আমি এটি মনে করি না। স্থানীয় রাজনীতিতে জনপ্রিয়দের নেয়া হচ্ছে, তারা নেতৃত্বে আসছেন। রাজনীতিতে জনপ্রিয়তা, দক্ষতা, গ্রহণযোগ্যতা, ত্যাগ-তিতিক্ষা, সৎ-সাহস, নীতি-নৈতিকতা— এগুলো গুরুত্বপূর্ণ। এসব দেখেই পদ-পদবি দেয়া হয়। এ কারণে আওয়ামী লীগ এখনও তার জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পেরেছে। দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এবং এর নেতাকর্মীরা জনপ্রিয়। দলীয় সভাপতি ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা জনপ্রিয়তার সুউচ্চ স্থানে অবস্থান করছেন। এটি দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে গৌরবান্বিত করেছে।
ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের মূল্যায়নের নির্দেশ: ‘মাইম্যান’ কিংবা কারোর প্রভাবিত কমিটি নয়; দলের ত্যাগী, দুর্দিনের পরীক্ষিত ও নিবেদিত নেতাদের কমিটিতে মূল্যায়ন এবং বিতর্কিত কেউ যাতে প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই সারাদেশেই স্বচ্ছ দলীয় কমিটি গঠনে বার বার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তৃণমূলে দলের পরীক্ষিত, ত্যাগী নেতাকর্মীসহ সমাজে যারা স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মানুষজন আছে তাদেরও দলে টানতে হবে। দুর্দিনের ত্যাগী, পরীক্ষিত ও নিবেদিত নেতাকর্মীরা যাতে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে বাদ না পড়ে সেদিকে সকলকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আর কোন অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া হবে না, কেউ অন্যায় করলে তাকে ছাড় দেয়া হবে না বলেও সতর্ক করেন তিনি।
সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা এ নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, কোনো কমিটিতে বিতর্কিত লোক যেন না আসতে পারে। কোন ধরনের অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত কেউ যেন কোন কমিটিতে প্রবেশ করতে না পারে। এদের বাদ দিতে সব বিভাগে কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। আর দলের ত্যাগী ও দুঃসময়ের নেতারা যেন কমিটিতে মূল্যায়ন হয়, সেদিকেও নজর রাখতে হবে। প্রসঙ্গত,সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর তথ্যানুযায়ী, চলতি সংসদে সংসদ সদস্যদের মধ্যে অধিকাংশের পেশাই (৬৬.৮৯ শতাংশ বা ২০০ জন) ব্যবসা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মধ্যে এ হার শতকরা ৬৫.৯২ শতাংশ (১৪৭ জন)। আবার নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মধ্যে ২৯ জন (৯.৩৯ শতাংশ) আইনজীবী, (প্রকৃত তথ্য হবে ৩২ জন এবং ১০.৬৭ শতাংশ)। এই ৩২ জনের মধ্যে ২৬ জনই আওয়ামী লীগের। অর্থাৎ ব্যবসায়ী ও আইনজীবীরাই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এগিয়ে আছেন। মাঠের বা তৃণমূলের প্রকৃত রাজনীতিবিদরা দলে গৌণ হয়ে পড়েছেন।
সূত্রে জানা গেছে, ৯০ দশকের আগেও গ্রামের জনপ্রিয় শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবীরা আসতেন রাজনীতিতে। পরিচ্ছন্ন, সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিরাই নাম লেখাতেন এখানে। তাদের দৃঢ় নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যেত, সাধারণ মানুষ পেত সমস্যার সমাধান। এখন সময় পাল্টেছে। রাজনীতি চলে গেছে টাকাওয়ালাদের হাতে। টাকার মাপকাঠিতে মনোনীত হচ্ছে নেতৃত্ব, টাকার জোরে পাকাপোক্ত হচ্ছে সিংহাসন। যোগ্যতা, নীতিনৈতিকতা ও আদর্শের স্থলে জায়গা পেয়েছে আনুগত্য। ফলে তৃণমূলের ত্যাগী ও জনপ্রিয় নেতারা রাজনীতির মাঠ থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। সেই সুযোগে মাঠ দখলে নিচ্ছেন কথিত টাকাওয়ালা জনপ্রিয়রা। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের মানুষ এখন দেয়া-নেয়ায় বিশ্বাসী। কিছু পেতে হলে কিছু দিতেই হবে। সাধারণের যেমন টাকার প্রয়োজন, তেমনি যার টাকা আছে তার প্রয়োজন ক্ষমতা। দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাতে গিয়ে আমরা নিজেরাই অনেক কিছুর পরিবর্তন ঘটিয়েছি। সেই সঙ্গে পরিবর্তন হয়েছে আমাদের মূল্যবোধের। টাকাওয়ালারা এখন সমাজব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করছে। সেই প্রভাব পড়েছে রাজনীতিতে। আগে জনপ্রিয়তা ছিল যোগ্যতা ও মূল্যবোধের ওপর, এখন সেটি স্থান করে নিয়েছে টাকার ওপর। ফলে নির্লোভ, ত্যাগী, দেশপ্রেমী ও সৎ মানুষেরা রাজনীতির মাঠ থেকে হারিয়ে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, যাদের কাছে প্রচুর টাকা আছে তারাই এখন জনপ্রিয়। তারা ক্ষমতা দেখাতে পারে। কারণ, তারা অনেক দান-সদকা করে, মসজিদ-মাদ্রাসা বানিয়ে দেয়, সেখানে এয়ারকন্ডিশন লাগিয়ে দেয়, মানুষকে দিয়ে ওমরা করায়। এসব কারণে অর্থবিত্তের মালিকরাই জনপ্রিয়। আগে নেতৃত্বে আসতেন সমাজের সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিরা। সেক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবীদের প্রাধান্য দেয়া হতো। এখন সেই সংস্কৃতির পরিবর্তন হয়েছে। বিপুল অর্থবিত্ত না থাকায় তাদের জনপ্রিয়তাও নেই। এখানে আমাদের মূল্যবোধের পরিবর্তন হয়েছে। বিপুল অর্থবিত্তের মালিক যিনি, তাকেই এখন আমরা সম্মান করি। শুধু রাজনীতি নয়, সবক্ষেত্রে এ মূল্যবোধের পরিবর্তন হয়েছে। পুরো জাতির মূল্যবোধেই পরিবর্তন হয়েছে। যার দাপট আছে, টাকা আছে; যিনি বেশি বেশি দান-খয়রাত করতে পারেন, তিনিই দানবীর; তার জনপ্রিয়তাও বেশি। অন্য কেউ তাদের সামনে দাঁড়াতেই পারেন না। শুধু ব্যবসায়ী বা অর্থবিত্তের মালিক নন, পরিবারতন্ত্রের ধারাবাহিকতায় নেতার সন্তানরাও আসছেন রাজনীতিতে। তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, নেতাদের ছেলে-মেয়ে হিসেবে কাউকে পদ দেওয়া যায় কিন্তু নেতা বানানো যায় না। নেতা হতে হলে তাদেরও (নেতার সন্তান) রাজনৈতিক যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয়। বর্তমান সমাজে যারা জনপ্রিয় তারা কিন্তু টাকাওয়ালা। এটি অস্বীকার করার উপায় নেই। শুধু যে তারাই রাজনীতিতে আসছেন, এটিও সঠিক নয়।
এ বিষয়ে কথা হয় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন এর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা অতীতে দেখেছি ত্যাগী, নির্লোভ, দেশপ্রেমী, তুলনামূলক সৎ ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিরাই নেতৃত্বে আসতেন। সেক্ষেত্রে আস্থা রাখা হতো শিক্ষক, আইনজীবী ও চিকিৎসকদের ওপর। মানুষ তাদের শ্রদ্ধা করতেন। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর এ ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়ে যায়। তারা সেই সময় অর্থবিত্তের প্রভাব আছে এমন ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেয়। তাদের নেতৃত্বে রাজনীতিও ভিন্ন পথে হাঁটতে শুরু করে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের একজন উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখন যারা রাজনীতি করবেন, তাদের প্রচুর টাকা থাকতে হবে। নতুন যারা আসবেন, তাদেরও টাকা লাগবে। নির্বাচন করতেও এখন প্রচুর টাকা লাগে। আগে কর্মীরা স্বেচ্ছায় দলের পক্ষে, প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতেন। এখন টাকা ছাড়া কোনো কথা নেই। দল থেকে প্রার্থীরা কিছু পাননি বা প্রার্থীদের কাছ থেকে কর্মীরাও কিছু খাননি এমন নজির আপনি দেখাতে পারবেন না। নির্বাচন আসলে গ্রাম কিংবা শহরে এমন তৎপরতা চোখে পড়ে। ফলে যাদের টাকা আছে তারাই নির্বাচন করেন। আর নির্বাচনে যে ব্যয় সেটি তুলতে নিয়োগ-বাণিজ্য, বালু বা জলমহাল দখল, ঠিকাদারি বা টেন্ডারবাজি— এমন কোনো হীন কাজ নেই, যা তিনি করেন না। শুধু নির্বাচনের ব্যয় নয়, সুদ-আসলে কয়েক গুণ টাকা হাতিয়ে নেন যাতে পরবর্তী নির্বাচনে ব্যয় করতে পারেন।
তবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, তৃণমূলের জনপ্রিয়রা মূল্যায়িত হচ্ছেন না, আমি এটি মনে করি না। স্থানীয় রাজনীতিতে জনপ্রিয়দের নেয়া হচ্ছে, তারা নেতৃত্বে আসছেন। রাজনীতিতে জনপ্রিয়তা, দক্ষতা, গ্রহণযোগ্যতা, ত্যাগ-তিতিক্ষা, সৎ-সাহস, নীতি-নৈতিকতা— এগুলো গুরুত্বপূর্ণ। এসব দেখেই পদ-পদবি দেয়া হয়। এ কারণে আওয়ামী লীগ এখনও তার জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পেরেছে। দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এবং এর নেতাকর্মীরা জনপ্রিয়। দলীয় সভাপতি ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা জনপ্রিয়তার সুউচ্চ স্থানে অবস্থান করছেন। এটি দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে গৌরবান্বিত করেছে।
ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের মূল্যায়নের নির্দেশ: ‘মাইম্যান’ কিংবা কারোর প্রভাবিত কমিটি নয়; দলের ত্যাগী, দুর্দিনের পরীক্ষিত ও নিবেদিত নেতাদের কমিটিতে মূল্যায়ন এবং বিতর্কিত কেউ যাতে প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই সারাদেশেই স্বচ্ছ দলীয় কমিটি গঠনে বার বার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তৃণমূলে দলের পরীক্ষিত, ত্যাগী নেতাকর্মীসহ সমাজে যারা স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মানুষজন আছে তাদেরও দলে টানতে হবে। দুর্দিনের ত্যাগী, পরীক্ষিত ও নিবেদিত নেতাকর্মীরা যাতে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে বাদ না পড়ে সেদিকে সকলকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আর কোন অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া হবে না, কেউ অন্যায় করলে তাকে ছাড় দেয়া হবে না বলেও সতর্ক করেন তিনি।
সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা এ নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, কোনো কমিটিতে বিতর্কিত লোক যেন না আসতে পারে। কোন ধরনের অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত কেউ যেন কোন কমিটিতে প্রবেশ করতে না পারে। এদের বাদ দিতে সব বিভাগে কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। আর দলের ত্যাগী ও দুঃসময়ের নেতারা যেন কমিটিতে মূল্যায়ন হয়, সেদিকেও নজর রাখতে হবে। প্রসঙ্গত,সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর তথ্যানুযায়ী, চলতি সংসদে সংসদ সদস্যদের মধ্যে অধিকাংশের পেশাই (৬৬.৮৯ শতাংশ বা ২০০ জন) ব্যবসা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মধ্যে এ হার শতকরা ৬৫.৯২ শতাংশ (১৪৭ জন)। আবার নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মধ্যে ২৯ জন (৯.৩৯ শতাংশ) আইনজীবী, (প্রকৃত তথ্য হবে ৩২ জন এবং ১০.৬৭ শতাংশ)। এই ৩২ জনের মধ্যে ২৬ জনই আওয়ামী লীগের। অর্থাৎ ব্যবসায়ী ও আইনজীবীরাই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এগিয়ে আছেন। মাঠের বা তৃণমূলের প্রকৃত রাজনীতিবিদরা দলে গৌণ হয়ে পড়েছেন।