এক্সেল লোড নীতিমালার তোয়াক্কা করছে না পণ্যবাহী গাড়িচালকরা

আপলোড সময় : ১০-১০-২০২৫ ০৭:৩৭:৩০ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১০-১০-২০২৫ ০৭:৩৭:৩০ অপরাহ্ন

এক্সেল লোড নীতিমালার তোয়াক্কা করছে না পণ্যবাহী গাড়ির চালকরা। বরং তারা ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত পণ্য নিয়ে সড়ক-মহাসড়কে গাড়ি চালাচ্ছে। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সড়ক-মহাসড়ক। পণ্যবাহী যানের চালক ও শ্রমিকরা মূলত অতিলোভের কারণে ওজনসীমার অতিরিক্ত মালামাল পরিবহন করছে। আর বাড়তি ওজন নিয়ে যান চলাচলের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। সেক্ষেত্রে তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্তরা ঠিকমত তদারক না করারও অভিযোগ রয়েছে। অথচ সরকার বিগত ২০১২ সালে অতিরিক্ত পণ্যবাহী যান চলাচল ঠেকাতে এক্সেল লোড নীতিমালা প্রণয়ন করে। কিন্তু গত ১৩ বছরেও নীতিমালা অনুযায়ী আদায় করা যায়নি অতিরিক্ত পণ্য বহনের দায়ে জরিমানা। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, যেকোনো ওজনের যানবাহন সড়ক পাকা হলেই চলাচলের উপযোগী হয় না। অঞ্চল ভেদে ভিন্ন হয় সড়কের যানবাহন ধারণ ক্ষমতাও। কাগজে সড়ক আইনে তা থাকলেও বাস্তবে নেই। ফলে দেশের প্রতিটি সড়কেই হরহামেশা ধারণ ক্ষমতায় কয়েকগুণ বেশি ওজনের যানবাহন চলছে। আর ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত পণ্য বহনকারী যান চলাচলে দেশের সড়ক-মহাসড়ক মেয়াদের আগেই ভেঙ্গে যাচ্ছে। সরকারের এক্সেল লোড নীতিমালা থাকলেও পণ্য পরিবহনে তা কেউ মানছে না। তাতে সড়ক-মহাসড়ক ও সেতুগুলোর ক্ষতি হচ্ছে।
সূত্র জানায়, বিদ্যমান এক্সেল লোড নীতিমালা অনুযায়ী মহাসড়কে চলাচলকৃত ছয় চাকা বিশিষ্ট মোটরযানের সর্বোচ্চ ওজনসীমা (যানবাহন ও মালামালসহ) সাময়িক সময়ের জন্য ২২ টন, ১০ চাকা বিশিষ্ট মোটরযানের সর্বোচ্চ ওজনসীমা (যানবাহন ও মালামালসহ) সাময়িক সময়ের জন্য ৩০ টন এবং ১৪ চাকা বিশিষ্ট মোটরযানের সর্বোচ্চ ওজনসীমা (যানবাহন ও মালামালসহ) সাময়িক সময়ের জন্য ৪০ টন নির্ধারণ করা রয়েছে। ওই নীতিমালা না মানলে গুনতে হবে দুই থেকে ১২ হাজার জরিমানা। সেজন্য দেশের গুরুত্বপূর্ণ সেতু ও মহাসড়কের পাশে পণ্যসহ গাড়ি পরিমাপের জন্য এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশনও স্থাপন করা হয়। তাতে চাকা ভেদে প্রতিটি শ্রেণির গাড়ির জরিমানার হারও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। অতিরিক্ত পণ্য পরিবহনের জন্য চারটি ধাপ পর্যন্ত ওই জরিমানা দিতে হবে। জরিমানার হার সর্বনিম্ন ২ হাজার এবং সর্বোচ্চ ১২ হাজার টাকা। যেমন ৬ চাকার গাড়ি ১৫ টনের বেশি, অর্থাৎ সাড়ে ১৬ টন পর্যন্ত পণ্য পরিবহন করলে ২ হাজার টাকা, সোয়া ১৭ টন পর্যন্ত করলে ৪ হাজার টাকা, ১৮ টন পর্যন- ৬ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ পৌনে ১৯ টন পর্যন্ত করলে ১২ হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হবে। একইভাবে ২৬ চাকার গাড়ি ৪৮ দশমিক ৪ টন পর্যন্ত পণ্য পরিবহন করলে ২ হাজার টাকা, ৫০ দশমিক ৬ টন পর্যন্ত ৪ হাজার টাকা, ৫২ দশমিক ৮ টন পর্যন্ত করলে ৬ হাজার এবং ৫৫ টন পর্যন্ত করলে ১২ হাজার টাকা জরিমানা নির্ধারন করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে মোটেও মানা হচ্ছে না ওই নীতিমালা। অতিরিক্ত ওজন নিয়ে যান চলাচলের কারণে প্রায়ই দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘটছে দুর্ঘটনা।
সূত্র আরো জানায়, আয়ুষ্কালের অর্ধেক সময়ও টিকছে না সর্বোচ্চ ব্যয়ে নির্মিত দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলো। মূলত মালবাহী গাড়ির মাত্রাতিরিক্ত মালামাল পরিবহনের কারণেই নষ্ট হচ্ছে সড়ক। আইন অনুযায়ী একটি সিঙ্গেল এক্সেল সর্বোচ্চ ১০ টন লোড বহন করার কথা থাকলেও মহসড়কগুলোতে প্রায়ই ২০ টন এক্সেল লোডের ট্রাক চলাচল করছে। ফলে সড়ক ক্ষতি হতে বাধ্য। আর দেশের অনেক স্থানেই মানহীন সড়ক নির্মাণ করা হয়। তার ওপর প্রায়ই দেখা যায় পাঁচ টনের ট্রাকে ১০-১২ টন মাল বহন করা হচ্ছে। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সড়ক, মহাসড়ক ও ব্রিজ। সড়কের কয়েকটি স্থানে ওভারলোড নিয়ন্ত্রণে যন্ত্র বসানো হলেও এখনো তা ঠিকভাবে কার্যকর হয়নি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাড়তি ওজনের পণ্যবাহী যান থেকে টাকা নিয়ে তা চলতে দেয়ার অভিযোগও রয়েছে। এযাবত যেসব বেইলি ব্রিজ ভেঙে পড়েছে তার সিংহভাগই অতিরিক্ত ওজনের কারণে ঘটেছে।
এদিকে বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্ধারিত ওজনের দ্বিগুণ-তিনগুণ ওজনের পণ্য বহনে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হবেই। আর সেজন্যই অহরহ দেশের বিভিন্ন সড়ক, মহাসড়ক ও সেতু নির্মাণ বা মেরামতের ছয় মাস বা এক বছরের মাথায় ফাটল, বিটুমিন উঠে যাওয়া, খানাখন্দের সৃষ্টি হওয়ার ঘটনা ঘটছে। অতিরিক্ত পণ্য বহনে কয়েক হাজার কোটি টাকা প্রতি বছর সড়ক, মহাসড়ক এবং সেতুর ক্ষতি হচ্ছে। কোনো গাড়ির ওজনসীমা কত হবে, তা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করে। ছয় চাকার চার এক্সেল গাড়িতে ব্লু-বুক অনুযায়ী সাড়ে ১৫ টন বা ১৬ টন পণ্য বহনের সক্ষমতা রয়েছে। তা আরো বাড়ালে নিশ্চিতভাবেই সড়কের ক্ষতি হবে। ১০ চাকার গাড়ির পণ্য বহন ক্ষমতা ২৬ টন। প্রাইম মুভারের ক্ষেত্রে চার এক্সেলের গাড়ি হলে ৩৩ টন, পাঁচ এক্সেলের হলে ৪২ টন পণ্য বহন করতে পারে। এর বেশি পণ্য বহন করলে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হবেই।
অন্যদিকে এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এস, এম, ইলিয়াস শাহ জানান, বর্তমানে এক্সেল লোড-সংক্রান্ত নীতিমালা কার্যকর রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় ওজনসীমা নিয়ন্ত্রণ স্কেল বসানো হচ্ছে। মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আরো ২১টি মহাসড়কে নতুন করে ওজনসীমা নিয়ন্ত্রণ স্কেল বসানোর কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সেগুলো বসানো হলে সুফল মিলবে।
 

সম্পাদকীয় :

সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : সৈয়দ এম. আলতাফ হোসাইন।

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক : সৈয়দ মোঃ আতিকুল হাসান।

নির্বাহী সম্পাদক আশীষ কুমার সেন।

ফোন : ৪৯৩৫৭৭৩০ (বার্তা), ৮৩১৫৬৪৯ (বাণিজ্যিক), ফ্যাক্স; ৮৮-০২-৮৩১৪১৭৪

অফিস :

প্রকাশক কর্তৃক রোমাক্স লিমিটেড, তেজগাঁও শিল্প এলাকা থেকে মুদ্রিত।

সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : খলিল ম্যানশন (৩য়, ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলা), ১৪৯/এ, ডিআইটি এক্সটেনশন এভিনিউ, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত।

ই-মেইল : [email protected], ওয়েবসাইট : www.dainikjanata.net