![](https://dainikjanata.net/public/postimages/666bf5ee53b20.jpg)
বেশ কয়েক বছর ধরে দেশে জ্বালানি সংকট চলছে। গ্যাসের অভাবে বন্ধ বাসা-বাড়িতে নতুন গ্যাস সংযোগ। কলকারখানাগুলো তাদের উৎপাদন সক্ষমতার মাত্র ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ব্যবহার করতে পারছে। দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন কমতে থাকায় তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) আমদানি বাড়ানো হচ্ছে। এতে প্রবল হচ্ছে চলমান ডলার সংকট। এই সংকটের সময়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে জ্বালানি খাতে এক হাজার ৮৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ২৯ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ১৪৩ কোটি টাকা। আর বিদায়ী বাজেটে বিদ্যুৎখাতে বরাদ্দ ছিল ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এটি কমে হয় ২৭ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা। প্রতি অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুৎ খাতের তুলনায় জ্বালানি খাতে বরাদ্দ অনেক কম থাকে। এদিকে গ্যাসের অভাবে কলকারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ নিয়ে গত ৪ জুন বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকারকে চিঠি লিখেছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)। বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, তীব্র গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে বিগত তিন বছর ও তার বেশি সময় ধরে টেক্সটাইল মিলগুলো স্বাভাবিক উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না। কয়েক মাস ধরে মিলগুলো তাদের উৎপাদন ক্ষমতার গড়ে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ব্যবহার করতে পেরেছে। ফলে সুতা ও কাপড়ের উৎপাদন হ্রাস এবং উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিসহ ফেব্রিক প্রসেসিং ব্যয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে, যা এ খাতের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করছে।
গ্যাসের তীব্র সংকট থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে মিলগুলোতে নিয়মিত গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে বারবার সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরকে অনুরোধ করেও কোনো অগ্রগতি পাওয়া যায়নি। বরং কয়েকদিন ধরে মিলগুলোতে গ্যাসের সরবরাহ প্রায় নেই বললেই চলে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে মিলগুলো আগামীতে আর কতদিন চালু রাখা সম্ভব হবে তা নিয়ে বিটিএমএ গভীরভাবে শঙ্কিত বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। দেশের ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা মেটাতে অনশোর এলাকায় তেল, গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য বাপেক্স কর্তৃক পেট্রোবাংলার আওতায় ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ৪৮টি কূপ খনন ও ওয়ার্কওভার করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন কমতে থাকায় তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ও পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) আমদানি বাড়ানো হচ্ছে। এবারের বাজেট প্রস্তাবেও এলএনজি আমদানির সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়ে বলা হয়েছে। তবে দীর্ঘদিন ধরে আমদানি প্রবণতা কমিয়ে দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদন বাড়ানোর দিকে নজর দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
জ্বালানির অভাবে কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে বিপুল পরিমাণ ক্যাপাসিটি চার্জ (কেন্দ্র ভাড়া) দিতে হচ্ছে সরকারকে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছর ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল ৩২ হাজার কোটি টাকা।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গত বছরের সমীক্ষার তথ্য বলছে, বিদ্যুৎখাতে ভর্তুকির বেশিরভাগ অর্থ বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জ মেটাতে ব্যয় করা হয়। অর্থাৎ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও তাদের উৎপাদনক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে একটা নির্দিষ্ট ফি কেন্দ্রগুলোকে দিতে হয়। এই ফি সম্পূর্ণই সরকারকে বহন করতে হয়।
গবেষণায় বলা হয়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট ২৮ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিল ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। গত ৩০ মার্চ গ্যাস ও জ্বালানি সরবরাহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কোম্পানির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছিলেন, আমরা আমাদের গ্যাস সরবরাহের ৩০ শতাংশ আমদানি করি। ফ্লোটিং স্টোরেজ রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) না থাকায় আমাদের গ্যাসের ১০ শতাংশ ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া আমাদের স্থানীয় গ্যাস উৎপাদনও কমে যাচ্ছে।
পেট্রোবাংলার ওয়েবসাইটে দৈনিক গ্যাস উত্তোলন প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ৯ মে দেশে জালালাবাদ গ্যাস ক্ষেত্র থেকে উৎপাদিত গ্যাসের পরিমাণ ১৫৬.৭ ঘনফুট, মৌলভীবাজার থেকে ১৭.৩ ঘনফুট ও বিবিয়ানা থেকে ১০১৬.৫ ঘনফুট। এর এক মাস পরের অর্থাৎ গত ৯ জুনের প্রতিবেদনে দেখা যায়, জালালাবাদ গ্যাস ক্ষেত্রে ১৫৫.৩ ঘনফুট, মৌলভীবাজার থেকে ১৭.২ ঘনফুট ও বিবিয়ানা থেকে ১০০৮.৭ ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে? এতে দেখা যায়, এক মাসের ব্যবধানে গ্যাসের উৎপাদন কমেছে।
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী গত ৬ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনের সময় বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। গ্রিড যুগোপযোগী করার মাধ্যমে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৪ হাজার সার্কিট কিলোমিটারে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সমন্বিত মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কার্যক্রম হিসেবে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী জানান, বিদ্যুৎ উৎপাদনের দীর্ঘমেয়াদি মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০৪১ সালের মধ্যে পাশের দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে এবং মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির গুরুত্ব বিবেচনা, এর উন্নয়ন ও ব্যবহার বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করতে ১০০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। পাবনার ঈশ্বরদীতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এটি বাস্তবায়ন শেষে দুটি ইউনিটে মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে, যা দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে বলে সংসদে বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন অর্থমন্ত্রী।
জ্বালানি সংকট প্রসঙ্গে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, জ্বালানির অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। সাধারণ মানুষ বিদ্যুৎ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, গ্রামের মানুষ লোডশেডিংয়ে ভুগছে। সেই জ্বালানি খাতের উন্নয়নে বা জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি করে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কোনো অর্থ নেই। অতীতের ধারাবাহিকতায় জ্বালানি খাতে একই অবস্থা বিরাজ করছে। জ্বালানির অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যুতের দাম বাড়ছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ফ্যাকাল্টি অব কেমিক্যাল অ্যান্ড ম্যাটারিয়ালস ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ম. তামিম বলেন, বিদ্যুতের বড় বড় প্রকল্প কমে গেছে। এজন্য বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ গত বছরের তুলনায় কমে গেছে। জ্বালানি যদি কম দামে কিনতে পারি, আর উৎপাদন দক্ষতা বাড়ানো যায় তাহলে বিদ্যুতের দাম কমানো সম্ভব হবে। কূপ খননের যে লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে সরকার, তার জন্যও তো টাকা লাগবে। জ্বালানিতে বরাদ্দ খুবই অপ্রতুল।
গ্যাসের তীব্র সংকট থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে মিলগুলোতে নিয়মিত গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে বারবার সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরকে অনুরোধ করেও কোনো অগ্রগতি পাওয়া যায়নি। বরং কয়েকদিন ধরে মিলগুলোতে গ্যাসের সরবরাহ প্রায় নেই বললেই চলে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে মিলগুলো আগামীতে আর কতদিন চালু রাখা সম্ভব হবে তা নিয়ে বিটিএমএ গভীরভাবে শঙ্কিত বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। দেশের ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা মেটাতে অনশোর এলাকায় তেল, গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য বাপেক্স কর্তৃক পেট্রোবাংলার আওতায় ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ৪৮টি কূপ খনন ও ওয়ার্কওভার করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন কমতে থাকায় তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ও পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) আমদানি বাড়ানো হচ্ছে। এবারের বাজেট প্রস্তাবেও এলএনজি আমদানির সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়ে বলা হয়েছে। তবে দীর্ঘদিন ধরে আমদানি প্রবণতা কমিয়ে দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদন বাড়ানোর দিকে নজর দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
জ্বালানির অভাবে কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে বিপুল পরিমাণ ক্যাপাসিটি চার্জ (কেন্দ্র ভাড়া) দিতে হচ্ছে সরকারকে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছর ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল ৩২ হাজার কোটি টাকা।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গত বছরের সমীক্ষার তথ্য বলছে, বিদ্যুৎখাতে ভর্তুকির বেশিরভাগ অর্থ বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জ মেটাতে ব্যয় করা হয়। অর্থাৎ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও তাদের উৎপাদনক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে একটা নির্দিষ্ট ফি কেন্দ্রগুলোকে দিতে হয়। এই ফি সম্পূর্ণই সরকারকে বহন করতে হয়।
গবেষণায় বলা হয়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট ২৮ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিল ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। গত ৩০ মার্চ গ্যাস ও জ্বালানি সরবরাহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কোম্পানির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছিলেন, আমরা আমাদের গ্যাস সরবরাহের ৩০ শতাংশ আমদানি করি। ফ্লোটিং স্টোরেজ রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) না থাকায় আমাদের গ্যাসের ১০ শতাংশ ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া আমাদের স্থানীয় গ্যাস উৎপাদনও কমে যাচ্ছে।
পেট্রোবাংলার ওয়েবসাইটে দৈনিক গ্যাস উত্তোলন প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ৯ মে দেশে জালালাবাদ গ্যাস ক্ষেত্র থেকে উৎপাদিত গ্যাসের পরিমাণ ১৫৬.৭ ঘনফুট, মৌলভীবাজার থেকে ১৭.৩ ঘনফুট ও বিবিয়ানা থেকে ১০১৬.৫ ঘনফুট। এর এক মাস পরের অর্থাৎ গত ৯ জুনের প্রতিবেদনে দেখা যায়, জালালাবাদ গ্যাস ক্ষেত্রে ১৫৫.৩ ঘনফুট, মৌলভীবাজার থেকে ১৭.২ ঘনফুট ও বিবিয়ানা থেকে ১০০৮.৭ ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে? এতে দেখা যায়, এক মাসের ব্যবধানে গ্যাসের উৎপাদন কমেছে।
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী গত ৬ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনের সময় বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। গ্রিড যুগোপযোগী করার মাধ্যমে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৪ হাজার সার্কিট কিলোমিটারে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সমন্বিত মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কার্যক্রম হিসেবে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী জানান, বিদ্যুৎ উৎপাদনের দীর্ঘমেয়াদি মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০৪১ সালের মধ্যে পাশের দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে এবং মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির গুরুত্ব বিবেচনা, এর উন্নয়ন ও ব্যবহার বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করতে ১০০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। পাবনার ঈশ্বরদীতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এটি বাস্তবায়ন শেষে দুটি ইউনিটে মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে, যা দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে বলে সংসদে বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন অর্থমন্ত্রী।
জ্বালানি সংকট প্রসঙ্গে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, জ্বালানির অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। সাধারণ মানুষ বিদ্যুৎ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, গ্রামের মানুষ লোডশেডিংয়ে ভুগছে। সেই জ্বালানি খাতের উন্নয়নে বা জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি করে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কোনো অর্থ নেই। অতীতের ধারাবাহিকতায় জ্বালানি খাতে একই অবস্থা বিরাজ করছে। জ্বালানির অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যুতের দাম বাড়ছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ফ্যাকাল্টি অব কেমিক্যাল অ্যান্ড ম্যাটারিয়ালস ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ম. তামিম বলেন, বিদ্যুতের বড় বড় প্রকল্প কমে গেছে। এজন্য বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ গত বছরের তুলনায় কমে গেছে। জ্বালানি যদি কম দামে কিনতে পারি, আর উৎপাদন দক্ষতা বাড়ানো যায় তাহলে বিদ্যুতের দাম কমানো সম্ভব হবে। কূপ খননের যে লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে সরকার, তার জন্যও তো টাকা লাগবে। জ্বালানিতে বরাদ্দ খুবই অপ্রতুল।