ত্রায়োদশ সংসদ নির্বাচনে কে হচ্ছেন গাজীপুর-৩ আসনের কন্ডারী

আপলোড সময় : ৩০-১০-২০২৫ ০৪:১৭:৪১ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ৩০-১০-২০২৫ ০৪:১৭:৪১ অপরাহ্ন
গাজীপুর থেকে ওবাইদুল ইসলাম আসন্ন ত্রায়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৯৫ গাজীপুর-৩ আসনে জনগণের ভোটে কে হচ্ছেন আগামীর কান্ডারী এই নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। জামায়াত ছাড়া অন্য কোন রাজনৈতিক দল এই আসনে তাদের প্রার্থী ঘোষণা না করলেও এখন পর্যন্ত মোট আট জন আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য প্রচারণা চালাচ্ছেন। এর মধ্যে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করতে চান ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, আক্তারুল আলম মাস্টার, সাখাওয়াত হোসেন সবুজ, আতাউর রহমান মোল্লাহ্ ডা. শফিকুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট গোলাম শাব্বির আলি পারভেজ সহ মোট ছয় জন বাকী দুজনের মধ্যে একজন জামায়াতের একক প্রার্থী ড. জাহাঙ্গীর আলম ও অন্যজন জনগণের মনোনীত সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ইজাদুর রহমান মিলন। ধানের শীষ প্রতীকে ছয়জন প্রার্থী হতে চাইলেও আলোচনায় রয়েছেন ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, জামায়াতের ড. জাহাঙ্গীর আলম ও জনগণ মনোনীত একক প্রার্থী ইজাদুর রহমান মিলন। দৈনিক জনতার সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে আলোচিত এই তিন প্রার্থী তাদের নির্বাচনী আসন গাজীপুর-৩ (শ্রীপুর ও সদর উপজেলার বৃহৎ অংশ এবং রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাস) নিয়ে তাদের পরিকল্পনা তুলে ধরেন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রদলে যোগদান করে ১৯৮১ সলের ৩ মার্চ ছাত্র রাজনীতি দিয়ে রাজনৈতিক জিবন শুরু করা কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, আমার দীর্ঘ ৪৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে এক সেকেন্ডের জন্যও বিএনপির আদর্শ থেকে সরে যাইনি। দলের দুর্দিনে সকল ঝুঁকিপূর্ণ কর্মসুচি পালন করেছি, আমি এই এলাকারই সন্তান এলাকার মানুষের সুখে-দুঃখে তাদের পাশে থেকেছি, ফ্যাসিস্ট আ.লীগ সরকার ২০০৯ সালে পিজি হাসপাতাল থেকে আমাকে চাকরিচ্যুত করে, এর মধ্যে ৬২টি দিন কারাবরণ করি। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় তাহলে দলের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে দলের নির্বাচনী ইশতেহার জনগণের কাছে পৌছেদেব, দীর্ঘদিন তাদের সুখে-দুঃখে পাশে থেকেছি তাই আমার প্রতি তাদের যে ভালোবাসা আছে সেই শক্তিতে তাদের বিপুল ভোটে জয়লাভ করে গাজীপুর-৩ আসন থেকে আমি নির্বাচিত হবো। আমার আসনে জনগণের ভোগান্তির কিছু বিষয় আমি চিহ্নিত করেছি যেমন, অ-পরিকল্পিত শিল্পায়ন, জলাবদ্ধতা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নেই, বিগত দিনে শিক্ষা স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থার কোন উন্নতি হয়নি। আমি নির্বাচিত হলে এই সম্যস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করে ৫লক্ষ ২৬হাজার ভোটার সহ সকলকে নিয়ে শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সহ অবস্থান নিশ্চিত করবো। যেখানে মাদক, সন্ত্রাস ও দুর্নীতি থাকবেনা। যেখানে পরিবেশ বান্ধব শিল্প প্রতিষ্ঠান থাকবে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা এবং কর্মসংস্থানের গ্যারান্টি থাকবে এরকম একটি এলাকা আমরা চাই। বিগত ফ্যাসিস্ট আ.লীগ সরকারের সময়ে কারাবরণে সেঞ্চুরী করা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর গাজীপুর জেলার আমির ও জামায়াত মনোনীত গাজীপুর-৩ আসনের প্রার্থী ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গাজীপুর জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে আয়তনের দিক দিয়ে সর্ববৃহৎ আসন গাজীপুর-৩, ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী বাংলাদেশের মানুষ বৈষম্য মুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র চায়, এই গণঅভ্যুত্থান কেন হয়েছে? এ দেশের মানুষ বৈষম্য মুক্ত সমাজ চায়, শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করতে চায়। বর্তমানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ছাড়া অন্য যে রাজনৈতিক দলগুলো আছে তারা বিগত দিনে দেশ চালিয়েছে কিন্তু তারা বৈষম্য মুক্ত সমাজ ও দুর্নীতি মুক্ত প্রশাসন কায়েম করতে পারেনি। এলাকা থেকে চাঁদাবাজী বন্ধ করতে পারেনি, বিশেষ করে আমার নির্বাচনী এলাকা শিল্প অধ্যুষিত হওয়ায় এখানে চাঁদাবাজী ও মাদক একটি বড় সমস্যা, এই চাঁদাবাজী ও মাদক তারা বন্ধ করবেনা বরং নিজেদের পকেট ভারী করতে তারা এটাকে প্রমোট করছে। সাধারণ জনগণ খুব ভালো করে জানেন যে এইসমস্ত জিনিসগুলো কমপক্ষে আমাদের দ্বারা হবেনা, তাই আমি মনে করি জনগণ এবার আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন। আর আমি যদি নির্বাচিত হই এলাকা থেকে চাঁদাবাজী ও মাদক চিরতরে নির্মুল করবো ইংশাআল্লাহ। জনগণ যেনো নিরাপত্তার সাথে বসবাস করতে পারে এই ভূমিকা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নিবে। দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনের জন্য গত ১৯ জুলাই ঢাকায় জাতীয় সমাবেশে আমাদের আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ চারটি ঘোষণা দিয়েছেন, এটা আমরা বাস্তবায়ন করবো ইনশাআল্লাহ। আমার আসনের নিরীহ জনগণের একটি বড় সমস্য হলো তাদের মধ্যে হাজার হাজার মানুষ ভূমিহীন হয়ে বনের খাস জমিতে দীর্ঘদিন বসবাস করায় প্রতিনিয়ত বিভিন্ন হয়রানীর স্বীকার হচ্ছেন, তারা এই সমাজেরই মানুষ আমাদের এটা বিশ্বাস করতেই হবে যে, আগে আমরা মানুষ। মানুষ মেরে গাছের দরকার, না মানুষ বাঁচিয়ে গাছের দরকার? আমি নির্বাচিত হলে ভূমিহীন এই মানুষগুলোর পুনর্বাসন করে বনের জায়গা সংরক্ষণ করবো, এটা আমার প্রথম প্রায়োরিটি থাকবে। গাজীপুর সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ইজাদুর রহমান মিলন বলেন, আমি ২০০৩ সালে প্রথম গাজীপুর সদর উপজেলার বৃহত্তর মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদে পরপর দুইবার জনগণের ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে জনসেবা শুরু করি, পরবর্তীতে চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ২০১৪ তে আমার প্রিয় দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে বিগত ফ্যাসিস্ট আ.লীগ সরকারের সেই প্রতিকুল অবস্থায় আমার এলাকার জনগণের ভালোবাসায় বিপুল ভোটে জয়লাভ করি, আমার প্রতিদ্বন্দ্বী আ.লীগের প্রার্থী আমার কাছে জামানত হারায়। আমি উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েই সদর উপজেলার প্রত্যান্ত অঞ্চলে প্রচুর পরিমান উন্নয়ন কাজ করি। এর পরে পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ২০১৯ এ জনগণ বিপুল ভোটে আমাকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করে কিন্তু আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার তার প্রশাসন দিয়ে আমাকে জিম্মি করে তাদের প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করে। এর পর সর্বশ্রেষ্ঠ ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ২০২৪ এ জনগণ আ.লীগের প্রাথীর থেকে দ্বিগুণ ভোট দিয়ে আমাকে বিজয়ী করেন। বিএনপির প্রয়াত নেতা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ এর হাত ধরে বিএনপির রাজনীতিতে আসা গাজীপুরের এই জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধি বলেন, আমার জন্মই হয়েছে মানুষের সেবা করার জন্য, আমি কখনো আমার এলাকার জনগণকে ছেড়ে কোথাও যাইনি, আমার গ্রাম ছাড়া গাজীপুরের বাহিরে থাকার কোন জায়গা নেই মৃত্যু পর্যন্ত জনগণের সেবা করে তাদের পাশেই থাকবো। সাবেক গাজীপুর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ইজাদুর রহমান মিলন দল থেকে বহিস্কার ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বলেন, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ২০২৪ দল হিসেবে বিএনপি বর্জন করলেও আমি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের চাপে ও জনগণের দাবীর মুখে নির্বাচন থেকে সরে আসতে পারিনি, তারপরও নির্বাচনে অংশ নিলে দল আমাদের বিরুদ্ধে বহিষ্কারের মত কঠিন সিদ্ধান্ত নিবে এটা আগে জানতে পারলে যে কোন মুল্যে আমি নির্বাচন বর্জন করতাম, কারণ তখন দলের মনোভাব এতো কঠোর ছিলনা, আমি ৮ই মে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই আর আমাকে ২৪ মে দল থেকে বহিষ্কার করে। যদিও আমি এখন পর্যন্ত কোন চিঠি পাইনি। দল আমাকে বহিষ্কার করলেও আমি বিএনপিতেই আছি, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বিএনপিকে ভালোবেসে যাবো। দল আমাদের বিবেচনা করুক বা না করুক আমরা দলের ছিলাম দলেরই আছি, শহীদ জিয়ার আদর্শ ও বেগম জিয়ার বিচক্ষণতার যে নেতৃত্ব এবং তারুন্যের প্রতীক আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের নির্দেশনায় তাদের অনুসরণ করে তাদেরকে মডেল হিসেবে সামনে রেখে আমি আমার পরবর্তী জীবনে রাজনীতি দিয়ে জনগণের সেবা করে যাবো। তৃণমূলের জনপ্রিয় এই নেতা বলেন, প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার শত-শত মানুষ আমার কাছে এসে গাজীপুর-৩ আসনে তাদের জন্য প্রার্থী হতে বলেন, তারা আমার মত অন্য কাউকে তাদের বিপদে-আপদে পাশে না পাওয়ায় আমার প্রতি তাদের এই দাবি, তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি জনগণের চাহিদা পুরণ করতে গিয়ে বিগত দিনে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি ভবিষ্যতেও তাদের জন্য সব ধরণের ত্যাগ স্বীকার করতে আমি প্রস্তুত। জনগণের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দলের পদ-পদবী কি থাকলো কি থাকলোনা এটা আসলে কোন বিষয় না, আমার ইচ্ছা মানুষের পাশে থাকা মানুষের ও ইচ্ছা আমাকে তাদের পাশে রাখা তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর-৩ থেকে দল যদি আমার স্বচ্ছতা ও জনপ্রিয়তাকে বিবেচনা করে ধানের শীষ প্রতীক দেয় তাহলে তা নিয়ে নির্বাচন করবো, তা না হলে জনগণের মনোনীত প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো ইনশাআল্লাহ। আমি বিজয়ী হলে সর্বপ্রথম কাজ হলো গাজীপুর-৩ আসনের জনগণকে মাদক, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজ এবং দখলবাজ মুক্ত সমাজ উপহার দেয়া, আমার আসনে একটি বিশ্ববিদ্যালয় করা, হার্টের চিকিৎসা ও আইসিইউ সুবিধা সহ ৫০০ আসন বিশিষ্ট একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপন করা। গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদের সেবাকে জনগণের কাছাকাছি পৌঁছেদিতে জনগণ চাইলে পার্শ্ববর্তী দুইটি ইউনিয়নকে সংযুক্ত করে উপজেলা পরিষদকে সুবিধাজনক স্থানে স্থানান্তর করবো এবং উপজেলা পরিষদের ক্রয়কৃত ১৬ বিঘা জায়গা যার বাজর মূল্য প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা যা দিয়ে সদর উপজেলার উন্নয়ন করলে জনসেবা বাড়বে, ভোগান্তি কমবে এবং উপজেলার সেবাটা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাবে।

সম্পাদকীয় :

সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : সৈয়দ এম. আলতাফ হোসাইন।

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক : সৈয়দ মোঃ আতিকুল হাসান।

নির্বাহী সম্পাদক আশীষ কুমার সেন।

ফোন : ৪৯৩৫৭৭৩০ (বার্তা), ৮৩১৫৬৪৯ (বাণিজ্যিক), ফ্যাক্স; ৮৮-০২-৮৩১৪১৭৪

অফিস :

প্রকাশক কর্তৃক রোমাক্স লিমিটেড, তেজগাঁও শিল্প এলাকা থেকে মুদ্রিত।

সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : খলিল ম্যানশন (৩য়, ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলা), ১৪৯/এ, ডিআইটি এক্সটেনশন এভিনিউ, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত।

ই-মেইল : [email protected], ওয়েবসাইট : www.dainikjanata.net