দেশে দিন দিন তীব্র হচ্ছে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি। আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তা আরো তীব্র হওয়ার শঙ্কা বাড়ছে। জাতীয় নির্বাচন বানচাল করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেএকটি পক্ষ। তারা নির্বাচনের আগে দেশকে অস্থিতিশীল করতে তারা নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সেজন্য প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম ঢ়ুকছে দেশে। আর ওসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ নির্বাচন বানচালে ব্যবহার হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরকের বিষয়েরাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে সেনাবাহিনীর একটি দল বনলতা এঙ্প্রেস ট্রেনে অভিযান চালায়। ওই সময় একটি বগি থেকে ৮টি বিদেশি পিস্তল, ১৪টি ম্যাগাজিন, ২৬ রাউন্ড গুলি, ২.৩৮৭ কেজি গান পাউডার এবং ২.২২৮ কেজি প্লাস্টিক বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়। ওসব গান পাউডার ও প্লাস্টিক বিস্ফোরক দিয়ে ককটেল ও হাতবোমা তৈরি করা হয়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তন আন্দোলনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানা থেকে লুট হয়েছিল৫ হাজার ৭৬৩টি অস্ত্র। তার মধ্যে এখনো উদ্ধার হয়নিএক হাজার ৩৪২টি অস্ত্র। একই সময়ে লুট হয়েছিল ৬ লাখ ৫২ হাজার ৮টি গোলাবারুদ। বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭২১টি উদ্ধার করা হলেও এখনো ২ লাখ ৫৭ হাজার ২৮৭টি গোলাবারুদ উদ্ধার করা যায়নি। তাছাড়াও বিভিন্ন সময় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ হচ্ছে। লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশ সদর দফতরবিশেষ পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছে।
সূত্র জানায়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকেচোরাচালানের মাধ্যমে সীমান্তপথে দেশে আসছেএসএমজির মতো প্রাণঘাতী অস্ত্রসহ রাইফেল, মর্টারশেল, পিস্তল, গুলি ও ভয়ংকর বিস্ফোরক। তার কিছু অংশ ধরা পড়লেও বেশির ভাগই দেশের নানা প্রান্তে চলে যাচ্ছে। আর পুরস্কার ঘোষণা করেও জুলাই আন্দোলনের সময় পুলিশের খোয়া যাওয়া অস্ত্র-গোলাবারুদের মধ্যে এখনো ২৫ শতাংশ উদ্ধার হয়নি। ওসব অস্ত্র নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে প্রভাব ফেলতে পারে। তাছাড়া গত তিন মাসে রাজধানীতে অন্তত দুই শতাধিক জায়গায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় ঘটেছে। আর ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও যুবলীগসহ অঙ্গসংগঠনের অন্তত তিন হাজারের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছেককটেল, বিস্ফোরক ও দেশি-বিদেশি বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র।
সূত্র আরো জানায়, মিয়ানমারের একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মাধ্যমে কঙ্বাজার ও টেকনাফ দিয়ে দেশে অস্ত্র আসছে। ওসব অস্ত্র আনার পেছনে রয়েছে রোহিঙ্গা চক্রের সদস্যরা। সামপ্রতিক সময়ে মিয়ানমার থেকে যেভাবে অস্ত্র ঢ়ুকছে। অথচ কয়েক বছর আগেও তা ছিল না। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ২৭১ কিলোমিটারের সাতটি পথে পাচারকারীরা অস্ত্র আনছে। গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ১১৪টি অস্ত্র, এক হাজার ৭২৫ রাউন্ড গুলি, ৩৯টি ম্যাগাজিন, ৯টি মর্টারশেল ও ১১টি গ্রেনেড জব্দ করা হয়েছে বিজিবি। তার মধ্যে দুটি এসএমজি, ১২টি রাইফেল, ২টি রিভলভার, ৩৬টি পিস্তল এবং অন্যান্য অস্ত্র ৬২টি। ওই অস্ত্র চোরাচালানে জড়িত রয়েছে অন্তত পাঁচটি সংঘবদ্ধ চক্র। তাছাড়া মাদক চোরাচালানের পাশাপাশি মানবপাচারকারী চক্রও যুক্ত হয়েছে অস্ত্র ব্যবসায়। ফলে সীমান্ত পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠেছে। যদিও সীমান্তে বিজিবি অস্ত্র, মাদক ও চোরাচালান প্রতিরোধে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। ইতোমধ্যে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে এবং গত তিন মাসে ২২টির বেশি দেশি-বিদেশি অস্ত্রের চালান আটক করা হয়েছে।
এদিকে নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, প্রতিবেশী দেশ থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ বাংলাদেশে আসার বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তাশুধু নির্বাচনি পরিবেশকেই অস্থিতিশীল করবে না, বরং রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানাবে। রাজনৈতিক অস্থিরতা বা ক্ষমতার রূপান্তরের সময়কে লক্ষ্য করে অতীতেও কিছু গোষ্ঠী সীমান্ত ব্যবহার করে অস্ত্র ও বিস্ফোরক ঢোকানোর চেষ্টা করেছে। ওই ধরনের প্রবণতা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর জন্য বড় সতর্কবার্তা। নির্বাচন কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের নাশকতা ঠেকাতে এখনই কঠোর নজরদারি ও গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো জরুরি। বিশেষ করে সীমান্ত এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), র?্যাব ও পুলিশকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
অন্যদিকে এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) এ এইচ এম শাহাদাত হোসেন জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে প্রয়োজনীয় নজরদারি ও আগাম তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত আছে। যেকোনো ধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ড, নাশকতা বা সংঘর্ষের চেষ্টা হলে তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাছাড়াও পুলিশের লুণ্ঠিত অস্ত্র ও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে।