
সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয় স্কিমের’ প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সুপার গ্রেডে অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের দাবিতে গতকাল সোমবার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালিত হচ্ছে। এতে অচল হয়ে পড়েছে দেশে ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।
এর আগে গত রোববার সংবাদ সম্মেলন করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির মোর্চা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা দেন। এ ঘোষণার পর আলাদাভাবে ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। ফেডারেশনে কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ইতোমধ্যে ৯টি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। সেখানে ক্লাস পরীক্ষা বর্জনসহ সব ধরনের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। একইসঙ্গে গতকাল সোমবার দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত কলাভবন ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন তারা।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে শিক্ষক সমিতি অংশ নেবে না বলে জানিয়েছেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ধরনের অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। এদিকে শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য সকল পরীক্ষা স্থগিত করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. হিমাদ্রি শেখর চক্রবর্তী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে কলাভবন ও কার্জন হল কেন্দ্রের পরীক্ষাগুলো বর্জন করা হয়। তিনি জানান, অন্যান্য পরীক্ষাকেন্দ্রগুলো স্ব-স্ব অনুষদ, ইনস্টিটিউটের অধীন। যেহেতু সকল শিক্ষক কর্মবিরতিতে, তাই এটি বলা যায় সেখানেও পরীক্ষা হবে না। সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়ে ক্লাস পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে না বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও। ক্লাস পরীক্ষা বর্জন, বিভিন্ন কমিটির সভা বর্জন, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি বন্ধসহ ১০টি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তারা। একইসঙ্গে কর্মসূচি চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিল ভবনের নিচে সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন তারা। শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড নিজামুল হক ভুঁইয়া জানান, আমরা সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। তারা সবাই কর্মসূচি পালন করবে। এদিকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক আখতারুল ইসলাম বলেন, আমরা এই আন্দোলন নিজেদের জন্য করছি না। বরং আগামী প্রজন্মের জন্য করছি। দেশে এত দুর্নীতির কথা আমরা শুনি। সেসব কী শিক্ষকরা করেছে? তাহলে কেন তাদের সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। এই প্রত্যয় স্কিম বৈষম্যমূলক।
গতকাল সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন ঘুরে দেখা যায়, কোথাও কোনো ধরনের ক্লাস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। এমনকি সব ধরনের দাফতরিক কাজও বন্ধ। অনুষদ ও ইনস্টিটিউটগুলোতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি। এতে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এর আগে গত রোববার রাতে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ পরীক্ষাগুলো স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, দাবির বিষয়ে এখনো সরকারের কোনো পর্যায় থেকে কোনো আশ্বাস পাইনি। তাই দাবি না মানা পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলবে।
ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, গতকাল সোমবার সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদও কর্মবিরতি পালন করছে। দুপুরে রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে গিয়ে দেখা যায়, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকেই মল চত্বরে বসে আড্ডা দিচ্ছেন। হলগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও সেখানে দেখা যায়। রেজিস্ট্রার ভবন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক কার্যক্রমের কেন্দ্র। সেখানে অচলাবস্থা তৈরি হওয়ায় গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। কর্মচারী ঐক্য পরিষদের নেতারা জানান, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারাও কর্মবিরতি পালন করে যাবেন। এর আগে ধারাবাহিক আন্দোলনে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আশ্বাস না পেয়ে গত রোববার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।
ইবিতে শিক্ষকদের কর্মবিরতি: সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিম বাতিলের দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষকরা। গতকাল সোমবার ক্লাস পরীক্ষা বর্জনসহ সবধরনের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত ছিলেন তারা। দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করা হয়। অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষকরা বলেন, আমাদের এই আন্দোলন ন্যায্য অধিকারের জন্য। এই স্কিম বাস্তবায়ন হলে শিক্ষকরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আমরা এই স্কিম প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত মাঠ ছাড়বো না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কোনো আপস হবে না।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন অবস্থান কর্মসূচির সমাপনী বক্তব্যে বলেন, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা, সাংবাদিকরা এবং আমাদের প্রিয় শিক্ষার্থীরা যদি পাশে থাকেন, তাহলে কোনো কুচক্রী মহল এই আন্দোলন নস্যাৎ করতে পারবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আজ জেগে উঠেছে। আমাদের আন্দোলন অবশ্যই সফল হবে। আমি সবাইকে আন্দোলনে পাশে চাই। এদিকে একই দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা। এছাড়া তারা প্রশাসন ভবনে সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
শিক্ষক-কর্মকর্তাদের কর্মবিরতিতে স্থবির হয়ে পড়ে ক্যাম্পাস। দফতরগুলোতে তেমন কোনো কাজ করতে দেখা যায়নি কর্মকর্তাদের।
রাবি’তে বন্ধ ক্লাস পরীক্ষা: কর্মবিরতি পালন করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষকরা। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। গতকাল সোমবার সকাল থেকে সর্বাত্মক আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা। এদিন বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবন চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার সমিতিও ১ থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত লাগাতার কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে।
অবস্থান কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোজাম্মেল হোসেন বকুল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষকদের অনেক সুবিধা উঠিয়ে দেয়া ও আর্থিক সুবিধা দেয়ার ক্ষেত্রে কার্পণ্য হতে দেখেছি। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান যদি সঠিকভাবে না চলে তাহলে জাতির সামনে অশনি সংকেত অপেক্ষা করে। যেসব মেধাবী শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করছেন, তারা যদি মেধাবী শিক্ষক না পান তাহলে তারা দেশকে কিছুই দিতে পারবে না। মেধাবী শিক্ষক পেতে গেলে মেধাবী শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করতে হবে। যেন তারা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসেন। তাদের আকর্ষণ করার জন্য আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। আরও কত সুযোগ-সুবিধা দেয়া যায় সেই চেষ্টা করতে হবে। প্রতিবেশী অনেক দেশে শিক্ষকদের বেতন সাধারণ চাকরি থেকে অনেক বেশি। কিন্তু বাংলাদেশে স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের কথা বার বার বলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
রাবির শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. ওমর ফারুক সরকার বলেন, জাতিকে ও দেশের জনগণকে জানাতে চাই, আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়েছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী এটা দেখবেন, এই সমস্যার সমাধান করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক রাস্তায় দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিতে চায় না। তাদের বক্তব্য দেয়ার জায়গা ক্লাসরুম, সেমিনার, ল্যাবরেটরি। আজ (গতকাল সোমবার) থেকে আমরা সব বন্ধ করে দিয়েছি। সব ধরনের ক্লাস বন্ধ রয়েছে, লিখিত ও ভাইভাসহ সব পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে, সব ধরনের সেমিনার, সিম্পোজিয়াম বন্ধ রয়েছে, গবেষণা বন্ধ রয়েছে, শিক্ষকদের প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। যেটাকে আমরা বলি সর্বাত্মক কর্মবিরতি।
রাবির শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, গত দুই মাস থেকে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। ভেবেছিলাম এমন পরিস্থিতি আসবে যে আমাদের আর কর্মসূচির মধ্যে যেতে হবে না। যেহেতু তেমন কিছু হয়নি তাই কর্মসূচিতে যেতে হচ্ছে। আর এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান অনড় বলেই মনে হচ্ছে। এজন্য আমাদের এটা আরও চালিয়ে যেতে হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশে যখনই কোনো কিছু ঘটে তখন সবকিছু শিক্ষকদের ওপরে আসে। আর্থিক খাত থেকে বিভিন্ন জায়গায় বঞ্চিত করা হয়েছে। আপনারা জানেন ২০১৫ সালে অবনমন করা হয়। আবার সর্বজনীন পেনশন স্কিমের নামে আর্থিকভাবে ক্ষতি করছে। শুধু আর্থিকভাবে নয়, আমি মনে করি এটার সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। এটা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র বলে মনে করি।
কর্মবিরতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা: কর্মবিরতি পালন করছেন কিশোরগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ০পরীক্ষা ও ল্যাব বন্ধ রয়েছে। গতকাল সোমবার শিক্ষকরা পূর্ণ কর্মবিরতিতে যান। তারা বলছেন, বৈষম্যমূলক প্রত্যয় স্কিম থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি প্রত্যাহার, প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি, শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আহ্বানে ঘোষিত কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি।
অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস: অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস পরীক্ষা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। এতে করে পরীক্ষাসহ অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। গতকাল বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাউন্ড ফ্লোরে কর্মবিরতি শুরু হয়। চলে দুপুর ১টা পর্যন্ত। এসময় সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল চালুর দাবি জানানো হয়।
ববি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মোহাম্মদ আবদুল বাতেন চৌধুরী বলেন, ববির ক্লাস, পরীক্ষা, সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম সবকিছু বন্ধ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের কর্মসূচির সঙ্গে ববি শিক্ষকরা একাত্ম হয়েছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবো। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বাহাউদ্দিন গোলাপ বলেন, দাবি আদায়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ। দ্রুত সময়ে দাবি পূরণে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করছি। ববি শিক্ষার্থীরা জানান, পরীক্ষাসহ অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তারা বিপাকে পড়েছেন। তাই অবিলম্বে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন চলমান থাকায় কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে শিগগির এ বিষয়ে সমাধান হবে বলে আশা করছি। কারণ আমরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আস্থাশীল।
উল্লেখ্য, গত ১৩ মার্চ সর্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে ‘প্রত্যয় স্কিম’ এ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ ব্যবস্থাকে একটি বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা বলে শুরু করেই বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠনগুলো। দাবি আদায়ে কিছু কর্মসূচি পালনের পর গত ৪ জুন অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকেরা। এরপরও দাবির বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় গত ২৫,২৬ ও ২৭ জুন অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেন তারা। পরে ৩০ জুন পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করা হয়।
এর আগে গত রোববার সংবাদ সম্মেলন করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির মোর্চা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা দেন। এ ঘোষণার পর আলাদাভাবে ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। ফেডারেশনে কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ইতোমধ্যে ৯টি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। সেখানে ক্লাস পরীক্ষা বর্জনসহ সব ধরনের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। একইসঙ্গে গতকাল সোমবার দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত কলাভবন ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন তারা।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে শিক্ষক সমিতি অংশ নেবে না বলে জানিয়েছেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ধরনের অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। এদিকে শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য সকল পরীক্ষা স্থগিত করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. হিমাদ্রি শেখর চক্রবর্তী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে কলাভবন ও কার্জন হল কেন্দ্রের পরীক্ষাগুলো বর্জন করা হয়। তিনি জানান, অন্যান্য পরীক্ষাকেন্দ্রগুলো স্ব-স্ব অনুষদ, ইনস্টিটিউটের অধীন। যেহেতু সকল শিক্ষক কর্মবিরতিতে, তাই এটি বলা যায় সেখানেও পরীক্ষা হবে না। সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়ে ক্লাস পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে না বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও। ক্লাস পরীক্ষা বর্জন, বিভিন্ন কমিটির সভা বর্জন, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি বন্ধসহ ১০টি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তারা। একইসঙ্গে কর্মসূচি চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিল ভবনের নিচে সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন তারা। শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড নিজামুল হক ভুঁইয়া জানান, আমরা সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। তারা সবাই কর্মসূচি পালন করবে। এদিকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক আখতারুল ইসলাম বলেন, আমরা এই আন্দোলন নিজেদের জন্য করছি না। বরং আগামী প্রজন্মের জন্য করছি। দেশে এত দুর্নীতির কথা আমরা শুনি। সেসব কী শিক্ষকরা করেছে? তাহলে কেন তাদের সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। এই প্রত্যয় স্কিম বৈষম্যমূলক।
গতকাল সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন ঘুরে দেখা যায়, কোথাও কোনো ধরনের ক্লাস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। এমনকি সব ধরনের দাফতরিক কাজও বন্ধ। অনুষদ ও ইনস্টিটিউটগুলোতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি। এতে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এর আগে গত রোববার রাতে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ পরীক্ষাগুলো স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, দাবির বিষয়ে এখনো সরকারের কোনো পর্যায় থেকে কোনো আশ্বাস পাইনি। তাই দাবি না মানা পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলবে।
ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, গতকাল সোমবার সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদও কর্মবিরতি পালন করছে। দুপুরে রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে গিয়ে দেখা যায়, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকেই মল চত্বরে বসে আড্ডা দিচ্ছেন। হলগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও সেখানে দেখা যায়। রেজিস্ট্রার ভবন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক কার্যক্রমের কেন্দ্র। সেখানে অচলাবস্থা তৈরি হওয়ায় গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। কর্মচারী ঐক্য পরিষদের নেতারা জানান, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারাও কর্মবিরতি পালন করে যাবেন। এর আগে ধারাবাহিক আন্দোলনে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আশ্বাস না পেয়ে গত রোববার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।
ইবিতে শিক্ষকদের কর্মবিরতি: সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিম বাতিলের দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষকরা। গতকাল সোমবার ক্লাস পরীক্ষা বর্জনসহ সবধরনের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত ছিলেন তারা। দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করা হয়। অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষকরা বলেন, আমাদের এই আন্দোলন ন্যায্য অধিকারের জন্য। এই স্কিম বাস্তবায়ন হলে শিক্ষকরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আমরা এই স্কিম প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত মাঠ ছাড়বো না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কোনো আপস হবে না।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন অবস্থান কর্মসূচির সমাপনী বক্তব্যে বলেন, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা, সাংবাদিকরা এবং আমাদের প্রিয় শিক্ষার্থীরা যদি পাশে থাকেন, তাহলে কোনো কুচক্রী মহল এই আন্দোলন নস্যাৎ করতে পারবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আজ জেগে উঠেছে। আমাদের আন্দোলন অবশ্যই সফল হবে। আমি সবাইকে আন্দোলনে পাশে চাই। এদিকে একই দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা। এছাড়া তারা প্রশাসন ভবনে সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
শিক্ষক-কর্মকর্তাদের কর্মবিরতিতে স্থবির হয়ে পড়ে ক্যাম্পাস। দফতরগুলোতে তেমন কোনো কাজ করতে দেখা যায়নি কর্মকর্তাদের।
রাবি’তে বন্ধ ক্লাস পরীক্ষা: কর্মবিরতি পালন করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষকরা। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। গতকাল সোমবার সকাল থেকে সর্বাত্মক আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা। এদিন বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবন চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার সমিতিও ১ থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত লাগাতার কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে।
অবস্থান কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোজাম্মেল হোসেন বকুল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষকদের অনেক সুবিধা উঠিয়ে দেয়া ও আর্থিক সুবিধা দেয়ার ক্ষেত্রে কার্পণ্য হতে দেখেছি। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান যদি সঠিকভাবে না চলে তাহলে জাতির সামনে অশনি সংকেত অপেক্ষা করে। যেসব মেধাবী শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করছেন, তারা যদি মেধাবী শিক্ষক না পান তাহলে তারা দেশকে কিছুই দিতে পারবে না। মেধাবী শিক্ষক পেতে গেলে মেধাবী শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করতে হবে। যেন তারা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসেন। তাদের আকর্ষণ করার জন্য আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। আরও কত সুযোগ-সুবিধা দেয়া যায় সেই চেষ্টা করতে হবে। প্রতিবেশী অনেক দেশে শিক্ষকদের বেতন সাধারণ চাকরি থেকে অনেক বেশি। কিন্তু বাংলাদেশে স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের কথা বার বার বলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
রাবির শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. ওমর ফারুক সরকার বলেন, জাতিকে ও দেশের জনগণকে জানাতে চাই, আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়েছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী এটা দেখবেন, এই সমস্যার সমাধান করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক রাস্তায় দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিতে চায় না। তাদের বক্তব্য দেয়ার জায়গা ক্লাসরুম, সেমিনার, ল্যাবরেটরি। আজ (গতকাল সোমবার) থেকে আমরা সব বন্ধ করে দিয়েছি। সব ধরনের ক্লাস বন্ধ রয়েছে, লিখিত ও ভাইভাসহ সব পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে, সব ধরনের সেমিনার, সিম্পোজিয়াম বন্ধ রয়েছে, গবেষণা বন্ধ রয়েছে, শিক্ষকদের প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। যেটাকে আমরা বলি সর্বাত্মক কর্মবিরতি।
রাবির শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, গত দুই মাস থেকে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। ভেবেছিলাম এমন পরিস্থিতি আসবে যে আমাদের আর কর্মসূচির মধ্যে যেতে হবে না। যেহেতু তেমন কিছু হয়নি তাই কর্মসূচিতে যেতে হচ্ছে। আর এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান অনড় বলেই মনে হচ্ছে। এজন্য আমাদের এটা আরও চালিয়ে যেতে হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশে যখনই কোনো কিছু ঘটে তখন সবকিছু শিক্ষকদের ওপরে আসে। আর্থিক খাত থেকে বিভিন্ন জায়গায় বঞ্চিত করা হয়েছে। আপনারা জানেন ২০১৫ সালে অবনমন করা হয়। আবার সর্বজনীন পেনশন স্কিমের নামে আর্থিকভাবে ক্ষতি করছে। শুধু আর্থিকভাবে নয়, আমি মনে করি এটার সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। এটা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র বলে মনে করি।
কর্মবিরতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা: কর্মবিরতি পালন করছেন কিশোরগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ০পরীক্ষা ও ল্যাব বন্ধ রয়েছে। গতকাল সোমবার শিক্ষকরা পূর্ণ কর্মবিরতিতে যান। তারা বলছেন, বৈষম্যমূলক প্রত্যয় স্কিম থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি প্রত্যাহার, প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি, শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আহ্বানে ঘোষিত কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি।
অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস: অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস পরীক্ষা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। এতে করে পরীক্ষাসহ অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। গতকাল বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাউন্ড ফ্লোরে কর্মবিরতি শুরু হয়। চলে দুপুর ১টা পর্যন্ত। এসময় সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল চালুর দাবি জানানো হয়।
ববি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মোহাম্মদ আবদুল বাতেন চৌধুরী বলেন, ববির ক্লাস, পরীক্ষা, সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম সবকিছু বন্ধ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের কর্মসূচির সঙ্গে ববি শিক্ষকরা একাত্ম হয়েছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবো। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বাহাউদ্দিন গোলাপ বলেন, দাবি আদায়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ। দ্রুত সময়ে দাবি পূরণে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করছি। ববি শিক্ষার্থীরা জানান, পরীক্ষাসহ অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তারা বিপাকে পড়েছেন। তাই অবিলম্বে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন চলমান থাকায় কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে শিগগির এ বিষয়ে সমাধান হবে বলে আশা করছি। কারণ আমরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আস্থাশীল।
উল্লেখ্য, গত ১৩ মার্চ সর্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে ‘প্রত্যয় স্কিম’ এ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ ব্যবস্থাকে একটি বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা বলে শুরু করেই বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠনগুলো। দাবি আদায়ে কিছু কর্মসূচি পালনের পর গত ৪ জুন অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকেরা। এরপরও দাবির বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় গত ২৫,২৬ ও ২৭ জুন অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেন তারা। পরে ৩০ জুন পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করা হয়।