
রাজধানীসহ সারা দেশে দীর্ঘদিন ধরে কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা চললেও এদের বিরুদ্ধে কার্যত তেমন শক্ত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ফলে এদের তৎপরতা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। জানা যায়, ঢাকার বিভিন্ন থানায় কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ৬২টি মামলা দায়ের হলেও একটিরও বিচারকাজ শেষ হয়নি। জানা গেছে, এসব মামলার অধিকাংশই দায়ের করা হয় ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, জমি দখলে সহায়তা, উত্ত্যক্ত করা, যৌন হয়রানি, হামলা, মারধরসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে। এখনো এসব মামলার কোনোটি সাক্ষ্যগ্রহণ আবার কোনোটি যুক্তিতর্ক পর্যায়ে রয়েছে। আইনজীবীদের মতে, সাক্ষী হাজির করা পুলিশের কাজ। যেগুলোর সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নেই, সেসব অপরাধে সাক্ষী জোগাড়ে পুলিশের গাফিলতি আছে। পুলিশের ঢিলেঢালা মনোভাবের কারণে সাক্ষী হাজির হয় না এবং মামলায় দীর্ঘসূত্রতা হয়। যদিও এ বিষয়ে পুলিশের দাবি, সাক্ষ্যগ্রহণের তৎপরতা আগের তুলনায় বেড়েছে, কিন্তু আদালতে মামলার শুনানি শেষে রায় দিতে দীর্ঘ সময় লাগে। এর কারণ হচ্ছে, মামলা লাখ লাখ, কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেটের সংখ্যা কম। ফলে মামলার বিচার শেষ হচ্ছে না। অভিযোগ আর পালটা-অভিযোগ যাই থাকুক; বাস্তবতা হচ্ছে, বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘ হচ্ছে, ফলে শাস্তি নিশ্চিত হচ্ছে না। মাঝে, বিচারকার্য চলাকালে কোনো কোনো অপরাধী জামিনে বেরিয়ে পুনরায় দুষ্কর্মে লিপ্ত হচ্ছে। কাজেই বিচারকাজে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার করতে হবে। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তবে একইসঙ্গে প্রয়োজন সমস্যার গোড়ায় পৌঁছানো এবং প্রতিকারের ব্যবস্থা করা। কিশোর গ্যাং কেন, কী কারণে ও কীভাবে গড়ে উঠেছে- এসবের মূলে যেতে হবে। অভিযোগ আছে, এদের পেছনে আসল গডফাদার হিসাবে থাকে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। রাজনৈতিক দলের মিছিল-মিটিংয়ে লোক জোগান দেওয়াসহ এলাকায় দলীয় আধিপত্য বিস্তারে ‘কিশোর গ্যাং’কে ব্যবহার করে ‘বুড়ো গ্যাং’। প্রথাগত প্রক্রিয়ার পরিবর্তে এ অপরাধ নির্মূলে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে হবে। তাদের গ্রেপ্তার করে জেলে আলাদাভাবে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
বস্তুত সমাজের ভেতর থেকেই বিপথগামী কিশোরদের সংশোধনের উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি প্রত্যেক অভিভাবককে তাদের সন্তানের বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। খেলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের যুক্ত রাখা হলে অপরাধে জড়ানো থেকে তারা বিরত থাকবে। কিশোর অপরাধ নির্মূলে সবার আগে প্রয়োজন নজরদারি। এ ক্ষেত্রে পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রকেই ভূমিকা রাখতে হবে।
বস্তুত সমাজের ভেতর থেকেই বিপথগামী কিশোরদের সংশোধনের উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি প্রত্যেক অভিভাবককে তাদের সন্তানের বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। খেলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের যুক্ত রাখা হলে অপরাধে জড়ানো থেকে তারা বিরত থাকবে। কিশোর অপরাধ নির্মূলে সবার আগে প্রয়োজন নজরদারি। এ ক্ষেত্রে পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রকেই ভূমিকা রাখতে হবে।