বরিশাল নগরীতে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট ॥ দুর্ভোগে এলাকাবাসী

আপলোড সময় : ১৬-০৬-২০২৪ ১১:৫৯:১২ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ১৬-০৬-২০২৪ ১১:৫৯:১২ পূর্বাহ্ন
বরিশাল প্রতিনিধি
আল্লাহ আরও দুটি হাত দিলে আমাদের জন্য ভালো হতো। চার হাতে কম করে হলেও ৬ থেকে ৭টি কলসি-বালতি পানিতে ভরে ঘরে নিয়ে আসতে পারতাম। সুস্থ থাকি আর না থাকি সংসারের প্রতিদিনের কাজের জন্য সকালে পানি আনতেই হয়। ক্ষোভ ও হতাশা নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হাসিনা বেগম। নগরীর মতাসার এবং পুরানপাড়ার বেশিরভাগ বাসিন্দার অভিযোগ এই পানি সংকট নিয়েই। প্রতিদিন সকাল থেকে ওই এলাকার বাসিন্দাদের শুরু হয় পানি সংগ্রহের সংগ্রাম। স্থানীয় মসজিদ কিংবা যে বাড়িতে টিউবওয়েলসহ পাম্প বসানো আছে সেখানে পানির জন্য ধরনা দিতে হয়। স্থানীয় মেয়র ও কাউন্সিলর পানি সংকট দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। মতাসার এবং পুরানপাড়ার বাসিন্দারা জানান, বরিশাল সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর এ পর্যন্ত মেয়র এবং ভারপ্রাপ্ত মেয়রসহ ছয়জন দায়িত্ব পালন করেছেন। এভাবে কেটেছে ২২ বছর। এখনও সুপেয় পানির সংকটে ভুগছেন ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা।
পানি সংগ্রহের এই দৌড়ঝাঁপ কবে শেষ হবে জানেন না তারা। মো. মোবাশ্বের বলেন, প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘরের নারী-পুরুষ সবাই গৃহস্থালীর কাজে ব্যবহারের জন্য পানি সংগ্রহে নামেন। মসজিদে-মসজিদে এবং যে সকল বাড়িতে টিউবওয়েলসহ পাম্প বসানো আছে সেখানে যেতে হয় পানি আনতে। এতে নানা জনের নানা কথাও শুনতে হয়। কিন্তু সেই কথায় রাগ করলে পানি পাওয়া যাবে না। এ কারণে চুপচাপ থেকে পানি নিয়ে ঘরে আসতে হয়। দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে দৈনন্দিন ঘর-গৃহস্থালীর কাজে ব্যবহারের পানি অন্য বাড়ি থেকে আনতে হচ্ছে হাসিনা বেগমকে। তিনি বলেন, আল্লাহ আর দুটি হাত বেশি দিলে আমাদের জন্য ভালো হতো। কারণ চার হাতে কম করে হলেও ৬ থেকে ৭টি পানির পাত্র ভরে ঘরে নিয়ে আসতে পারতাম। সুস্থ থাকি আর না থাকি প্রতিদিন সকালে পানি আনতে অন্যের দুয়ারে যেতেই হয়। নগরীর ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের প্রায় সবার ঘরেই পানি সংকট। তাদের অভাব-অভিযোগের বেশির ভাগজুড়েই আছে পানি সংকটের কথা। তারা জানান, এই এলাকা যখন ইউনিয়ন পরিষদে ছিল তখনও পানির কষ্ট করতে হয়েছে।
অনেক বছর ধরেই তারা পানির জন্য সরকারি বিভিন্ন মহলে দেন-দরবার করে আসছে। কিন্তু সরকারিভাবে টিউবওয়েল বা পাইপলাইনের পানি কোনটাই আসেনি। এর মধ্যে একদিন খবর আসে এই এলাকা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সিটি করপোরেশনের অধীনে চলে গেছে। তখন সবাই ভেবেছিল, কষ্টের দিন বুঝি শেষ হলো। কিন্তু আশায় আশায় কেটেছে আরও ২০ বছর। পানি আর আসেনি। ‘প্রতিবার সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় যিনিই পানির ব্যবস্থা করে দেয়ার ওয়াদা করেছেন তাকেই কাউন্সিলর নির্বাচিত করেছি। তাতেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এখন বিষয়টা আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়েছি। আক্ষেপ করে রাজ্জাক হাওলাদার ও ফারুক হাওলাদার বলেন, সিটি করপোরেশনের সব ধরনের ট্যাক্স তারা নিয়মিত দিয়ে আসছেন। কিন্তু পানির সুবিধা আজও পাননি।
এ জন্য সিটি করপোরেশনের একাধিক মেয়রসহ ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের কাছে অনুরোধ জানিয়েও কাজ হয়নি। তারা শিগগিরই সমাধান হয়ে যাবে বললেও আমাদের দুর্ভোগ শেষ হচ্ছে না। দেশ স্বাধীনের পর খাবার পানির দুর্ভোগ অবসানের আশায় ছিলেন এলাকাবাসী। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সেই দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সিটি করপোরেশনের অধীন আসার ঘোষণায় আশায় বুক বেঁধেছিলেন তারা। এবার নিশ্চয় পানির সমস্যার সমাধান হবে, ঘরের নারী-পুরুষ এবং সন্তানদের ভোর হলেই অন্যের দুয়ারে ছুটতে হবে না পানির জন্য। কিন্তু এত দিনেও কিছু হলো না। গৃহবধূ কোহিনূর বেগম বলেন, খাবার পানির জন্য সকলেই সহযোগিতা করেন। কিন্তু গোসলের পানি কেউ দিতে চায় না। বেশিরভাগ পুকুরের পানি ভালো না। তা দিয়ে শিশুদের গোসল করালে চুলকানি থেকে শুরু করে বিভিন্ন রোগ হয়। সেই রোগের জন্য আবার চিকিৎসকের কাছে যেতে হয়। যাদের টাকা আছে তারা পারে, কিন্তু সবার পক্ষে সেটি সম্ভব হয় না। এ জন্য সিটি করপোরেশনের কাছে পানির লাইন দেয়ার অনুরোধ জানান তিনি। কোহিনূর বেগম আরও বলেন, মাঝে-মধ্যে ঘরে পানি না থাকলে প্রতিবেশীর কাছ থেকে পানি ধার করতে হয়। যে বাড়ি থেকেই পানি আনি, তাদের সাফ কথা- আগামীকাল ভোরে কলস ভরে পানি দিয়ে যাবা। পরদিন তাদের কলস ভরে পানি দিয়ে আসতে হয়।
পরপর দুইবার নির্বাচিত এই কাউন্সিলর জানান, প্রতিবারই নির্বাচিত মেয়রকে এই এলাকার পানির সমস্যার কথা জানিয়ে এলাকায় পানির লাইন আনার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কোনোভাবেই সেই চেষ্টা সফল হয়নি। তবে বর্তমান মেয়র পানির লাইন, সড়ক, ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ বড় একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছেন। বরাদ্দ এলে সঙ্গে সঙ্গে কাজ শুরু হবে। ওই প্রকল্পের অধীন ৪টি পাম্প বসবে। বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। কাউন্সিলর পানি সংকটের বিষয়টি অবহিত করার সঙ্গে সঙ্গে প্রকৌশলীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে ওই এলাকার সড়ক-ড্রেন এবং পানির লাইনের জন্য প্রকল্প প্রস্তুত করতে। তিনি আরও বলেন, যে এলাকায় সড়ক হবে সেই এলাকায় একই সঙ্গে পানির লাইন এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। এতে করে বারবার সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির প্রয়োজন হবে না। জনগণও দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পাবে।

 

সম্পাদকীয় :

সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : সৈয়দ এম. আলতাফ হোসাইন।

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক : সৈয়দ মোঃ আতিকুল হাসান।

নির্বাহী সম্পাদক আশীষ কুমার সেন।

ফোন : ৪৯৩৫৭৭৩০ (বার্তা), ৮৩১৫৬৪৯ (বাণিজ্যিক), ফ্যাক্স; ৮৮-০২-৮৩১৪১৭৪

অফিস :

প্রকাশক কর্তৃক রোমাক্স লিমিটেড, তেজগাঁও শিল্প এলাকা থেকে মুদ্রিত।

সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : খলিল ম্যানশন (৩য়, ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলা), ১৪৯/এ, ডিআইটি এক্সটেনশন এভিনিউ, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত।

ই-মেইল : [email protected], ওয়েবসাইট : www.dainikjanata.net