
প্রভাবশালীদের সঙ্গে ওঠাবসা তার। চোখ ধাঁধানো বিজ্ঞাপন আর নানা চমকের কারণে বারবার আলোচনায় আসে তার খামার। সেখানে নিজেই ক্রেতাদের হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানান। দেখেশুনে মনে হয় এই ‘সাদেক এগ্রো’ ঘিরেই যেন পরিচালিত হয় তার সার্বিক কার্যক্রম। কিন্তু এই খামারের আড়ালে দিনে দিনে উত্থান ঘটেছে এক গরু মাফিয়ার, যার নাম শাহ ইমরান হোসেন। দেশের সীমান্ত এলাকা থেকে রাজধানী পর্যন্ত বিস্তার করেছেন গরু চোরাচালানের সিন্ডিকেট। ভারত, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ থেকে চোরাইপথে নানা জাতের গরু আনা হয়। সেজন্য স্তরে স্তরে রাখা হয় দালাল। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে তোলা হয়েছে গরু রাখার গোপন ডেরা। ঢাকার বছিলায় খাল দখল করে গড়ে তুলেছেন এগ্রো ফার্ম। প্রয়োজনে ব্যবহার করেন তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, আমলা এবং ব্যবসায়ীদের।
এ খাতের অনিয়ম দেখার দায়িত্বে থাকা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরও তার হাতের মুঠোয়। কথামতো না চললে অন্য খামারিদের বিরুদ্ধে যখন তখন মামলা ঠুকে দেন। দাপট দেখিয়ে বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পদও দখলে নিয়েছেন শাহ ইমরান হোসেন।
জানা গেছে, ২০০৮ সালে রাজধানীর উপকণ্ঠ বছিলায় মাত্র কয়েকটি গরু নিয়ে যাত্রা শুরু হয় সাদেক এগ্রোর। তবে কয়েক বছরের মধ্যেই ব্যাপ্তি বাড়তে থাকে ব্যবসার। তখন থেকেই প্রভাবশালীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে শুরু করেন ইমরান। আর সেই সুবাদেই জড়িয়ে পড়েন গরু চোরাচালানের সঙ্গে। অল্প টাকায় ভারত থেকে গরু এনে রাজধানীর বিভিন্ন হাটে বিক্রি করেন। এ ছাড়া থাইল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকেও আনেন উন্নত জাতের গরু।
ইমরানের ঘনিষ্ঠরা জানান, ক্ষমতাসীন দলের সিলেট অঞ্চলের এক নেতার জামাতার হাত ধরে প্রভাবশালীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়া শুরু করেন ইমরান। ধীরে ধীরে প্রশাসন ও পুলিশের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী কর্মকর্তার সঙ্গেও সখ্য গড়ে তোলেন। সেই তালিকায় আছেন একজন সাবেক আইজিপি, বর্তমান ডিআইজি এবং এনবিআরের আলোচিত কর্মকর্তা মতিউর রহমান। তারা প্রায়ই ইমরানের সাদেক এগ্রোতে সময় কাটাতেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কক্সবাজারের উখিয়া সীমান্ত দিয়ে গরু চোরাচালানের রুট নিয়ন্ত্রণ করেন ইমরান হোসেন। এর সঙ্গে যুক্ত সেখানকার হলদিয়াপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস। তিনি চোরাইপথে আসা গরু সীমান্ত পারাপার এবং স্থানীয়ভাবে দেখভালের দায়িত্ব পালন করেন।
অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, থাইল্যান্ড থেকে উন্নত জাতের গরু মিয়ানমার হয়ে উখিয়া সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এর নেপথ্যে ভূমিকা রাখেন ইমরান। তবে এই প্রক্রিয়ায় দেশে আসা গরু বছিলার সাদেক এগ্রোর খামারে রাখা হয় না। নানা মাধ্যমে সেগুলো রাখা হয় নরসিংদীর শেখ ক্যাটল ফার্মে। কাগজে-কলমে এই ফার্মটির মালিক নাসিরুল্লাহ ছোটন। তবে ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন ইমরান হোসেন।
বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া একাধিক ভিডিওতে দেখা গেছে, থাইল্যান্ড থেকে আসা গরু উখিয়া সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এরপর সেগুলো দীর্ঘদিন রাখা হয় ইমরুল কায়েসের জিম্মায়। সেজন্য উখিয়ার গহিন জঙ্গলে তৈরি করা হয়েছে গোপন ডেরা। সেখানে সাধারণত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সাধারণ মানুষের চোখ পড়ে না।
একাধিক ভিডিওতে দেখা যায়, থাইল্যান্ড থেকে আসা গরু ওই ডেরায় দেখভাল করছেন ইমরুল কায়েস। একটি ভিডিওতে সেখানে সাদেক এগ্রোর মালিক ইমরান হোসেনকেও গরুর তদারকি করতে দেখা যায়। বেশ কয়েকটি ছবিতেও ইমরুল কায়েস এবং ইমরান হোসেনকে একসঙ্গে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়।
অনুসন্ধান বলছে, উখিয়া থেকে সুযোগ মতো গরু এনে দীর্ঘদিন রাখা হয় নরসিংদীর শেখ ক্যাটল ফার্মে। এ ছাড়া বছিলার নবীনগর হাউজিংয়ের একটি গোপন ফার্মেও রাখা হয় এসব গরু। নরসিংদীর ওই ক্যাটল ফার্মে রাখা রয়েছে থাইল্যান্ড থেকে আসা গরু। প্রতিটি গরুর ওপর রয়েছে থাইল্যান্ডের মার্ক করা সিরিয়াল নম্বরও। যদিও প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্য বলছে, বৈধভাবে থাইল্যান্ড থেকে কোনো গরু বাংলাদেশে আসেনি। সেই সুযোগও নেই। নবীনগর হাউজিংয়ে গিয়েও দেখা গেছে একই চিত্র। ব্রাহমা জাতের অন্তত ২০টি গরু রাখা রয়েছে ওই ফার্মে।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতর বলছে, বাংলাদেশে বৈধভাবে বিদেশ থেকে ব্রাহমা জাতের গরু আমদানির সুযোগ নেই। তবে শেখ ক্যাটল ফার্মের মালিক নাসিরুল্লাহ ছোটন এবং ইমরান হোসেন এসব গরু নানা পথে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। তথ্য বলছে, বাংলাদেশ থেকে একমাত্র ছোটনই থাই-আমেরিকান ব্রাহমা বিডারস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য পদ নিয়েছেন। থাইল্যান্ড কিংবা যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে গরু আমদানির কোনো সুযোগ না থাকলেও তাকে সদস্য করেছে ওই সংগঠন। ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর নাসিরুল্লাহ ছোটন সংগঠনটির সদস্যপদ লাভ করেন। এরপর প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ ব্রাহামা গরু থাইল্যান্ড থেকে আনা হয়। এসব গরু সাদেক এগ্রোর ইমরানের সহায়তায়ই বিক্রি করা হয় বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।
সাদেক এগ্রোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তিও বলছেন, এই ফার্মে গরু পালন করা হয় না। হাতেগোনা কয়েকটি বিদেশি প্রজাতির গরু থাকে। তবে কোরবানি ঈদের কয়েক মাস আগে বিভিন্ন মাধ্যমে গরু নিয়ে আসা হয়।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ ক্যাটল ফার্মের মালিক নাসিরুল্লাহ ছোটন বলেন, ওসব আমি আনতাম না। বিভিন্ন মাধ্যমে বর্ডার থেকে যারা আনতেন, লোকাল মার্কেটে তাদের কাছ থেকে কিনতাম। এখন আমি ওই ব্যবসায় নেই। সার্বিক বিষয়ে কথা বলার জন্য সাদেক এগ্রোর অফিসে গিয়েও প্রতিষ্ঠানটির মালিক শাহ ইমরান হোসেনকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোন নম্বরে বারবার কল করা হলেও রিসিভ করেননি। পরে মোবাইল ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের মাধ্যমে প্রশ্ন পাঠানো হলেও তিনি জবাব দেননি।
সাদেক এগ্রোর ইনচার্জ মো. শরীফ বলেন, আমরা এতকিছু জানি না। আমরা এখানে শুধু চাকরি করি।
বাংলাদেশ ভেটেরিনারি অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মোহাম্মদ হাবিব মোল্লা বলেন, ইমরান একজন মাফিয়া। তিনি কারও কথা শোনেন না। তিনি ডেইরি ফারমার না, ব্রোকার। গরু বেচাকেনা করেন। ঈদের আগে গরু কিনে বিক্রি করেন। তিনি খামারিদের ক্ষতি করছেন।
চট্টগ্রাম ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি মালিক ওমর বলেন, তার সঙ্গে আমাদের মূলত বিরোধ বাধে ব্রাহমা জাতের গরুর ব্যবসা নিয়ে। আমরা তাকে বলি, আপনি হয় ব্রাহমা গরুর ব্যবসা করেন, না হয় সংগঠন করেন। তিনি দুইটাই করতে চান। কারণ সংগঠনের সভাপতি হিসেবে তার জন্য অবৈধভাবে ব্রাহমা জাতের গরুরু ব্যবসা করা সহজ। তিনি আরও বলেন, ইমরান আগে বিমানবন্দর দিয়ে গরু আনত। ২০২১ সালে তার চালান ধরা পড়ার পরে আর বিমানবন্দর দিয়ে গরু আনেন না। এখন আমেরিকা থেকে গরু প্রথমে থাইল্যান্ডে আনেন। এরপর সেখান থেকে বর্ডার দিয়ে চোরাইপথে বাংলাদেশে এনে বিক্রি করেন।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ডা. রেয়াজুল হক বলেন, ব্রাহমা জাতের গরু আমদানির অনুমোদন নেই। কেউ যদি গবেষণার জন্য আনতে চান তাহলে সেভাবেই অনুমোদন নিতে হবে। সরকারি একটি প্রসেস রয়েছে। তা না মেনে কেউ গরু আনলে সেটি অবৈধ। কেউ এ ধরনের কাজ করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, ছাগলকাণ্ডের সেই ১৫ লাখ টাকার ছাগল নিয়ে দেশব্যাপী তুলকালাম হয়ে গেলেও আলোচিত সেই ছাগলটি দেশীয় জাতের। তথ্য বলছে, ওই ছাগলটি যশোরের একটি বাজার থেকে মাস দুয়েক আগে ১ লাখ টাকায় আনা হয়। তবে ঈদ সামনে রেখে সেটি বিদেশি ব্রিটল জাতের ছাগল বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করেন ইমরান হোসেন। এরপর এর দাম নির্ধারণ করা হয় ১৫ লাখ টাকা, যেটি ক্রয় করেন আলোচিত এনবিআর কর্মকর্তা মতিউরপুত্র মুশফিকুর রহমান ইফাত। সাদেক এগ্রোর ইনচার্জ মো. শরীফও যশোর থেকে ছাগল আনার এ তথ্য স্বীকার করেছেন।
এ খাতের অনিয়ম দেখার দায়িত্বে থাকা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরও তার হাতের মুঠোয়। কথামতো না চললে অন্য খামারিদের বিরুদ্ধে যখন তখন মামলা ঠুকে দেন। দাপট দেখিয়ে বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পদও দখলে নিয়েছেন শাহ ইমরান হোসেন।
জানা গেছে, ২০০৮ সালে রাজধানীর উপকণ্ঠ বছিলায় মাত্র কয়েকটি গরু নিয়ে যাত্রা শুরু হয় সাদেক এগ্রোর। তবে কয়েক বছরের মধ্যেই ব্যাপ্তি বাড়তে থাকে ব্যবসার। তখন থেকেই প্রভাবশালীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে শুরু করেন ইমরান। আর সেই সুবাদেই জড়িয়ে পড়েন গরু চোরাচালানের সঙ্গে। অল্প টাকায় ভারত থেকে গরু এনে রাজধানীর বিভিন্ন হাটে বিক্রি করেন। এ ছাড়া থাইল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকেও আনেন উন্নত জাতের গরু।
ইমরানের ঘনিষ্ঠরা জানান, ক্ষমতাসীন দলের সিলেট অঞ্চলের এক নেতার জামাতার হাত ধরে প্রভাবশালীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়া শুরু করেন ইমরান। ধীরে ধীরে প্রশাসন ও পুলিশের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী কর্মকর্তার সঙ্গেও সখ্য গড়ে তোলেন। সেই তালিকায় আছেন একজন সাবেক আইজিপি, বর্তমান ডিআইজি এবং এনবিআরের আলোচিত কর্মকর্তা মতিউর রহমান। তারা প্রায়ই ইমরানের সাদেক এগ্রোতে সময় কাটাতেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কক্সবাজারের উখিয়া সীমান্ত দিয়ে গরু চোরাচালানের রুট নিয়ন্ত্রণ করেন ইমরান হোসেন। এর সঙ্গে যুক্ত সেখানকার হলদিয়াপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস। তিনি চোরাইপথে আসা গরু সীমান্ত পারাপার এবং স্থানীয়ভাবে দেখভালের দায়িত্ব পালন করেন।
অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, থাইল্যান্ড থেকে উন্নত জাতের গরু মিয়ানমার হয়ে উখিয়া সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এর নেপথ্যে ভূমিকা রাখেন ইমরান। তবে এই প্রক্রিয়ায় দেশে আসা গরু বছিলার সাদেক এগ্রোর খামারে রাখা হয় না। নানা মাধ্যমে সেগুলো রাখা হয় নরসিংদীর শেখ ক্যাটল ফার্মে। কাগজে-কলমে এই ফার্মটির মালিক নাসিরুল্লাহ ছোটন। তবে ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন ইমরান হোসেন।
বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া একাধিক ভিডিওতে দেখা গেছে, থাইল্যান্ড থেকে আসা গরু উখিয়া সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এরপর সেগুলো দীর্ঘদিন রাখা হয় ইমরুল কায়েসের জিম্মায়। সেজন্য উখিয়ার গহিন জঙ্গলে তৈরি করা হয়েছে গোপন ডেরা। সেখানে সাধারণত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সাধারণ মানুষের চোখ পড়ে না।
একাধিক ভিডিওতে দেখা যায়, থাইল্যান্ড থেকে আসা গরু ওই ডেরায় দেখভাল করছেন ইমরুল কায়েস। একটি ভিডিওতে সেখানে সাদেক এগ্রোর মালিক ইমরান হোসেনকেও গরুর তদারকি করতে দেখা যায়। বেশ কয়েকটি ছবিতেও ইমরুল কায়েস এবং ইমরান হোসেনকে একসঙ্গে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়।
অনুসন্ধান বলছে, উখিয়া থেকে সুযোগ মতো গরু এনে দীর্ঘদিন রাখা হয় নরসিংদীর শেখ ক্যাটল ফার্মে। এ ছাড়া বছিলার নবীনগর হাউজিংয়ের একটি গোপন ফার্মেও রাখা হয় এসব গরু। নরসিংদীর ওই ক্যাটল ফার্মে রাখা রয়েছে থাইল্যান্ড থেকে আসা গরু। প্রতিটি গরুর ওপর রয়েছে থাইল্যান্ডের মার্ক করা সিরিয়াল নম্বরও। যদিও প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্য বলছে, বৈধভাবে থাইল্যান্ড থেকে কোনো গরু বাংলাদেশে আসেনি। সেই সুযোগও নেই। নবীনগর হাউজিংয়ে গিয়েও দেখা গেছে একই চিত্র। ব্রাহমা জাতের অন্তত ২০টি গরু রাখা রয়েছে ওই ফার্মে।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতর বলছে, বাংলাদেশে বৈধভাবে বিদেশ থেকে ব্রাহমা জাতের গরু আমদানির সুযোগ নেই। তবে শেখ ক্যাটল ফার্মের মালিক নাসিরুল্লাহ ছোটন এবং ইমরান হোসেন এসব গরু নানা পথে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। তথ্য বলছে, বাংলাদেশ থেকে একমাত্র ছোটনই থাই-আমেরিকান ব্রাহমা বিডারস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য পদ নিয়েছেন। থাইল্যান্ড কিংবা যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে গরু আমদানির কোনো সুযোগ না থাকলেও তাকে সদস্য করেছে ওই সংগঠন। ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর নাসিরুল্লাহ ছোটন সংগঠনটির সদস্যপদ লাভ করেন। এরপর প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ ব্রাহামা গরু থাইল্যান্ড থেকে আনা হয়। এসব গরু সাদেক এগ্রোর ইমরানের সহায়তায়ই বিক্রি করা হয় বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।
সাদেক এগ্রোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তিও বলছেন, এই ফার্মে গরু পালন করা হয় না। হাতেগোনা কয়েকটি বিদেশি প্রজাতির গরু থাকে। তবে কোরবানি ঈদের কয়েক মাস আগে বিভিন্ন মাধ্যমে গরু নিয়ে আসা হয়।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ ক্যাটল ফার্মের মালিক নাসিরুল্লাহ ছোটন বলেন, ওসব আমি আনতাম না। বিভিন্ন মাধ্যমে বর্ডার থেকে যারা আনতেন, লোকাল মার্কেটে তাদের কাছ থেকে কিনতাম। এখন আমি ওই ব্যবসায় নেই। সার্বিক বিষয়ে কথা বলার জন্য সাদেক এগ্রোর অফিসে গিয়েও প্রতিষ্ঠানটির মালিক শাহ ইমরান হোসেনকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোন নম্বরে বারবার কল করা হলেও রিসিভ করেননি। পরে মোবাইল ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের মাধ্যমে প্রশ্ন পাঠানো হলেও তিনি জবাব দেননি।
সাদেক এগ্রোর ইনচার্জ মো. শরীফ বলেন, আমরা এতকিছু জানি না। আমরা এখানে শুধু চাকরি করি।
বাংলাদেশ ভেটেরিনারি অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মোহাম্মদ হাবিব মোল্লা বলেন, ইমরান একজন মাফিয়া। তিনি কারও কথা শোনেন না। তিনি ডেইরি ফারমার না, ব্রোকার। গরু বেচাকেনা করেন। ঈদের আগে গরু কিনে বিক্রি করেন। তিনি খামারিদের ক্ষতি করছেন।
চট্টগ্রাম ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি মালিক ওমর বলেন, তার সঙ্গে আমাদের মূলত বিরোধ বাধে ব্রাহমা জাতের গরুর ব্যবসা নিয়ে। আমরা তাকে বলি, আপনি হয় ব্রাহমা গরুর ব্যবসা করেন, না হয় সংগঠন করেন। তিনি দুইটাই করতে চান। কারণ সংগঠনের সভাপতি হিসেবে তার জন্য অবৈধভাবে ব্রাহমা জাতের গরুরু ব্যবসা করা সহজ। তিনি আরও বলেন, ইমরান আগে বিমানবন্দর দিয়ে গরু আনত। ২০২১ সালে তার চালান ধরা পড়ার পরে আর বিমানবন্দর দিয়ে গরু আনেন না। এখন আমেরিকা থেকে গরু প্রথমে থাইল্যান্ডে আনেন। এরপর সেখান থেকে বর্ডার দিয়ে চোরাইপথে বাংলাদেশে এনে বিক্রি করেন।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ডা. রেয়াজুল হক বলেন, ব্রাহমা জাতের গরু আমদানির অনুমোদন নেই। কেউ যদি গবেষণার জন্য আনতে চান তাহলে সেভাবেই অনুমোদন নিতে হবে। সরকারি একটি প্রসেস রয়েছে। তা না মেনে কেউ গরু আনলে সেটি অবৈধ। কেউ এ ধরনের কাজ করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, ছাগলকাণ্ডের সেই ১৫ লাখ টাকার ছাগল নিয়ে দেশব্যাপী তুলকালাম হয়ে গেলেও আলোচিত সেই ছাগলটি দেশীয় জাতের। তথ্য বলছে, ওই ছাগলটি যশোরের একটি বাজার থেকে মাস দুয়েক আগে ১ লাখ টাকায় আনা হয়। তবে ঈদ সামনে রেখে সেটি বিদেশি ব্রিটল জাতের ছাগল বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করেন ইমরান হোসেন। এরপর এর দাম নির্ধারণ করা হয় ১৫ লাখ টাকা, যেটি ক্রয় করেন আলোচিত এনবিআর কর্মকর্তা মতিউরপুত্র মুশফিকুর রহমান ইফাত। সাদেক এগ্রোর ইনচার্জ মো. শরীফও যশোর থেকে ছাগল আনার এ তথ্য স্বীকার করেছেন।