
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে নানা সমস্যা মোকাবিলায় চ্যালেঞ্জে পড়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। বিশেষ করে সামনের দিনগুলোতে লোডশেডিং-দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ রাখাই সবচেয়ে বড় চিন্তায় ফেলেছে সরকারকে। এর আগে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা ছিল বর্তমান সরকারের একটি বড় চ্যালেঞ্জ। গত বছর প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ছিল সাধারণ মানুষের সাধ্যের বাইরে। যদিও সরকার ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের একটা অংশকে স্বল্পমূল্যে নিত্যপণ্য কেনার সুযোগ দিচ্ছে। তবে এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফেরেনি।
দলীয় সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তীতে দ্রব্যমূল্য, লোডশেডিং, বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াতসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে অস্বস্তিতে রয়েছে টানা চতুর্থ মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসা দল আওয়ামী লীগ। তবে বাজারে দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও ঘনঘন লোডশেডিংয়ে দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা মানসিকভাবে বিব্রত হচ্ছে। তাই পবিত্র ঈদুল ফিতরের পরই টানা রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা করেছে আওয়ামী লীগ। তবে আসছে রমজান মাসকে সামনে রেখে অনেকটাই চ্যালেঞ্জের মুখে সরকার। দ্রব্যমূল্য কমানো ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে এ মুহূর্তে সবচেয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছে নতুন সরকার। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠনের পর মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে এ সংক্রান্ত কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। সে অনুযায়ী অর্থ, বাণিজ্য, খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটিও গঠিত হয়েছে। কমিটির সুপারিশে চাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও খেজুরের ওপর আরোপিত শুল্ক কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কিন্তু বাজারে এর কোনও প্রভাব নেই। ভরা মৌসুমে এখনও পেঁয়াজের কেজি ১৩০ টাকা। ভোজ্যতেল লিটারে ১০ টাকা কমিয়ে বিক্রির সিদ্ধান্ত ১ মার্চ থেকে কার্যকর করার কথা থাকলেও তা বাস্তবায়নে রয়েছে নানাবিধ শঙ্কা। এসব কারণেই নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণকেই সরকারের সামনে মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্য সংকটের কারণে টালমাটাল বিশ্ব অর্থনীতি। বাংলাদেশও এই সংকটের বাইরে নয়। আমদানি করা পণ্য গম, ভোজ্যতেল, জ্বালানি তেল ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি), সার, তুলা, ডাল, চিনি প্রভৃতি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি বাজারে চাপ সৃষ্টি করে। এমন পরিস্থিতিতে রমজানকে সামনে রেখে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার চাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও খেজুর এই চার পণ্যের শুল্ক কমিয়েছে। গত ৮ ফেরুয়ারি এগুলোর আমদানি শুল্ক কমানোর প্রজ্ঞাপন জারি করে এনবিআর। সিদ্ধ ও আতপ চালের আমদানি শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হয়েছে। সিদ্ধ ও আতপ চাল আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বা রেগুলেটরি ডিউটি ২৫ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এ সুবিধা চাল আমদানিকারকরা পাবেন আগামী ১৫ মে পর্যন্ত। দেশে পরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের উৎপাদন ও ব্যবসা পর্যায়ের মূল্য সংযোজন কর বা মূসক বা ভ্যাট পুরোপুরি তুলে নেয়া হয়েছে। এ সুবিধা তারা পাবেন আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। বিদেশ থেকে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন তেল এবং পাম তেল আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। আমদানিকারকরা এ সুবিধা পাবেন ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। খেজুরের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ কমানো হয়েছে। আগে আমদানি শুল্ক ছিল ২৫ শতাংশ। আমদানিকারকরা এ সুবিধা পাবেন আগামী ৩০ মার্চ পর্যন্ত। পরিশোধিত ও অপরিশোধিত উভয় ধরনের চিনির আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে। অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে প্রতি মেট্রিক টনে আমদানি শুল্ক কমিয়ে এক হাজার টাকা করা হয়েছে। আগে যা ছিল দেড় হাজার টাকা। আর পরিশোধিত চিনি আমদানিতে টনপ্রতি আমদানি শুল্ক কমিয়ে করা হয়েছে দুই হাজার টাকা, আগে যা ছিল তিন হাজার টাকা। এই শুল্ক ছাড় পাওয়া যাবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। শুল্ক কমানোর পরও বাজারে ওই চার ভোগ্যপণ্যের দাম এক পয়সাও কমেনি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ মাছ ও মাংসের দাম বৃদ্ধি। প্রতি কেজি গরুর মাংস কিছু দিন আগে ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও রমজানকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা সিদ্ধান্ত নিয়ে তা আবারও বিক্রি করছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে। মাঠ ও কৃষকের ঘর ভরা পেঁয়াজ। ভরা মৌসুমেও ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে দেশি পেঁয়াজ। সরকার থেকে বারবারই বলা হচ্ছে মার্চের প্রথম সপ্তাহেই আসবে ভারতের পেঁয়াজ। সেটা এলেই বাজারে পেঁয়াজের দাম কমবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, আগামী মার্চে শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। রমজানকে সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের তৎপরতা বাড়বে। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজারে দ্রব্যমূল্য বাড়ানো হবে। এতে ভোক্তার কষ্ট আরও বাড়বে। ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয়। এ কারণে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজনে মুদ্রানীতি, রাজস্ব নীতি ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সমন্বয়ের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এছাড়া আমদানি শুল্ক হ্রাস করে পণ্য আমদানি ব্যয় কমিয়ে আনতে হবে। তিনি যুক্ত করেন, নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি দিতে নতুন বছরে মূল্যস্ফীতি ৪-৫ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনা প্রয়োজন। তবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু জানিয়েছেন, আমরা বাজার নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেছি। আসলে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ায়, কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। তারা ইচ্ছা করে সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে বাজারকে অস্থির করে তোলে। এবার যাতে সেটা করতে না পারে সেজন্য আমরা নানা ব্যবস্থার কথা ভাবছি। ১ মার্চ থেকে রমজানে প্রয়োজনীয় এই চারটি পণ্য কম দামে বিক্রি করতে হবে। আমরা এর মধ্যে আমদানিকারকদের আগে আনা পণ্য ক্লিয়ার করতে বলেছি। এক তারিখ থেকে আমরা আমদানিকারকদের গুদামে ইন্টারভেন করবো। এ বিষয়ে সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, বাজার সিন্ডিকেট সরকারের চেয়ে শক্তিশালী কেন,এটা জানা জরুরি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সরবরাহের অভাব নেই। যেটা হচ্ছে সেটা সিন্ডিকেট। এটা চিহ্নিত। এটার ওপর প্রতিবেদন আছে। ভোক্তা অধিদপ্তরের বৈঠকে মাংসের দাম কমানো নিয়ে তারা মারপিট করেছিলো। কোনো দোকানদার কম দামে বিক্রি করলে সরবরাহকারী সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এত শক্তিশালী সিন্ডিকেট! আমার প্রশ্ন হচ্ছে কী করে তারা সরকারের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। সরকারের সংস্থা জানে কারা করছে। রোজার সময় সিন্ডিকেট দাম বাড়াবে যদি সরকার শক্ত হাতে তাদের দমন না করে। তিনি আরও বলেন, সিন্ডিকেট এখন এত শক্তিশালী হয়ে গেছে তারা প্রত্যেকদিন সকালে মোবাইলের মাধ্যমে দাম চূড়ান্ত করে দেয়। ডিম, তেল, মাংস ও তাজা শাকসবজির দামও বাড়িয়ে দেয় তারা। এটার ওপর গোয়েন্দা ও অন্যান্য সংস্থার প্রতিবেদনও আছে। তারা জানে কারা করছে। কিন্তু কোনো অ্যাকশন হয়েছে তা আমরা এখনও দেখিনি। কোথাও দেখা যায়নি কারো বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, আগামীতে সরকারবিরোধীদের রূপরেখাকে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র আখ্যায়িত করে রাজপথসহ সারা দেশের মাঠ দখলে রাখার প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। একইসঙ্গে রাজধানী থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যন্ত বিভিন্ন জনইস্যুতে সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে সমাবেশ, জনসভা, পথসভা করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে দলটি। তবে বিএনপি-জামায়াতসহ সরকার বিরোধীদের কোনো আন্দোলনকে রাজপথে গড়াতে না দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ। নানা কর্মসূচির মাধ্যমে একদিকে দলীয় নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখা হবে এবং রাজনীতির মাঠ দখলে রাখবে। দেশে বিরোধীদের কোনো ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতা ঘটতে দেবে না সরকারি দলটি। কেউ যেন দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে না পারে সেজন্য সজাগ ও সতর্ক থাকতে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে সামনের দিনগুলোতে রাজনৈতিক মাঠে সরব উপস্থিতি থাকবে আওয়ামী লীগের। শুধু তাই নয়, সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো জনগণের সামনে সঠিকভাবে তুলে ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন ভাবে প্রচার-প্রচারণা চালানো হবে। এ বিষয়ে কৃষক লীগ সভাপতি সমীর চন্দ জানান, সামনের দিনগুলোতে কৃষিক্ষেত্রে সরকারের উন্নয়ন এবং বিএনপি-জামায়াতের আমলে কী ছিল সেগুলো তুলে ধরা হবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের একজন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জানান, সামনের দিনগুলোতে বিএনপি-জামায়াতসহ সরকারবিরোধীদের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করা হবে। আওয়ামী লীগ সরকার ও দলের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের গুজব-অপপ্রচার চালাতে সুযোগ দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর রাজধানী থেকে শুরু করে মহানগর, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত কর্মসূচি বিস্তৃত করা হবে।
দলীয় সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তীতে দ্রব্যমূল্য, লোডশেডিং, বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াতসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে অস্বস্তিতে রয়েছে টানা চতুর্থ মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসা দল আওয়ামী লীগ। তবে বাজারে দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও ঘনঘন লোডশেডিংয়ে দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা মানসিকভাবে বিব্রত হচ্ছে। তাই পবিত্র ঈদুল ফিতরের পরই টানা রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা করেছে আওয়ামী লীগ। তবে আসছে রমজান মাসকে সামনে রেখে অনেকটাই চ্যালেঞ্জের মুখে সরকার। দ্রব্যমূল্য কমানো ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে এ মুহূর্তে সবচেয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছে নতুন সরকার। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠনের পর মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে এ সংক্রান্ত কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। সে অনুযায়ী অর্থ, বাণিজ্য, খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটিও গঠিত হয়েছে। কমিটির সুপারিশে চাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও খেজুরের ওপর আরোপিত শুল্ক কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কিন্তু বাজারে এর কোনও প্রভাব নেই। ভরা মৌসুমে এখনও পেঁয়াজের কেজি ১৩০ টাকা। ভোজ্যতেল লিটারে ১০ টাকা কমিয়ে বিক্রির সিদ্ধান্ত ১ মার্চ থেকে কার্যকর করার কথা থাকলেও তা বাস্তবায়নে রয়েছে নানাবিধ শঙ্কা। এসব কারণেই নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণকেই সরকারের সামনে মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্য সংকটের কারণে টালমাটাল বিশ্ব অর্থনীতি। বাংলাদেশও এই সংকটের বাইরে নয়। আমদানি করা পণ্য গম, ভোজ্যতেল, জ্বালানি তেল ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি), সার, তুলা, ডাল, চিনি প্রভৃতি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি বাজারে চাপ সৃষ্টি করে। এমন পরিস্থিতিতে রমজানকে সামনে রেখে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার চাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও খেজুর এই চার পণ্যের শুল্ক কমিয়েছে। গত ৮ ফেরুয়ারি এগুলোর আমদানি শুল্ক কমানোর প্রজ্ঞাপন জারি করে এনবিআর। সিদ্ধ ও আতপ চালের আমদানি শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হয়েছে। সিদ্ধ ও আতপ চাল আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বা রেগুলেটরি ডিউটি ২৫ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এ সুবিধা চাল আমদানিকারকরা পাবেন আগামী ১৫ মে পর্যন্ত। দেশে পরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের উৎপাদন ও ব্যবসা পর্যায়ের মূল্য সংযোজন কর বা মূসক বা ভ্যাট পুরোপুরি তুলে নেয়া হয়েছে। এ সুবিধা তারা পাবেন আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। বিদেশ থেকে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন তেল এবং পাম তেল আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। আমদানিকারকরা এ সুবিধা পাবেন ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। খেজুরের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ কমানো হয়েছে। আগে আমদানি শুল্ক ছিল ২৫ শতাংশ। আমদানিকারকরা এ সুবিধা পাবেন আগামী ৩০ মার্চ পর্যন্ত। পরিশোধিত ও অপরিশোধিত উভয় ধরনের চিনির আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে। অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে প্রতি মেট্রিক টনে আমদানি শুল্ক কমিয়ে এক হাজার টাকা করা হয়েছে। আগে যা ছিল দেড় হাজার টাকা। আর পরিশোধিত চিনি আমদানিতে টনপ্রতি আমদানি শুল্ক কমিয়ে করা হয়েছে দুই হাজার টাকা, আগে যা ছিল তিন হাজার টাকা। এই শুল্ক ছাড় পাওয়া যাবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। শুল্ক কমানোর পরও বাজারে ওই চার ভোগ্যপণ্যের দাম এক পয়সাও কমেনি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ মাছ ও মাংসের দাম বৃদ্ধি। প্রতি কেজি গরুর মাংস কিছু দিন আগে ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও রমজানকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা সিদ্ধান্ত নিয়ে তা আবারও বিক্রি করছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে। মাঠ ও কৃষকের ঘর ভরা পেঁয়াজ। ভরা মৌসুমেও ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে দেশি পেঁয়াজ। সরকার থেকে বারবারই বলা হচ্ছে মার্চের প্রথম সপ্তাহেই আসবে ভারতের পেঁয়াজ। সেটা এলেই বাজারে পেঁয়াজের দাম কমবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, আগামী মার্চে শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। রমজানকে সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের তৎপরতা বাড়বে। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজারে দ্রব্যমূল্য বাড়ানো হবে। এতে ভোক্তার কষ্ট আরও বাড়বে। ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয়। এ কারণে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজনে মুদ্রানীতি, রাজস্ব নীতি ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সমন্বয়ের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এছাড়া আমদানি শুল্ক হ্রাস করে পণ্য আমদানি ব্যয় কমিয়ে আনতে হবে। তিনি যুক্ত করেন, নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি দিতে নতুন বছরে মূল্যস্ফীতি ৪-৫ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনা প্রয়োজন। তবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু জানিয়েছেন, আমরা বাজার নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেছি। আসলে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ায়, কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। তারা ইচ্ছা করে সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে বাজারকে অস্থির করে তোলে। এবার যাতে সেটা করতে না পারে সেজন্য আমরা নানা ব্যবস্থার কথা ভাবছি। ১ মার্চ থেকে রমজানে প্রয়োজনীয় এই চারটি পণ্য কম দামে বিক্রি করতে হবে। আমরা এর মধ্যে আমদানিকারকদের আগে আনা পণ্য ক্লিয়ার করতে বলেছি। এক তারিখ থেকে আমরা আমদানিকারকদের গুদামে ইন্টারভেন করবো। এ বিষয়ে সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, বাজার সিন্ডিকেট সরকারের চেয়ে শক্তিশালী কেন,এটা জানা জরুরি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সরবরাহের অভাব নেই। যেটা হচ্ছে সেটা সিন্ডিকেট। এটা চিহ্নিত। এটার ওপর প্রতিবেদন আছে। ভোক্তা অধিদপ্তরের বৈঠকে মাংসের দাম কমানো নিয়ে তারা মারপিট করেছিলো। কোনো দোকানদার কম দামে বিক্রি করলে সরবরাহকারী সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এত শক্তিশালী সিন্ডিকেট! আমার প্রশ্ন হচ্ছে কী করে তারা সরকারের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। সরকারের সংস্থা জানে কারা করছে। রোজার সময় সিন্ডিকেট দাম বাড়াবে যদি সরকার শক্ত হাতে তাদের দমন না করে। তিনি আরও বলেন, সিন্ডিকেট এখন এত শক্তিশালী হয়ে গেছে তারা প্রত্যেকদিন সকালে মোবাইলের মাধ্যমে দাম চূড়ান্ত করে দেয়। ডিম, তেল, মাংস ও তাজা শাকসবজির দামও বাড়িয়ে দেয় তারা। এটার ওপর গোয়েন্দা ও অন্যান্য সংস্থার প্রতিবেদনও আছে। তারা জানে কারা করছে। কিন্তু কোনো অ্যাকশন হয়েছে তা আমরা এখনও দেখিনি। কোথাও দেখা যায়নি কারো বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, আগামীতে সরকারবিরোধীদের রূপরেখাকে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র আখ্যায়িত করে রাজপথসহ সারা দেশের মাঠ দখলে রাখার প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। একইসঙ্গে রাজধানী থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যন্ত বিভিন্ন জনইস্যুতে সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে সমাবেশ, জনসভা, পথসভা করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে দলটি। তবে বিএনপি-জামায়াতসহ সরকার বিরোধীদের কোনো আন্দোলনকে রাজপথে গড়াতে না দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ। নানা কর্মসূচির মাধ্যমে একদিকে দলীয় নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখা হবে এবং রাজনীতির মাঠ দখলে রাখবে। দেশে বিরোধীদের কোনো ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতা ঘটতে দেবে না সরকারি দলটি। কেউ যেন দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে না পারে সেজন্য সজাগ ও সতর্ক থাকতে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে সামনের দিনগুলোতে রাজনৈতিক মাঠে সরব উপস্থিতি থাকবে আওয়ামী লীগের। শুধু তাই নয়, সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো জনগণের সামনে সঠিকভাবে তুলে ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন ভাবে প্রচার-প্রচারণা চালানো হবে। এ বিষয়ে কৃষক লীগ সভাপতি সমীর চন্দ জানান, সামনের দিনগুলোতে কৃষিক্ষেত্রে সরকারের উন্নয়ন এবং বিএনপি-জামায়াতের আমলে কী ছিল সেগুলো তুলে ধরা হবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের একজন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জানান, সামনের দিনগুলোতে বিএনপি-জামায়াতসহ সরকারবিরোধীদের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করা হবে। আওয়ামী লীগ সরকার ও দলের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের গুজব-অপপ্রচার চালাতে সুযোগ দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর রাজধানী থেকে শুরু করে মহানগর, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত কর্মসূচি বিস্তৃত করা হবে।