একদিকে ডলার সংকট, অন্যদিকে ভারতে পণ্যের দাম বৃদ্ধি। এর প্রভাব পড়েছে হিলি স্থলবন্দরে। এতে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য নেমে এসেছে অর্ধেকের নিচে। আগে যেখানে দেড় থেকে ২০০ ট্রাকভর্তি পণ্য আমদানি হতো, সেখানে এখন তা নেমে এসেছে গড়ে ৩০টিতে। আমদানি কমায় দুশ্চিন্তায় আছেন বন্দরের শ্রমিকরা। আর আয় কমায় বন্দরের ব্যয়ভার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রতিদিন ভারতীয় ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করার পরেই ক্রেতা-বিক্রেতায় মুখরিত হয়ে উঠত পুরো বন্দর এলাকা। অথচ সেই চিত্র অনেকটাই পাল্টে গেছে। স্থবির হয়ে পড়েছে এখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য। আমদানি কেন কম হচ্ছে জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা জানান, ডলারের সংকট। ফলে চাহিদামতো ব্যাংকগুলো এলসি সরবরাহ করতে পারছে না। এলসি দেয়া পণ্যের দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ডলারের দামও বাড়ছে। যে দরে এলসি করা হচ্ছে, বিল ছাড়ার সময় অতিরিক্ত টাকা দিয়ে বিল ছাড়তে হচ্ছে। এতে বড় ধরনের লোকসান গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। ফলে অনেক কমে গেছে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য। হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারক ওহিদুর রহমান নিপোন বলেন, ‘আগে আমার প্রতিষ্ঠানে ১০টির মতো এলসি খোলা হতো, বর্তমানে তা প্রায় শূন্যে নেমেছে। কোনো মাসে এক-দুইটা এলসি খোলা হলেও পরের মাসে নেই। ডলার সংকটের মধ্যে এলসি খুললেও দেখা যায়, বিল ছাড়তে গিয়ে লোকসানে পড়তে হচ্ছে। বিল ছাড়তে গিয়ে দেখি ডলারের দাম বেশি। ফলে এলসি খুলে লোকসান হওয়ায় আমদানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ ছাড়া আমরা যেসব পণ্য আমদানি করি, একই পণ্য অন্যান্য বন্দর দিয়ে আমদানি করলে কমমূল্যে শুল্কায়নসহ অন্যান্য সুবিধা পাওয়া যায়। কিন্তু হিলি দিয়ে সুবিধা তো দূরের কথা, উল্টো বাড়তি দামে শুল্কায়ন করা হয়। ফলে আমদানির পরিমাণ অনেক কমে গেছে।’ বন্দরশ্রমিক মুসলিম উদ্দিন বলেন, ‘আগে আমদানি-রপ্তানি বেশি হওয়ায় আমাদের আয় বেশি হতো। বর্তমানে ভারত থেকে পণ্যবাহী ট্রাক বন্দরে কম আসছে, এতে আমাদেরও কামাই-রোজগার কমে গেছে। প্রতিদিন সকালে আসি কামাই-রোজগার হবে ভেবে। অনেক সময় খালি হাতে ফিরতে হয় বাড়িতে। কারণ এখন সারা দিনে ২০-২৫টি ট্রাকে পণ্য আমদানি হচ্ছে। যেখানে শ্রমিক আছে তিন শতাধিক। ফলে সবার অবস্থা খারাপ। দিন শেষে ৪০ থেকে ৫০ টাকা করে জুটছে ভাগে। কোনোদিন সেটিও হচ্ছে না। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছি আমরা।’ বন্দরে আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশিদ বলেন, ‘হিলি স্থলবন্দর দিয়ে মূলত পেঁয়াজ, আদা, রসুন, জিরা ও গোখাদ্য ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করা হয়ে থাকে। কিন্তু দিন দিন আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য কমে আসছে।’ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অফিসের কর্মচারী কিরণ বলেন, ‘দিন দিন ব্যবসা-বাণিজ্য অনেক খারাপ হচ্ছে। আমাদের অফিসের কর্মচারী ৯ জন। আগে প্রতিদিন ৩০-৪০টি ট্রাকের পণ্য খালাস করতে পারতাম। তাতে কর্মচারীদের বেতন দিয়ে অফিসের লাভ হতো। এখন সব মিলিয়ে বন্দরে ট্রাক ঢুকছে ২৫-৩০টি। এতে অফিসের আয় তো দূরের কথা, কর্মচারীদের বেতন দিতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন প্রতাপ মল্লিক বলেন, ‘দেশের মোট চাহিদার বেশিরভাগ পণ্য আমদানি হয় এ বন্দর দিয়ে। প্রতিদিন দুই শতাধিক ট্রাকে চাল, ডাল, পেঁয়াজ, খৈল, ভুসি, ভুট্টা ও পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি হতো। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকতো বন্দর। কিন্তু দিন দিন স্থবিরতা নেমে এসেছে বন্দরে। আমদানি কমায় আয় কমেছে শ্রমিকদের। এতে বিপাকে পড়েছেন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও কর্মীরাও। এরইমধ্যে বন্দরের ৩৭ জন কর্মচারীকে ছুটিতে পাঠিয়ে ব্যয় কমানোর চেষ্টা চালাচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।’ হিলি কাস্টমসের তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১২ লাখ ৯৭ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছিল। সেখানে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের গত ১১ মাসে ভারত থেকে পণ্য আমদানি হয়েছে ৬ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন।
হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন প্রতাপ মল্লিক বলেন, ‘দেশের মোট চাহিদার বেশিরভাগ পণ্য আমদানি হয় এ বন্দর দিয়ে। প্রতিদিন দুই শতাধিক ট্রাকে চাল, ডাল, পেঁয়াজ, খৈল, ভুসি, ভুট্টা ও পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি হতো। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকতো বন্দর। কিন্তু দিন দিন স্থবিরতা নেমে এসেছে বন্দরে। আমদানি কমায় আয় কমেছে শ্রমিকদের। এতে বিপাকে পড়েছেন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও কর্মীরাও। এরইমধ্যে বন্দরের ৩৭ জন কর্মচারীকে ছুটিতে পাঠিয়ে ব্যয় কমানোর চেষ্টা চালাচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।’ হিলি কাস্টমসের তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১২ লাখ ৯৭ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছিল। সেখানে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের গত ১১ মাসে ভারত থেকে পণ্য আমদানি হয়েছে ৬ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন।