
সরকারি চাকরিতে কোটা তুলে দেয়ার দাবিতে ছাত্র আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে মনে করছেন টানা চার মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা দল আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের নেতারা। তারা বলছেন, আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি দেখে মনে হচ্ছে এটি বড় আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং বিএনপিসহ সরকারবিরোধীরা যুক্ত হয়ে এটাকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে পারে। তবে শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলন পরিস্থিতি সরকার গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা যে ইস্যুতে আন্দোলন করছে, সেটা তো সরকারি সিদ্ধান্ত। আদালত ভিন্ন রায় দিয়েছেন। আমরা তো সিদ্ধান্ত দিইনি, দিয়েছেন আদালত।
এ নিয়ে ৭ জুলাই গণভবনে এক অনুষ্ঠানে প্রশ্ন তুলেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনের যৌক্তিকতা নেই। তিনি বলেন, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে এইভাবে আন্দোলন করা, এটা তো বিচারধীন। আমরা সরকারে থেকে এ ব্যাপারে কথা বলতে পারি না। হাইকোর্ট রায় দিলে, সেখান থেকেই আসতে হবে। কিন্তু আন্দোলনের নামে পড়াশোনা-সময় নষ্ট করার যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যে কোটা, সেটা বাতিল করতে হবে, নারীদের কোটা বাতিল করতে হবে। সেটা কিন্তু একবার বাতিল করা হয়েছিল। কিন্তু ফলাফলটা কি পাবলিক সার্ভিস কমিশনের হিসাবে পরীক্ষায় আগে যেখানে কোটা থাকতে মেয়েরা যে পরিমাণ সুযোগ পেত, সেই পরিমাণ সুযোগ এ কয় বছরে পায়নি। এটা হলো বাস্তবতা। সর্বশেষ সোমবার কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে দলীয়প্রধান শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে দুই মন্ত্রী ও দুই প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এতে আইনমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী থাকায় চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এরআগে সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ওবায়দুল কাদের। সংবাদ সম্মেলন শেষে দলের দফতর সম্পাদকের কক্ষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম শামসুন্নাহার চাপা ও তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এতে আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার কক্ষে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলন শেষে সেখানে যান সড়ক পরিবহন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পরে বৈঠকে যোগ দেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম শামসুন্নাহার চাপা ও আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া। মূলত কোটাবিরোধী আন্দোলনের নানান দিক ও করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নতুন করে আন্দোলন দানা বাঁধা, আন্দোলনে বিএনপির সমর্থন দেয়া, শিক্ষকদের আন্দোলনও একই সময় হওয়া, পরিস্থিতির পর্যালোচনা এবং ইস্যুটি কোন দিকে যেতে পারে এসব বিষয় আলোচনায় উঠেছে। তবে এ নিয়ে বৈঠক শেষে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন সরকারি চাকরিতে কোটা একটি ‘যৌক্তিক’ পর্যায়ে রাখার ব্যাপারে ইতিবাচক আওয়ামী লীগ সরকার। বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধা, নৃগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধীদের কোটা আংশিক থাকতে পারে। বিষয়টি বিচারাধীন থাকায় আইনমন্ত্রীকে এ ব্যাপারে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, এই কোটা আন্দোলনে কারা কারা যুক্ত আছে, কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ কি না সেটা এর মধ্যেই বোঝা যাবে। সবকিছুই সময়ের পরিবর্তনে পরিষ্কার হয়ে যাবে। কোনো কিছুই হাইড করা সম্ভব হবে না। সেটা আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা নিয়ে আদালতের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এ বিষয়ে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের অর্ধ-ডজন কেন্দ্রীয় নেতা। তারা বলছেন, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালের আন্দোলন হঠাৎ করেই দানা বেঁধেছিল। শেষ পর্যন্ত সরকার কোটা পদ্ধতি সংস্কার করতে বাধ্য হয়। আবার সেই কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল হওয়ায় ফের হঠাৎ করেই আন্দোলনে নেমেছে ছাত্ররা। এবার একইসঙ্গে চলছে দুটি আন্দোলন। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় ‘প্রত্যয়’ স্কিম বাতিলের দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি দিয়েছেন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, যাতে সমর্থন দিয়েছে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরাও। কোটাবিরোধী আন্দোলনের বিষয়টি আদালতের ব্যাপার হওয়ায় কঠোর অবস্থানে যেতে চাইছে না সরকার। আবার আন্দোলনও ছড়িয়ে পড়ছে। এখন আদালতের রায় নিয়ে নির্বাহী বিভাগ কোনো সিদ্ধান্তও দিতে পারছে না, আন্দোলন দমনও করতে পারছে না। সে কারণে আন্দোলন আরও ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা আছে। একই সময়ে শিক্ষকদের আন্দোলনও চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। উভয় আন্দোলনে বিএনপি সমর্থন দেয়ায় আন্দোলনে সহিংসতার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। সেজন্য ছাত্রলীগকে মাঠে নামতে বারণ করা হয়েছে। সময় নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন আমরা দেখেছি। সরকার বিষয়টি সমাধান করেছে। এখন কোটা পুনর্বহাল তো সরকার করেনি, করেছে আদালত। তিনি বলেন, এখন কোটাবিরোধী আন্দোলনের নেপথ্যে বিএনপি কলকাঠি নাড়তে পারে। চলমান আন্দোলনে তারা সমর্থন দেয়ায় সেই ধারণা প্রবল হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত যদি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে চায়, তবে পরিস্থিতি দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আন্দোলনের নামে দেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে দেয়া হবে না। কোনো ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত সফল হবে না, হতে দেয়া হবে না। আমরা ঘটনাপ্রবাহের দিকে নজর রাখছি, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর দুইজন এবং সম্পাদকমণ্ডলীর তিন জন সদস্য জানান, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগ মাঠে নামলে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়েছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। ত্রিমুখী সংঘর্ষের ফলে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছিল। সেই অভিজ্ঞতা থেকে এবার জটিলতা এড়াতে সংযমী আচরণ করছে। আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহার চেষ্টা করা হবে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার উপক্রম হলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে, সেটি চূড়ান্ত পর্যায়ে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, আদালতের রায়ে কোটা এসেছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এই সমস্যা সমাধান হলে ভালো হয়। তবে সেই ধরনের বিচক্ষণ, উপযুক্ত ছাত্রনেতার অভাব রয়েছে। তা ছাড়া সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে কৌশলে সমস্যা তৈরির চেষ্টা কোনও মহল করছে কিনা, সেটিও খতিয়ে দেখা দরকার। উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালে ঢাকাসহ সারা দেশে বড় ছাত্র আন্দোলন হয়েছিল। তখন ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। আন্দোলনের মুখে ওই বছরই প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে সরাসরি নিয়োগে কোটা পদ্ধতি তুলে দিয়ে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পরে ওই প্রজ্ঞাপনকে চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে হাইকোর্টে রিট করা হয়। আইনি প্রক্রিয়া শেষে চলতি বছরের ৫ জুন সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্য কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনরায় বহাল থাকবে বলে আদেশ দেন। হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করলে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করা হাইকোর্টের রায় আপাতত বহাল থাকবে বলে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হলে রাষ্ট্রপক্ষকে লিভ টু আপিল (নিয়মিত আপিল) করতে বলেন আদালত। পাশাপাশি মামলার শুনানি মুলতবি রাখা হয়।
এ নিয়ে ৭ জুলাই গণভবনে এক অনুষ্ঠানে প্রশ্ন তুলেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনের যৌক্তিকতা নেই। তিনি বলেন, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে এইভাবে আন্দোলন করা, এটা তো বিচারধীন। আমরা সরকারে থেকে এ ব্যাপারে কথা বলতে পারি না। হাইকোর্ট রায় দিলে, সেখান থেকেই আসতে হবে। কিন্তু আন্দোলনের নামে পড়াশোনা-সময় নষ্ট করার যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যে কোটা, সেটা বাতিল করতে হবে, নারীদের কোটা বাতিল করতে হবে। সেটা কিন্তু একবার বাতিল করা হয়েছিল। কিন্তু ফলাফলটা কি পাবলিক সার্ভিস কমিশনের হিসাবে পরীক্ষায় আগে যেখানে কোটা থাকতে মেয়েরা যে পরিমাণ সুযোগ পেত, সেই পরিমাণ সুযোগ এ কয় বছরে পায়নি। এটা হলো বাস্তবতা। সর্বশেষ সোমবার কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে দলীয়প্রধান শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে দুই মন্ত্রী ও দুই প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এতে আইনমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী থাকায় চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এরআগে সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ওবায়দুল কাদের। সংবাদ সম্মেলন শেষে দলের দফতর সম্পাদকের কক্ষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম শামসুন্নাহার চাপা ও তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এতে আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার কক্ষে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলন শেষে সেখানে যান সড়ক পরিবহন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পরে বৈঠকে যোগ দেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম শামসুন্নাহার চাপা ও আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া। মূলত কোটাবিরোধী আন্দোলনের নানান দিক ও করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নতুন করে আন্দোলন দানা বাঁধা, আন্দোলনে বিএনপির সমর্থন দেয়া, শিক্ষকদের আন্দোলনও একই সময় হওয়া, পরিস্থিতির পর্যালোচনা এবং ইস্যুটি কোন দিকে যেতে পারে এসব বিষয় আলোচনায় উঠেছে। তবে এ নিয়ে বৈঠক শেষে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন সরকারি চাকরিতে কোটা একটি ‘যৌক্তিক’ পর্যায়ে রাখার ব্যাপারে ইতিবাচক আওয়ামী লীগ সরকার। বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধা, নৃগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধীদের কোটা আংশিক থাকতে পারে। বিষয়টি বিচারাধীন থাকায় আইনমন্ত্রীকে এ ব্যাপারে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, এই কোটা আন্দোলনে কারা কারা যুক্ত আছে, কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ কি না সেটা এর মধ্যেই বোঝা যাবে। সবকিছুই সময়ের পরিবর্তনে পরিষ্কার হয়ে যাবে। কোনো কিছুই হাইড করা সম্ভব হবে না। সেটা আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা নিয়ে আদালতের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এ বিষয়ে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের অর্ধ-ডজন কেন্দ্রীয় নেতা। তারা বলছেন, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালের আন্দোলন হঠাৎ করেই দানা বেঁধেছিল। শেষ পর্যন্ত সরকার কোটা পদ্ধতি সংস্কার করতে বাধ্য হয়। আবার সেই কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল হওয়ায় ফের হঠাৎ করেই আন্দোলনে নেমেছে ছাত্ররা। এবার একইসঙ্গে চলছে দুটি আন্দোলন। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় ‘প্রত্যয়’ স্কিম বাতিলের দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি দিয়েছেন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, যাতে সমর্থন দিয়েছে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরাও। কোটাবিরোধী আন্দোলনের বিষয়টি আদালতের ব্যাপার হওয়ায় কঠোর অবস্থানে যেতে চাইছে না সরকার। আবার আন্দোলনও ছড়িয়ে পড়ছে। এখন আদালতের রায় নিয়ে নির্বাহী বিভাগ কোনো সিদ্ধান্তও দিতে পারছে না, আন্দোলন দমনও করতে পারছে না। সে কারণে আন্দোলন আরও ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা আছে। একই সময়ে শিক্ষকদের আন্দোলনও চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। উভয় আন্দোলনে বিএনপি সমর্থন দেয়ায় আন্দোলনে সহিংসতার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। সেজন্য ছাত্রলীগকে মাঠে নামতে বারণ করা হয়েছে। সময় নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন আমরা দেখেছি। সরকার বিষয়টি সমাধান করেছে। এখন কোটা পুনর্বহাল তো সরকার করেনি, করেছে আদালত। তিনি বলেন, এখন কোটাবিরোধী আন্দোলনের নেপথ্যে বিএনপি কলকাঠি নাড়তে পারে। চলমান আন্দোলনে তারা সমর্থন দেয়ায় সেই ধারণা প্রবল হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত যদি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে চায়, তবে পরিস্থিতি দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আন্দোলনের নামে দেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে দেয়া হবে না। কোনো ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত সফল হবে না, হতে দেয়া হবে না। আমরা ঘটনাপ্রবাহের দিকে নজর রাখছি, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর দুইজন এবং সম্পাদকমণ্ডলীর তিন জন সদস্য জানান, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগ মাঠে নামলে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়েছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। ত্রিমুখী সংঘর্ষের ফলে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছিল। সেই অভিজ্ঞতা থেকে এবার জটিলতা এড়াতে সংযমী আচরণ করছে। আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহার চেষ্টা করা হবে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার উপক্রম হলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে, সেটি চূড়ান্ত পর্যায়ে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, আদালতের রায়ে কোটা এসেছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এই সমস্যা সমাধান হলে ভালো হয়। তবে সেই ধরনের বিচক্ষণ, উপযুক্ত ছাত্রনেতার অভাব রয়েছে। তা ছাড়া সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে কৌশলে সমস্যা তৈরির চেষ্টা কোনও মহল করছে কিনা, সেটিও খতিয়ে দেখা দরকার। উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালে ঢাকাসহ সারা দেশে বড় ছাত্র আন্দোলন হয়েছিল। তখন ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। আন্দোলনের মুখে ওই বছরই প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে সরাসরি নিয়োগে কোটা পদ্ধতি তুলে দিয়ে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পরে ওই প্রজ্ঞাপনকে চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে হাইকোর্টে রিট করা হয়। আইনি প্রক্রিয়া শেষে চলতি বছরের ৫ জুন সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্য কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনরায় বহাল থাকবে বলে আদেশ দেন। হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করলে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করা হাইকোর্টের রায় আপাতত বহাল থাকবে বলে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হলে রাষ্ট্রপক্ষকে লিভ টু আপিল (নিয়মিত আপিল) করতে বলেন আদালত। পাশাপাশি মামলার শুনানি মুলতবি রাখা হয়।