বন্দরসহ কৌশলগত জাতীয় সম্পদ বহুজাতিক কোম্পানির হাতে তড়িঘড়ি হস্তান্তরের সব অপচেষ্টা রুখতে সর্বাত্মক গণ-আন্দোলনে শামিল হতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। গতকাল বৃহস্পতিবার সিপিবির সভাপতি কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান। বিবৃতিতে বলা হয়, বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানিকে হস্তান্তরের চলমান প্রক্রিয়া এবং লালদিয়া চরে টার্মিনালের নকশা প্রণয়ন, নির্মাণ, পরিচালনার জন্য ডাচ কোম্পানির সঙ্গে ইতোমধ্যে সম্পন্ন ৩৩ বছরের কনসেশন চুক্তি ও সুইচ কোম্পানির সঙ্গে সম্পন্ন ঢাকার অদূরে পানগাঁও নৌ-টার্মিনাল ২২ বছরের পরিচালনা চুক্তি ক্ষমতাসীন সরকারের এখতিয়ার বহির্ভূত। নেতারা বলেন, জাতীয় স্বার্থের বিপরীতে পরিচালিত হয়ে ভিন্ন কারো স্বার্থে যে পদক্ষেপসমূহ সরকার গ্রহণ করছে তা করার কোনো সাংবিধানিক অধিকার অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। তারা আরও বলেন, দেশের মানুষ যারা উৎপাদন, বাণিজ্য ও অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত তারা সবাই বন্দরে দ্রুত, দক্ষ এবং সাশ্রয়ী পরিষেবা প্রত্যাশা করে। এজন্য দুর্নীতিমুক্ত ও স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা, আধুনিক অবকাঠামো, প্রযুক্তিগত আধুনিকীকরণ, দ্রুত পণ্য খালাস ও সরবরাহ, স্বল্প মাশুল ও ব্যয়, নির্ভরযোগ্যতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে নিজস্ব সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। নিজস্ব দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং আত্মনির্ভরতা ও স্বয়ংসম্পূর্ণতাই প্রকৃত উন্নয়ন। জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তাকে সরকার ও তার প্রচারক মহল প্রতারণামূলকভাবে বন্দরে দ্রুত ও দক্ষ পরিষেবা চাহিদার সুযোগ হিসেবে ব্যয় করতে চাচ্ছে। সিপবি নেতারা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ২০০৭ সাল থেকে অন্তত ২ হাজার ৭১২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে বন্দরের বৃহত্তম নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল গড়ে তুলেছে। এই লাভজনক টার্মিনালটি সমস্ত আইন ও নীতিমালা লঙ্ঘন করে বহুজাতিক ডিপি ওয়ার্ল্ডকে হস্তান্তর করতে অন্তর্বর্তী সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে। নেতারা প্রশ্ন করেন, নিউমুরিং টার্মিনালে প্রতি একক কনটেইনারে কমবেশি প্রায় ১১৫ ডলার আয় থাকে। এ বছর জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর ৩ মাসে মোট ৩ লাখ ৪২ হাজার ৬৪৯ একক (২০ ফিট সমমান) কনটেইনার। তাহলে দক্ষতা-সক্ষমতা-গতি বৃদ্ধির জন্য নিজস্ব অর্থ বিনিয়োগ করতে সমস্যা কোথায়। নিজস্ব সক্ষমতা তৈরি না করে আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যাবে না। সিপিবি নেতারা বিবৃতিতে বলেন, লালদিয়া টার্মিনাল নিয়ে ডেনমার্কের এপি মোলার মায়ের্সক গ্রুপ এবং ১৫৬ কোটি টাকা নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পানগাঁও নৌ-টার্মিনাল নিয়ে সুইজারল্যান্ডের মেডলগ এসএ-এর সঙ্গে সম্পন্ন চুক্তির বৈধতা নিয়ে প্রয়োজনে আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে। যেখানে ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের প্রশ্ন জড়িত সেখানে ডাচ কোম্পানি প্রস্তাব দাখিলের দুই সপ্তাহের মধ্যে তড়িঘড়ি চুক্তি করে ফেলার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান অত্যন্ত জরুরি। বহুজাতিক কোম্পানির কাছে চট্টগ্রাম বন্দরের লাভজনক টার্মিনাল তড়িঘড়ি হস্তান্তরের সব অপচেষ্টার বিরুদ্ধে আগামী রোববার দেশব্যাপী বিক্ষোভ ও ৪ নভেম্বর ‘যমুনা যাত্রা’ এবং চট্টগ্রামে ২২ নভেম্বর শ্রমিক-কর্মচারীদের কনভেনশন থেকে ঘোষিত হতে যাওয়া বৃহত্তর কর্মসূচি সফল করতে দেশপ্রেমিক জনতার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।