
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক বলেছেন, গত ৫৩ বছর ধরে একাত্তরের চেতনার নামে বাহাত্তরের ভেজাল চেতনা সরবরাহ করা হয়েছে। বাহাত্তরের সেই চেতনার বিরুদ্ধে যারা যখনই দাঁড়িয়েছে, তাদেরই ‘রাজাকার’ ট্যাগ দেওয়া হয়। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ঘোষিত ‘জুলাই সনদের অবিলম্বে পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নসহ পাঁচ দফা দাবি’তে দেশব্যাপী ঘোষিত ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই সমাবেশ ও পরবর্তী সমেয় বিশাল গণমিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে মাওলানা মামুনুল হক বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ছিল জালিমের বিরুদ্ধে মাজলুমের লড়াই। সত্তরের নির্বাচনের ফলাফল যারা ছিনতাই করেছিল, সেই ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধেই একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়। কিন্তু আমরা দেখেছি, হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত সেই স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী শেখ মুজিবুর রহমান কীভাবে ভারতের কাছে বিকিয়ে দেন। তিনি বলেন, শেখ মুজিব বাহাত্তর সালে ইন্দিরা গান্ধীর কাছে গিয়ে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান তৈরির প্রেসক্রিপশন নিয়ে আসেন। আমরা দেখেছি, ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত যে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা আওয়ামী লীগসহ কোনো রাজনৈতিক দল বলেনি, ভারতের সংবিধানের কপি-পেস্ট করে সেই ধর্মনিরপেক্ষতাকে সংবিধানের মৌলনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা হলো। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে প্রকারান্তরে ভারতের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হলো। তিনি আরও বলেন, বাহাত্তরের সংবিধানের ভিত্তিতে বাংলাদেশে এক নতুন চেতনা গজিয়ে ওঠে। দুঃখজনক হলো, গত ৫৩ বছর ধরে একাত্তরের চেতনার নামে বাহাত্তরের ভেজাল চেতনা সরবরাহ করা হয়েছে। সেই বাহাত্তরের চেতনার বিরুদ্ধে যারা যখনই দাঁড়িয়েছে, তাদেরই রাজাকার ট্যাগ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমি সব রাজনৈতিক পক্ষকে বলবো, যারা যার অবস্থান পরিষ্কার করুক। যারা চব্বিশের বিপক্ষে অবস্থান নেবে, তারাই বাহাত্তরের বাকশালপন্থি। আমরা আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করছি, আমরা চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের ভিত্তিতে আগামীর বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি বাংলাদেশের বাঁচা-মরার প্রশ্ন উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদের যে সন্তানদের রক্তের ওপর ক্ষমতার মসনদে বসে আজও জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করতে পারেননি- লজ্জা হওয়া উচিত আপনাদের। মামুনুল হক বলেন, নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার তোড়জোড় করছেন, আসন বিন্যস্ত করছেন, কিন্তু শহীদদের রক্তের সম্মান জানানোর রাষ্ট্রীয় নিদর্শন জুলাই সনদের বাস্তবায়ন এখনও করতে পারেননি। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মাওলানা ছানাউল্লাহ আমিনীর সভাপতিত্বে এবং ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মুরশিদ সিদ্দিকী ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা নিয়ামতুল্লাহ আমীনের যৌথ পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন- সংগঠনের কেন্দ্রীয় সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট মাওলানা শাহীনূর পাশা চৌধুরী, মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, মাওলানা এনামুল হক মুসা, মাওলানা হেদায়াতুল্লাহ হাদী, মাওলানা ফয়সাল আহমদ, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মাওলানা আনোয়ার হোসাইন রাজি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রাকিবুল ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি পরিষদ সদস্য মাওলানা আব্দুল্লাহ আশরাফ এবং বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মাদ আব্দুল আজিজ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাওলানা মাহবুবুল হক, প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা জহিরুল ইসলাম, বায়তুল মাল সম্পাদক মাওলানা ফজলুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিনে সহসভাপতি মাওলানা ইলিয়াছ হামিদী প্রমুখ। সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বায়তুল মোকাররম উত্তরগেট থেকে পল্টন মোড়, প্রেসক্লাব হয়ে বিজয়নগর গিয়ে শেষ হয়।