শাহজালাল বিমানবন্দর অরক্ষিত পশুপাখি ও শিয়াল ঝুঁকিপূর্ণ

আপলোড সময় : ২২-১০-২০২৫ ০৪:১৯:১৭ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ২২-১০-২০২৫ ০৪:১৯:১৭ অপরাহ্ন
তুরাগ থেকে মনির হোসেন জীবন দেশের সবচেয়ে বড় নান্দনিক ও অত্যাধুনিক রাজধানী ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আজ প্রায় অরক্ষিত। দেশের ছোট-বড় আটটি বিমানবন্দর রানওয়েতে অসাবধনাবশত বিমানের সাথে ধাক্কা খেয়ে বিভিন্ন সময় পশু-পাখির মৃত্যু, বিমান দুর্ঘটনা, অগ্নিসংযোগের ঘটনা কিংবা নানাবিধ হরেক রকম সমস্যা একের পর এক ঘটেই চলেছে। এনিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহল কিংবা জনমনে- নানা ধরনের গুঞ্জন, জল্পনা-কল্পনা, আলোচনা-সমালোচনা এবং মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এখন সকলের মধ্যে একটাই প্রশ্ন? হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের বিমানবন্দরগুলোর রানওয়েতে শিয়াল আসে কোথা থেকে! এবং কিভাবে? এছাড়া বিমান বন্দরের ব্যবস্থাপনা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, বিমানবন্দরের কাঁটাতারের বেড়ার ফাঁক দিয়ে প্রবেশ করে মানুষ, একই সাথে বেড়েছে শেয়াল ও বানরের উৎপাত। মোট কথায়, দেশের ৮টি বিমানবন্দরের মধ্যে ৫টিই রয়েছে অনেকটাই অরক্ষিত। দেশের বিমানবন্দরগুলো হলো, ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, রাজশাহী, সিলেট, যশোর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সৈয়দপুর ও বরিশাল বিমানবন্দর। স্থানীয় মানুষ ও গরু রাখালরা এসব বিমানবন্দরে ভেতরে অনায়াসে আসা- যাওয়া করতে পারে। শুধু হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নয়, গরুকাণ্ডের পর অন্যান্য বিমান বন্দরের অব্যবস্থাপনার চিত্রও ধীরে ধীরে উঠে আসতে থাকে। ঢাকাসহ দেশের ৮টি অন্যান্য বিমানবন্দরগুলোর দেয়াল টপকিয়ে হরহামেশাই ঘাস কাটতে ঢোকে মানুষ। অনেক বিমানবন্দরের সীমানাপ্রাচীরের নীচে ফাঁকা, রাতে নেই আলোর সুব্যবস্থা। অধিকাংশ বিমানবন্দরের কাঁটাতারের বেড়ার ফাঁক দিয়ে প্রবেশ করে মানুষ একই সাথে বেড়েছে শেয়াল ও বানরের উৎপাত। মোট কথায়, দেশের ৮টি বিমানবন্দরের মধ্যে ৫টিই রয়েছে অনেকটাই অরক্ষিত। বিমান বন্দরগুলোর যখন এমন হাল, তখন ফ্লাইট পরিচালনা করতে গিয়ে অনেক সময় বিমানের পাইলটদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে শাহজালাল বিমানবন্দর সংলগ্ন দলিপাড়া-বাউনিয়া এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা গণমাধ্যমকর্মী দৈনিক জনতাকে বলেন, উঁচু দেয়াল ও কাঁটাতারের সীমানা প্রাচীর টপকানোর ‘সুব্যবস্থা’ আছে শাহজালাল বিমানবন্দরে। ভেতরে ঢুকে মানুষ ঘাস কাটে। এছাড়া সীমানা প্রাচীরের নিচ দিয়ে ফাঁকা। রাতে অনেক জায়গাতে নেই পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা। রানওয়ের বাউন্ডারি ঘেঁষে রয়েছে মানুষ ও যানবাহন চলাচলের রাস্তা। রয়েছে-নিরাপত্তার অভাব। শাহজালাল কাঁটাতারের বেড়া ফাঁকা করে ভেতরে ঢোকে মানুষ। একই সাথে শিয়ালের ও উৎপাত বেড়েছে। পাশাপাশি এখনো গরু চরে। এছাড়া ভেতরে বিরাজ করে অসংখ্য পশুপাখি। যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তুরাগের দলিপাড়া-বাউনিয়া এলাকার একাধিক বাসিন্দা এ প্রতিবেদককে জানান, শাহজালাল বিমানবন্দরের ভেতরে থাকা শিয়াল ও বানরগুলো খাবার না পেয়ে অনেক সময় লোকালয়ে চলে আসে। রাস্তা দিয়ে কেউ যদি দোকান থেকে রুটি, কলাসহ যে কোনো ধরনের খাবার নিয়ে বাড়ি যায়, তখন তাকে কমান্ডো স্টাইলে আক্রমণ করে সহজেই খাবার কেড়ে নিয়ে যায়। এখানকার বানরগুলো দীর্ঘ দিনের পুরানো। তারা গাছে এবং জঙ্গলের ভেতরে লুকিয়ে থাকে। মাঝে মাঝে বাইরে বের হয়। বিমানবন্দরের রানওয়েতে বিমান দেখতে আসা একাধিক দর্শনার্থী এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা পরিবার নিয়ে এখানে ঘুরতে এসেছি। খুব কাছ থেকে বিমান উঠা- নামা দেখতে পাই। বিমান আসার আগে রানওয়েতে রঙিন লাইট জ্বলে উঠে। মাথার ওপর দিয়ে বিকট শব্দ করে বড় বড় বিমান রানওয়ে স্পর্শ করে। এসময় বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ ও দর্শনার্থীদের উপচে পরা ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। পরিদর্শনকালে নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েকজন সদস্যকে সেখানে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। ছদ্মনাম (আব্দুল্লাহ আল ফারুক) নামে বিমানের একজন পাইলট সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলোতে গরু, শেয়াল বা পাখি-পাইলটদের নানা রকম সমস্যার সৃষ্টি করে। অনেক সময় তারা বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনে। বিমানের অপর একজন অভিজ্ঞ পাইলট গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা বিমানটি এয়ারপোর্টে ল্যান্ডিং করার সময় টাওয়ারের মাধ্যমে রানওয়েকে জিজ্ঞেস করি পাখির কোনো এ্যাকটিভিটিজ সেখানে বিচক্ষণ আছে কি না? তখন আমরা বিচলিত হই না, এর কোনো কারণ ও নেই। তখন আমরা শান্ত থাকি এবং ধৈর্য ধরি, তবে মনোবল হারাই না। তিনি আরো বলেন, বিমান নামার সময় রানওয়েতে কোনো গরু কিংবা পশু-পাখি থাকবে না, ভেতরে লাইটিং ব্যবস্থা ভালো থাকতে হবে। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দৈনিক জনতাকে বলেন, এই বিষয়গুলো দেখার দায়িত্ব হলো সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের। তাদের লোকবল আছে। এবিষয়ে তারা ভালো বলতে পারবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ বিষয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের ছোট-বড় আটটি বিমানবন্দরে যাত্রী সাধারণ ও পাইলটদের নিরাপত্তার স্বার্থে বর্তমান সরকারকে কঠোর নজরদারি করা দরকার বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট ও সচেতন মহল। তা না হলে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশংকা রয়েছে। সে কারণে এখাতে সরকারের নজর দেয়া কিংবা নজরদারি করা উচিৎ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি যে কোনো দুর্ঘটনা কিংবা নাশকতা রোধকল্পে বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, বিমান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা, সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট মহলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বিমানযাত্রী ও দেশের সর্বস্তরের জনগণ।

সম্পাদকীয় :

সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : সৈয়দ এম. আলতাফ হোসাইন।

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক : সৈয়দ মোঃ আতিকুল হাসান।

নির্বাহী সম্পাদক আশীষ কুমার সেন।

ফোন : ৪৯৩৫৭৭৩০ (বার্তা), ৮৩১৫৬৪৯ (বাণিজ্যিক), ফ্যাক্স; ৮৮-০২-৮৩১৪১৭৪

অফিস :

প্রকাশক কর্তৃক রোমাক্স লিমিটেড, তেজগাঁও শিল্প এলাকা থেকে মুদ্রিত।

সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : খলিল ম্যানশন (৩য়, ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলা), ১৪৯/এ, ডিআইটি এক্সটেনশন এভিনিউ, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত।

ই-মেইল : [email protected], ওয়েবসাইট : www.dainikjanata.net