গণমাধ্যমকর্মী স্বর্ণময়ী বিশ্বাসের মৃত্যুর ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের বিচার নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। একইসঙ্গে কর্মক্ষেত্রে যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালা কার্যকর করার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। গতকাল বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্যরা। বিবৃতিতে তারা বলেন, স্বর্ণময়ী বিশ্বাসের অনাকাঙ্ক্ষিত ও অকালে আত্মহত্যার ঘটনায় আমরা ব্যথিত, শোকাহত। তার এই মৃত্যু আমাদের আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো নারীর জন্য তার কর্মপরিবেশ কতখানি নিরাপত্তাহীন, নির্মম মানসিক নিপীড়নে আক্রমণাত্মক। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সূত্রে জানতে পেরেছি, স্বর্ণময়ী ও তার সহকর্মীরা মিলে কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিষ্ঠানটির বাংলা বিভাগের প্রধান আলতাফ শাহনেওয়াজ এর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ উত্থাপন করেছিলেন। কিন্তু ‘ঢাকা স্ট্রিম’ কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগ আমলে নিয়ে যথাযথ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। সহকর্মীদের ভাষ্যমতে, এ ঘটনায় স্বর্ণময়ী বিশ্বাস মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত ও হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। বিবৃতিদাতারা বলেন, আমরা মনে করি, যৌন নিপীড়ন পরবর্তী ভিক্টিমের মানসিক ও শারীরিক অবস্থা অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া হয় না। যৌন নিপীড়ন পরবর্তী সব ঘটনাকে আইনের চোখে নিপীড়নকারী দায়ী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আলোচ্য ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। এখানে আলতাফ শাহনেওয়াজের পাশাপাশি একইভাবে ঢাকা স্ট্রিমের প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক গোলাম ইফতেখার মাহমুদ এবং তদন্তকারীরাও একই অপরাধে অভিযুক্ত হবেন। এতে আরও বলা হয়, আমরা জানি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়নবিরোধী আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে ২০০৯ সালে হাইকোর্ট একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে। সে অনুযায়ী প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালার ভিত্তিতে সেল গঠন করে এ ধরনের অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করার কথা। অথচ আমরা দেখলাম বাংলাদেশের প্রায় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের মতোই ‘ঢাকা স্ট্রিম’ও হাইকোর্টের এই নীতিমালা অনুসরণ করেনি। উপরন্তু দায় এড়িয়ে অভিযুক্তকে বহাল রেখে এ ধরনের ঘটনাকে বৈধতা দিয়েছে। আমরা ঢাকা স্ট্রীম নিউজ পোর্টাল কর্তৃপক্ষের এ ভূমিকার নিন্দা জানাই। যেকোনো মর্যাদাসম্পন্ন মানুষের জন্য এ ধরনের পরিবেশে কাজ করা অত্যন্ত দুরূহ। ফলে নারীদের কর্মক্ষেত্র থেকে ঝরে পড়া, কাজের প্রেরণা কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে এ ঘটনাগুলো প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে বলে আমরা মনে করি। বিবৃতিদাতারা বলেন, স্বর্ণময়ীর মৃত্যু এদেশের সব নারীর কর্মক্ষেত্রের প্রতিবন্ধকতাকে উন্মোচিত করেছে। নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতের দায় ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সরকারের দায়িত্ব। আমরা সুস্পষ্টভাবে দাবি জানাচ্ছি, স্বর্ণময়ীর মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে। এর পেছনে দায়দায়িত্ব উন্মোচন করতে হবে এবং যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তদন্ত করে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে হবে। একইসঙ্গে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালা বাস্তবায়নে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্যদের পক্ষে বিবৃতিদাতারা হলেন, আনু মুহাম্মদ, ড. সামিনা লুৎফা নিত্রা, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, মাহতাব উদ্দীন আহমেদ, ডা. নাজমুস সাকিব, ফেরদৌস আরা রুমী, সজীব তানভীর ও সীমা দত্ত। তাদের পক্ষে গণমাধ্যমে বিবৃতিটি পাঠিয়েছেন মার্জিয়া প্রভা। উল্লেখ্য, গত ১৯ অক্টোবর নিজ বাসা থেকে অনলাইন নিউজপোর্টাল ‘ঢাকা স্ট্রিম’ এর গ্রাফিক ডিজাইনার স্বর্ণময়ী বিশ্বাসের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।