
স্টাফ রিপোর্টার
চট্টগ্রামজুড়ে চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব। প্রতিযোগিতা করে পাহাড় কেটে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করছে প্রভাশালী মহল ও আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো। জরিমানা কিংবা মামলা দিয়েও দমানো যাচ্ছে না এসব পাহাড়খেকোকে। অভিযোগ উঠেছে, এসব ভবন নির্মাণে অনুমোদন দিয়ে যাচ্ছে খোদ চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিযোগ, চট্টগ্রামে পাহাড় কাটার নেতৃত্বে আছে আবাসন প্রতিষ্ঠান, শিল্প গ্রুপ, রাজনীতিবিদ, কাউন্সিলর, পুলিশসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তি। এছাড়া উন্নয়ন কাজের নামে পাহাড় কেটেছে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এসব কারণে চট্টগ্রামে প্রতিবছর পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাহাড়ঘেরা চট্টগ্রাম নগরী দিন দিন পাহাড় শূন্য হয়ে পড়ছে। পাহাড় কেটে গড়ে তোলা হচ্ছে বহুতল ভবন। এসব ভবন নির্মাণে অনুমোদন দিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এছাড়া নগরীর ষোলশহর, ফয়স লেক, আকবর শাহ, আকবর শাহ লেক সিটি আবাসিক, আকবর শাহ ঝিল এলাকা, বায়োজিদ বোস্তামী থানাধীন কৃষ্ণছায়া আবাসিক, ওয়্যারলেস কলোনির পাহাড়, জালালাবাদ হাউজিং, গ্রিনভ্যালি হাউজিং, চন্দ্রনগরসহ লালখান বাজার, পাহাড়তলী, পলিটেকনিক, কুসুমবাগ, কাইচ্যাঘোনা, উত্তর পাহাড়তলীর বিশ্ব কলোনি, মক্কীঘোনা, বাটালি হিল, লালখান বাজার মতিঝর্ণা, প্রবর্তক পাহাড়, জয়পাহাড়, রেলওয়ে বমেপ্লয়িজ গালর্স স্কুল এলাকায় এখনও রাত নামলেই কাটা হচ্ছে পাহাড়। স্থানীয় ব্যক্তিরা অভিযোগ করে বলছেন, পরিবেশ অধিদফতর ও থানা পুলিশকে ম্যানেজ করেই ভূমিদস্যুরা এসব পাহাড় কেটে বসতি গড়ছে।
বায়োজিদ থানাধীন চন্দ্রনগর এলাকার বাসিন্দা মো. সোহেল মাহমুদ বলেন, বায়োজিদ এলাকায় একসময় অনেক বড় বড় পাহাড় ছিল। মাত্র এক দশকে অনেকগুলো পাহাড়ের অস্তিত্ব নেই। ওই সব পাহাড়ের স্থলে গড়ে উঠেছে বড় বড় বহুতল ভবন। যেসব পাহাড় আছে, সেগুলোর কিছু আছে অর্ধকাটা আবার কিছু আংশিক কাটা। অবশিষ্ট পাহাড় এখনও প্রতি রাতে ভূমিদস্যুরা কাটছে। তাদের থামানোর কেউ নেই। শুধু তা-ই নয়, পাহাড়ের স্থলে বহুতল ভবন নির্মাণে অনুমতি দিচ্ছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এ কারণেই পাহাড় কাটা বাড়ছে।
বায়েজিদ শেরশাহ এলাকার বাসিন্দা আকাশ আহমেদ বলেন, বায়োজিদ বোস্তামী থানার বাংলা বাজার আকবর টিলা এলাকার পূর্বাঞ্চলে প্রশাসনের নজরদারি করতে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়ে পাহাড় কাটা হচ্ছে। ৫০ থেকে ৬০ জন লোক পাহাড় কেটে এখানে বহুতল ভবন নির্মাণের চেষ্টা করছে। বায়োজিদ লিংক রোডে এশিয়া উমেন ইউনিভার্সিটির ভেতর, জালালাবাদ রূপসী আবাসিক এলাকা এবং চৌধুরী নগরের খামার বাড়ি এলাকায় এখনও পাহাড় কাটা চলছে। প্রশাসনের অভিযান থেকে রক্ষায় রাত হলেই এলাকায় পাহাড় কাটার উৎসব শুরু হয়। পাহাড় রক্ষায় ২০০৭ সালের ৩৬ দফা সুপারিশ এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। পরিবেশবিদদের মতে, চট্টগ্রামে পাহাড় কাটা থামাতে পরিবেশ অধিদফতর, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ প্রশাসনও ব্যর্থ হয়েছে। এ ব্যর্থতার জন্য একশ্রেণির অসাধু প্রশাসনকেই দায়ী করছেন তারা। এছাড়া চট্টগ্রামে পাহাড় রক্ষায় ২০০৭ সালের ৩৬ দফা সুপারিশ এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। এসব সুপারিশ পাহাড় রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. খালেদ মেসবাহুজ্জামানের এক গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়, চট্টগ্রাম মহানগরীতে গত চার দশকে পাহাড় কমেছে ৬০ শতাংশ। যার সংখ্যা ১২০টি। ৪০ বছর আগেও নগরীতে পাহাড় ছিল ২০০টি। বর্তমানে তা ৮০-তে নেমে এসেছে। এদিকে পরিবেশ সংগঠনের মতে, নগরীর উত্তর পাহাড়তলী মৌজাতেই পাহাড় ছিল ৩৫টি। এরমধ্যে বর্তমানে ২০টির অস্তিত্ব নেই। বর্তমানে যে ১৫টি আছে, সেগুলো আংশিক কিংবা অর্ধকাটা হিসেবে আছে। বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অলিউর রহমান বলেন, ১৯৮৩ সালে সরকারি আদেশ ছিল, চট্টগ্রামের কোথাও কোন পাহাড় কাটা যাবে না। ২০০৭ সালে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছিল- জাতীয় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন ছাড়া পাহাড় কাটা যাবে না। উচ্চ আদালত ২০১২ সালের ১৯ মার্চ আদেশ জারি করেছিলেন, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে কোনও পাহাড় কাটা যাবে না। কিন্তু সরকারের জারি করা আদেশ ও উচ্চ আদালতের রায় উপেক্ষা করেই এই অঞ্চলে পাহাড় কাটা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সরকারি উদ্যোগের ঘাটতির সুযোগ নিচ্ছে ভূমিদস্যুরা। চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি পাহাড় কেটেছে আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো। পাহাড় কাটলেই বন বিভাগ, জেলা প্রশাসন, সিডিএ এবং পরিবেশ অধিদফতরকে দায় নিতে হবে। পাশাপাশি ২০০৭ সালে পাহাড় রক্ষায় করা ৩৬টি সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে বাঁচবে পাহাড়।
২০১৭ সালে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি দফতরের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠিত হয়েছিল। তারা পাহাড় ধসের ২৮টি কারণ চিহ্নিত করে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে ৩৬টি সুপারিশ করেছিল। ২৮টি উল্লেখযোগ্য কারণ ছিল, ভারী বর্ষণ, পাহাড়ে বালির আধিক্য, পাহাড়ের উপরিভাগে গাছ না থাকা, গাছ কেটে ভারসাম্য নষ্ট করা, পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস গড়ে তোলা, পাহাড় থেকে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রাখা, বনায়নের পদক্ষেপের অভাব, বর্ষণে পাহাড় থেকে নেমে আসা বালু ও মাটি অপসারণে দুর্বলতা। কমিটির সুপারিশগুলো হলো, পাহাড়ের ৫ কিলোমিটারের মধ্যে হাউজিং প্রকল্প না করা, জরুরি বনায়ন, গাইডওয়াল নির্মাণ, নিষ্কাশন ড্রেন ও মজবুত সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা, পাহাড়ের পানি ও বালু অপসারণের ব্যবস্থা করা, যত্রতত্র পাহাড়ি বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ করা, পাহাড়ি এলাকার ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা নিষিদ্ধ করা, মতিঝর্ণা ও বাটালি হিলের পাদদেশে অবৈধ বস্তি উচ্ছেদ করে পর্যটন স্পট করা, ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের পাদদেশে বসতি স্থাপন নিষিদ্ধ করা, পাহাড় কাটায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, মহানগরীকে পাহাড়ি এলাকা হাটহাজারীর দিকে সম্প্রসারণ না করে কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ে পটিয়া ও আনোয়ারার দিকে সম্প্রসারণ করা।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ১৮টি পাহাড় কেটে ফৌজদারহাট-বায়োজিদ বাইপাস সড়ক নির্মাণ করেছে। ছয় কিলোমিটার দৈর্ঘের সড়কটি নির্মাণকাজ শেষ করতে শর্ত লঙ্ঘন করায় সিডিএকে জরিমানা করে পরিবেশ অধিদফতর। পাহাড় কেটে করা সড়কটির আশপাশে এখন পাহাড় কাটা ও দখলের মহোৎসব শুরু হয়েছে। গড়ে উঠছে বাণিজ্যিক স্থাপনাও।
এ সড়কের পাশে বায়োজিদ বোস্তামী থানাধীন আরেফিন নগরে আবাসন প্রতিষ্ঠান স্যানমার নির্মাণ করছে ২৬ তলা ভবন। যার নাম রাখা হয়েছে ‘স্যানমার গ্রিন পার্ক। পাহাড় কেটে এ ভবনটি নির্মাণের অভিযোগে দুই লাখ টাকা জরিমানা করে দায় সারে পরিবেশ অধিদফতর। এছাড়া পাহাড় আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনাসহ পরিবেশ অধিদফতরের অনুমতি ছাড়া ওই ভূমিতে পাহাড় কাটা বহুতল ভবন অথবা কোনও ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা না করার জন্য নির্দেশ দেয় পরিবেশ অধিদফতর। তবে নির্দেশনা মানেনি প্রতিষ্ঠানটি।
অপরদিকে নগরীর চকবাজার থানাধীন চট্টগ্রাম কলেজ রোড সংলগ্ন পার্সিভ্যাল হিল পাহাড় কেটে ‘এপিক ভূঁইয়া এম্পেরিয়াম’ নামে ১২তলা বহুতল ভবন নির্মাণ করছে আবাসন প্রতিষ্ঠান এপিক প্রপার্টিজ। পাহাড় কেটে এ ভবন নির্মানের অভিযোগে ২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবর এপিক প্রপার্টিজকে ৯৬ হাজার টাকা জরিমানা করেছিল পরিবেশ অধিদফতর। ২০২১ সালের ১৭ জুলাই পাহাড় কাটার সময় এপিক প্রপার্টিজের চার শ্রমিককে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় মামলা করে পরিবেশ অধিদফতর।
পাহাড় কাটার অভিযোগ আছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধেও। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল চসিকের উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম। নগরীর আকবরশাহ থানাধীন বেলতলি ঘোনা এলাকায় পাহাড় কাটার অভিযোগে গত বছরের ১১ এপ্রিল কাউন্সিলর জসিমসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করে পরিবেশ অধিদফতর। এছাড়া ২০১৫ সালের ২৮ মে পাহাড় কাটার অভিযোগে কাউন্সিলর জসিমের বিরুদ্ধে মামলা করে পরিবেশ অধিদফতর। পাহাড় কাটার দায়ে ২০২১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর কাউন্সিলর জসিমের স্ত্রী তাছলিমা বেগমকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে অধিদফতর। গেলো বছরের ২৬ জানুয়ারি পাহাড় কেটে খাল ভরাট ও স্থাপনা নির্মাণের স্থান পরিদর্শন গিয়ে হামলা ও বাধা দেয়ার ঘটনায় থানায় মামলা করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিধ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ মামলায় কাউন্সিলর জসিমকে প্রধান আসামি করা হয়।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. জহুরুল আলম জসিম বলেন, আমি কখনও পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আছে। তারাই আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আপনারা (সাংবাদিকরা) সরেজমিনে ঘটনাস্থলে যান বাস্তবে দেখবেন আমার কোনও সম্পৃক্ততা নেই। পরিবেশবিদ ড. মুহম্মদ ইদ্রিস আলী বলেন, যারা পাহাড় প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার দায়িত্বে আছে, তারা যদি নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করে, তাহলে পাহাড় তো থাকবেই না। আমাদের এখানেও হয়েছে ঠিক তাই। পুলিশ-পরিবেশ অধিদফতরকে ঘুমে রেখে রাতের অন্ধকারে ঘিড়ে-বেড়া দিয়ে ভূমিদস্যুরা পাহাড় কাটছে। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম চট্টগ্রামে আর পাহাড় দেখবে না। তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রামে শক্তিশালী পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি আছে। এ কমিটি ২০০৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৭ বছরে মাত্র ২৫টি সভা করতে পেরেছে। পাহাড় ধসে পড়লে এবং প্রতি বছর জুন-জুলাই মাস এলে এই কমিটির ঘুম ভাঙে। এখনও বাস্তবায়ন হয়নি পাহাড় রক্ষায় কমিটির দেয়া ৩৬ দফা সুপারিশ।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, আমি সব সময় পাহাড় কাটার বিপক্ষে। পাহাড় কাটার অভিযোগ পেলেই ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাস্থলে গিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন। সম্প্রতি আসকার দিঘির পাড়া এলাকায় পাহাড় কেটে ভবন করছে পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরে ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। পাহাড় ঘিরে চট্টগ্রামের সৌন্দর্য। পাহাড় বাঁচাতে হবে। তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রামে পাহাড়কে হত্যা করছে দখলদাররা। চট্টগ্রামে পাহাড়গুলো বালুর, একটু গর্ত করে দিলেই ধসে পড়ে। ৫০ হাজার, এক লাখ টাকা জরিমানা করে পাহাড় কাটা বন্ধ করা যাবে না। পাহাড় যারা কাটে তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রাখতে হবে। অনেক সময় ভুয়া দলিল করে সিডিএ থেকে নকশা অনুমোদন করে নেয়া হচ্ছে। সরেজমিন তদন্ত করে সিডিএকে প্ল্যান দিতে হবে। পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ৭ ফেব্রুয়ারি নগরীর খুলশী, বায়েজিদ, চান্দগাঁও থানাধীন আন্দারমানিক, ছায়ানীড় আবাসিক, পূর্বপাহাড়তলী, জালালাবাদ, নাসিরাবাদ এলাকায় পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শন করে পাহাড় কাটার সত্যতা পান। জড়িতদের পরিবেশ অধিদফতরের কার্যালয়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য নোটিশ দেয়া হয়। এ ছাড়া চলতি বছর পাহাড় কাটার অভিযোগে বেশ কয়েকটি অভিযান চালিয়েছেন তারা। পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাস বলেন, পাহাড় কাটার খবর পেলেই আমরা অভিযানে যাচ্ছি। জড়িতদের আইন অনুযায়ী জরিমানা করা হচ্ছে। না হয় মামলা দেওয়া হচ্ছে। বায়োজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সঞ্জয় কুমার সিনহা বলেন, গত ৪ জানুয়ারি বায়োজিদ থানাধীন চন্দ্রনগর চৌধুরীনগর আবাসিক এলাকায় পাহাড় কাটার সময় মো. ফারুক হোসেন (৪৬) নামে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। পরে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এ ঘটনার পর নতুন করে পাহাড় কাটার কোনও খবর আসেনি। খবর পেলে আমরা অভিযান চালাচ্ছি।
চট্টগ্রামজুড়ে চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব। প্রতিযোগিতা করে পাহাড় কেটে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করছে প্রভাশালী মহল ও আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো। জরিমানা কিংবা মামলা দিয়েও দমানো যাচ্ছে না এসব পাহাড়খেকোকে। অভিযোগ উঠেছে, এসব ভবন নির্মাণে অনুমোদন দিয়ে যাচ্ছে খোদ চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিযোগ, চট্টগ্রামে পাহাড় কাটার নেতৃত্বে আছে আবাসন প্রতিষ্ঠান, শিল্প গ্রুপ, রাজনীতিবিদ, কাউন্সিলর, পুলিশসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তি। এছাড়া উন্নয়ন কাজের নামে পাহাড় কেটেছে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এসব কারণে চট্টগ্রামে প্রতিবছর পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাহাড়ঘেরা চট্টগ্রাম নগরী দিন দিন পাহাড় শূন্য হয়ে পড়ছে। পাহাড় কেটে গড়ে তোলা হচ্ছে বহুতল ভবন। এসব ভবন নির্মাণে অনুমোদন দিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এছাড়া নগরীর ষোলশহর, ফয়স লেক, আকবর শাহ, আকবর শাহ লেক সিটি আবাসিক, আকবর শাহ ঝিল এলাকা, বায়োজিদ বোস্তামী থানাধীন কৃষ্ণছায়া আবাসিক, ওয়্যারলেস কলোনির পাহাড়, জালালাবাদ হাউজিং, গ্রিনভ্যালি হাউজিং, চন্দ্রনগরসহ লালখান বাজার, পাহাড়তলী, পলিটেকনিক, কুসুমবাগ, কাইচ্যাঘোনা, উত্তর পাহাড়তলীর বিশ্ব কলোনি, মক্কীঘোনা, বাটালি হিল, লালখান বাজার মতিঝর্ণা, প্রবর্তক পাহাড়, জয়পাহাড়, রেলওয়ে বমেপ্লয়িজ গালর্স স্কুল এলাকায় এখনও রাত নামলেই কাটা হচ্ছে পাহাড়। স্থানীয় ব্যক্তিরা অভিযোগ করে বলছেন, পরিবেশ অধিদফতর ও থানা পুলিশকে ম্যানেজ করেই ভূমিদস্যুরা এসব পাহাড় কেটে বসতি গড়ছে।
বায়োজিদ থানাধীন চন্দ্রনগর এলাকার বাসিন্দা মো. সোহেল মাহমুদ বলেন, বায়োজিদ এলাকায় একসময় অনেক বড় বড় পাহাড় ছিল। মাত্র এক দশকে অনেকগুলো পাহাড়ের অস্তিত্ব নেই। ওই সব পাহাড়ের স্থলে গড়ে উঠেছে বড় বড় বহুতল ভবন। যেসব পাহাড় আছে, সেগুলোর কিছু আছে অর্ধকাটা আবার কিছু আংশিক কাটা। অবশিষ্ট পাহাড় এখনও প্রতি রাতে ভূমিদস্যুরা কাটছে। তাদের থামানোর কেউ নেই। শুধু তা-ই নয়, পাহাড়ের স্থলে বহুতল ভবন নির্মাণে অনুমতি দিচ্ছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এ কারণেই পাহাড় কাটা বাড়ছে।
বায়েজিদ শেরশাহ এলাকার বাসিন্দা আকাশ আহমেদ বলেন, বায়োজিদ বোস্তামী থানার বাংলা বাজার আকবর টিলা এলাকার পূর্বাঞ্চলে প্রশাসনের নজরদারি করতে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়ে পাহাড় কাটা হচ্ছে। ৫০ থেকে ৬০ জন লোক পাহাড় কেটে এখানে বহুতল ভবন নির্মাণের চেষ্টা করছে। বায়োজিদ লিংক রোডে এশিয়া উমেন ইউনিভার্সিটির ভেতর, জালালাবাদ রূপসী আবাসিক এলাকা এবং চৌধুরী নগরের খামার বাড়ি এলাকায় এখনও পাহাড় কাটা চলছে। প্রশাসনের অভিযান থেকে রক্ষায় রাত হলেই এলাকায় পাহাড় কাটার উৎসব শুরু হয়। পাহাড় রক্ষায় ২০০৭ সালের ৩৬ দফা সুপারিশ এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। পরিবেশবিদদের মতে, চট্টগ্রামে পাহাড় কাটা থামাতে পরিবেশ অধিদফতর, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ প্রশাসনও ব্যর্থ হয়েছে। এ ব্যর্থতার জন্য একশ্রেণির অসাধু প্রশাসনকেই দায়ী করছেন তারা। এছাড়া চট্টগ্রামে পাহাড় রক্ষায় ২০০৭ সালের ৩৬ দফা সুপারিশ এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। এসব সুপারিশ পাহাড় রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. খালেদ মেসবাহুজ্জামানের এক গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়, চট্টগ্রাম মহানগরীতে গত চার দশকে পাহাড় কমেছে ৬০ শতাংশ। যার সংখ্যা ১২০টি। ৪০ বছর আগেও নগরীতে পাহাড় ছিল ২০০টি। বর্তমানে তা ৮০-তে নেমে এসেছে। এদিকে পরিবেশ সংগঠনের মতে, নগরীর উত্তর পাহাড়তলী মৌজাতেই পাহাড় ছিল ৩৫টি। এরমধ্যে বর্তমানে ২০টির অস্তিত্ব নেই। বর্তমানে যে ১৫টি আছে, সেগুলো আংশিক কিংবা অর্ধকাটা হিসেবে আছে। বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অলিউর রহমান বলেন, ১৯৮৩ সালে সরকারি আদেশ ছিল, চট্টগ্রামের কোথাও কোন পাহাড় কাটা যাবে না। ২০০৭ সালে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছিল- জাতীয় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন ছাড়া পাহাড় কাটা যাবে না। উচ্চ আদালত ২০১২ সালের ১৯ মার্চ আদেশ জারি করেছিলেন, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে কোনও পাহাড় কাটা যাবে না। কিন্তু সরকারের জারি করা আদেশ ও উচ্চ আদালতের রায় উপেক্ষা করেই এই অঞ্চলে পাহাড় কাটা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সরকারি উদ্যোগের ঘাটতির সুযোগ নিচ্ছে ভূমিদস্যুরা। চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি পাহাড় কেটেছে আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো। পাহাড় কাটলেই বন বিভাগ, জেলা প্রশাসন, সিডিএ এবং পরিবেশ অধিদফতরকে দায় নিতে হবে। পাশাপাশি ২০০৭ সালে পাহাড় রক্ষায় করা ৩৬টি সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে বাঁচবে পাহাড়।
২০১৭ সালে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি দফতরের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠিত হয়েছিল। তারা পাহাড় ধসের ২৮টি কারণ চিহ্নিত করে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে ৩৬টি সুপারিশ করেছিল। ২৮টি উল্লেখযোগ্য কারণ ছিল, ভারী বর্ষণ, পাহাড়ে বালির আধিক্য, পাহাড়ের উপরিভাগে গাছ না থাকা, গাছ কেটে ভারসাম্য নষ্ট করা, পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস গড়ে তোলা, পাহাড় থেকে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রাখা, বনায়নের পদক্ষেপের অভাব, বর্ষণে পাহাড় থেকে নেমে আসা বালু ও মাটি অপসারণে দুর্বলতা। কমিটির সুপারিশগুলো হলো, পাহাড়ের ৫ কিলোমিটারের মধ্যে হাউজিং প্রকল্প না করা, জরুরি বনায়ন, গাইডওয়াল নির্মাণ, নিষ্কাশন ড্রেন ও মজবুত সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা, পাহাড়ের পানি ও বালু অপসারণের ব্যবস্থা করা, যত্রতত্র পাহাড়ি বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ করা, পাহাড়ি এলাকার ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা নিষিদ্ধ করা, মতিঝর্ণা ও বাটালি হিলের পাদদেশে অবৈধ বস্তি উচ্ছেদ করে পর্যটন স্পট করা, ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের পাদদেশে বসতি স্থাপন নিষিদ্ধ করা, পাহাড় কাটায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, মহানগরীকে পাহাড়ি এলাকা হাটহাজারীর দিকে সম্প্রসারণ না করে কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ে পটিয়া ও আনোয়ারার দিকে সম্প্রসারণ করা।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ১৮টি পাহাড় কেটে ফৌজদারহাট-বায়োজিদ বাইপাস সড়ক নির্মাণ করেছে। ছয় কিলোমিটার দৈর্ঘের সড়কটি নির্মাণকাজ শেষ করতে শর্ত লঙ্ঘন করায় সিডিএকে জরিমানা করে পরিবেশ অধিদফতর। পাহাড় কেটে করা সড়কটির আশপাশে এখন পাহাড় কাটা ও দখলের মহোৎসব শুরু হয়েছে। গড়ে উঠছে বাণিজ্যিক স্থাপনাও।
এ সড়কের পাশে বায়োজিদ বোস্তামী থানাধীন আরেফিন নগরে আবাসন প্রতিষ্ঠান স্যানমার নির্মাণ করছে ২৬ তলা ভবন। যার নাম রাখা হয়েছে ‘স্যানমার গ্রিন পার্ক। পাহাড় কেটে এ ভবনটি নির্মাণের অভিযোগে দুই লাখ টাকা জরিমানা করে দায় সারে পরিবেশ অধিদফতর। এছাড়া পাহাড় আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনাসহ পরিবেশ অধিদফতরের অনুমতি ছাড়া ওই ভূমিতে পাহাড় কাটা বহুতল ভবন অথবা কোনও ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা না করার জন্য নির্দেশ দেয় পরিবেশ অধিদফতর। তবে নির্দেশনা মানেনি প্রতিষ্ঠানটি।
অপরদিকে নগরীর চকবাজার থানাধীন চট্টগ্রাম কলেজ রোড সংলগ্ন পার্সিভ্যাল হিল পাহাড় কেটে ‘এপিক ভূঁইয়া এম্পেরিয়াম’ নামে ১২তলা বহুতল ভবন নির্মাণ করছে আবাসন প্রতিষ্ঠান এপিক প্রপার্টিজ। পাহাড় কেটে এ ভবন নির্মানের অভিযোগে ২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবর এপিক প্রপার্টিজকে ৯৬ হাজার টাকা জরিমানা করেছিল পরিবেশ অধিদফতর। ২০২১ সালের ১৭ জুলাই পাহাড় কাটার সময় এপিক প্রপার্টিজের চার শ্রমিককে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় মামলা করে পরিবেশ অধিদফতর।
পাহাড় কাটার অভিযোগ আছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধেও। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল চসিকের উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম। নগরীর আকবরশাহ থানাধীন বেলতলি ঘোনা এলাকায় পাহাড় কাটার অভিযোগে গত বছরের ১১ এপ্রিল কাউন্সিলর জসিমসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করে পরিবেশ অধিদফতর। এছাড়া ২০১৫ সালের ২৮ মে পাহাড় কাটার অভিযোগে কাউন্সিলর জসিমের বিরুদ্ধে মামলা করে পরিবেশ অধিদফতর। পাহাড় কাটার দায়ে ২০২১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর কাউন্সিলর জসিমের স্ত্রী তাছলিমা বেগমকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে অধিদফতর। গেলো বছরের ২৬ জানুয়ারি পাহাড় কেটে খাল ভরাট ও স্থাপনা নির্মাণের স্থান পরিদর্শন গিয়ে হামলা ও বাধা দেয়ার ঘটনায় থানায় মামলা করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিধ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ মামলায় কাউন্সিলর জসিমকে প্রধান আসামি করা হয়।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. জহুরুল আলম জসিম বলেন, আমি কখনও পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আছে। তারাই আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আপনারা (সাংবাদিকরা) সরেজমিনে ঘটনাস্থলে যান বাস্তবে দেখবেন আমার কোনও সম্পৃক্ততা নেই। পরিবেশবিদ ড. মুহম্মদ ইদ্রিস আলী বলেন, যারা পাহাড় প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার দায়িত্বে আছে, তারা যদি নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করে, তাহলে পাহাড় তো থাকবেই না। আমাদের এখানেও হয়েছে ঠিক তাই। পুলিশ-পরিবেশ অধিদফতরকে ঘুমে রেখে রাতের অন্ধকারে ঘিড়ে-বেড়া দিয়ে ভূমিদস্যুরা পাহাড় কাটছে। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম চট্টগ্রামে আর পাহাড় দেখবে না। তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রামে শক্তিশালী পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি আছে। এ কমিটি ২০০৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৭ বছরে মাত্র ২৫টি সভা করতে পেরেছে। পাহাড় ধসে পড়লে এবং প্রতি বছর জুন-জুলাই মাস এলে এই কমিটির ঘুম ভাঙে। এখনও বাস্তবায়ন হয়নি পাহাড় রক্ষায় কমিটির দেয়া ৩৬ দফা সুপারিশ।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, আমি সব সময় পাহাড় কাটার বিপক্ষে। পাহাড় কাটার অভিযোগ পেলেই ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাস্থলে গিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন। সম্প্রতি আসকার দিঘির পাড়া এলাকায় পাহাড় কেটে ভবন করছে পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরে ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। পাহাড় ঘিরে চট্টগ্রামের সৌন্দর্য। পাহাড় বাঁচাতে হবে। তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রামে পাহাড়কে হত্যা করছে দখলদাররা। চট্টগ্রামে পাহাড়গুলো বালুর, একটু গর্ত করে দিলেই ধসে পড়ে। ৫০ হাজার, এক লাখ টাকা জরিমানা করে পাহাড় কাটা বন্ধ করা যাবে না। পাহাড় যারা কাটে তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রাখতে হবে। অনেক সময় ভুয়া দলিল করে সিডিএ থেকে নকশা অনুমোদন করে নেয়া হচ্ছে। সরেজমিন তদন্ত করে সিডিএকে প্ল্যান দিতে হবে। পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ৭ ফেব্রুয়ারি নগরীর খুলশী, বায়েজিদ, চান্দগাঁও থানাধীন আন্দারমানিক, ছায়ানীড় আবাসিক, পূর্বপাহাড়তলী, জালালাবাদ, নাসিরাবাদ এলাকায় পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শন করে পাহাড় কাটার সত্যতা পান। জড়িতদের পরিবেশ অধিদফতরের কার্যালয়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য নোটিশ দেয়া হয়। এ ছাড়া চলতি বছর পাহাড় কাটার অভিযোগে বেশ কয়েকটি অভিযান চালিয়েছেন তারা। পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাস বলেন, পাহাড় কাটার খবর পেলেই আমরা অভিযানে যাচ্ছি। জড়িতদের আইন অনুযায়ী জরিমানা করা হচ্ছে। না হয় মামলা দেওয়া হচ্ছে। বায়োজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সঞ্জয় কুমার সিনহা বলেন, গত ৪ জানুয়ারি বায়োজিদ থানাধীন চন্দ্রনগর চৌধুরীনগর আবাসিক এলাকায় পাহাড় কাটার সময় মো. ফারুক হোসেন (৪৬) নামে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। পরে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এ ঘটনার পর নতুন করে পাহাড় কাটার কোনও খবর আসেনি। খবর পেলে আমরা অভিযান চালাচ্ছি।