যারা ধর্মের নামে রাজনীতির ব্যবসা করে, তাদের হাতে নারীরা নির্যাতিত-সালাহউদ্দিন

আপলোড সময় : ১৫-১১-২০২৫ ০৫:৫৩:০৫ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১৫-১১-২০২৫ ০৫:৫৩:০৫ অপরাহ্ন
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, একটি রাজনৈতিক দল জান্নাতের টিকেট বিক্রি করে নির্বাচনি বৈতরণী পার হওয়ার চেষ্টা করছে। যারা ধর্মের নামে রাজনীতির ব্যবসা করে। অথচ তাদের হাতে নারীরা নির্যাতিত হয়। গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর শাহবাগে ‘নারীর ওপর ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও অসম্মান: প্রতিরোধে প্রস্তুত সচেতন নারী সমাজ’ শীর্ষক মৌন মিছিল পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের আয়োজিত এ সমাবেশ শেষে মুখে কালো কাপড় বেঁধে শাহবাগ থেকে একটি মৌন মিছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমানে সারা দেশে যে নারী নির্যাতন হচ্ছে বা অতীতে হয়েছে, তার কোনো কার্যকর প্রতিবাদ এখনও গড়ে তোলা যায়নি। কিছু কিছু আইন প্রণয়ন হয়, তবে কোনো ঘটনার প্রেক্ষিতে আইন কঠিন হলে সঠিকভাবে কার্যকর হয় না। আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে নারী নির্যাতনকারীরা ও ধর্ষকরা বেড়িয়ে যেতে পারে। আবার কিছু ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শক্ত আইনের অপব্যবহার করে থাকেন। সেদিকেও আমরা নজর দেবো। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, মনে রাখতে হবে, গণভোটের মধ্য দিয়ে আইন প্রণয়ন করা হয়ে যাবে না। গণভোটের মধ্য দিয়ে সংবিধান সংশোধন হয়ে যাবে না। এর জন্য আগে অবশ্যই জাতীয় সংসদ গঠিত হতে হবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট হবে একই দিনে। গত বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এই সিদ্ধান্ত জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান সালাহউদ্দিন আহমদ। জুলাই জাতীয় সনদ যেভাবে সই হয়েছে, তা প্রতিপালনে বিএনপি অঙ্গীকারাবদ্ধ বলে উল্লেখ করেন দলটির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর বাইরে চাপিয়ে দেওয়া, জবরদস্তিমূলক কোনো প্রস্তাব যদি দেওয়া হয়, তা জনগণ বিবেচনা করবে। জাতীয় সংসদের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে বিএনপি সোচ্চার থাকবে বলে উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সার্বভৌমত্ব কোনোভাবে ক্ষুণ্ন হোক, তা আমরা চাই না। সে জন্য কোনো আরোপিত আইন দিয়ে, আদেশ দিয়ে, জবরদস্তিমূলক প্রস্তাব দিয়ে জাতীয় সংসদের সার্বভৌমত্বের ওপর কোনো হস্তক্ষেপ আমরা করতে দেবো না। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। তিনি জানান, তারা ভেবেছিলেন, গত ১৭ বছর নারীরা যেভাবে খুন-ধর্ষণের শিকার হতো, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর সেই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটবে। নারীরা তাদের মর্যাদা ফিরে পাবেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, দেশে আজ আবার নারীরা অন্ধকারে ফিরে যাচ্ছেন। নারীদের ঘরে ফিরিয়ে দিতে কর্মঘণ্টা কমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। কাজেই অধিকার আদায়ে নারীদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। মর্যাদা ফিরে পেতে নারীদের সমস্বরে আওয়াজ দিতে হবে। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের সদস্য সচিব নিপুণ রায় চৌধুরী। তিনি বলেন, আজ আমরা এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সংকেত দিয়ে গেলাম যে, নারীর অধিকার নিয়ে কোনো সংকট তৈরি করা হলে দেশের পুরো নারী সমাজ জেগে উঠবে। এ সময় তিনি স্লোগান দেন, পাঁচ নয় আট, তুমি বলবার কে। নারী কাজ করবে না ঘরে থাকবে- এটা একান্তই নারীর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সদস্য চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস। তিনি বলেন, নারী অধিকার হলো মানুষের অধিকার। নারীর কোনো দান, দয়া, দাক্ষিণ্যের প্রয়োজন হয় না। নারীরা ঘর সামলাবেন না বাইরে থাকবেন, সেটা একান্তই নারীদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতার বিষয়। নারীদের সিদ্ধান্ত নারীদেরই নিতে দিন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাহরীন ইসলাম খান বলেন, পুরুষ আমাদের সহযোদ্ধা। পুরুষ আমাদের শত্রু নয়। তাই নারীর পাশাপাশি যে পুরুষকে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হতে হয়, আমি তাঁর পক্ষে দাঁড়াই। যে জুলাই সনদে নারীর কথা নেই, সেই জুলাই সনদ নারীরা প্রত্যাখ্যান করছেন বলে মন্তব্য করেন নাহরীন ইসলাম খান। তিনি বলেন, দেশের প্রবৃদ্ধি প্রকৃত উন্নয়ন নয়। প্রকৃত উন্নয়ন হচ্ছে সেই উন্নয়ন, যেখানে রাত্রিবেলায় নারী নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে এখনো সোচ্চার নয় বলে মন্তব্য করেন মায়ের ডাকের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা পরিবর্তন দেখেছি গণঅভ্যুত্থানে; কিন্তু পরবর্তী সময়ে এসে আমাদের এমন এমন সব সামাজিক অবস্থায় পড়তে হচ্ছে, যেখানে এখন শুনতে হয়, আমাদের কর্মঘণ্টা কমিয়ে পাঁচ ঘণ্টায় নিয়ে আসা হবে। সমাবেশে বক্তব্য দেন ডাকসুর গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক সানজিদা আহমেদ তন্বি। তিনি বলেন, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে হোক, পারিবারিক ক্ষেত্রে হোক বা যে কোনো ক্ষেত্রে হোক, যখনই তারা কথা বলতে গিয়েছেন, তখনই দেখেছেন, বিভিন্নভাবে নারীদের হ্যারাস করা হয়েছে। হয়তো নারীর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে, অথবা কোনো মতাদর্শ নিয়ে, অথবা পোশাক নিয়ে। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে নারীকে কথা বলতে হবে। কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন সাবেক সংসদ সদস্য বিলকিস ইসলাম, নিলুফা চৌধুরী, শিরিন সুলতানা, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মানসুরা আলম, সহসভাপতি রেহানা আক্তার প্রমুখ।
 

সম্পাদকীয় :

সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : সৈয়দ এম. আলতাফ হোসাইন।

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক : সৈয়দ মোঃ আতিকুল হাসান।

নির্বাহী সম্পাদক আশীষ কুমার সেন।

ফোন : ৪৯৩৫৭৭৩০ (বার্তা), ৮৩১৫৬৪৯ (বাণিজ্যিক), ফ্যাক্স; ৮৮-০২-৮৩১৪১৭৪

অফিস :

প্রকাশক কর্তৃক রোমাক্স লিমিটেড, তেজগাঁও শিল্প এলাকা থেকে মুদ্রিত।

সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : খলিল ম্যানশন (৩য়, ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলা), ১৪৯/এ, ডিআইটি এক্সটেনশন এভিনিউ, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত।

ই-মেইল : [email protected], ওয়েবসাইট : www.dainikjanata.net