শ্যামনগর হাসপাতালে বেড সংকট মেঝেতে শুইয়ে চিকিৎসা

আপলোড সময় : ১৮-১১-২০২৫ ১০:১০:১৭ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১৮-১১-২০২৫ ১০:১০:১৭ অপরাহ্ন
এম কামরুজ্জামান শ্যামনগর থেকে
শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শীতের শুরুতেই শিশুদের ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় বেড সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে হাসপাতালটিতে চাপ বেড়েছে নিউমোনিয়া, জ্বর, সর্দি-কাশি সহ শ্বাসকষ্টজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত শিশু রোগীর। প্রতিদিনই চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ভিড়ে হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতে আর জায়গা মিলছে না। বিশেষ করে শিশু ওয়ার্ডে বেডের অভাবে অনেক শিশুকে সিঁড়ি ও মেঝেতে শুইয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এতে শিশুদের পাশাপাশি অভিভাবকরাও চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের সিঁড়ি ও মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে বেশ কয়েকজন শিশু রোগী। তাদের পাশে বসে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরা।শিশুর অভিভাবক মনজুরা খাতুন বলেন, আমার ছেলেটা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে তিন দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছে। বেড না পেয়ে এখন সিঁড়ির নিচে শুইয়ে চিকিৎসা নিচ্ছি। রাতে মশা ও ধুলাবালির মধ্যে থাকা খুব কষ্টকর।আরেক শিশুর অভিভাবক জ্যোৎস্না রানী বলেন, তার তিন মাস বয়সী শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও শিশু ওয়ার্ডে জায়গা মেলেনি। তাকে একই ওয়ার্ডের একমাত্র টয়লেটটির পাশে একটি বিছানা করে জায়গা দেওয়া হয়েছে। অর্ধশতাধিক রোগীর স্বজনদের অনবরত ঐ টয়লেটে যাতায়াতের কারণে শিশুটি আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে বলে দাবি করেন তিনি। সরকারি হাসপাতাল হওয়া সত্ত্বেও চিকিৎসা নেওয়ার মতো জায়গা না থাকায় তিনি হতাশা প্রকাশ করেন।চিকিৎসকরা জানান, শিশুদের জন্য নির্ধারিত বেড সংখ্যা মাত্র ৬টি।
প্রতিদিন ২৫-৩০ জন পর্যন্ত শিশু রোগী ভর্তি হয়। বাধ্য হয়ে যেখানে জায়গা ফাঁকা থাকছে সেখানে রোগীদের রাখা হচ্ছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ৫০ শয্যার এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ জন সেবা নিতে আসে। এবং ৮০ থেকে ১০০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। এর মধ্যে শিশু ওয়ার্ডের পরিস্থিতি সবচেয়ে নাজুক। গত কয়েকদিনে ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া ও ভাইরাল জ্বরের রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বেড সংকট আরও তীব্র হয়েছে। শ্যামনগর উপজেলায় ৪ লাখ মানুষের বসবাস। এছাড়াও পাশ্ববর্তী কালীগঞ্জ ও কয়রা উপজেলার মানুষ এখানে সেবা নিতে আসে। আরও জানাযায়, শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরোনো ভবন ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় তা পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। আরেকটি দোতলা ভবনের ওপরে তৃতীয় ও চতুর্থ তলা নির্মাণ হলেও তা চালু হয়নি। এ দোতলা ভবনের নিচতলায় রয়েছে বহির্বিভাগ, দ্বিতীয় তলায় প্রসূতি বিভাগ। এ বিভাগের বারান্দায় বোর্ড ও কাচ দিয়ে শিশু ওয়ার্ড বানানো হয়েছে। সেখানে শয্যা মাত্র ৬টি। সেখানে স্থান সংকুলন না হওয়ায় শিশুদের ভবনটির একতলা থেকে তিন তলা পর্যন্ত সিঁড়িতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এমনকি টয়লেটের সামনের ফাঁকা জায়গায় বিছানা পেতে শিশুদের চিকিৎসা চলছে।
এ ছাড়া প্রশাসনিক ভবনে থাকা ৪টি কেবিনের দুটিকে পুরুষ এবং দুটিকে নারী ওয়ার্ডে পরিণত করা হয়েছে।এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার জিয়াউর রহমান বলেন, রোগীর চাপ কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। আমাদের বেড সংখ্যা সীমিত, তাই অনেক সময় মেঝেতে, করিডোরে বা সিঁড়িতেও রোগী রাখতে হচ্ছে। তবে যতটুকু সম্ভব সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। তবে তিনি দাবি করে বলেন আমাদের নতুন ভবনটি যদি ছেড়ে দিত কর্তৃপক্ষ তাহলে আমাদের কিছুটা বেড সংকট দূর হতো। এছাড়াও নতুন ভবন সম্প্রসারণ ও অতিরিক্ত বেডের অনুমোদন পেলে এই সংকট অনেকটা কমে আসবে। তিনি আরো বলেন, হাসপাতালটিতে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ শিশু বিশেষজ্ঞ কোন ডাক্তার সেভাবে নাই একজন শুধুমাত্র মেডিকেল অফিসার দিয়ে আমি সেবা দিয়ে যাচ্ছি।এ বিষয়ে স্থানীয়রা দ্রুত শিশু ওয়ার্ডে বেড সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি আলাদা ভবন নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। স্থানীয় সচেতন মহল হাসপাতালের অবকাঠামো উন্নয়ন, পর্যাপ্ত ডাক্তার ও নার্স নিয়োগ এবং শিশু ওয়ার্ড সম্প্রসারণের দাবি জানিয়েছে।
 

সম্পাদকীয় :

সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : সৈয়দ এম. আলতাফ হোসাইন।

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক : সৈয়দ মোঃ আতিকুল হাসান।

নির্বাহী সম্পাদক আশীষ কুমার সেন।

ফোন : ৪৯৩৫৭৭৩০ (বার্তা), ৮৩১৫৬৪৯ (বাণিজ্যিক), ফ্যাক্স; ৮৮-০২-৮৩১৪১৭৪

অফিস :

প্রকাশক কর্তৃক রোমাক্স লিমিটেড, তেজগাঁও শিল্প এলাকা থেকে মুদ্রিত।

সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : খলিল ম্যানশন (৩য়, ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলা), ১৪৯/এ, ডিআইটি এক্সটেনশন এভিনিউ, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত।

ই-মেইল : [email protected], ওয়েবসাইট : www.dainikjanata.net