* কোনো বারই সংলাপে সমাধান আসেনি, বরং সংঘাতের পথে হেঁটেছে দেশ
* এখনো পর্যন্ত দলগুলোর মধ্যে আলোচনার কোনো ইঙ্গিত দেখা যায়নি
* জুলাই সনদের আলোকে সংস্কার বাস্তবায়নে একমত হয়নি দলগুলো
* রাজনৈতিক দলগুলোর একসঙ্গে সংলাপে বসার ভরসা পাচ্ছেন না বিশ্লেষকরা
আওয়ামী সরকারের পতনের পর দেশবাসীর কাছে সবচে বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল সংস্কার। এর আলোকে জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে সকল রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্য আশা করেছিল সাধারণ মানুষ। কিন্তু জুলাই সনদের কিছু বিষয় যে মতভেদ দেখা দিয়েছে, তা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে একতাবদ্ধ সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। যতবার রাজনৈতিক দলগুলো সংলাপে বসেছে এর কোনো বারই সংলাপে সমাধান আসেনি, বরং সংঘাতের পথে হেঁটেছে দেশ। যদিও এখনো পর্যন্ত দলগুলোর মধ্যে আলোচনার কোনো ইঙ্গিত দেখা যায়নি। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর একসঙ্গে সংলাপে বসার ভরসা পাচ্ছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরাও। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে দলগুলোর কাছে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে দলগুলো এক সপ্তাহের মধ্যে মতামত না জানালে নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিবে সরকার।
জানা গেছে, প্রায় সাড়ে ৮ মাস ৩০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে টানা বৈঠক করে জুলাই সনদ প্রণয়ন করে ঐকমত্য কমিশন। অধিকাংশ দলই তাতে সই করে। কিন্তু এই জুলাই সনদের আলোকে কীভাবে সংস্কার বাস্তবায়ন হবে এই বিষয়ে একমত হতে পারেনি দলগুলো। সরকারের উদ্যোগে সাড়ে ৮ মাসে যে ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠা করা যায়নি, তা এক সপ্তাহে রাজনৈতিক দলগুলো করতে পারবে এমনটা আশা করছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। অতীতে হওয়া সংলাপগুলো ব্যর্থ হওয়া এই ধারণার জন্ম দিয়েছে। গত সোমবার রাজনৈতিক দলগুলোকে সমাধানের পথ খুঁজতে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এই অনুরোধ জানানো হয়েছে। এর মধ্যে ৪ দিন পেরিয়ে গেছে। এখনো পর্যন্ত দলগুলোর মধ্যে আলোচনার কোনো ইঙ্গিত দেখা যায়নি। এমনকি অনানুষ্ঠানিক আলোচনারও কোনো খবর পাওয়া যায়নি। সময়ের স্বল্পতা ও বাস্তবতা বিবেচনায় এবার নিজ উদ্যোগে রাজনৈতিক দল একসঙ্গে সংলাপে বসবে এমন ভরসা পাচ্ছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। নব্বইয়ের দশকে সরকার পতনের পর জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কয়েকবার সংকট তৈরি হয়। এসব সংকট সমাধানে কখনো নিজ উদ্যোগে, কখনো প্রভাবশালী বাইরের দেশ এবং জাতিসংঘের উদ্যোগে সংলাপের আয়োজন হয়েছে। কিন্তু কোনো বারই এসব সংলাপে সমাধান আসেনি। বরং সংলাপের পর দেশ সংঘাতের পথে হেঁটেছে এমন নজিরই বেশি।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। অভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষ মাথায় রেখে রাজনৈতিক দল, সরকার ও নাগরিক সমাজ সবার মধ্যেই রাষ্ট্র সংস্কারের তাগিদ দেখা দেয়। এরপর সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থাসহ সংস্কারের লক্ষ্যে ১১টি কমিশন গঠন করে সরকার। সব সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন বাস্তবায়নে চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে গঠিত হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ এই কমিশনের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের তিনটি স্তর। এগুলো হচ্ছে আদেশ জারি, গণভোট এবং আগামী সংসদকে নিয়মিত কাজের পাশাপাশি সংবিধান সংস্কার পরিষদের ক্ষমতা দেওয়া। এ তিনটি স্তর নিয়েই রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষত বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মতপার্থক্য আছে। তবে মূল মতবিরোধ গণভোটের সময় এবং সংস্কার প্রস্তাবে ভিন্নমত রাখা না রাখা নিয়ে।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংলাপ যেন এক চিরচেনা দৃশ্য সংকট তৈরি হলে দলগুলো আলোচনায় বসে, আর সমঝোতা না হলে সেই সংলাপ হারিয়ে যায় ইতিহাসের পাতায়। ১৯৮৮ সালের সামরিক শাসনের শেষ সময় থেকে ২০২৫ সালের বর্তমান উদ্যোগ পর্যন্ত সংলাপ হয়েছে বহুবার, কিন্তু প্রশ্ন রয়ে গেছে-সংলাপগুলো আসলে কতটা সমাধান দিয়েছে?
১৯৮৮ সালের নির্বাচনের পর সামরিক স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদের পদত্যাগ ও ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবিতে দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল আন্দোলনে নামে। আন্দোলনরত দলগুলো নিয়ে গড়ে উঠে তিনটি জোট। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন আটদলীয় জোট, বিএনপির নেতৃত্বাধীন সাতদলীয় জোট এবং বাম ঘরানার দলগুলোর সমন্বয়ে পাঁচ-দলীয় জোট। এর বাইরে একই দাবিতে জামায়াতে ইসলামী যুগপৎ আন্দোলন করেছিল, তবে তারা কোন জোটে ছিল না।
এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন তীব্র হয়ে উঠলে ১৯৯০ সালের ১৯ নভেম্বর জোট তিনটি আলাদা সমাবেশ থেকে একযোগে একটি ‘রূপরেখা’ ঘোষণা করে, যা তিন জোটের রূপরেখা নামে পরিচিত। যার মূল লক্ষ্য ছিল একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে সার্বভৌম সংসদ গঠনের লক্ষ্যে এরশাদের পতন। রূপরেখা ঘোষণার দুই সপ্তাহ পরই বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে ভাইস প্রেসিডেন্ট নিয়োগ করে তাঁর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিদায় নেন এরশাদ। এরশাদ সরকারের পতনের পর গণ-আন্দোলনের মধ্যেই প্রথম কার্যকর রাজনৈতিক সংলাপের নজির গড়ে। বিএনপি, আওয়ামী লীগ, বাম ও ইসলামি দলগুলো সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা ঠিক করতে একাধিক বৈঠকে বসে।
রূপরেখায় থাকা ঘোষণা অনুযায়ী, ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় এবং সরকার গঠন করে। কিন্তু বিএনপি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেনি। এরপর পুনরায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে রাজপথে নামে বিরোধী দলগুলো। তিন জোটের রূপরেখা আলোচিত হলেও সেটিতে জোটগুলো কোনো স্বাক্ষর করেনি। ফলে এটি জাতীয় সনদে পরিণত হয়নি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিরোধী দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু হলে ১৯৯৪ সালের ৩১ আগস্ট জাতীয় সংসদে বিএনপির তৎকালীন নেতা প্রয়াত একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আবদুস সামাদ আজাদের মধ্যে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু কোনো সমাধান আসেনি। সে সময় কমনওয়েলথ মহাসচিব এনিয়াওকুর এমেকা ঢাকায় এসে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে তিনি তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে পাঠান স্যার স্টিফেন নিনিয়ানকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক সংলাপ তত্ত্বাবধানে বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত নিনিয়ান দফায় দফায় বৈঠক করেন দুই পক্ষের সঙ্গে। তিনিও বাংলাদেশে সফল হননি। আওয়ামী লীগসহ প্রধান বিরোধী দলগুলোর বর্জনের মধ্যে দিয়ে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি পুনরায় ক্ষমতায় আসে। কিন্তু বিরোধী দলের আন্দোলনের মুখে এক মাসের মধ্যে সরকারের পতন হয়। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল হয়। জুনে আরেকটি নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে।
আন্দোলনের মুখে ১৯৯৬ সালে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে পরপর দুটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু ২০০৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে অচলাবস্থা তৈরি হয়। বিচারপতি কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান মানতে অস্বীকার করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪–দলীয় জোট। তারা লাগাতার আন্দোলনে নামে। এর মধ্যে ২০০৬ সালের অক্টোবরে জাতীয় সংসদ ভবনে সংলাপে বসেন বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া ও আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল। দুই সপ্তাহে ছয়বার বৈঠকে মিলিত হন দুই নেতা। এই সংলাপে ১১ দফা প্রস্তাব পেশ করে আওয়ামী লীগ—যার মূল দাবি ছিল নিরপেক্ষ উপদেষ্টা পরিষদ গঠন ও বিতর্কিত নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন। কিন্তু নিজ নিজ অবস্থানে অনড় থাকে। আন্দোলন, অবরোধ ও সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে তা ভেস্তে যায়।
সংলাপ ব্যর্থ হয়, এবং অচলাবস্থার জেরে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে জরুরি অবস্থা জারি হয়—একটি সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা নেয়। দেশের দুই প্রধান নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দি করা হয়। ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে দুই নেত্রী মুক্তি পান। অবশ্য তখনো রাজনৈতিক সংকট পুরোপুরি কাটেনি। তখন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী জিমি কার্টার ঢাকায় আসেন রাজনৈতিক সংলাপের মধ্যস্থতা করতে। তাঁর নেতৃত্বাধীন কার্টার সেন্টার তখন জাতিসংঘ ও কমনওয়েলথের সঙ্গে সমন্বয় করে বাংলাদেশে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের পরিবেশ গড়ে তোলার চেষ্টা করছিল। কার্টার শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করেন, ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটে ক্ষমতায় আসে। যে আওয়ামী লীগ নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে দুই দফা আন্দোলন করল, সেই দলটিই ক্ষমতায় এসে ২০১১ সালের ৩০ জুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে জানিয়ে দেয় বিএনপিসহ অধিকাংশ বিরোধী দল।
এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন সামনে রেখে ২০১৩ সালের শেষদিকে ঢাকায় আসেন জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো। ছয় দিন ঢাকায় অবস্থান করে ১০ ও ১১ ডিসেম্বর সংলাপ করেন আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। তৃতীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হয় জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি নিল ওয়াকারের উপস্থিতিতে। কোনো সংলাপই সফল হয়নি। নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি, জামায়াতসহ অন্য বিরোধী দলগুলো হরতাল ও অবরোধ শুরু করে। শুরু হয় জ্বালাও-পোড়াও। এর মধ্যেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৪৭ আসনে সহিংসতার মধ্যে ভোট হয়। ২০১৪ সালের ভোটের পর ২০১৮ সালের নির্বাচনও শেখ হাসিনার অধীনে আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর বিরোধিতায় নামে বিএনপি, জামায়াতসহ বিরোধীরা।
এর মধ্যে বিরোধী দলের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ হয়। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট এবং এবং কিছু বামপন্থী দল নিয়ে গঠিত হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। নেতৃত্ব দেন বর্ষীয়ান রাজনীতিক ড. কামাল হোসেন। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর গণভবনে অনুষ্ঠিত হয় সংলাপ। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট্রের প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বেশ কয়েকজন নেতা। ক্ষমতাসীন জোটের নেতৃত্বে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৪ দলের নেতারা। বিরোধী জোটের পক্ষ থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বাতিল, আলোচনা করে নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দীর মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ সাত দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। শেষ পর্যন্ত সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশ নেয়। নির্বাচনের আগে ছোট পরিসরে আরও একটি সংলাপ হয় দুই জোটের মধ্যে। ২০১৮ সালের ওই নির্বাচন ‘রাতের ভোট’ হিসেবে পরিচিত পায়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জোট ২৯৩ আসনে জয়ী হয়। বিএনপিসহ বিরোধীদের মাঠে দাঁড়াতেই দেওয়া হয়নি। এর বাইরে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ নিয়ে দু-দুবার ২০১২ সালে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান এবং ২০১৬ সালে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেন। ২০২৩ সালেও নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে আরেক দফা সংলাপ করেন আবদুল হামিদ। তবে অতীতের আলোচনায় কোনো ফল পাওয়া যায়নি অভিযোগ করে বিএনপিসহ বিরোধীরা বর্জন করে। ১৯৯০ থেকে ২০২৫ বাংলাদেশে সংলাপ হয়েছে বহুবার, ব্যর্থতাও এসেছে বারবার। তবে প্রতিবারই সংকটের মুহূর্তে সংলাপই একমাত্র আশ্রয় হিসেবে ফিরে এসেছে রাজনীতিতে। এবার যদি রাজনৈতিক দলগুলো সত্যিকারের সমঝোতায় পৌঁছাতে পারে, তবেই হয়তো তিন দশকের এই ‘আলোচনার ইতিহাস’ একবারের জন্য সাফল্যের গল্পে পরিণত হতে পারে।
লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, এর আগে বিদেশিরা দুতিয়ালি করেও সংলাপ সফল করতে পারেনি। এবার রাজনৈতিক দল নিজে থেকে বসে সফল আলোচনা করতে পারবে-এটা দূরাশাই মনে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, জুলাই সনদ করার সময় দ্বিমত, ভিন্নমত দেখা গেছে। নোট অব ডিসেন্টের উদাহরণ। এত আয়োজন, সময় ব্যয়ের পরও বাস্তবায়নে একমত হতে পারেনি। ফলে রাজনৈতিক দলগুলো মিলে সমাধানে আসতে পারবে-এটা বিশ্বাস করা কঠিন। আর ঐক্যমত্য ছাড়া সংস্কার কতটা বাস্তবায়ন হবে, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।